রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন



বাংলাদেশে ৪ (চার) বার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে। এতে সরকার ও প্রশাসন সবাই নিরপেক্ষ হওয়ায় নির্বাচনী সময়ে ও পরবর্তী সময়ে কোন রকম সংঘর্ষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি হয় নাই। সবাই নিরাপদে ছিল।
১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্দলীয় সরকার মানে নাই বরং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ তীব্র আন্দোলনে যায়। এতে জামায়াতে ইসলামী প্রতিটা মিটিং, মিছিল, বিক্ষোভে সমান্তরাল সহযোগী হিসাবে দেশের শান্তির স্বার্থে, নীতির প্রশ্নে সহযোগিতা করায় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে বাধ্য হয়। পুনরায় নির্বাচনে জামায়াতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা তখন সগর্ভে প্রচার করতেন যে, তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেছেন। যদিও এটা জামায়াতের মূল আবিষ্কার যা জাতিসংঘও জানে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঃ
আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মাননীয় প্রেসিডেন্ট, নির্বাচনী তারিখের ৯০ (নববই) দিন আগে পার্লামেন্ট ভেঙে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পছন্দনীয় কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি/সচিব/ সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র এডভোকেট/অবঃ সেনাপ্রধান/ভাইস চ্যান্সেলরকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টার সুপারিশে ১০/১২ উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন শেষ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচিত নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত দেশের রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন। নির্বাচন শেষে প্রেসিডেন্ট নতুন সরকার গঠন করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়-দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের উপকারিতা কি কি ঃ
১। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারাবাহিকতায় পুলিশ, র‌্যাব, প্রশাসন, অফিস-আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয়ে যায়। এতে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, সবল-দুর্বল, নিরীহ সবাই সমানভাবে আইনের শাসন ভোগ করে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সরকারের পূর্ব অনুমতি গ্রহণে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে মিটিং-মিছিল শোডাউন একেবারে নিরাপদে করতে পারে। কেউ সংঘর্ষ করার চিন্তাও করে না। বরং সবাই ভদ্রভাবে জনসাধারণের মন, জনপ্রিয়তা আকর্ষণে ব্যস্ত থাকে।
২। সরকার প্রতিটা রাজনৈতিক দলের প্রধানকে রেডিও/টিভিতে দলীয় কর্মসূচি/মেনিফেস্টো প্রচারে একই পরিমাণ সময় দিয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত নির্বাচনী খরচ সবাই ব্যক্তিগত তহবিল/দলীয় তহবিল থেকে খরচ করে থাকে। সরকারের তহবিল থেকে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে একটি পয়সাও খরচের প্রয়োজন হয় না।
৩। সরকার, পুলিশ, র‌্যাবসহ প্রশাসন কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কোন রকম কাজ করে না বরং সবাই শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠায় বড়ই ব্যস্ত থাকে। গণতান্ত্রিক পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে এ ধরনের পদ্ধতিটা হচ্ছে দাড়ি-পাল্লার মত সম্পূর্ণ ইনসাফ, স্বচ্ছ, ন্যায়পরায়ণভিত্তিক। সবার জন্য একই রকম রীতিনীতি হওয়ায় কারও মনে কোন রকম আঘাত, দুঃখ লাগে না এবং কোন সন্দেহও থাকে না। এককভাবে কেউ রাষ্ট্রীয় কোন সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকে সারা জীবনের অর্জন, নিজের গুণে ও দক্ষতায় সবাইকে একই স্তর থেকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এটাই হচ্ছে একমাত্র আদর্শ নির্বাচন তথা আদর্শ গণতন্ত্র। তাই পৃথিবীর প্রতিটা নির্যাতন, অত্যাচারের শিকার দুর্বল ব্যক্তিরা, সংগঠনগুলো মনে প্রাণে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রতিক্ষায় দিন গুণতে থাকে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রবীণ স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ মিঃ রাশেদ খান মেনন বলেন, যে কোন নির্বাচনে বা প্রতিযোগিতায় হার-জিতের মাপকাঠি হচ্ছে সমানে-সমান হয়ে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড (Level Playing Field) তৈরি করা। এটাই হচ্ছে পৃথিবীতে একমাত্র স্বচ্ছ, নিখুঁত নির্বাচন, যা শান্তি-শৃক্মখলায় গণতন্ত্রকে সার্থক/সফল করে দেয়। সাধারণ মানুষের জানমাল, মান-ইজ্জত রক্ষা এবং সরকারি তহবিল অক্ষুণ্ণ রাখা ও শান্তি-শৃক্মখলার স্বার্থে পৃথিবীর প্রতিটা গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ মডেল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে পৃথিবীর প্রতিটি রাজনৈতিক দল ঢাকা/লন্ডন/নিউইয়র্ক ভিত্তিক শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল মিঃ বান কি মুনকে সারা পৃথিবীতে শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠায় ও সবরকম বৈষম্য দূরীকরণে ‘‘নির্বাচনী আইন’’ নামে একটা বিধিবদ্ধ চুক্তিনামা তৈরি করতে ও বাস্তবায়নে সুদৃষ্টি সবিনয়ে আকর্ষণ করছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads