শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১২

উত্তপ্ত রাজনীতি সরকারকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে


দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন আরো জোরদারের আভাস দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল তত্ত্বাবধায়কের এই দাবি নাকচ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সব দলের অংশ নেয়ার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপেও প্রায় সব দলের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলের এই দাবি সরকার আমলে না নেয়ায় তারা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে।
অপর দিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের ওপর নানাভাবে বাধা সৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর একটি পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেয়ায় জাতিকে একটি হরতালের বোঝা বহন করতে হয়েছে। আজ বিরোধী দলের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি রয়েছে। ইতোমধ্যে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি এই কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয় তাহলে লাগাতার হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেয়া হবে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে এই কর্মসূচিকে ঘিরে একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা লক্ষ করছি, ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বরাবরই অসহিষ্ণু মনোভাব দেখিয়ে আসছে। জোটের একটি শরিক রাজনৈতিক দলকে একধরনের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলে পরিণত করা হয়েছে। দলটির সব ধরনের সভা-সমাবেশের অধিকার হরণ করে নানাভাবে দমননীতি চালানো হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মীদের সাথে সারা দেশে  পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বহু লোক হতাহত হয়েছে। এখন প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও সরকার যদি একই ধরনের দমন-পীড়নের কৌশল অবলম্বন করে তবে দেশে বড় ধরনের সঙ্ঘাত সৃষ্টি হবে।
আমরা জানি, সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের নাগরিক স্বাধীনতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এই অধিকারগুলো এখন নানাভাবে হরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, যা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের উচিত বিরোধী দলের সাথে আলাপ-আলোচনায় বসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছা। তাদের সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। ক্ষমতাসীন দল যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে না পারে, তাহলে সঙ্ঘাতকে আরো উসকে দেয়া হবে। আমরা আশা করব, সরকার বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা দেবে না। অপর দিকে বিরোধী দলের উচিত হবে না কোনো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। বিগত চার বছরে বিরোধী দল হিংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে থেকে জনপ্রিয়তা বাড়াতে পেরেছে, দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রমাণ দিয়েছে। আশা করি, বিরোধী দল সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। অপর দিকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন, প্রবলভাবে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। তা থেকে সরকার সরে আসবে সে প্রত্যাশাও রইল।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads