স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতি কোনো দিকে কতখানি অগ্রসর হলো অথবা আদৌ হলো কি না, এ এক কঠিন প্রশ্ন। কেউ কেউ বলেন, বিগত ৪০ বছরের ইতিহাস থেকে এটাই তো স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ তার আপন অক্ষের চতুর্দিকে শুধু লাটিমের মতো ঘূর্ণায়মান, ফলত দেশের রাজনীতি একশ্রেণীর চতুর মানুষের হাতে বন্দী বিহঙ্গের মতো কঠিন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আবার অন্য অনেকে বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতা ও রাজশক্তি যেহেতু সর্বদা এক ব্যক্তির ইচ্ছাধীন, এখানে রাজনীতির বিকাশের কোনো সুযোগই ছিল না, এখনো নেই; রাজনীতি পরিণত হয়েছে কিছু স্থূলমস্তিষ্ক চাটুকারের নাটকীয় আস্ফালন ও অঙ্গভঙ্গিতে। কারণ এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই যেখানে রাজনীতির হৃৎপিণ্ডে রক্তচাপের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়, সেখানে ভাঁড়, বিদূষক ও তোষামোদজীবীদের ভূমিকাই মুখ্য ও অপ্রতিহত নিয়ামক হয়ে ওঠে। এর বিশেষ অন্যথা হয় না। অনেকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ান্তে ভোটের একটা সোল্লাস সার্কাসি মহড়া যদিও চলে; কিন্তু এটা ভালো করে বোঝাই যায় না, দেশটা গণতান্ত্রিক নাকি বংশানুক্রমিক ধারায় চলমান বাদশাহতান্ত্রিক। যিনি যখন শাহী তখতে সমাসীন, তখন সব নিয়ম ও আইন একমাত্র তারই ইচ্ছাধীন। এতে পর্যাপ্ত তোষামোদজীবী সৃষ্টি হয়; কিন্তু সৎ, সাহসী ও পরহিতব্রতী রাজনীতিক সৃষ্টি হওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেকে এ কথাও বলেন, বাংলাদেশের আবার রাজনীতি কী? একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমার মধ্যে অবস্থিত এই দেশে বেশির ভাগ রাজনীতিকের একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতা ও অর্থ; দেশ ও জনগণের কল্যাণসাধনের ‘নিরর্থক ভাববিলাস’ তাদের কাছে নিখাদ সময় ও শ্রমক্ষয় মাত্র। অতএব, দেশপ্রেম, মানুষের সুখ-দুঃখ-শান্তি ও নিরাপত্তা, দেশের সমস্যা-সম্ভাবনাÑ এসব নিয়ে খুব অল্পসংখ্যক রাজনীতিবিদই বিচলিত বোধ করেন এবং যারা এই ধরনের ‘নিরর্থক’ কথায় ও কর্মে আত্মনিয়োগ করেন তারা সৎ ও মানবপ্রেমী বটে; কিন্তু একেবারেই বোধবুদ্ধিহীন বিশুদ্ধ ‘বুরবাক’। মোটামুটি এই-ই হলো আমাদের রাজনীতি সম্পর্কে অনেকের অভিমত। এসব অভিমত অকাট্য বা অভ্রান্ত নিশ্চয়ই নয়; কিন্তু এটা সত্য যে, এসব কথার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের রাজনীতির একটা চারিত্র্য অনুধাবন করতে পারি।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশের ৪০ বছরের যে শাসনকাল, তা ছিল সততই এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ ক্ষমতাধীন। ব্যক্তির বদল ঘটেছে; কিন্তু ব্যক্তিতন্ত্র পূর্বাপর একইভাবে অনড় ও অপ্রতিহত। প্রথমে ছিলেন শেখ মুজিব, তার পর এলেন জেনারেল জিয়া, তারপর এরশাদ এবং পরিশেষে বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনার পালাক্রমে ক্ষমতার মসনদে আরোহণ। মাঝখানে খোন্দকার মোশতাক, জাস্টিস আবদুস সাত্তার এবং মঈন-ফখরুদ্দীনকে পেয়েছি সত্য; কিন্তু তাদের শাসনকাল ছিল হ্রস্ব এবং ক্ষমতা নিরঙ্কুশভাবে তাদের কারো ক্ষেত্রেই ঠিক এককেন্দ্রিক ছিল না। অর্থাৎ সামান্য সময়কাল ছাড়া সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের রাজনীতি সর্বদা ও সর্বতোভাবেই এক ব্যক্তির ক্ষমতা ও ইচ্ছাধীন এবং বলা জরুরি, এই পরিপ্রেক্ষিতেই গড়ে উঠেছে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য একটা সরব উচ্চকণ্ঠ আওয়াজ ধ্বনিত হয় বটে; কিন্তু শাসনক্ষমতার চারিত্র্য-নির্মাণে সেই গণতন্ত্রের প্রকৃত ভূমিকা ও কার্যকারিতা একেবারে শূন্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। আর এই কারণেই জনকল্যাণকামিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, ইনসাফ, দেশপ্রেম, সততা, মনুষ্যত্ব, নিষ্ঠা ইত্যাদি কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে না; প্রবল ও অনিবার্য হয়ে ওঠে লোভ ও কুৎসিত স্বার্থপরতা, সর্বত্র প্রাধান্য লাভ করে থিকথিকে নোংরা অহংবোধ, ঈর্ষা ও পরশ্রীবিদ্বেষ, সমাজে দেখা দেয় দুর্নিবার বেহায়াপনা ও জান্তব প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং এমতাবস্থায় আরো যা অপ্রতিহত গতি নিয়ে বৃদ্ধি পায়, তাহলো মেধাহীন শিক্ষাহীন আরণ্যক পেশিশক্তি ও দলবাজি, সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ে অযোগ্যের আস্ফালন ও আধিপত্য। বাংলাদেশের যে রাজনীতি, তা থেকেই প্রকৃতপক্ষে এসব দুশ্চিকিৎস উপদংশ ও উপসর্গের জন্ম ও বিকাশ। অতএব, ‘রাজনীতি’ বলতে যা বোঝায় বা আমরা বুঝতে চাই, সেই কাক্সিত রাজনীতি বাংলাদেশে এখনো একটি অধরা স্বপ্নমাত্র।
প্রসঙ্গক্রমে এ কথা বলা খুব অসমীচীন হবে না যে, শুধু বিরাজমান রাজনীতির কারণেই এমন সব মানুষ দৃপ্ত ভঙ্গিতে অনায়াসে অকেশে সামনে চলে আসে, সাধারণ ও স্বাভাবিক বিচারে যারা নিচু ও লঘু ধরনের দায়িত্ব পালনেও অক্ষম। এটা সম্ভব হয় শুধু এই জন্য যে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা ও রাজনীতি চর্চার এটাই অন্যতম পরিণাম, যাকে কোনোভাবে কোনো অবস্থাতেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। রাজনীতিবিজ্ঞান যাই বলুক, বাংলাদেশ তার রাজনীতির ময়দানকে দায়িত্বহীন আত্মসর্বস্ব কিছু মানুষের অবাধ মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত করেছে। দেশ ও জনগণ যাদের কাছে আদৌ কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, যাদের একমাত্র লক্ষ্য রাজনীতির আলখাল্লা পরিধান করে দেশ ও দেশের মানুষের সর্বনাশসাধন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ধরনের কুৎসিত রাজনীতি কোন ঐন্দ্রজালিক কৌশলে দেশের ওপর অপ্রতিহতভাবে টিকে থাকে? প্রবলভাবে জনবিদ্বেষী হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের আত্মস্বার্থতাড়িত ইতর রাজনীতি কোন শক্তি ও রহস্যবলে এমন অপরাজেয় হয়ে উঠতে পারে?
এই প্রশ্নের জবাব আদৌ কঠিন কিছু নয়। আমাদের রাজনীতি যেহেতু শিক্ষা ও রুচি, ইনসাফ ও প্রজ্ঞা এবং দেশপ্রেম দ্বারা চালিত নয়, এখানে অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই পেশিশক্তি ও পশুশক্তি সব কিছুর অপ্রতিরোধ্য নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে। আমাদের রাজনীতির ময়দান যেন আক্ষরিক অর্থেই এক আদিম রণক্ষেত্র। রণক্ষেত্রই বটে, যে কারণে আমাদের এই ময়দানে পক্ষ-প্রতিপক্ষের আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ শ্লীলতা ও শিষ্টাচার এবং সৌজন্য পরিদৃষ্ট হয় না। কে কতটা সৌজন্য ও সভ্যতার দাবিকে পায়ে মাড়িয়ে কতখানি অসুন্দর ও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে, কত বেশি রক্তপিপাসু হয়ে উঠতে পারে, একচু দৈত্যের মতো কত বেশি জিঘাংসু হয়ে উঠতে পারে, সেটাই হয়ে ওঠে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রভাব ও মর্যাদা এবং প্রতিপত্তি নিরূপণের মানদণ্ড। অতএব, আজ যে সভ্য শিক্ষিত বিবেকবান মানুষ রাজনীতির অঙ্গন থেকে প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে গেল, তা-তো এই কারণেই। বস্তুত কোনো ন্যায়বান ও সুস্থ ব্যক্তি প্রতিপক্ষকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, দুশমন মনে করে না। কিন্তু এই সত্যবোধ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় একেবারেই অচল ও অকল্পনীয়; বরং নৃশংস ও নির্বিচারে প্রতিপক্ষ দলনই রাজনীতির প্রকৃত সমাচার।
শক্তি ও ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে যার অবস্থান তার চতুর্দিকে যেসব কর্মিষ্ঠ ও কর্মচঞ্চল রাজনীতিক উপগ্রহের মতো প্রদক্ষিণরত, তাদের অপাপবিদ্ধ নিষ্পাপ মুখশ্রীদৃষ্টে সর্বদা মনে হয়, দেশ ও জনগণের হিতার্থে তারা তাদের ইহজীবনকে নিঃশর্তভাবে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। মনে হয়, হজরত উমর রা:, উমর বিন আবদুল আজীজ রহ:, আব্রাহাম লিঙ্কন, গান্ধী, মাহাথিরÑ তাদের কথা আমরা বইপুস্তকে পড়েছি; কিন্তু আমাদের পুষ্পচরিত্র এক-একজন রাজনীতিক সাক্ষাৎ লিঙ্কন, সাক্ষাৎ মাহাথির। নিন্দার্থে বলছি না, সত্য সত্যই এ রকম মনে হয়। কিন্তু কষ্ট হলেও দেখতে পাই, টিআইবি প্রতিবেদন, বিশ্বব্যাংক, কৃষ্ণমার্জার খ্যাত (কালো বিড়াল) রেল কেলেঙ্কারি প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক ‘স্বর্গভ্রষ্ট দেবশিশু’ মুহূর্তেই অর্থভুক দানবে পরিণত হয়ে গেল। আসলে যতই গণতন্ত্রের কথা বলা হোক, জনসেবা ও দেশপ্রেমের কথা বলা হোক, সবই লোকঠকানো এক-একটি মুখোশ মাত্র, অভ্যন্তরে বিরাজ করছে এক ভয়ঙ্কর দানবীয় অর্থগৃধ্নুতা। আর বলাই বাহুল্য, দুঃখ-দারিদ্র্য ও বহু সমস্যা-কণ্টকিত এই দুঃখী বাংলাদেশের রাজনীতি যে ক্রমাগত চরিত্রহীন ও কুৎসিত রূপ পরিগ্রহ করল, তা মূলত রাজনীতিকদের এই দুশ্চিকিৎস প্রবল অর্থলিপ্সার কারণেই। এমন কথা বলব না যে, সবাই অর্থলিপ্সু, সবাই দায়িত্ববোধহীন আত্মসম্মানবর্জিত তস্করচরিত্র কিংবা হলমার্কের তানভীরের মতো মুদ্রাশিকারি। তবে এটা খুবই সত্য যে, আমাদের রাজনীতিবিদদের একটা বড় অংশই অর্থ আহরণে বড় পটু ও পারঙ্গম। তাদের একমাত্র মনস্কামনা সেই নেকড়ে বাঘের মতো যার সার্বক্ষণিক আকাক্সা ও আকুতি হলো মেষপালের পাহারাদার হওয়া। বস্তুত রাজনীতিচর্চা নয়, জন্মকাল থেকেই বাংলাদেশে যা চলছে, তাকে সর্বার্থে বলা উচিত রাজনীতি ও দেশসেবার নামে অবাধ ও অপ্রতিরোধ্য অর্থচর্চা। নিশ্চয়ই সবাই এক রকম নয়, সবারই কৌশলও একরকম নয়; কিন্তু পার্থক্য যা বিদ্যমান তা প্রকৃতিগত নয়, নিতান্তই মাত্রাগত।
রাজনীতিবিজ্ঞানীরা নানা দিক নানাভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করতে পারেন; কিন্তু সেই জ্ঞানগর্ভ তত্ত্বীয় বিশ্লেষণ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন। কঠিন এ জন্য যে, অতীতে বর্তমানে কোনো দেশে বা কোনো রাষ্ট্রেই বাংলাদেশসদৃশ রাজনীতিচর্চার কোনো উপমা বা উদাহরণ একেবারে নেই বললেই চলে। অর্থাৎ এখানে রাজনীতি এমন এক অভিনব প্রক্রিয়ায় চালিত থাকে, যা রাজনীতি-বিজ্ঞানের কোনো সংজ্ঞার মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। রাজনীতি এখানে মুখ্যত অবস্থান করছে অর্থলিপ্সা ও ঈর্ষা-প্রতিহিংসার এক জান্তব আদিমতার মধ্যে। এখানে কেউ-ই মনে রাখে না যে, এই ধরনের আরণ্যক স্বপ্নবিভ্রাট থেকে কোনো ধরনের বালকোচিত আত্মতৃপ্তি হয়তো লাভ করা যায়; কিন্তু এ থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে একটি অতিরিক্ত তৃণও উৎপাদিত হয় না।
অতএব, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রকৃত অর্থে কোনো সুফলই বয়ে আনছে না এবং এটাই সমধিক সত্য যে, সব নিয়ম-নীতি ও আদর্শকে পুরোপুরি উপেক্ষাকরত রাজনীতি এ দেশে কিছু মানুষের একটি অনায়াস মুদ্রাবাজারে পরিণত হয়েছে, যেখানে বিনাবিনিয়োগে অকেশে ও স্বল্পতর সময়ে অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হওয়া যায়। আর এ জন্যই রাজনীতি অনেক দিন থেকেই আত্মমুগ্ধ মধুমক্ষিকাদের উল্লসিত বিচরণ ক্ষেত্র, যেখানে ত্যাগী মানবপ্রেমীদের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ। আমরাও ভালোভাবে জানি এবং এ কথা সর্বাংশে সত্যও বটে, সুযোগ ও ক্ষমতা হাতে পেলে মানুষের মধ্যে অর্থলিপ্সা তীব্রভাবে জেগে ওঠে, যা থেকে আত্মসংবরণ করা খুবই দুরূহ। অতীব দুঃখের বিষয়, আমাদের রাজনীতি এ দিকটিকেই অবাধ ও অবারিত করে তুলেছে, যে কারণে রাজনীতি একটি ঝুঁকিহীন পেশা ও ব্যবসায়ের নামান্তর; এমন পেশা যা খ্যাতি ও অর্থ দুই-ই দেশ ও দেশবাসীর কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারে। দেশের মানুষ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে, রাজনীতির কী অনবদ্য মহিমা। স্বাভাবিক যোগ্যতাবলে যার পক্ষে জীবনধারণ করাই কঠিন, রাজনীতির কারণে সে হয়ে ওঠে প্রায় বিল গেটসদের সমগোত্রীয়, হয়ে ওঠে আলাদিনের মতোই আশ্চর্য প্রদীপের অধিকারী। রাজনীতির এই চারিত্র্য যতদিন অক্ষত থাকবে, কাগজে-কলমে জিডিপি গ্রোথ যত মেঘচুম্বীই হোক, দেশ ও জনগণের অবস্থা ক্রমাগত অধঃপাতের দিকেই এগিয়ে যাবে। আর আমাদের রাজনীতি যেহেতু একেবারে আক্ষরিক অর্থেই নিরঙ্কুশভাবে অর্থ ও পেশিনির্ভর, এখানে প্রজ্ঞা ও ইনসাফ, শিক্ষা, রুচি ও জনকল্যাণের কোনো সম্পর্কই সৃষ্টি হবে না এবং শিগগিরই এমন এক দিন আসবে, যে দিন হলমার্কের তানভীর ও জেসমিনরাই হয়তো আমাদের সংসদ ভবন আলোকিত করে দেশ ও জাতির সম্মুখে ‘অনুপম আদর্শ’রূপে উপবেশন করবে।
উল্লেখ করা আবশ্যক, রাজনীতি ও সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে এতটুকু আহত করা আমাদের উদ্দেশ্যে নয়, আমরা শুধু বাস্তব অবস্থাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার যে আজ একচ্ছত্রভাবে অনড় অবস্থানে সমাসীন, এই অবস্থার জন্য রাজনীতিবিদদের ভূমিকা ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতিই মুখ্যত দায়ী। নিশ্চয়ই অনেক ভালো ও সৎ মানুষ আছেন; কিন্তু এই স্বল্পসংখ্যক মানুষ আজ অসহায় দর্শক মাত্র; তাদের পক্ষে প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। আসলে বাংলাদেশের সমূহ দুর্ভাগ্য যে, এ দেশ কোনো সাহসী, নির্লোভ ও ক্ষমতাবিমুখ কর্ণধার জন্মই দিতে পারল না, যিনি তোষামোদজীবী বিদূষকদের জন্য আতঙ্কস্বরূপ, যিনি যেকোনো মূল্যে দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে বদ্ধপরিকর, যিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে উঠতে পারেন, আল্লাহর ভয়কে সামনে রেখে যিনি ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় হয়ে উঠতে পারেন দুর্বারভাবে অকুতোভয়। এ ধরনের একজন ব্যক্তির নিরাপস নেতৃত্ব ছাড়া দেশ ও জাতি এবং রাজনীতির মুক্তি নেই। যত কথাই বলি ও যত স্বপ্নই দেখি, গণতন্ত্র কি ধর্মনিরপেক্ষতা কি মানবপ্রেম, এসবই হয়ে থাকবে অতিনাটকীয় রসনাবিলাস, বাস্তবে চলতে থাকবে রাজনীতির আলখাল্লা পরিহিত কিছু কপট ও অশিষ্ট ব্যক্তির নিরবচ্ছিন্ন লুণ্ঠন ও দস্যুতা। সব কিছু ভুলে গিয়ে রাজনীতি যখন অর্থের দাসত্ব করাকেই একমাত্র মোক্ষ হিসাবে গ্রহণ করে, তখন দেশ ও জনগণের ভাগ্য এভাবেই নির্ধারিত হয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন