পদ্মা সেতুর ব্যাপারে আশা জাগাতে আসা বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল বুধবার রাতে বাংলাদেশ থেকে চলে গেছেন। স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আসেননি বলে ফিরে তারা এমনিতেই যেতেন। কিন্তু বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে এজন্য যে, প্রতিনিধি দলটি ফিরে গেছে প্রচণ্ড অসন্তোষ নিয়ে। দৈনিক আমার দেশ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়সহ বিশেষ তিনজনকে আসামি করার প্রশ্নে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুদকের তীব্র মতপার্থক্য ঘটেছে। দুদক আবুল হোসেনদের বাদ দিয়ে মামলা দায়ের করতে চাওয়ায় আলোচনা ভেঙে গেছে। প্রতিনিধি দল তখন অর্থমন্ত্রীর মধ্যস্থতা চেয়েছে; কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে। ‘আর কিছু বলার নেই, আমরা বিমানবন্দরে যাচ্ছি’ বলে সত্যি সত্যি বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা চলে গেছেন। অর্থমন্ত্রী ‘নো কমেন্ট’ বলে পাশ কাটাতে চেয়েছেন; অন্যদিকে জানা গেছে, আবুল হোসেনদের ছাড় দেয়ার পাশাপাশি আইন সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা চালাতে গিয়েও প্রতিনিধি দলকে ক্ষুব্ধ করেছেন দুদকের কর্তাব্যক্তিরা। চেয়ারম্যান গোলাম রহমান অবশ্য অসন্তোষের কথাটি স্বীকার করতে চাননি। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্টের পুনর্মূল্যায়নে তাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এজন্য ‘মহাভারত’ অশুদ্ধ হয়ে যাবে না বলেও ভাষার মারপ্যাঁচ খাটিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান। কিন্তু কাজ হয়নি। চেয়ারম্যান তো বটেই, অর্থমন্ত্রী এবং অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের জাঁদরেল ব্যক্তিরাও প্রতিনিধি দলকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। দলটি অসন্তোষ নিয়ে চলে যাওয়ায় আরও একবার ঝুলে গেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প। শুধু তা-ই নয়, তথ্যাভিজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পদ্মা সেতু আসলে ডুবেও গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বব্যাংকের এই পিছুটানের ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা অন্ধকারেই হারিয়ে গেল। এক্ষেত্রেও ঘুরেফিরে একই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম এসেছে, যার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল। তদন্তের পর বিশ্বব্যাংক বলেছিল, মন্ত্রী ও যোগাযোগ সচিবসহ তিনজন ১০ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেছিলেন এবং কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনও সম্মত হয়েছিল। ওয়াশিংটন, লন্ডন ও টরন্টোতে বসবাসরত বিশিষ্ট আরও জনাকয়েকের নামও উঠেছিল। এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক তাাগিদ দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের ভূমিকা শুধু রহস্যজনক নয়, ছিল কৌতূহলোদ্দীপকও। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ অস্বীকার করলেও সরকার আবুল হোসেনকে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এটা ২০১১ সালের ৫ নভেম্বরের ঘটনা। ঘটনাপ্রবাহের ওই পর্যায়ে ক্ষমতাসীনরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেকাংশে যুদ্ধই ঘোষণা করেছিলেন! প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, টাকাই যেখানে আসেনি সেখানে ঘুষ খাওয়ার ও দুর্নীতি করার প্রশ্ন আসে কীভাবে? অথচ প্রধানমন্ত্রীর ভালোভাবেই জানার কথা যে, ঘুষের বাণিজ্যে ‘সমঝোতা’ ও ‘আয়োজন’ ধরনের কিছু কথা আছে এবং ‘সমঝোতা’ হলে সবই আগাম বা নগদে দিতে হয় না; বরং ‘আয়োজন’ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। বিশ্বব্যাংক সে ধরনের কিছু তথ্য-প্রমাণই পেয়েছিল। এদিকে সরকারের পাশাপাশি দুদকও জনগণকে স্তম্ভিত করেছিল। তদন্তের নামে শোরগোল তুললেও এক সপ্তাহের মধ্যেই আবুল হোসেনকে সততার সার্টিফিকেট দিয়েছিল দুদক। দুদকের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন, ১০ শতাংশ হারে ঘুষ চাওয়ার ব্যাপারটিতে নাকি হিসাবের ‘গরমিল’ রয়েছে! অর্থাত্ ঘুষের অভিযোগ সঠিক, ভুল আছে শুধু শতকরা হারের হিসাবে! এসবের ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে যেহেতু ‘প্রভাবশালী’ অনেকের নাম এসেছিল, সে কারণে দুদকের পক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না। সরকার নিজে তো কোনো ব্যবস্থা নেবেই না।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এক বছরের বেশি সময় পরও দুদকের ভূমিকায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বরং ‘মহাভারত’ নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন। আমরা কিন্তু মনে করি, পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, বিষয়টি আর ‘শুদ্ধ’ হওয়া না হওয়ার পর্যায়ে আটকে নেই। গোলাম রহমানের নিজের মন্তব্য উল্লেখ করেই বরং বলতে হয়, ‘ডালমে’ আসলেও ‘কুচ কালা হ্যায়’। সে কারণে দুদকের কর্তারা যতই গাল ফুলিয়ে আশ্বস্ত করতে চান না কেন, বাস্তবে আবুল হোসেনদের ঘুষ-দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে বসেছে। আমরা মনে করি, সময় একেবারে ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই দুদকের পাশাপাশি সরকারেরও উচিত বিশ্বব্যাংকের দাবি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, দেশ ও জাতির জন্য পদ্মা সেতুর গুরুত্ব আবুল হোসেন ধরনের হাজারজনের চাইতেও হাজার হাজার গুণ বেশি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বব্যাংকের এই পিছুটানের ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা অন্ধকারেই হারিয়ে গেল। এক্ষেত্রেও ঘুরেফিরে একই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম এসেছে, যার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল। তদন্তের পর বিশ্বব্যাংক বলেছিল, মন্ত্রী ও যোগাযোগ সচিবসহ তিনজন ১০ শতাংশ হারে ঘুষ দাবি করেছিলেন এবং কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনও সম্মত হয়েছিল। ওয়াশিংটন, লন্ডন ও টরন্টোতে বসবাসরত বিশিষ্ট আরও জনাকয়েকের নামও উঠেছিল। এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক তাাগিদ দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের ভূমিকা শুধু রহস্যজনক নয়, ছিল কৌতূহলোদ্দীপকও। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ অস্বীকার করলেও সরকার আবুল হোসেনকে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এটা ২০১১ সালের ৫ নভেম্বরের ঘটনা। ঘটনাপ্রবাহের ওই পর্যায়ে ক্ষমতাসীনরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অনেকাংশে যুদ্ধই ঘোষণা করেছিলেন! প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, টাকাই যেখানে আসেনি সেখানে ঘুষ খাওয়ার ও দুর্নীতি করার প্রশ্ন আসে কীভাবে? অথচ প্রধানমন্ত্রীর ভালোভাবেই জানার কথা যে, ঘুষের বাণিজ্যে ‘সমঝোতা’ ও ‘আয়োজন’ ধরনের কিছু কথা আছে এবং ‘সমঝোতা’ হলে সবই আগাম বা নগদে দিতে হয় না; বরং ‘আয়োজন’ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। বিশ্বব্যাংক সে ধরনের কিছু তথ্য-প্রমাণই পেয়েছিল। এদিকে সরকারের পাশাপাশি দুদকও জনগণকে স্তম্ভিত করেছিল। তদন্তের নামে শোরগোল তুললেও এক সপ্তাহের মধ্যেই আবুল হোসেনকে সততার সার্টিফিকেট দিয়েছিল দুদক। দুদকের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছিলেন, ১০ শতাংশ হারে ঘুষ চাওয়ার ব্যাপারটিতে নাকি হিসাবের ‘গরমিল’ রয়েছে! অর্থাত্ ঘুষের অভিযোগ সঠিক, ভুল আছে শুধু শতকরা হারের হিসাবে! এসবের ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে যেহেতু ‘প্রভাবশালী’ অনেকের নাম এসেছিল, সে কারণে দুদকের পক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না। সরকার নিজে তো কোনো ব্যবস্থা নেবেই না।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এক বছরের বেশি সময় পরও দুদকের ভূমিকায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বরং ‘মহাভারত’ নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন। আমরা কিন্তু মনে করি, পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, বিষয়টি আর ‘শুদ্ধ’ হওয়া না হওয়ার পর্যায়ে আটকে নেই। গোলাম রহমানের নিজের মন্তব্য উল্লেখ করেই বরং বলতে হয়, ‘ডালমে’ আসলেও ‘কুচ কালা হ্যায়’। সে কারণে দুদকের কর্তারা যতই গাল ফুলিয়ে আশ্বস্ত করতে চান না কেন, বাস্তবে আবুল হোসেনদের ঘুষ-দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে বসেছে। আমরা মনে করি, সময় একেবারে ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই দুদকের পাশাপাশি সরকারেরও উচিত বিশ্বব্যাংকের দাবি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, দেশ ও জাতির জন্য পদ্মা সেতুর গুরুত্ব আবুল হোসেন ধরনের হাজারজনের চাইতেও হাজার হাজার গুণ বেশি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন