বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

সরকারের সরকারগিরি



আল আমিন
  
জনগণের জানমাল তথা অধিক নাগরিক সুবিধা (বিগত সরকারের তুলনায়) প্রদানের অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই কোনো সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা নিরূপণ করা যায়। রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ কতটা স্বচ্ছ স্বাধীন, কতটা যোগ্য লোক দ্বারা পরিচালিত এবং কতটা ইমপার্শিয়াল সেটাও বিবেচনাধীন। এরপর বলা যায় সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কেমন। এ সবকিছুর চুলচেরা হিসাবই সরকারের ভালো-মন্দের গল্প। একটা সুন্দর গল্প মহাজোট সরকার গত চার বছরের শাসনামালে আমাদের উপহার দিতে পারেনি। তাদের শাসনামলের পুরো আখ্যানভাগ জুড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের শোষণের ইতিকথা। সাধারণ মানুষ সেই বেদনার কথা কাকে বলবে? বলবার জায়গা নেই। আছে শুধু বঞ্চনা আর আহাজারি। নজরুল ঠিকই লিখেছিলেন—আমি সেইদিন হব শান্ত/ যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না...। অত্যাচারীর খড়্গহস্ত কিন্তু প্রতিনিয়ত রণিত হচ্ছে। তাই আমরাও অশান্ত। ফুঁসে উঠছে সবাই। হালে অর্থমন্ত্রীর অপ্রকৃতিস্থ কথাবার্তা আর নিয়ম-কানুন যেন সাধারণ মানুষকে আরও অশান্ত করে তুলেছে। শেয়ারবাজার একটি দুষ্টচক্র, এখানে অর্থ লোপাট করেছে কিছু দুষ্টু লোক, সোনালী ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি এমন বেশি পরিমাণ অর্থের না, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস একজন রাবিশ লোক তাঁর কারণে বিশ্ব দরবারে আমাদের ভালো কাজগুলো ঢাকা পড়ছে। তার এসব উদ্ভট দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা সত্যিই জনগণকে অস্থির আর হতাশ করে তুলেছে।
সম্প্রতি ব্যাংকিং সেক্টরে অর্থ কেলেঙ্কারী ও জনগণের পুঁজির উপর অযথা কর আরোপ করে অর্থমন্ত্রী তথা সরকার এক চরম নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। ব্যাপারটা এরকম। একজন সাধারণ গ্রাহক তার উপার্জিত অর্থের একটা নির্দিষ্ট অংশ ব্যাংকে প্রতি মাসে জমা করে (মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প। বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন নামে স্কিমগুলো আছে।) তিন, পাঁচ বা দশ বছর পর তারা সেই জমা করা অর্থ ব্যাংকের সুদসহ উত্তোলন করে একটা পুঁজি তৈরি করে। এই পুঁজি দিয়ে তারা ভবিষ্যতের জন্য কোনো একটা সম্পদ বা বিনিয়োগের মাধ্যমে বা ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করে। এগুলো সাধারণ মানুষের অত্যন্ত পরিশ্রমের জমা করা অর্থ। এখানে না আছে দুর্নীতি, না আছে কোনো অন্যায়ের টাকা। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমে সাধারণ মানুষের এই জমা করা অর্থের সুদের ওপর দশ পার্সেন্ট (১০%) কর আরোপ করল। অর্থাত্ একজন মানুষ যদি পাঁচ বছর কোনো ব্যাংকে টাকা জমিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা সুদ পায় (মূলধন ছাড়া), তাহলে তাকে সরকারকে পাঁচ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এই সিস্টেম বাংলাদেশে আগে কোনো দিনও ছিল না। এ তো গেল কাটা ঘায়ের গল্প। এবার শুনুন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার গল্প। মাননীয় অর্থমন্ত্রী যিনি অর্থনীতির চাইতে ইংরেজি ভালো বোঝেন; উনি হয়তো ছাত্রজীবনে ইংরেজি ট্রান্সলেশনে ভালো ছিলেন। তিনি দশ পার্সেন্টে সন্তুষ্ট থাকলেন না। এখন সাধারণ একজন গ্রাহককে তার প্রাপ্ত সুদের পনেরো (১৫%) পার্সেন্ট সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads