মো: বেলায়েত হোসেন
সরকার বেপরোয়া হয়ে পরিকল্পিতভাবে অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এবং এটাকেই তারা মতায় টিকে থাকা ও আবার মতায় যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। দেশের কোথাও কিছু ঘটলে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অকারণে হয়রানি, মামলা ও গ্রেফতার করে চরম হেনস্থা করছে। সরকারের দমননীতির মুখে বেপরোয়া পুলিশের হাতে রাস্তায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছেন, নাজেহাল হচ্ছেন ও রিমান্ডে যাচ্ছেন।
দেশকে অপূরণীয় তির হাত থেকে রা করতে গঠনমূলক, সহনশীল ও পরিপক্ব রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। আপনি কত বড় রাজনীতিবিদ সেটি বড় কথা নয়, আপনার কর্মকাণ্ড দেশের জন্য কতটা ইতিবাচক ও মঙ্গলজনকÑ জাতির কাছে সেটিই বড় বলে বিবেচিত। জাতির কাছে একটি সত্য দিবালোকের মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে, বর্তমান সরকার ইচ্ছা করলে দেশকে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে।
সাংঘর্ষিক ও প্রতিশোধমূলক রাজনীতি পরিহারের জন্য স্থিতিশীল আবহ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কিন্তু জাতি শাসকদলের কাছ থেকে তেমন দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্য করছে না, বরং কঠিন মারপ্যাঁচের জালে রাজনীতিকে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি নিয়ে শাসকদল অগ্রসর হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনীতিতে যা কিছু ঘটে চলেছে, তা এক পরিকল্পিত দুরভিসন্ধিরই বাস্তবায়ন বলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার শাসকদলের মতায় টিকে থাকার অস্তে পরিণত করা হয়েছে, এ ইস্যুর সুস্পষ্ট বেনিফিশিয়ারি বর্তমান শাসক দল; এর মাধ্যমে তারা বিরোধী রাজনীতিকে কোণঠাসা করে রাখার প্রাণান্তকর ও ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া তাদের স্থবির সংগঠনকে চাঙ্গা ও মনোবল হারা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও সক্রিয় করা এবং মানুষের দৃষ্টি সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও নজিরবিহীন ব্যর্থতা থেকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে সম হচ্ছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়টি এখন সর্বতোভাবে শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে পপাতহীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রা পাবে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সব মহলেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কেননা এ নির্বাচনের ওপর দেশ ও জাতির ভাগ্য নির্ভর করছে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। দেশে অরাজকতা সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করে নির্বাচন বানচালের মাধ্যমে বর্তমান শাসকদলের একাধিক স্বার্থ হাসিল হতে পারে। যেমনÑ বিএনপির মতায় যাওয়া রুখে দেয়া, দেশে সর্বগ্রাসী সঙ্কট, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, রেল মন্ত্রণালয়ের কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারিসহ আরো অসংখ্য কেলেঙ্কারি ও সীমাহীন দুর্নীতি এবং নজিরবিহীন ব্যর্থতার মাধ্যমে শাসকদলের গায়ে যে দুর্নীতির কালিমা লেগেছে তা ধুইয়ে-মুছে পরিষ্কার করার সুযোগ পাওয়া, জামায়াত-শিবিরকে দমনের নামে জাতিকে স্বাধীনতার প-বিপ এই শিবিরে বিভক্ত করা, নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে রাজনীতির মাঠ দখলে নেয়া প্রভৃতি। প্রশ্ন হলোÑ অরাজকতার মাধ্যমে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কি জনমত পে আনা যায়? নাকি মানুষের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পায়? এই দুর্ভোগের দায়ও শাসকদলকেই নিতে হয়, যেমন অতীতে অন্য দল নিয়েছে।
জনসভা, গণমিছিল ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূসিতে অবধারিতভাবে প্রমাণ হয়েছে জনগণ বিএনপির পে আছে। এখন এই জনগণের শক্তিকে বিএনপি কিভাবে এবং কোন কাজে ব্যবহার করবেÑ এই কৌশল বিএনপিকে ঠাণ্ডা মাথায় প্রণয়ন করতে হবে, মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি অনুকূল ও পরিপক্ব সময় বেছে নিতে হয়। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্তে দল-দেশ-জাতির ভাগ্য নির্ধারিত হয়। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম থেকে বিএনপির মতায় যাওয়ার আভাস-ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সেই হিসেবে বর্তমান সময়টি বিএনপির জন্য অত্যন্ত অনুকূল ও ভালো সময়।
কোন কাজটি এখন, এই মুহূর্তে করতে হবে এবং কোনটির জন্য করতে হবে অপো, রাজনীতিতে এটি নির্ধারণ করা জরুরি। চলমান রাজনীতিকে এলোমেলো করে দেয়ার একটা প্রক্রিয়া চলমান। এসব ব্যাপার বিএনপির রাজনৈতিক ভাবনায় থাকতে হবে। কাজেই দল থেকে বহিষ্কৃত ও বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় বা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতাকর্মীদের দলের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হবে, যাতে তৃতীয় প কোনো সুযোগ না নিতে পারে। জটিল ও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা রাজনীতিতে এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করলে ঘোর অন্ধকার ছাড়া কোনো স্বপ্ন চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় না। অপরিপক্ব, অনৈক্য ও অসহিষ্ণু এবং বিভাজনের রাজনীতি চূড়ান্তভাবে দেশকে নিয়ে দাঁড় করাবে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের মুখোমুখিÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে বর্তমানে রাজনীতির নামে যা কিছু ঘটছে, তাতে যেকোনো সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অজানা গন্তব্য মারাত্মক ও ভয়ানক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ফলে দেশে গৃহযুদ্ধও বেধে যেতে পারে, তাতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ধারা। মানুষ হারাতে পারে তাদের ভোটের অধিকার, পিছিয়ে পড়তে পারে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি; বহির্বিশ্বে ইমেজ সঙ্কটে পড়তে পারে দেশ।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় এটা অবধারিত সত্য। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ঠিক একই ধরনের বা মাত্রায় হয় না। এবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তা হবে আরো ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর। কাজেই সময় থাকতে পরস্পরে ভেদাভেদ ভুলে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ত্রে তৈরি করার দিকে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবেÑ যাতে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পথ এড়ানো সম্ভব হয়, যাতে সুস্থ রাজনীতির ধারা দেশে ফিরে আসে, যাতে সামনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ‘খেলা শুরু হয়েছে’ বক্তব্যের সূত্র ধরে বলতে চাই, রাজনীতিতে যে যত খেলাই খেলুন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পথেই ফিরে আসতে হয়; নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক দলের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই। নির্বাচন অনিশ্চিত তো রাজনীতিকদের জীবনও অনিশ্চিত। আশা করি ইতিহাসের বর্তমান গতিধারা এবং সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে রাজনীতিবিদেরা সচেতন আছেন।
নিষ্ক্রিয়তা মানুষের দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে আরো সক্রিয় হতে হবে। রাজপথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিদিন কোনো না কোনো শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি তালিকায় থাকতে হবে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এখন রাজনীতি কঠিন থেকে কঠিনতর রূপ ধারণ করছে। যোগ্যতা, দতা, কর্মোদ্যোগ ও অদম্য সাহস এবং যুগোপযোগী চিন্তাধারাই প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে রাজনীতিতে টিকে থাকার পূর্বশর্ত। দায়িত্ববোধ ও দ্রুত কাজ সম্পাদন পাশাপাশি চলে। কঠিন ও অরাজক পরিবেশও অনেক সময় সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে সহায়ক।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন