সরকার এখন এতটাই সন্ত্রাসবান্ধব হয়ে পড়েছে যে, তারা দিগি¦দিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এমনভাবে সন্ত্রাসীদের লালন, প্রশ্রয় ও ইন্ধন দিতে থাকে যে, প্রায় সাথে সাথেই সারা দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের খুন, গুম, অপহরণ, ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দখল করতে শুরু করে। বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মী তখন প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও আশ্রয় নেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে ক্ষমতা গ্রহণের একেবারে শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের এই কর্মকাণ্ড এই বলে ডিফেন্ড করতে থাকেন যে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির লোকেরা তাদের ওপর যে অত্যাচার করেছিল সে তুলনায় যা ঘটছে তা অতি নগণ্য। একই সাথে তিনি মিডিয়ারও কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা এ আমলের ঘটনাবলি দেখছে, বিএনপি আমলের কথা স্মরণ করছে না। তারপর ধারাবাহিকভাবে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকার এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীরা অবিরাম সাফাই গেয়েছেন এবং এখনো গাইছেন। ফলে যা হয়েছে, সেটি হলো, দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। আর সরকার প্রকাশ্যে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে তাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
আমরা তখনি এই বলে সরকারকে সতর্ক করেছিলাম যে, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হয়ে উঠবে এবং এক সময় তাদের তৈরি করা হোতাদের ঘাড় মটকে দেবে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি তেমন রূপ লাভ করে। এই সন্ত্রাসীদের মূল হোতা ছাত্রলীগ। তারা লেখাপড়া শিকেয় তুলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজিতে অধিক মনোনিবেশ করে। এতে নিজেদের মধ্যেই তাদের স্বার্থের সঙ্ঘাত ব্যাপক রূপ লাভ করে। কিছু দিনের মধ্যেই দেখা গেল যে, টেন্ডারবাজি কিংবা প্রভাব বিস্তার বা বজায় রাখার দ্বন্দ্বে তারা নিজেরাই হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই অনেক প্রাণ গেছে। সম্ভবত আরো বহু মা সন্তানহারা হবেন। এ ক্ষেত্রেও আশ্চর্যজনকভাবে আমরা লক্ষ করেছি যে, সরকার খুনিদের পক্ষই নিয়েছে। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে যদি হানাহানির ফলে কেউ খুন হয়, তবে নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে যে জীবিত আছে সরকার তার পক্ষ গ্রহণ করে।
এটি শুধু ছাত্রলীগ নয়। যুবলীগ বা মূল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও সত্য। ভোলার অওয়ামী লীগ এমপি শাওন ব্যাপক সন্ত্রাসের মাধ্যমে ওই আসন দখল করে। পত্রপত্রিকায়, টিভি চ্যানেলগুলো তার খবর-ফুটেজ প্রকাশ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রভুভক্ত নির্বাচন কমিশন ও সরকার উন্নাসিক মনোভাবের পরিচয় দেয়। পরে দেখা গেল স্বার্থের দ্বন্দ্বে এমপি শাওনের নিকটজন ইব্রাহিম খুন হলেন। তথ্য-প্রমাণ মিলিয়ে মিডিয়া বলতে থাকে যে, এই খুনের জন্য এমপি শাওনই দায়ী। ইব্রাহিমের স্ত্রী অবিরাম বলতে থাকলেন যে, এমপি শাওনই তার স্বামীকে খুন করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতেরও চেষ্টা করলেন। কিন্তু সে সাক্ষাৎকার তিনি কখনো পাননি। বিভিন্ন তদন্তে শেষ পর্যন্ত শাওনকে নির্দোষ দেখানো হয়।
এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি সম্ভবত এই যে, তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। যে সন্ত্রাসী খুন হয়েছে সে তো গেছেই। যে বেঁচে আছে তাকে সরকারের খুব প্রয়োজন। তাই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে রামদা, হকি স্টিক, পিস্তল উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ছোড়ে, পুলিশ নির্বিকার থাকে। তারাও সম্ভবত এ ধারণা করে যে, পার্টি তো অভিন্ন। যে জেতে জিতুক। তাদের করার কিছু নেই। কিংবা এর কোন গ্রুপ যে কোন নেতা-মন্ত্রীর, সেটি পুলিশের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তারা বরং বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে আমরা কোনো পক্ষেই যোগ দেইনি। কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেইনি। সুতরাং আমরা নির্দোষ। কিন্তু পুলিশের দায়িত্বের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাও অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি পুলিশের সামনেই বেআইনি অস্ত্র নিয়ে গোলাগুলি করতে থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই পুলিশের কর্তব্য হচ্ছে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু আমরা মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদন দেখলাম যে, পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষের ওপর নির্বিচারে গুলি করছে। গুলি শেষ হয়ে গেলে আবার প্রকাশ্যেই ম্যাগজিন লোড করে নিচ্ছে।
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দৃশ্য তো এখন অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে। সেটিও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা করছে পুলিশের সামনেই। পুলিশ মনে হয় সিনেমার শুটিং দেখছেÑ এভাবে নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকে। এই লালিত সন্ত্রাসীদের হাতে মানুষের প্রাণ গেছে। তার বিহিতের কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি, পুলিশও না। পুলিশের ভেতর ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক অতি উৎসাহী লোক আছে। আর অনেক পুলিশের হাত-পা যেন বাঁধা। তারা সরকারের হুকুমে চলে। ফলে পরিস্থিতির প্রতিদিন অবনতি ঘটছে। এই দানবেরা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে সেটা আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লক্ষ করেছি। লক্ষ করেছি প্রাথমিক শিক্ষকদের জীবন-মরণের দাবি আদায়ের লড়াইয়েও।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা দেখছি, এই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সত্যি সত্যি অপ্রতিরোধ্য দানব হয়ে উঠেছে। সহকর্মী কিংবা প্রতিপক্ষ ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনা তো আছেই। সেই সাথে এখন তারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের কিল, ঘুসি, লাথি মারতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। ব্যাপারটি খুব অস্বাভাবিক নয়। শিক্ষা বিষয়টায় এই সরকারের আমলে এতটাই দলীয়করণে পিষ্ট হয়েছে যে, শিক্ষক হতেও যোগ্যতা বড় গুণ হয় না। দলীয় আনুগত্যই এক নম্বর যোগ্যতায় পরিণত হয়। ফলে শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। ভর্তির ক্ষেত্রে এ অনাচারের ফলে প্রকৃত মেধাবী ছাত্ররা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না। আসছে দলীয় সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজেরা। এসেই অস্ত্রের গরমে টেন্ডারবাজি শুরু করে দিচ্ছে। শিক্ষকদেরও এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে হচ্ছে। কারণ নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে তারাই তো এই সন্ত্রাসীদের ভর্তি করিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো এই শিক্ষকেরাও বুঝতে পারেননি যে, এই সন্ত্রাসীরা এক সময় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হবে এবং তাদের ওপরও চড়াও হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে এটি শুরু হয়েছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে। সেখানে অযোগ্য ভিসি ও প্রো-ভিসির অপসারণের দাবিতে শিক্ষকেরা আন্দোলন করছিলেন। একসময় সে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। সরকার শিক্ষাঙ্গনের কল্যাণ চাইলে অনেক আগেই এই ভিসিকে অপসারণ করে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দিত। কিন্তু ভিসি যেহেতু দলের লোক। সুতরাং বুয়েট বন্ধ হয়ে গেলে হয়ে যাক, সরকার নিয়োজিত অযোগ্য ভিসিকেই বহাল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের কোনো দল-মত ছিল না। সব শিক্ষক একযোগে অন্দোলন করছিলেন। এইপর্যায়ে সরকার আন্দোলনরত শিক্ষক-ছাত্রদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়। তারা শিক্ষকদেরও অপমান অপদস্থ করতে শুরু করে। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রো-ভিসিকে সরে যেতেই হয়েছে।
সরকার এখান থেকে যদি শিক্ষা নিতে পারত, তা হলো গুণ্ডা-মাস্তান দিয়ে কোনো ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত শক্তিকে দমিয়ে দেয়া যায় না। ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা বিস্তৃত হতে থাকে। আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এরপর এমন ঘটনা ঘটে। এসব গড়িয়ে সর্বশেষ ঘটনা ঘটে কুষ্টিয়ায় ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার মাধ্যমে। নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন শুরু করেছিল বেশ আগেই। সে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৯ নভেম্বর শিক্ষক সমিতি প্রশাসন ভবনের নিচে অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সকাল ১০টায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এম ইয়াকুব আলীর সভাপতিত্বে ধর্মঘট শুরু হয়। এতে দল মত নির্বিশেষে আড়াই শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। বেলা ১১টার দিকে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক চাকরিপ্রার্থী ও বহিরাগত ছাত্রলীগের অবস্থান কেন্দ্র থেকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একটি জঙ্গি মিছিল বের করে।
সে মিছিল থেকে যেসব স্লোগান দেয়া হয়, তা ছিল অশ্রাব্যও উসকানিমূলক। সেসব স্লোগানে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইতর গালিগালাজই ছিল সর্বস্ব। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা জোর করে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে পড়ে এবং শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘটের ওপর হামলা চালায়। ধর্মঘটে থাকা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তারা কোনো বাধা না মেনে শিক্ষকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালাতে শুরু করে। সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে শিক্ষকেরা এলোপাতাড়ি ছোটাছুটি শুরু করেন। শিক্ষকদের বাঁচাতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা এগিয়ে এলে তাদের ওপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা চেয়ার ভাঙচুর করে এবং তাদের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। অবস্থান ধর্মঘটে ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর করে ছুড়ে ফেলে দেয়। কর্তব্যরত সাংবাদিকেরা এর ছবি তুলতে গেলে আদরের ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাদের ওপরও চড়াও হয়। এই ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
ঘটনার বিবরণটা একটু দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু তাজা খবর তাই বিবরণটা পাঠকদের আর একবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি। ছাত্রলীগের হামলায় ৩০ জন শিক্ষক, ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এম ইয়াকুব আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. আ ছ ম তরিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি ড. আবুল আহসান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. রুহুল কে এম সালেক, সহসভাপতি ড. মাহবুব রহমান আছেন। প্রফেসর আবুল আহসান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠী ছিলেন। আমরা কাছাকাছি সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি। তিনি বরাবরই আওয়ামীবান্ধব। তাতে আমাদের সম্পর্ক কোনো দিন প্রভাবিত হয়নি। তার জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল।
গুরুতর আহত শিক্ষক কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহত শিক্ষক প্রফেসর ড. রুহুল আমিন ভূঁইয়া ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ধর্মঘটে উপস্থিত এমন কোনো শিক্ষক বাকি নেই যারা ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে কিল-ঘুসি খাননি। ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অভিযোগ করেছেন যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘটে ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের ভাড়াটে গুণ্ডাবাহিনী চাপাতি, রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেছেন চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির কাছে।
আমার দেশ পত্রিকায় দেখলাম, সহপাঠী প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষকতা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ ধরনের একটি নির্লজ্জ ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হলো। ছাত্ররা শিক্ষকদের পেটাবে এটা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।’ আশা করি, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সচেতন সহপাঠী ড. আবুল আহসান চৌধুরী উপলব্ধি করেছেন যে, তারা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব দাওয়াত দিয়ে এনেছিলেন। প্রথম প্রথম ভালো লেগেছিল ছাত্রলীগের সহযোগিতা। কিন্তু নিজে বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রেহাই পাননি। শিক্ষক হলে অনেক কিছু মানতে হয়। শিক্ষকেরা বোধ করি এর কোনো কিছু মানেন না।
আমি বোধ হয় দাবি করতে পারি যে, ড. আবুল আহসান চৌধুরীর সাথে ছাত্রজীবনের পরেও আমার সুসম্পর্ক ছিল এবং এখনো আমি বিশ্বাস করি যে, ফোন করলে তিনি ধরবেন। ফোন করিনি। একজন পেশাদার ব্যক্তি যখন অসম্মানিত হন তখন আমি নিজেও অসম্মানিত হতে থাকি। যা হোক, ওই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের কোনো ক্যাডার গ্রেফতার হয়নি। কেউ অভিযুক্ত হয়নি। সরকারের মনোভাব হলো, তারা যা করেছে ভালোই করেছে। এর অর্থ কী দাঁড়াল? অর্থ দাঁড়াল এই যে, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা এমনকি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতিকে লাঞ্ছিত করলেও কোনো বিচার-ফিচার হবে না। জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য এই যে, কোনো স্বৈরাচার কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি আমলে নিলে ভালো করতেন।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন