শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৩

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এক তরফা নির্বাচন নয় একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে আ’লীগ?


গত দুই দিনে কতগুলো মারাত্মক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। এসব ঘটনাবলী দেখে শুধু মাত্র বুদ্ধিজীবীরা নন, দেশের শিক্ষিত সচেতন সমাজ রীতিমত শংকিত এবং আতংকিত। এসব ঘটনাবলীর গতি, দ্রুততা এবং ধরন দেখলে বোঝা যায় যে সরকার শুধুমাত্র এক তরফা নির্বাচন করার জন্যেই এগিয়ে যাচ্ছে না, এই এক তরফা নির্বাচনের পেছনে তাদের একটি ভয়ঙ্কর দুরভিসন্ধিও রয়েছে। আর সেটা হল, দেশে বাকশাল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা তথা একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সারা পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশের নিয়ম এই যে, একটি সরকার যতই স্বৈরতান্ত্রিক হোক না কেন, অন্তত নির্বাচনকালে তারা কিছুটা উদারপন্থী আচরণ করে এবং গণতন্ত্রের ন্যূনতম আচরণবিধি মেনে চলে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার করছেন ঠিক তার উল্টা। যতই দিন যাচ্ছে তার সরকার ততই স্বৈরাচারী হচ্ছে। দেশকে ততই তারা একটি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
শনিবার ভোর রাত ৪টায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি সমস্ত গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বাইরে। তারা বিএনপি অফিসের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক পথে ঢোকেনি। অর্থাৎ সিঁড়ি ব্যবহার করেনি। তারা মই বেয়ে ওপর তলায় উঠে যেখানে জনাব রিজভী থাকতেন। তারা বাইরে থেকে জানালার কাচ ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে। অতঃপর যে রুমে রিজভী আহম্মেদ থাকতেন সেই রুমের দরজায় লাথি মারা শুরু করেন। তাদের লাথির শব্দে রিজভী আহমেদ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন এবং বলেন যে, এসব কা- না করে স্বাভাবিকভাবে এসে তাকে গ্রেফতার করতে পারতো। তারা শুধুমাত্র রিজভীকে গ্রেফতারই করেনি, অফিস সহকারী বেলাল আহমেদকেও গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যেই বিএনপি অফিসে হামলার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের ক্যামেরাসহ অফিসে হাজির হন। পুলিশ একাধিক ক্যামেরাম্যানের কাছ থেকে তাদের টিভি ক্যামেরা কেড়ে নেয় এবং ঐ সব ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গ্রেফতারের আশঙ্কায় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মাসাধিককাল থেকে বিএনপি অফিসেই অবস্থান করছিলেন। রিজভীর গ্রেফতারের পর অপর যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদকে দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি টিভি সাক্ষাৎকারে সালাউদ্দিন আহম্মেদ রিজভী আহম্মেদকে বিপ্লবী যুগ্ম মহাসচিব এবং সময়ের সাহসী সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক অফিসে পুলিশের এই হামলা বর্বরোচিত। তবে এটাই তাদের প্রথম হামলা নয়। এর আগেও তারা বিএনপি অফিসে হামলা করে। সেবার তারা অফিস তছনছ করে। এবারও তারা তছনছ করল। সেবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৫৮ জন সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। সেবার নানা টালবাহানা করে ঐ ১৫৮ জন নেতাকে প্রায় পৌনে ২ মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়। অবশেষে উচ্চ আদালত তাদের জামিন দিলে আওয়ামী সরকার তাদের কারামুক্ত করতে বাধ্য হয়।
রিজভী আহমেদকে গ্রেফতার করার পূর্বে সরকার বিএনপি ও ১৮ দলের ১৬ জন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার আওয়ামী ক্যাডারের মতো স্পর্ধা সহকারে বলেন যে, যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হবে।
দুই.
অবরোধের শেষ দিনে সন্ধ্যা বেলায় বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করার অভিযোগে যে ১৭ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর  সদস্যসচিব আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম হিরু, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রওশন, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের মহানগর উত্তর সভাপতি মামুন হাসান এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপির সমগ্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অন্য কথায় এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্বশূন্য করা হচ্ছে। এর আগে তারা একই রকম ঠুনকো অভিযোগে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ৫ নেতাকে গ্রেফতার করেছে। এই ৫ নেতা হলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সংসদ সদস্য এম কে আনোয়ার, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং জনাব শিমুল বিশ্বাস। এই সরকার এমন উন্মাদ এবং হিং¯্র হয়ে উঠেছে যে, তারা এই ধরনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেয়। তবে এসব নেতার কপাল ভালো যে, ২৪ ঘণ্টা পরেই হাইকোর্ট সেই রিমান্ড স্থগিত করে। এর পর তাদের মুক্তির আবেদন জানানো হলে, অধিকতর শুনানির প্রয়োজন, এ কথা বলে তাদের মুক্তি আটকে রাখা হয়। ওপরের এই তালিকা এবং বর্ণনা থেকে দেখা যায় যে, একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপির সমস্ত সিনিয়র নেতা হয় কারাগারে আটক রয়েছেন, না হয় পলাতক রয়েছেন।
ইতঃপূর্বে আওয়ামী সরকার ১৮ দলের অন্যতম বৃহৎ শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে প্রচ- দমন নীতির দ্বারা কোণঠাসা করেছে। জামায়াতের প্রথম সারি, দ্বিতীয় সারি ও তৃতীয় সারির সমস্ত নেতাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এরপরেও যে সব মধ্যম সারির নেতা রয়েছেন তাদের সকলেই আন্ডার গ্রাউন্ডে গেছেন বা আত্মগোপনে আছেন। ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতিকে শুধু গ্রেফতার করাই হয় নাই, গ্রেফতারের পর রিমান্ডের নামে তার ওপর এমন ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে যে, তিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তিন.
গত শনিবার অবরোধ কর্মসূচি পালনের পরিবর্তে ১৮ দলীয় নেতৃত্ব এই শনিবারে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। ঘোষণায় কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, এই বিক্ষোভ কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে  সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা ছিল। গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সভার অনুমতির জন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দ পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ছোটাছুটি করেন। সন্ধ্যার পর বিএনপিকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়  যে, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি বিএনপি তথা ১৮ দলকে দেয়া হবে না। তখন বাধ্য হয়ে বিএনপিকে শনিবার থেকে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়।
যে কথা দিয়ে আজকের লেখা শুরু করেছিলাম সেই কথায় আবার ফিরে যাচ্ছি। এই সরকার মুখে বলছে যে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং কোনরূপ জুলুম-নির্যাতন পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগছে। এটিই স্বাভাবিক। পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনকালীন সরকার শুধুমাত্র দৈনন্দিন রুটিন কাজ ছাড়া নীতিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না। কিন্তু হাসিনা সরকার সব কিছুরই ব্যতিক্রম। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে টিকফা চুক্তি সম্পাদন করেছে। স্বাভাবিক সরকারের সময়েও অন্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পাদিত চুক্তি জাতীয় সংসদে পেশ করতে হয়। অথচ টিকফা চুক্তির ক্ষেত্রে নির্লজ্জভাবে সংবিধান লংঘন করা হয়েছে। যেদিন বলা হয়েছে যে আর সংসদের অধিবেশন বসবে না, যেদিন বলা হয়েছে যে সেটিই ছিল সংসদের শেষ অধিবেশন, তার পরদিন টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এত বড় বেআইনী কাজের পেছনে একটি মাত্র কারণ ছিল। আর সেটি হল, হাসিনা সরকারের প্রতি রুষ্ট মার্কিন সরকারকে খুশি করা। একদিকে বিরোধী দলকে বলা হচ্ছে নির্বাচনে আসুন, আবার অন্যদিকে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা ও কর্মীদের পাইকারী হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনের পূর্ব শর্তই হলো সব দল মত প্রকাশের সমান সুযোগ পাবে। অথচ হাসিনা সরকার কোনো মিছিল করতে দিচ্ছে না। এমন কি মিটিংও করতে দিচ্ছে না।
একদিকে তারা আলোচনার কথা বলছে, অন্যদিকে তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। আলোচনার কথা বলে আবার ২রা ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ঘোষণা করেছে। পাঠক ভাইয়েরা বলুন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পরে কি আর আলোচনার কোনো সুযোগ থাকে? ঐ দিকে বর্তমান সংসদকে শুধুমাত্র অক্ষতই রাখা হয়নি, ঐ সংসদের ৯০ শতাংশ সদস্যকে আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। এর অর্থ হলো তাদের পদ শূন্য হল না, অথচ সে পদে আবার নির্বাচন হচ্ছে। আইনের ক্ষেত্রে এমন গাঁজাখুরি গোঁজামিল অবস্থা জীবনে শোনা যায় নাই।
আওয়ামী লীগের নীলনকশা হলো এই যে, ইলেকশনের পরিকল্পনা এমনভাবে রচনা করা যাতে করে নির্বাচনী সীমার চারদিকে বেড়া দেয়া হয়, যাতে করে বিএনপিসহ ১৮ দল সেই বেড়া ডিঙ্গিয়ে নির্বাচনী অঙ্গনে না আসতে পারে। এরপর নির্বাচনটি পার করতে পারলে তাদের আর পায় কে। তাদের পূর্বসূরি শেখ মুজিবর রহমানের কীর্তিকে অনুসরণ করা এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সেই পথেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ, সুপরিকল্পিতভাবে। সেই নীলনকশা বস্তবায়নের জন্য তারা অনুসরণ করেছে সেই মহাজনী পন্থা, “যখন যেমন তখন তেমন ইয়া হোসেন”।
জাতির সামনে মহাদুর্যোগ। আকাশে সেই মহাদুর্যোগের ঘনঘটা। কবি নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি।
দুর্গম গিরি কান্তার মরু
দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে
যাত্রীরা হুঁশিয়ার।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ


দেশে সংঘাতময় এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত জনগণ নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকটে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কারো কথাই শুনছে না সরকার। অথচ দেশের মানুষ চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। গণতন্ত্রের কথা বললেও সরকার জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকার তার সাজানো ছকেই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে সংঘাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজপথে ককটেল ফুটছে, গুলী চলছে। হতাহত হচ্ছে দেশের মানুষ। এ ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে দোষারোপের রাজনীতি। দেশে আজ যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার দায় সরকার কোনাভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না। একদিনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। বিগত বছরগুলোতে সরকার একদিকে বিরোধী জোটের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে, অপরদিকে ইচ্ছেমত সংবিধান সংশোধন করেছে এবং তৈরি করেছে নিত্য-নতুন আইন। এসব কর্মকা- দেশ ও জনগণের স্বার্থে করলে কারো কিছু বলার ছিল না, কিন্তু সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার প্রবণতা স্পষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ভুল স্বীকার করছে না বরং সংবিধানের দোহাই নিয়ে চাতুর্যের পথ অবলম্বন করে জাতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জ্বলন্ত এমন পরিস্থিতিতেও সরকার দেশ ও জনগণের দিকে তাকিয়ে ঔদার্যপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। ক্ষমতাকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে রেখেছেন তারা। এর বড় প্রমাণ তাদের ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। জনগণ মহাজোট সরকার ও বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করছে না। শুধু নামের পার্থক্য মানুষের কাছে অর্থহীন বিষয় বলে মনে হচ্ছে। এরপরও সরকার থেমে নেই। চাতুর্যের পথেই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আবারও চিঠি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। গত বুধবার পৃথক পৃথক চিঠিতে দুই নেত্রীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংলাপে বসে বিদ্যমান সংকট দূর করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের মত দেশের জনগণও চায় দুই নেত্রীর মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ সংলাপ। তবে বাস্তব কারণেই এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বটাই প্রধান। সরকার আন্তরিক না হলে সংলাপের আয়োজন ও বাস্তবায়ন কোনটাই সম্ভব নয়Ñ এ কথা জনগণ বেশ ভালভাবেই জানে। তাই সংলাপের ব্যাপারে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী কী ভূমিকা পালন করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বর্তমান সময়ে দেশের জনগণের দৃষ্টি সংলাপ পরিস্থিতির পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মকা-ের দিকেও নিবদ্ধ রয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভা ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ হিসেবে কেবল রুটিন কাজ পরিচালনা করার কথা। নীতিনির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এই সরকার। নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা নয় তাদের। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচনকালীন সরকার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আন্তর্জাতিক চুক্তি করছে। নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই প্রশাসনে রদবদল করছে। গ্রেফতার করছে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের। এমন আচরণ লক্ষ্য করে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচনকালীন এই সরকারের আমলেও আবার বিরোধী জোটের তত্ত্বাবধায়ক তথা নির্দলীয় সরকারের যৌক্তিকতাই প্রমাণিত হলো।
শুধু নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নয়, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্তও নিচ্ছে বর্তমান সরকার। এ প্রসঙ্গে টিকফা চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়, উল্লেখ করা যায় নির্বাচন কমিশনকে এড়িয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন উদ্যোগের কথা। এখানে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং সহকারী শিক্ষকদের একধাপ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের বেতন স্কেলও বাড়বে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মিলিয়ে সারাদেশের প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক এ সুবিধা পাবেন। আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য সুবিধা লাভের বিরোধী নই, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত বিশাল এ পেশাজীবী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া কি নির্বাচনকালীন সরকারের রুটিন কাজের মধ্যে পড়ে? এতে কি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না? এসব কারণেই নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আর নির্বাচনী আচরণবিধির প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা প্রসঙ্গে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকার যেভাবে আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাইছে, তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এমন অবস্থায় একদলীয় সাজানো নির্বাচনের বদলে সংলাপের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের চিঠিতেও তেমন বার্তা পাওয়া গেছে। বর্তমান সরকার তথা আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন একটি পরীক্ষার সম্মুখীন। আর সে পরীক্ষাটি হলো, তিনি দল ও ক্ষমতার স্বার্থ রক্ষা করবেন, নাকি রক্ষা করবেন জাতীয় স্বার্থ? এক্ষেত্রে তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তার উপরই নির্ভর করবে ইতিহাসে তার স্থান। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কে রুধিবে ঐ জোয়ারের জল


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৭১ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হয়েছে শুক্রবার ভোর ৫টায়। এই অবরোধে পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী হামলাকারীদের হামলায় ১৯ জন নাগরিক শাহাদতবরণ করেছেন। আমরা দলবাজ আওয়ামী পুলিশ বাহিনীকে দেখেছি, কী বীরবিক্রমে এরা এ দেশের মানুষের ওপর নির্বচার গুলি চালিয়েছে, যে গুলি চালানোর অধিকার তাদের নেই। সরকার হয়তো নেপথ্যে সে অধিকার তাদের দিয়ে দিয়েছে। আর দলীয়কৃত গোপালি পুলিশ বাহিনী নিজ উদ্যোগেও এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। এরা হয়তো মনে করছেন, এভাবে নির্বিচার মানুষ হত্যার মাধ্যমে পুরস্কৃত হবেন, কিন্তু এ কথা একবারও বোধ করি স্মরণে আসেনি যে, এভাবে সাধারণ মানুষ হত্যার জন্য একদিন তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে, দাঁড়াতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়। এর অন্য কোনো কারণ নেই। কারণ একটাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনন্তকাল ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান। কিন্তু ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আর তিনি অমর নন। জবাবদিহি সম্ভবত একদিন তাকেও করতে হবে। 
ধারণা করা হয়েছিল, বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোটের এমন সাংগঠনিক শক্তি নেই যে, এরা ঘোষিত এই আন্দোলন সফল করতে পারবে। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অবিরাম তা প্রচারও করছিল। এটা ছিল ১৮ দলীয় জোটের মনোবল ভেঙে দেয়ার একটা কৌশল মাত্র। জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে যে, এরা যেন একটি আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল। সেই আহ্বান পাওয়া মাত্র দেশের সর্বস্তরের মানুষ একযোগে সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 
কথা ছিল, নির্বাচন কমিশন যদি একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তাহলে সেই মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ১৮ দলীয় জোটকে এতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছিল যে, তারা ভাবতেও পারেনি, সত্যি সত্যি এই জোট দেশ অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের ধারণা ছিল পেশিশক্তি, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি এসব দিয়ে তারা বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকেরা জনতার রুদ্ররোষ কী প্রবল হয় সে কথা যেন একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথম থেকেই নতজানু। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তার যে ক্ষমতা সেটি তিনি সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তখন সংবাদপত্রগুলোতে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সরকার সমর্থক একটি পত্রিকায় এমন কার্টুনও ছাপা হয়েছিল, সিইসি নিজের হাত কেটে ডালায় তুলে সরকারকে উপহার দিচ্ছেন। এমন বেহায়া নির্বাচন কমিশন এ দেশে আর কখনো আসেনি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঠিকই বলেছেন, নির্বচন কমিশন এখন সেবাদাস থেকে সরকারের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের তাঁবেদারি কারার জন্যই এমন আত্মমর্যাদাহীন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আসনে বসিয়েছে। 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনোরূপ আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করেননি। সরকার যেভাবে বলেছে, তিনি ঠিকঠিক সেভাবেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই তফসিল ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই ৪৮ ঘণ্টার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধের ডাক দেয় বিরোধী দল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে তার দেয়া ভাষণ শেষ করেন রাত ৮টায়। জনগণ এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি। সাথে সাথেই সারা দেশে শুরু হয়ে যায় অবরোধ আর প্রতিরোধ। জনতা প্রায় সাথে সাথেই রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করে ফেলে। এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারকে বন্দী করে ফেলে রাজধানী ঢাকায়। 
এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে জনসভা করতে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাড়া করে আনা কিছু লোক জনসভায় হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা তাদের সবার কাছে জানতে চেয়েছেন, অপনারা নৌকায় ভোট দেবেন তো? হাত তুলে দেখান। ভাড়াটে জনতা হাত তুলেছে। শেখ হাসিনা কী খুশি! এই জনতার কয় শতাংশ শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ডেইলি স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জনমত জরিপে দেখা গেছে, এখন ভোট হলে ৫৫ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আর ২৮ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে আওয়ামী লীগকে। এর আগেও প্রথম আলো ও যুগান্তরের জনমত জরিপে দেখা গেছে, ভোটের বিচারে অনেক পিছিয়ে আছে 
আওয়ামী লীগ। 
এরপরও ক্ষমতায় থাকার কী বুদ্ধি। সেটা হলো বিএনপি যেন আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। সেই বুদ্ধির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী একদলীয় নির্বাচন করার অপকৌশল অবলম্বন করেন। সেটি তিনি এখন করেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মধ্য দিয়ে তিনি তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। বিএনপির একটিই দাবি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। শেষ পর্যন্ত এরা দাবি করল প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। ওই পদে দিতে হবে নির্দলীয় কোনো ব্যক্তিকে। এটি শুনে প্রধানমন্ত্রী যেন আঁতকে উঠলেন। তিনি তড়িঘড়ি করে মন্ত্রীদেরও যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিলেন। মন্ত্রীদের এখন একজন পিয়নকেও বদলি করার ক্ষমতা নেই। আর সরকারি কর্মচারীদের হাতে রাখার জন্য তিনি দুদক আইনে পরিবর্তন আনলেন। সে পরিবর্তন হলো কোনো সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া দুদক কোনো মামলা করতে পারবে না। অর্থাৎ নাগরিকদের মধ্যে তিনি এক ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করলেন। দুদক যদি সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে না পারে তাহলে কোন এখতিয়ারে এই দুদকই একজন সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করবে? অথচ সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকই সমান। 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ রকিবউদ্দিন হাওয়া থেকে যখন খবর পেলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে কথা হয়েছে তখন তিনি বললেন, যদি সমঝোতা হয় তাহলে ২৪ তারিখের পরও নির্বাচন করা যেতে পারে। এরপর হুট করে তিনি ঘোষণা করে বসলেন, আর দেরি করা যায় না। অতএব নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করা হলো। এ ক্ষেত্রেও মনে হয় বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য সরকারি মতলবের তিনি অংশীদার 
হয়ে গেলেন। 
কিন্তু জনগণ তো প্রস্তুতই ছিল। তারা তো এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সেটি প্রমাণ হয়ে গেল। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি ঘোষণার আগেই তারা রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ করল। জনতার শক্তি এটাই। জনতা যখন জোয়ারের জলের মতো জেগে উঠে ফুঁসে উঠছে, তখন কোনো শক্তিই তাদের প্রতিহত করতে পারবে না। 
দিন ধরে শেখ হাসিনা বলছেন, অবরোধ ডেকে ঘরে বসে থাকেন কেন। রাস্তায় নেমে আসেন। দারুণ আহ্বান! রাস্তায় নেমে এলেই গ্রেফতার করা খুব সহজ হয়ে ওঠে। রাস্তায় ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আ স ম হান্নান শাহ, মীর নাসির উদ্দিন, গোলাম আকবর খন্দকার। সাথে সাথেই তাদের ধরে জেলে পাঠিয়েছেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু নেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তখন মিন্টুকে ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আর শেখ হাসিনাসহ তার সব পারিষদ এখন চিৎকার করে বলছেন, আলোচনায় বসুন। সর্বদলীয় সরকারে আসুন। কোন মন্ত্রণালয় চান নিয়ে যান। কিন্তু শেখ হাসিনা থাকবেন প্রধানমন্ত্রী পদেই। 
কিন্তু ১৮ দলীয় জোটসহ দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসমাজ একযোগে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনলে এই সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না। অথবা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে। সমাধান সেখানেই। এ দিকে কেউ কর্ণপাত করছে না। বিরোধী দলকে অবরোধ ডেকে রাস্তায় নেমে আসার অহ্বান জানালেও সরকারি দলের অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন। এসব নেতাও কার্যত জনতার রোষে গৃহবন্দী। আওয়ামী লীগ অফিস অথবা বিবি এভিনিউতে তাদের যত হাঁকডাক। বহু সাবেক মন্ত্রী এলাকায় যেতেই সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে যাচ্ছেন পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে। এমপিদের অবস্থাও তাই। ৩০ জন জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অবস্থা কতটা করুণ যে, অবরোধের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম বললেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাগবে কেন? আপনারা মাঠে যান। গিয়ে এই জনতার মোকাবেলা করুন। দেখি। মাঠে গেলে জনতার রুদ্ররোষে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবেন। 
এরই নাম জনতার জাগরণ। যখন তা ঘটে তখন জোয়ারের পানির মতো সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এখন ঘটেছে জনতার সেই জাগরণ। 


শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আওয়ামী লীগ নেতা পারবেন না... পারবেন রাষ্ট্রপতি


এটা আর মোটেও নতুন খবর নয় যে, সরকারের যোগ্য বশংবদের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে তফসিল ঘোাষণার মধ্য দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের রাজনৈতিক সংকটকে অনেক ভয়ংকর করে তুলেছেন। ৭১ ঘণ্টার অবরোধেও তার সম্বিত ফিরে আসেনি। অবরোধের শেষদিন গত ২৮ নবেম্বরও তিনি শুনিয়েছেন, পরিস্থিতি নাকি ভালোই আছে! ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীনরা যথারীতি সংবিধানের নাম জপে চলেছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে সে কথাটাও আউড়ে চলেছেন তারা। অন্যদিকে বিরোধী দল ও দেশের বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি দৃশ্যপটে আসছেন বিদেশীরাও। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর প্রধান দুই দলের সংলাপ বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। চীনের রাষ্ট্রদূত লী জুনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, চীন একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, উন্নত এবং ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশ দেখতে চায়। প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে চীন যে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে সে কথাও জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গণচীনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেশী-বিদেশী আরো অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীও রয়েছেন, সঙ্গত নানা কারণে যাদের বক্তব্য তেমন গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হচ্ছে না। ফলে জানা যাচ্ছে না তাদের মনোভাব সম্পর্কেও। তা সত্ত্বেও দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ধরে নেয়া যায়, সাধারণ মানুষ তো বটেই, বাংলাদেশের ব্যাপারে যাদের সামান্য আগ্রহ রয়েছে তাদের সবাই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও ভীত হয়ে উঠেছেন। ড. কামাল হোসেনদের উদাহরণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে ভিন্নমত এমনকি বিরোধিতা থাকলেও রাষ্ট্রপতির কাছে তারা ছুটে গেছেন আসলে দেশ, জনগণ এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে। কথাও তারা যথার্থই বলেছেন। সরকার যদি বিএনপিকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা চালায় তাহলে প্রাণবিনাশী সহিংসতাই শুধু সর্বাত্মক হতে থাকবে না, গণতন্ত্রও বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। আর গণতন্ত্র যদি না থাকে তাহলে এক পর্যায়ে টান পড়বে দেশের সমগ্র অস্তিত্ব নিয়েও। পরিণতিতে বিপন্ন হবে দেশের স্বাধীনতাও। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এ কথাটাই চীনের রাষ্ট্রদূতের মুখ থেকেও বেরিয়ে এসেছে। তিনি যখন বলেন, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ শুধু নয়, চীন ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশও দেখতে চায় তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, চীন নিশ্চয়ই এমন কিছু লক্ষণ দেখতে পেয়েছে যার পরিণতিতে বাংলাদেশ এমনকি তার ‘স্বাধীনতা’ও খুইয়ে বসতে পারে। আমরা চীনের রাষ্ট্রদূতের এ মন্তব্যটিকে অত্যন্ত গুরুতর মনে করি।
একই কারণে সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সম্প্রতি সবার চোখ নিবদ্ধ হয়েছে বঙ্গভবনের তথা রাষ্ট্রপতি আবদ;ুল হামিদ এডভোকেটের দিকে। রাষ্ট্রের প্রধান ‘অভিভাবক’ এবং ‘জাতীয় ঐক্যের প্রতীক’ হিসেবে সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে ভূমিকা পালনের জন্য রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে তার প্রতি ক্রমাগত অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই অনুরোধ জানাতে এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোটের নেতারা বঙ্গভবনে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পরপর সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারাও রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা সহিংসতাকে প্রতিহত না করা গেলে এবং প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা চালানো হলে গণতন্ত্র ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। মারাত্মক সে পরিণতির কবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সচেষ্ট হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেনসহ বিশিষ্টজনেরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেট নিতান্ত অসহায়ের মতো নিজের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন, সদিচ্ছা থাকলেও তার পক্ষে ১৮ দলীয় জোট এবং বিশিষ্টজনদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূমিকা পালন করা বা তাদের দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে তাদের বক্তব্য ও দাবিগুলোকে তিনি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন।
ঘটনাপ্রবাহে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেটের সদিচ্ছার দিকটিই বেশি গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্যে এসেছে। সৃষ্টি হয়েছে সংশয়েরও। এর পেছনে বাস্তব কারণও রয়েছে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে আবদুল হামিদ এডভোকেট যখন স্পিকার ছিলেন তখনকার কিছু ঘটনা স্মরণ করলেই সংশয়ের কারণ জানা যাবে। যেমন ২০১১ সালের জুন মাসে বাজেট অধিবেশন চলাকালে সদস্যদের অনুপস্থিতির ব্যাপকতা দেখে রাগে-দুঃখে রসের হাঁড়ি খুলে তিনি বলে বসেছিলেন বাজেটের ওপর অলোচনার সময় মন্ত্রীদের চৌদ্দ আনাই অনুপস্থিত থাকেন। কোনো কারণে মন্ত্রিসভার চার আনা-ছয় আনা সদস্য অনুপস্থিত থাকতে পারেন কিন্তু ১৪ আনার অনুপস্থিতি অনাকাক্সিক্ষত। এ পর্যন্ত এসেই স্পিকার আবদুল হামিদের সম্ভবত মনে পড়েছিল, আনা’র হিসাব চলতো তাদের ছেলেবেলায়, যে হিসাবে ১৬ আনায় এক টাকা হতো। এখন চলছে একশ পয়সায় এক টাকার হিসাব। সে কারণে এখনকার এমপিরা হয়তো চৌদ্দ আনার গুরুত্ব নাও বুঝতে পারেন। এজন্যই তিনি এর পর পর বলেছিলেন, ৫০ শতাংশ মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও সংসদ অধিবেশনের চেহারা বদলে যাবে। বলা বাহুল্য, তৎকালীন মাননীয় স্পিকারের এই রস ও ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রথম অধিবেশন থেকে ক্ষমতাসীনদের আক্রমণাত্মক ভূমিকা ও বক্তব্যের কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের এমপিরা সহজে সংসদের দিকে পা বাড়াননি। এমন অবস্থায় সরকারি দলের এমপিরা সংসদ ভবনকে জমজমাট করে রাখবেন বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে সংসদ শেষ পর্যন্তও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলেছে। সরকারি দলের এমপিরাও খুব কম সময়ই অধিবেশনে ঠিকমতো হাজির থেকেছেন। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, সংসদের কোনো কোনো বৈঠকে প্রথম সারিতে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র তিনজনকে উপস্থিত দেখা গেছে। এমনকি যারা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন তেমন পাঁচজনের মধ্যেও চারজনকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। বৈঠক শুরু হতে দেরি হয়েছে বেশ কয়েকদিন। কোরাম সংকট তো হয়েছেই। কিছু সদস্যকে শুধু ততোক্ষণই বৈঠকে দেখা গেছে, যতোক্ষণ প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থেকেছেন। আওয়ামী এমপিরা তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকেননি সেই মন্ত্রীরাও, প্রশ্নোত্তর পর্বে যাদের আগে থেকে থাকতে বলা হয়েছিল। মন্ত্রীরা উপস্থিত না থাকায় তাদের উদ্দেশে করা প্রশ্ন স্পিকারকে ‘পাস ওভার’ করতে হয়েছে। কখনো কখনো স্পিকারের কাছে অনেকটা সাফাই গাওয়ার সুরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মনে হয় ‘ওনার’ (অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর) একটু সময় দরকার। ওদিকে যারা উপস্থিত ছিলেন সে এমপিরাও নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব শুরু করেছেন। ফলে দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে স্পিকারকে বলতে হয়েছে, এভাবে পরস্পরের সঙ্গে কথা বললে তো সংসদ ‘মাছবাজার’ হয়ে যাচ্ছে!
অর্থাৎ সংসদকে কার্যকর করার এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু বানানোর প্রশ্নে আওয়ামী মহাজোট ও শেখ হাসিনার সরকারকে কখনোই আগ্রহী দেখা যায়নি। সব মিলিয়েই নবম সংসদ প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারেনি। এমন অবস্থার অন্যতম কারণ ছিল বিরোধী দলকে বাইরে রাখার অপকৌশল। এ ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। যেমন সংসদের সামনের সারিতে বিরোধী দলকে আসন দেয়ার প্রশ্নে ভাষণ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সংখ্যার অনুপাতে বিরোধী দল সামনের সারিতে শতকরা বড়জোর ‘আড়াই থেকে পৌনে তিনটি’ আসন পেতে পারে। সেখানে তাদের চারটি আসন দেয়া হয়েছে। অথচ কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী আসনবণ্টনসহ সংসদের ভেতরের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে শুধু স্পিকারের। কিন্তু শতকরা অংকের হিসাব শিখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদ কোনো প্রতিবাদ করেননি। কে জানে, তিনি আদৌ অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছিলেন কি না! অন্য কিছু ঘটনার মধ্য দিয়েও স্পিকার আবদুল হামিদের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। একটি উদাহরণ হিসেবে ২০১০ সালের অক্টোবর অধিবেশনে স্পীকারের বিরুদ্ধে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বিষোদ্গারের কথা উল্লেখ করা যায়। সে বছর ১১ অক্টোবরের অধিবেশনে এমপিদের চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিতি এবং এমপিদের গালগল্পে মশগুল থাকতে দেখে ক্ষুব্ধ স্পিকার আবদুল হামিদ সংসদকে ‘মাছের বাজারের’ সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। পরদিনই লতিফ সিদ্দিকী স্পিকারের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে তাকে সংসদের ‘সার্ভেন্ট’ এবং মাছের বাজারের ‘আড়তদার’ বানিয়ে ছেড়েছিলেন! কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন স্পিকার আবদুল হামিদও তেমনি লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি।
স্পিকার হিসেবে আবদুল হামিদ এডভোকেটের এই ভূমিকা শেষ পর্যন্তও অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ ‘মাননীয়’ স্পিকার হলেও সর্বতোভাবে তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবেই মাথা নিচু করে থেকেছেন। মাঝে-মধ্যে সংসদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি অবশ্য নাটকীয়তাও কম করেননি। যেমন ২০১২ সালের জানুয়ারিতে সংসদেও দ্বাদশ অধিবেশনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানোর সময় তিনি বলেছিলেন, সংসদ কার্যকর থাকলেই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত হয়। তার এই আহ্বানকে স্বাগত জানানো এবং ওই সময়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে তার বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হলেও না বলে পারা যায়নি যে, বিরোধী দল সব সময়ই অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা একথাও বলেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের উদ্যোগ নেয়া হলে তারা যোগ দেবেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর প্রতিটি সভায় অংশ নেয়া সত্ত্বেও বিরোধী দলের সদস্যরা কেন অধিবেশনে যাচ্ছিলেন না এবং স্পিকারকেই বা কেন নতুন করে আহ্বান জানাতে হয়েছিল তার কারণ লক্ষ্য করা দরকার। প্রকৃত কারণ যে ক্ষমতাসীন দলের অবজ্ঞা-অবহেলা এবং যথোচিত সম্মান ও সুযোগ না পাওয়া সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। উদাহরণ ধরে ধরে উল্লেখের পরিবর্তে এক কথায় বলা যায়, সংসদের অভ্যন্তরে প্রতিটি প্রশ্নেই ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছেন। গণতন্ত্রের আড়ালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা ও চিন্তার ভিত্তিতে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব তারা দেখাতেই পারেন। তাছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘গরম’ বলেও তো একটা কথা আছে! অন্যদিকে ঠিক এখানেই ছিল মাননীয় স্পিকারের দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, স্পিকার আবদুল হামিদ এডভোকেট কখনো, কোনো পর্যায়েই যথোচিতভাবে তার দায়িত্ব পালন করেননি। বিশেষ করে বিরোধী দলের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে তিনি কখনো নিরপেক্ষতার প্রমাণ রাখতে পেরেছেন তা বলার সুযোগ নেই বললেই চলে। আসন বণ্টনের উপলক্ষে স্পিকারের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর শতকরা অংকের হিসাব শেখানোর মতো কিছু তথ্যের উল্লেখ করলেই দেখা যাবে, সবকিছুই আবদুল হামিদ এডভোকেট এমনভাবে মেনে নিয়েছেনÑ যেভাবে সাধারণত অধীনস্থজনেরা মাথা নুইয়ে মেনে থাকেন। কথা বলার সুযোগ দেয়ার ব্যাপারেও স্পিকার ঠিক একজন আওয়ামী লীগ নেতার মতোই পক্ষপাতিত্ব করে এসেছেন। ফলে এমনকি বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও খুব কম উপলক্ষেই তার বক্তব্য শেষ করতে পেরেছেন। তাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিরোধী এমপিদের সম্মান ও অধিকার রক্ষার ব্যাপারেও ‘মাননীয়’ স্পিকার হিসেবে ব্যর্থতা ও অক্ষমতা দেখিয়েছেন আবদুল হামিদ এডভোকেট। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশ যখন জানোয়ারের মতো পিটিয়ে আধমরা করে ফেলেছিল তখনও আবদুল হামিদ এডভোকেটকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। তিনি চিফ হুইপের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন কিংবা তার বাসায় গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সান্ত¡¡না দিয়েছেন এমন কোনো খবর আমরা পত্রপত্রিকায় দেখা যায়নি। চিফ হুইপকে যখন স্ট্রেচারে শুইয়ে জামিনের জন্য আদালতে নেয়া হয়েছে এবং তিনি যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন তখনও স্পিকারের কোনো তৎপরতার কথা শোনা যায়নি। অথচ স্পিকার হিসেবে একজন সংসদ সদস্যের সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও তার দায়িত্ব ছিল। বিশেষ করে জয়নুল আবদিন ফারুকের বিষয়ে দায়িত্ব অনেক বেশি ছিল এজন্য যে, একদিকে তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ অন্যদিকে তাকে পেটানো হয়েছিল সংসদ ভবনেরই সামনের রাস্তায়। সুতরাং স্পিকারের পক্ষে দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগই থাকতে পারে না। কিন্তু আবদুল হামিদ এডভোকেট বুঝিয়ে ছেড়েছিলেন, স্পিকারের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলেও তখন পর্যন্তও তিনি সর্বান্তকরণে মফস্বলের একজন আওয়ামী লীগ নেতাই রয়ে গেছেন। এজন্যই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ কোনো ব্যাপারেই তাকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে বিনা বিচারে পার তো পেয়েছেই, দোষী পুলিশ অফিসাররা উল্টো বুক ফুলিয়েও ঘুরে বেড়িয়েছে, পদোন্নতিও পেয়েছে। বিষয়টিকে কেবলই স্পিকারের ব্যর্থতা বলা যায় কি না, নাকি এর মধ্যে অযোগ্যতা, অবহেলা ও দলবাজির অভিযোগ আনারও অবকাশ ছিলÑ ‘আইনের মানুষ’ হিসেবে আবদুল হামিদ এডভোকেট নিশ্চয়ই তা ভেবে দেখেছেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, মুখে বললেও সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতির ব্যাপারে ‘মাননীয়’ স্পিকার আবদুল হামিদ এডভোকেটের নিজেরও সত্যি তেমন আগ্রহ ছিল কি না? কারণ, জনগণের সচেতন অংশ সে সময় যথার্থই বলেছিলেন, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত করার এবং সংসদকে কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলকে অন্তত ‘জ্ঞান’ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বরং বলা হয়েছিল, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারায় ‘জ্ঞান’ দেয়ার নৈতিক অধিকার স্পিকার আবদুল হামিদ এডভোকেট অনেক আগেই খুইয়ে ফেলেছিলেন। এজন্যই সংসদকে সত্যি কার্যকর করতে চাইলে তার উচিত ছিল বিরোধী দলীয় সদস্যদের সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি বলেই সংসদ তো ‘মাছের বাজার’ হয়ে থেকেছেই, ‘মাননীয়’ স্পিকারকেও ‘আড়তদারি’ করেই তার বাকি মেয়াদ পাড়ি দিতে হয়েছে (স্মরণ করা দরকার, মাননীয় স্পিকার নিজেই সংসদকে ‘মাছের বাজার’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, যার জবাবে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী  ‘আড়তদার’ নামে সম্বোধন করে জাতিকে স্তম্ভিত করেছিলেন)। তার অবশ্য ভাগ্য ভালো, বেশি নিন্দিত হওয়ার আগেই তিনি ‘আড়তদারের’ চাকরি ছেড়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছেন।
এবার বর্তমান পর্যায়ে রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কথা ওঠার কারণ সম্পর্কে বলা দরকার। এরও কারণ তিনিই তৈরি করেছেন। তার বদৌলতে ‘কবর ও মাজার জিয়ারত ছাড়া রাষ্ট্রপতির কোনো কাজ বা ক্ষমতা নেই’ জাতীয় কথাবার্তা মানুষকে বহু বছর ধরেই শুনতে হচ্ছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের সামনে রেখে পঞ্চদশ সংশোধনীর আড়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে প্রতিটি বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতা নিজের তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত করেছেন তার ফলে রাষ্ট্রপতিকে নাকি কবর ও মাজার জিয়ারত করার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির জন্য হা করে তাকিয়ে থাকতে হয়! রাষ্ট্রপতির হাত-পাও নাকি বেঁধে ফেলা হয়েছে! এসব সত্ত্বেও সংবিধানে কিন্তু এ কথাও বলা আছে যে, রাষ্ট্রপতি যে কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে ‘পরামর্শ’ দিতে পারবেন। বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি যেহেতু ‘মহামান্য’ সেহেতু তার ‘পরামর্শ’ই নৈতিক দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার তথা সরকারের জন্য ‘নির্দেশ’ হয়ে উঠতে পারে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে রাষ্ট্রপতি এমনকি নৈতিকভাবে চাপও সৃষ্টি করতে পারেন। এ ধরনের ব্যাখ্যার আলোকে বলা হচ্ছে, সংবিধানে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন, সাংবিধানিকভাবেই তিনি ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’। একই কারণে বেগম খালেদা জিয়া ও ড. কামাল হোসেনরা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেটের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রথম বিএনপি সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের উদাহরণও বর্তমান রাষ্ট্রপতি অনুসরণ করতে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রশ্নে ১৯৯৫-৯৬ সালে যখন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস তখন বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবীসহ নাগরিক সমাজের অনেক বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তাদের অভিমতের ভিত্তিতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতির সে ‘পরামর্শ’ অনুযায়ীই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গঠিত ষষ্ঠ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান যুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন। এটাই ছিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। এর পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বর্তমান পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেট ওই উদাহরণ অনুসরণ করলে সংকট কাটিয়ে ওঠা সময়ের বিষয়ে পরিণত হতে পারে। গণতন্ত্র রক্ষাসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই রাষ্ট্রপতির উচিত প্রধানমন্ত্রীকে এমনভাবে ‘পরামর্শ’ দেয়া যাতে তিনিও বেগম খালেদা জিয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। সংসদ এখনও বহাল থাকায় রাষ্ট্রপতি যে কোনো সময় অধিবেশন আহ্বান করতে এবং ১৮ দলীয় জোটের দাবি অনুযায়ী সংবিধানে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের বিধান যুক্ত করাতে পারেন। আমরা অবশ্য জানি না, দেশ ও জাতির এই কঠিন সংকটকালে রাষ্ট্রপতি যথার্থই প্রধান অভিবাবক ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন কি না নাকি তিনি আবারও নিজেকে একজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে উপস্থিত করবেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চীন কেন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়?


চীন এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। আমি ব্যক্তিগতভাবে চীনের বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই। এবং সেটা আমার প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বার্থেই। ১৯৭১ সালে চীন ও আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দেয়নি। তখন ভারত আর রাশিয়া ছিল একজোট। বাংলাদেশের ব্যাপারে সামরিক পদপে নেয়ার আগে ভারত রাশিয়ার সাথে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি করে, যার মূল বিষয় ছিল ভারত আক্রান্ত হলে রাশিয়া সে আক্রমণকে রাশিয়ার ওপর আক্রমণ বলে বিবেচনা করবে। ভারত তখন সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে চীনের মোকাবেলা করার জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে ভারত চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ সমাধার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তারপরই চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সে সম্পর্ক এখনো পুরোদমে উষ্ণ হয়নি। সীমান্ত সমস্যাও রয়ে গেছে। ওই সময়েই পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য জেনারেল আইয়ুব উদ্যোগ নেন এবং মওলানা ভাসানী এ ব্যাপারে আইয়ুবকে সমর্থন করেন। ইতিহাসের এ পরিপ্রেেিত জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ভারত ও রাশিয়া নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ৭২-৭৫ সালে দেখেছি রাশিয়াপন্থী রাজনীতির কী দৌর্দণ্ড প্রতাপ। দেশে রাশিয়াপন্থী লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার; কিন্তু তাদের প্রতাপ ছিল সীমাহীন। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। কারণ তিনি কখনো পালিয়ে থাকা পছন্দ করতেন না। এ কারণেই তিনি ভারত যাননি। বঙ্গবন্ধু মনোজগতে কখনোই অন্ধভাবে ভারতভক্ত ছিলেন না। ভারতের রাজনীতি কী তা-ও তিনি জানতেন। তিনি কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন এবং জীবনের শুরুর প্রাথমিক রাজনীতি সেখানেই করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে সেসব রাজনীতির কথা উল্লেখ করেছেন। হিন্দুরা মুসলমানদের ওপরে কী অত্যাচার করত তার বিবরণ ওই আত্মজীবনীতে আছে। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের একজন কট্টর কর্মী। মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় যে ভারতীয় সৈন্যরা অবস্থান নেয় এবং দীর্ঘকাল অবস্থানের পরিকল্পনা করে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি চীনের কারণে। ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে থাকতেই বঙ্গবন্ধু জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদের জন্য দরখাস্ত করেন ভারত ও রাশিয়ার উসকানিতে। তখন চীন অনুরোধ করে দরখাস্ত না করার জন্য। চীনকে বাংলাদেশের শত্রু প্রমাণ করার জন্য ভারত ও রাশিয়া সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশকে দিয়ে দরখাস্ত করিয়েছিল। চীন নিজস্ব কূটনীতির জন্য সে দরখাস্তের বিরোধিতা করতে হয়েছিল। চীন তখন বলেছিল বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ নয়, কারণ সেখানে বিদেশী সৈন্য অবস্থান করছে। এরপরই ভারত বিদেশী চাপের কারণে সৈন্য সরিয়ে নেয়। আর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে সৈন্যরা চলে গিয়েছিল। এমনকি অনেকেই বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধু না হলে ভারতীয় সৈন্যরা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যেত না। বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শন পরিবর্তন হয় বঙ্গবন্ধুর সরকারের পতনের পর। খন্দকার মোশতাকই চীন ও সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তখন মোশতাক আহমদ চীনপন্থী সাংবাদিক ফয়েজ আহমদকে চীনে পাঠান। এরপরই চীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর আমলে ভারত ও রাশিয়ার চাপে বাংলাদেশে ইসলামি ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলের একটা সময় পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। খন্দকার মোশতাক তিন মাসের মতো মতায় ছিলেন। এরপর মতায় আসেন জেনারেল জিয়া। জিয়ার আমলেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন শুরু করে। জিয়ার আমলেই মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতি হয়। এ সময়েই চীন বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে প্রথম কাতারে চলে আসে। এর আগে ভারত ও রাশিয়া এ ব্যবসায় করত। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন উষ্ণ। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে উৎখাত করে সেনাপ্রধান এরশাদ সামরিক আইন জারি করে মতা দখল করেন। মতা দখলের পর এরশাদ নিজেই বলেছেন, তিনি দিল্লির সাথে আলোচনা করেই পদপে নিয়েছেন। ওই সময় দেশের রাজনৈতিক অবস্থা শান্তই ছিল। তবুও এরশাদ মতা দখল করেন। এরশাদও চীনের সাথে মোটামুটি দৃশ্যমান সম্পর্ক ভালো রেখে চলেন। এরশাদকে পুরোপুরি সময় কৌশলে শেখ হাসিনা সমর্থন দিয়েছেন। এরশাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করেছেন। ওই সময়ে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার কঠোর আন্দোলনের ফলে সবাই এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হয়। ফলে ৯০ সালে এরশাদের পতন হয়। এরপরই তথাকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। ৯১ সালের নির্বাচন হয়েছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে। তাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে। শেখ হাসিনার আশা ও বিশ্বাস ছিল তার দল আওয়ামী লীগ মতায় আসবে। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও দিল্লি যৌথভাবে একটি ল্য স্থির করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার গোপন কর্মসূচি হাতে নেয়। ৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২৩ বছর তাদের রাজনীতি দিল্লিতুষ্ট নীতিতে পরিণত হয়। দিল্লির শাসকগোষ্ঠী, তল্পীবাহক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরা এখানে ও সেখানে তৎপর হয়ে ওঠেন বাংলাদেশকে দিল্লির কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। যেকোনো বাহানায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখাই তাদের প্রধান ল্য। ৯৬ সাল ও ২০০৬ সালে নারকীয় ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দিল্লির উসকানিতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছিল শেখ হাসিনা ও জামায়াতের। খালেদাকে বাধ্য করে এ ব্যবস্থা মেনে নিতে। ২০০৮ সালের ভয়ভীতিকর নির্বাচনে জেনারেল মইনদের ইচ্ছায় মহাজোট সরকারকে মতায় বসায় দিল্লির সার্বিক সহযোগিতায়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে দেশছাড়া করে দুর্নীতির অভিযোগে। ওই অবস্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে খালেদাকে বাধ্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে। অবৈধ জেনারেল মইন সরকারের সব কাজকে শেখ হাসিনা স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ এর আগে তিনি বলেছিলেন, তারই আন্দোলনের ফসল হচ্ছে জেনারেল মইনের সরকার। সে সময় মইন দিল্লি সফরে গেলে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও দামি ছয়টি ঘোড়া উপহার দেয়া হয়। মহাজোট সরকার মতায় এসে খালেদা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জেনারেল মইনের দায়ের করা সব মামলা অব্যাহত রাখেন আর বেহায়ার মতো নিজেদের সব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে এক মন্ত্রী বলেন, আমরা মতায় এসেছি কি খালেদার মামলা প্রত্যাহার করার জন্য? বরং খালেদা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দেয়া হয়। এখন দেশে যে গোলযোগ চলছে তার স্রষ্টাও তারা। জনমত উপো করে সংসদের শক্তির জোরে ও আদালতের দোহাই দিয়ে মীমাংসিত তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে দেন। শুরু হলো নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাত। প্রত্যেকবারই আমরা দেখেছি দিল্লির প্রতিনিধি বীণা সিক্রি, পিনাক রঞ্জন ও শরণ খুবই ব্যস্ত এবং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে যেকোনো ব্ল্যাকমেইল করে দিল্লির অনুগত রাখার চেষ্টা করেছেন। জেনারেল মইনের শাসনকালে পিনাক বাংলাদেশে দিল্লির অদৃশ্য ক্ষমতার মালিক ছিলেন। তিনি তখন সচিবদের বদলি ও পোস্টিং নিয়েও ভাবতেন বলে একজন সাবেক সচিব জানিয়েছেন। এবারের গোলযোগে দিল্লি প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করছে এবং দেশবাসী ভারতীয় কূটনীতিকের পদচারণা দেখতে পাচ্ছেন। এবার যেন দিল্লি মারণ কামড় দিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধা করতে চায়। আর সমাধান হলো ঢাকায় অনুগত সরকারকে স্থায়ীভাবে মতায় রাখা। আর এ জন্য আওয়ামী লীগ ও একই ঘরানার রাজনীতিকদের মতায় রাখা জরুরি। স্থায়ীভাবে মতায় থাকার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোকে ভারত আগেই প্রভাব বলয়ে নিয়েছে অর্থাৎ নিজেদের অনুগত করে ফেলেছে। তাই ৯০ ভাগ মিডিয়া দৃশ্য বা অদৃশ্যভাবে তাদের হয়ে কাজ করে। যদি আপনি প্রশ্ন করেন ভারত আসলে কী চায়Ñ উত্তর হলো, ভারত বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে একটা অনুগত সরকার চায়, যাকে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দেবে। ল্য হলো, বাংলাদেশ ভারতের সব নীতি অনুসরণ করবে। বিনিময়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পতাকা থাকবে, জাতীয় সঙ্গীত থাকবে ও জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও থাকবে। তবে একটা অনুগত প্যারা মিলিটারিও থাকতে পারে। সে জন্যই বিজিবিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগ ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, চীন ও আমেরিকা এখানে নিজেদের উপস্থিতি জোরালোভাবে রাখতে চায়। চীনের ব্যাপারে আমেরিকা ও ভারতের ল্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এক। আমেরিকা চীনকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে প্রতিহত করতে চায়। এ ব্যাপারে ভারত আমেরিকার প্রক্সি হয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশকে কিছুতেই চীনের প্রভাবে যেতে দেয়া যাবে না। এ কারণেই আমরা ভারত ও আমেরিকার দৌড়ঝাঁপ প্রকাশ্যে দেখতে পাচ্ছি। দুই পই সাংবাদিকদের বলছে, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে রা করা তাদের ল্য। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, জঙ্গিবাদ কোথায়? ভারত মনে করে, বিএনপি ও জামায়াত মতায় থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে; কিন্তু আমেরিকা মনে করে জামায়াত একটি মডারেট বা উদার ইসলামিক দল। আমেরিকা বিএনপিকে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক মনে করে না। আর আমি মনে করি, দুই দেশের অদৃশ্য এজেন্ডা হচ্ছে ইসলাম। যেকোনো মূল্যেই হোক বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানকে সর্বশক্তি দিয়ে মূলোৎপাটন করতে হবে। ভারত ও আমেরিকা বাংলাদেশে ইসলামমুক্ত রাজনীতি চায়। এ ব্যাপারে ভারত একাই বাংলাদেশের রাজনীতি দেখভাল করতে চায়, আমেরিকা যেন সরাসরি জড়িত না হয়। এবারই গণচীন সরাসরি বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং সরকারের সাথে কথা বলেছে। চীন মনে করে, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারত-আমেরিকা জোট চীনের জন্য কল্যাণকর নয়। বরং একটা অদৃশ্য হুমকি। বাংলাদেশে যদি ইসলামি রাজনীতির বিকাশ ঘটে তাতে চীন শঙ্কিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হোক তা চীন চায় না। এ জন্যই এবারের সর্বশেষ বিবৃতিতে চীন বলেছে, তারা একটি উন্নত স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়। স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চায়। এটা একটা কূটনৈতিক ভাষাও। স্বাধীন বাংলাদেশশব্দ দুটির সাথে একটা গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। চীন যেহেতু কয়েক যুগ ধরে ভারত বাংলাদেশ ও দিল্লি-শেখ হাসিনা সম্পর্ককে গভীরভাবে পাঠ করছে, সেহেতু আমরা নিশ্চয়ই ওই শব্দ দুটির ব্যাপারে শঙ্কিত। এর মানে কী তা আওয়ামী লীগ ও দিল্লি ভালো করেই জানে। মীরজাফর যখন লর্ড কাইভকে নিয়ে গোপন চক্রান্ত করে মতার জন্য, তখন তিনি নাকি বুঝতে পারেননি সুবে বাংলার স্বাধীনতা চলে যাবে। বাংলাদেশের ভাগ্যে কী আছে হয়তো তারা জানেন না। তারা হয়তো শুধুই তাদের মতায় টিকে থাকা নিয়ে ভেবেছেন। সিকিমের লেনদুপ দর্জিও হয়তো শুরুতে শুধু নিজের মতা নিয়ে ভেবেছিলেন। নেপালেও তথাকথিত মাওবাদী নেতা প্রচন্দকে ভারত সমর্থন দিয়ে রাজার পতন ঘটিয়েছে। ভুটানের রাজা আছে কিন্তু রাজ্য নেই। মালদ্বীপেও ভারতপন্থী নাশিদকে মতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। শ্রীলঙ্কায় কয়েক যুগ ধরে তামিল বিদ্রোহীদের উসকে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত তা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে তামিলদের দমন করতে হয়েছে। এটা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের ভারতবিরোধী শক্ত অবস্থান। এখন সবাই তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ভারত কয়েক যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দিয়ে একটা বিতর্কিত চুক্তি করিয়েছে। শেখ হাসিনা একবারের জন্যও চিন্তা করেননি ওই চুক্তি একদিন বাংলাদেশের অঙ্গহানি ঘটাবে। এই তো কয়েক দিন আগে সোনিয়াপুত্র কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, তার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে ভারতেরই স্বার্থে। যারা ভারতের রাজনীতি ও কূটনীতি নিয়ে ভাবেন বা চিন্তা করেন তারা জানেন, নেহরুজি অখণ্ড মহাভারতের স্বপ্ন দেখেছেন। ভারতের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষকেরা মনে করেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা সম্ভব। চলমান সময়ে ভারত ও তার গোয়েন্দাবাহিনী সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ নিয়ে কাজ করছে। যার ফলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম বা তরুণেরা ধর্মমুক্ত বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে। এ জন্য অর্থের কোনো অভাব নেই। বাংলাদেশে বহু মিডিয়া ও সংস্থা এ জন্য কাজ করছে। ভারত এমন একটা পরিস্থিতি ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যখন সবাই বলবে স্থায়ী শান্তির জন্য ভারতের সাথে চিরস্থায়ী অধীনতামূলক মিত্রতা দরকার। এত দিন ভারত বাংলাদেশের ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখত। এবার গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সিংহ বা বাঘ যেমন প্রথমেই টুঁটি চেপে রক্ত চুষে নেয়। চীন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান তাদের আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তির আজ প্রধান কাজ হচ্ছে ভারতপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রা করা। আওয়ামী লীগ বলছে, এবার নাকি তাদের জন্য এটা মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশকে ইসলামমুক্ত করে ভারতের তাঁবেদারে পরিণত করা। আর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমপন্থী জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তিকে জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে রা করতে হবে। এ সময়ে আমাদের প্রধান মিত্র হবে চীন, মিয়ানমার এবং মুসলিম বিশ্বের সরকার ও জনগণ। সবাইকে মনে রাখতে হবে জেনে হোক অথবা না জেনে হোক শেখ হাসিনা নিজেকে ভারত-নির্ভরশীল ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত করতে যাচ্ছেন। ভারতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলে তারা কাউকেও বাঁচতে দেয় না। 


0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চরম বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ


জানুয়ারি মাস যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের শরীরের উত্তাপ ততই বেড়ে চলেছে। সবাই আজ সশঙ্কিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে না জানি কী ঘটে যায়! এখন আর সংলাপের সুযোগ নেই। বিএনপি সমাবেশ ঘটিয়েছে, তিন দিন লাগাতার হরতাল দিয়েছে, পরে আরো চার দিন হরতালে দেশ অচল করে দিয়েছে। হরতাল এবং সেই হরতাল প্রতিরোধের তাণ্ডব দেশের মানুষ দেখেছে। প্রতিরোধের প্রচেষ্টা না থাকলে সহিংসতা হয় না। রাস্তাঘাট ছিল নিরাপত্তাবাহিনীতে ঠাসা। সেই নিরাপত্তাবাহিনীর বেষ্টনী ভেদ করে যারা হরতালকারীদের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, হাতেনাতে কেউ ধরা পড়েনি। তবুও গ্রেফতার করা হয়েছে বেছে বেছে জামায়াত ও বিএনপির নেতাকর্মীদের। হরতাল প্রতিরোধকারীরা পুলিশ প্রটেকশনে থেকে হরতালকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বহু স্থানে। ফলে মানুষ মরেছে, অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, রাস্তায় রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে এক বীভৎস অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়েছে রাস্তাঘাট। এ দিকে শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন দেশব্যাপী। প্রশাসনের সব ধরনের সুবিধা নিয়ে সভা করে বেড়াচ্ছেন। সরকারি হেলিকপ্টার, গাড়ি, লঞ্চ ব্যবহার করছেন। সভায় মঞ্চ ও তোড়ণ বানিয়ে রাস্তাঘাট সুসজ্জিত করেছে ছাত্র ও যুবলীগের ক্যাডাররা। প্রয়োজনীয় সব রকম সহায়তা পাচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন থেকে। প্রধানমন্ত্রী যেসব উক্তি সভামঞ্চ থেকে করে যাচ্ছেন, তা সঠিক নয়, সত্যের অপলাপ ও কুরুচিপূর্ণÑ এমন অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেন, বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে; তাই দেশের মানুষের প্রতি তাদের দরদ থাকতে পারে না। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সীমাহীন দুর্নীতি করেছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি করে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। জিয়াউর রহমান জোরজবরদস্তি ক্ষমতা দখল করেছিলেনÑ এসব বিতর্কিত কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দেশের মানুষ জানে, খালেদ মোশাররফ এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। মাত্র সাত দিনের মধ্যে সিপাহিরা কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে এক কাউন্টার ক্যুর মাধ্যমে খালেদ মোশাররফসহ বেশ কিছু সামরিক অফিসারকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমানকে তারা বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতায় বসান। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে আরো বলেন, তিনি নাকি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। এ নিয়েও আছে নানা বিতর্ক। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের কবর রচনা করে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। অন্য সব পার্টির রাজনীতি বন্ধ করে দেয়। চারটি সরকারি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চরম নির্যাতন করা হয়। এ সময় বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী রক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হন। জিয়াউর রহমান সর্বদলীয় নির্বাচন দেন। সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এনে একদলীয় বাকশালী শাসন বাতিল করে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। বর্তমান আওয়ামী লীগও গণতন্ত্রের চর্চা করেনি; গণতন্ত্রের পরিবর্তে দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছে। দেশের মানুষ এখনো ভুলে যায়নি যে, এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। নির্বাচনের দিন শেখ হাসিনা বহু নির্বাচনী কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকেরা তাকে জিজ্ঞেস করেনÑ ম্যাডাম, নির্বাচন কেমন হয়েছে? কোনো অনিয়ম, কারচুপি হয়েছে কি? শেখ হাসিনা বলেছেনÑ না, আমি কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। কোথাও কোনো কারচুপি বা অনিয়ম চোখে পড়েনি। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হলে সেই সাংবাদিকেরা তাকে বলেনÑ ম্যাডাম, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিন্তু আপনি নির্বাচনে জিততে পারলেন না কেন? তখন তিনি উত্তর দিলেনÑ নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। আমি এক দিনের জন্যও খালেদা জিয়াকে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা পরিচালনা করতে দেবো না। কার্যত তিনি তা-ই করেছিলেন। পাঁচটি বছর হরতাল, সংসদ বর্জন করে দেশ অচল করে দেন। আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীরা এখন প্রায় সবাই বলে থাকেন, ‘আমরা যখন ক্ষমতায় থাকি তখন দেশে উন্নয়নমূলক কাজ হয়। আমরা দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করেছি। রাস্তাঘাট সংস্কার করেছি, দুর্ঘটনা রোধেবিভিন্ন রাস্তায় ডিভাইডার করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়। দেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয়। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আরেকবার যদি আমরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসি দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করব।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ১৯৯৬ সালে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিমান ক্রয় করা হয়, যদিও মিগ বিমানের আবশ্যকতা আমাদের দেশে নেই। কিন্তু কেনার পর দেখা গেল বিমানগুলো আকাশে উড়তে পারে না। বিমানগুলো সম্পূর্ণ বিকল। পুরনো লোহালক্কড় হিসেবে নয়াবাজারে বিক্রি করা ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানো যাবে না। দুর্নীতি করার জন্য এই বিকল মিগ কেনা হয়েছে। টাকাগুলো কয়েকজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। বিশাল পদ্মা সেতু প্রজেক্টের নির্মাণকাজ শুরুর প্রাক্কালে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের কাছে অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ল। তারা চেয়েছিল দুর্নীতিবাজদের প্রজেক্টের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক। যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ছিল। তখন যদি তিনি পদত্যাগ করতেন, তাহলে কোনো ঝামেলাই থাকত না। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল করলে এ সরকারের চৈতন্য ফেরে। আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি, বিরোধী দলের ওপর অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক দমনপীড়ন যখন সরকারকে অজনপ্রিয় করে তুলেছে ভয়াবহভাবে, ঠিক তখন সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দলীয় সরকারের অধীনে যেনতেন একটা নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু জনমত এরই মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। জনমত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন করার পরিণতি যে ভালো নয়, তা সরকারকে মাথায় রাখতে হবে। না হলে দেশের সামনে অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। এর তীব্রতা কতটা হবে, তা আঁচ করাও মুশকিল। 


বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৩

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এরশাদ যা তাই করেছেন! এতে অবাক হবার কিছু নেই


বেশ কিছুদিন যাবত সাবেক রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলে আসছিলেন “বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আমিও যাবো না।” কেউ কেউ তার এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেও আমি বলেছিলাম এ বক্তব্যের অর্থ হলো বিএনপি না গেলেও আমি নির্বাচনে যাবো। ক’দিন আগে এক টকশোতে জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না ও জনাব আসিফ নজরুল এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। জনাব আসিফ নজরুল বলেন “এরশাদ সাহেবের কথা বিশ্বাস করা যায় না তিনি সকালে এক কথা বলেন বিকালে বলেন অন্যটা। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাধারণ ব্যক্তিত্ব থাকা উচিত” জনাব এরশাদের একটি পুরাতন বক্তব্য তুলে ধরি যদিও ইতোপূর্বের বেশ কটি লেখায় একথা বলেছিলাম। প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকগণ এরশাদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন “স্যার নারীদের প্রতি আপনার একটা বিশেষ আকর্ষণ এর কারণ কি?” উত্তরে জনাব এরশাদ বলেন “দেখেন আল্লাহ আমাকে এত সুন্দর একটা চেহারা দিয়েছেন যে, মহিলারা আমাকে দেখলে পাগল হয়ে যায় আমার কি দোষ বলুন।” এই হলো জনাব এরশাদ। তিনি ক’দিন আগে বলেন, “আমি নির্বাচনে গিয়ে শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হতে চাই না।” গতকাল টিভি’র পর্দায় দেখলাম তিনি বললেন আমি নির্বাচন করবো তবে কোনটা তার আসল কথা? একজনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো “রোজা ভেঙেছেন কয়টা? সে উত্তর করলো একটাও ভাঙিনি। অপরজন বললো সে তো রোজা রাখেইনি ভাঙে কিভাবে? আমরাও কথায় কথায় বলি ঈমানে কই বা আমি বেঈমান হতে চাই না।
প্রকৃতপক্ষে ঈমান থাকলেই বেঈমান হওয়ার প্রশ্ন আসে। তবে জনাব এরশাদকে ধন্যবাদ দেই তিনি মোটামুটি চৌকস। তিনি বুঝতে পেরেছেন বর্তমান সরকার যে ফাঁদ পেতেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ হয় অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন কিংবা কোন কাকতালীয় ঘটনা ব্যতীত তারা ক্ষমতার মসনদ ছাড়ছে না। যেমন বর্তমান সংবিধানে বলা আছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অন্য একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। সংগত কারণেই যদি নির্বাচন না হয় তবে পরবর্তী নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই ক্ষমতায় থাকবেন। অন্যদিকে যুবরাজ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন “আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় যাবে।” জয় খুলনায় এক অনুষ্ঠানে বলেন একটি সরকার যদি ১০/১৫ বছর ক্ষমতায় না থাকে তবে দেশের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আমরা যদি সরকারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারি তবে বাংলাদেশ হতে পারে মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুর।” অন্যদিকে আমাদের দেশে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ভারতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, দু’দেশই চায় অর্থাৎ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন “বাংলাদেশ প্রশ্নে আমেরিকা ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়”। জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল ও হাসানুল হক ইনুর কথাবার্তা সব মিলে মনে হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাতো ছাড়বেই না অন্য কাউকে ক্ষমতায় আসতেও দিবে না। তাই জনাব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তার দলীয় কর্মীদেরকে এতদিন যে সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন তা পূরণ করতে হলে ক্ষমতায়  যেতে হবে। ক্ষমতায় যেতে না পারলে কর্মীদের সুযোগ দেয়া যাবে না আর তা হবে কর্মীদের সাথে বেঈমানী। সঙ্গত কারণেই তিনি বলেছেন, ‘আমি শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হয়ে মরতে চাই না’। এর অর্থ হলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় গিয়ে কর্মীদের মনের আশা পূরণ করবো। প্রশ্ন হচ্ছে, জনাব এরশাদ সাহেবের এ তত্ত্বকথা যদি আমরা বুঝতে না পারি সেটা কি এরশাদের দোষ? না কি আমাদের অযোগ্যতা? তার একান্ত আস্থাভাজন জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এ মঞ্জু সম্পর্কে জনাব এরশাদ একবার মন্তব্য করেছিলেন, ‘মঞ্জুর প্রতি আমার একটা দুর্বলতা আছে’।  অর্থাৎ মঞ্জুকে তিনি ভালবাসেন। ১৯ নবেম্বর পত্রিকায় দেখা গেলো সেই মঞ্জুই বলেছেন, ‘হি ইজ দ্যা রিয়েল পলিটিশিয়ান।’ এরশাদ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আরও বলেন, তিনি নিজে রাজনীতি করেন এবং অন্যকে রাজনীতি করান। বিগত দিনে তিনি দুই নেত্রীকে নিয়ে অনেক খেলা খেলেছেন।’ এবার আসি ১৯ নবেম্বর প্রথম আলোর কার্টুন প্রসঙ্গে। প্রথম আলো একটি বাস্তব কার্টুন ছেপেছে, তা হলো একটি বলদ গরুর গলায় মালা পরানো আর রশি ধরে গরুটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ওই গরুটির দেহের পুরো অংশটা গরু কেবল মুখটা ছিল জনাব এরশাদ সাহেবের। এমন একটি দুর্যোগ মুহূর্তে প্রথম আলোর এ কার্টুন সত্যিই সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। বিএনপি নেতা সময়ের সাহসী সন্তান জনাব রুহুল কবির রিজভী আহমদ বরাবরই অত্যন্ত মোলায়েম ভাষায় কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘এরশাদ সাহেবের দ্বৈতনীতি’ এতো সহজ কথায় কি আর এরশাদ সাহেবের গায়ে লাগে? টিভির এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুন্নী সাহা জিজ্ঞেস করেছিল, জনাব এরশাদকে ‘আপনার একটা বদনাম আছে-আপনি নারীদের প্রতি আসক্ত’। উত্তরে জনাব এরশাদ বলেন, ‘বিদিশার কথা বলছো, সেই তো আমাকে আগে চিঠি দিয়েছে, আমি দেখাতে পারবো’। এই হলো আমাদের এক সময়ের প্রধান সেনাপতি পরে রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমানে একটি দলের চেয়ারম্যান রিয়েল পলিটিশিয়ান নামে খ্যাত জনাব এরশাদ সাহেবের চরিত্র। শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান না হয়ে হলেন গরুমার্কা কার্টুন, তাও আবার বলদ গরু। এর চাইতে গরুমার্কা ঢেউটিনের মূল্য বেশি নয় কি? অবশ্য এরশাদ সাহেবেরও প্রকৃতপক্ষে কিছু করার নেই। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যখন এ সকাল বিকাল তত্ত্ব প্রয়োগ করলেন অর্থাৎ সকালে এক কথা আর বিকালে এক কথা তখন কর্মীরা বিদ্রোহ করলে তিনি বলেন, ‘আমি যা বুঝি তোমরা তা বুঝ না।’ অর্থাৎ তার কানের সাথে একটা রশি লাগানো আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী নাটকের জন্য যতটুকু সরকারের সমালোচনা করতে এরশাদ সাহেবকে বলেছেন, তার একটু বেশি বললেই ওই রশি ধরে টান মারেন, তখনই এরশাদ সাহেব আবার সকালের কথাকে বিকালে অন্য রূপ দান করেন। বর্তমানে তার কোনো উপায় নেই, যদি নির্বাচনে বলদ গরুর ভূমিকায় না থাকেন তবে পুরাতন মামলাগুলো চাঙ্গা করে আবার লাল বিল্ডিংয়ে যেতে হতে পরে।
এ ভয়েই প্রকৃত কথা হলো শেষ বয়সে জেলে যেতে চাই না। এ কথাটা বলেছেন, শেষ বয়সে জাতীয় বেঈমান হতে চাই না। একথায় আরও বুঝা যায়, তাহলে যৌবন বয়সে বেঈমান ছিলেন? যৌবন বয়সে যারা ভোট কেটে রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারেন, শেষ বয়সেও তারা প্রহসনের নির্বাচনে যেতে পারেন, এতে অবাক হবার কিছু নেই। অতএব বলা যায়, এরশাদ যা তাই করেছেন, এতেও অবাক হবার কিছু নেই।

Ads