সোমবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১২

সমাবেশ বন্ধে বিজয় নেই



দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন ব্যবস্থায়, কিভাবে হবে তা নিয়ে মত-পার্থক্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমেই জটিল করে তুলছে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারতো। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কোনো সুবাতাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং প্রতিদিনের বক্তৃতা-বিবৃতিতে পরস্পরের প্রতি অনাস্থা, অবিশ্বাস ও বিদ্বেষের বার্তা যেভাবে ছড়ানো হচ্ছে, তাতে সামনের দিনগুলো নিয়ে আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে দেশের জনগণ। এ অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারেন দেশের রাজনীতিদরাই। তবে এক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপর। যখন যে দল সরকারে থাকবে তারা কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করলে শুধু যে দেশ ও জনগণের মঙ্গল হয় তা নয়, জনপ্রিয়তা বাড়ে সরকারেরও। কিন্তু আমাদের সরকার যেন এই বাস্তব সত্যটি বুঝে উঠতে পারছে না। তাই আলাপ-আলোচনা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে সঙ্কট হ্রাসের গণতান্ত্রিক পথে না হেঁটে দমন-অবদমন ও জুলুম-নিপীড়নের পথে হাঁটতেই যেন তারা উৎসাহী। ফলে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট বাড়ার সাথে সাথে জনজীবনের সঙ্কটও বাড়ছে।
সরকার যে গণতান্ত্রিক পথে হাঁটছে না তার বড় প্রমাণ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ। গতকাল সোমবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম সমজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল জামায়াতে ইসলামী। এ ব্যাপারে গত ২৯ নবেম্বর ডিএমপির কমিশনার বরাবর আবেদনও করা হয়েছিল দলটির পক্ষ থেকে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, রাজধানীসহ দেশের কোথাও সমাবেশ করতে দেয়া হবে না জামায়াতে ইসলামীকে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন জামায়াত সমাবেশের কোনো অনুমতি নেয়নি এবং অনুমতির জন্য আবেদনও করেনি। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য যে সঠিক নয় তা উপলব্ধি করা যায় পত্রিকায় প্রকাশিত জামায়াতের আবেদনপত্রের ছবি ও পুলিশের বক্তব্য থেকে। উল্লেখ্য যে, ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। এসব বক্তব্য থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, জামায়াত আবেদন না করায় তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন তা সঠিক নয়। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আবেদন করার পরেও সমাবেশ করতে না দেয়ার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই বরং সরকারের এই আচরণের মধ্যে দমন-অবদমন ও স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রতিফলনই ঘটেছে। কিছুদিন আগে পুলিশের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রাজপথে জামায়াত-শিবিরের নেতারা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে এবং কোনো কোনো জায়গায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে তখন সরকারি দলের লোকজন বলেছিলেন, জামায়াত-শিবির গণতান্ত্রিক পন্থার বদলে হঠকারী পথে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক পন্থায় সভা-সমাবেশের জন্য আবেদন করার পরও সরকার অনুমোদন না দিয়ে সভা-সমাবেশ বন্ধের যে পথে অগ্রসর হলো তা কি গণতান্ত্রিক? সারা দেশে দলটির কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার যে দমনমূলক আচরণ সরকার প্রদর্শন করছে তার মধ্যে কোনো শুভবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় না। এমন আচরণে দেশের এবং রাজনীতির সঙ্কট যে আরো বাড়বে তা যেন সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। অথচ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন একজন সাধারণ মানুষও সহজেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন।
জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ ঘটনায় উপলব্ধি করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সরকার সহিষ্ণু না হলে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়া না হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এমন পরিস্থিতি শোভন নয় এবং জনগণেরও তা কাম্য নয়। আমরা জানি, নানা সঙ্কটের মধ্যে দেশের জনগণ জীবনযাপন করছে। দেশের সমৃদ্ধি ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও কাজের সুযোগ। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। এমন পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই বর্তায়। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বটাই বেশি। সরকারের সহিষ্ণু ও দায়িত্বশীল আচরণ দেশকে হরতাল ও সংঘাত থেকে রক্ষা করতে পারে। হরতাল ও সংঘাত তো কারো কাম্য হতে পারে না। কিন্তু তারপরেও অনাকাঙ্ক্ষিত এমন বিষয়ই যেন আমাদের নিয়তি হয়ে উঠেছে। অমঙ্গলের এ পথে জাতি হাঁটতে চায় না। কিন্তু গণআকাঙ্ক্ষার পথে হাঁটার জন্য সংগত ভূমিকা পালনে আমরা কি সমর্থ হবো না? আগামী দিনগুলোতে আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এ প্রশ্নের জবাব কিভাবে দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads