রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

এখন চূড়ান্ত সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সমাধান টানার

আন্দোলন ও কূটনৈতিক চাপে সরকার

এরই মধ্যে আমরা চলতি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসে পা রেখেছি। মাসটি পার হলেই আমরা পাবো নতুন বছর ২০১৩। এ বছরই অনুষ্ঠিত হবে আমাদের আগামী সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এই সংসদ নির্বাচন নিয়ে আছে নানা বিতর্ক, নানা প্রশ্ন ও সংশয়। কোন পদ্ধতিতে, কার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচনÑ বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে, না নতুন কোনো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে এ নির্বাচন? বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে এ প্রশ্নে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং প্রায় সব বিরোধী দল অবস্থান নিয়েছে দুই বিপরীত মেরুতে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারদলীয় জোটেরও অনেক দলের অবস্থান তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জোর দিয়ে বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দলগুলো বলছে, আগামী নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। দেশের সুশীলসমাজও চায় আগামী নির্বাচন হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কারণ, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো পরিবেশ দেশে বিদ্যমান নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে ধরনের সহিষ্ণুতার বড়ই অভাব। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। তাদের প্রশ্ন, সামনে কি আমাদের জন্য আরো একটি এক-এগারো অপেক্ষা করছে?

আমরা দেখেছি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট এ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করার দাবিই শুধু জানিয়ে আসছে ঢিলেঢালা নানা আন্দোলন কর্মসূচি দিয়ে। কিন্তু এখন নির্বাচন ক্রমেই কাছাকাছি চলে আসার প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলের জন্য এ দাবি আদায়ে সে ধরনের ঢিলেঢালা কর্মসূচি পালনের সুযোগ কমে আসছে। সরকারপক্ষ এক দিকে বিরোধী দলের দাবি প্রত্যাখ্যান করে চলেছে, অপর দিকে বিরোধী দল দমনে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা, দমন-পীড়ন সময়ের সাথে বাড়ছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে দুর্নীতির জন্য বেগম খালেদা জিয়ারও বিচার করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের পিঠ এখন দেয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। তাদের হাতে এখন আন্দোলন বেগবান করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই বিরোধী দল এখন নিজেদের আন্দোলনমুখী করবে এটাই স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে বিজয়ের মাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন, রাজপথ অবরোধ, জনসংযোগের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৮ দলীয় জোট। মাসের শেষের দিকে আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি আসছে বলে বেগম জিয়া জনসভায় উল্লেখ করেছেন। সব মিলিয়ে সরকার এখন আন্দোলনের চাপের মুখে। এবারকার আন্দোলন যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তীব্র হবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার চালু হোক, এমনটি দেশের সাধারণ মানুষ চায়। এ ব্যাপারে জনমত সরকারের বিরুদ্ধে।
এ দিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতির প্রশ্নে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপও ঊর্ধ্বমুখী। খবরে প্রকাশ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কিত বিতর্কের একটা সুরাহার জন্য কূটনৈতিক মহল থেকেও সরকারের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ নেতারাও মনে করছেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে কূটনীতিকেরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের নেতা, সাবেক কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধির সাথে কূটনীতিকদের বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কূটনীতিকদের কাছ থেকে সরকারের ওপর চাপ আসছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈঠক আয়োজন করে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করার।
আমরা মনে করি, বিরোধী দল আরো কঠিন আন্দোলনে যাওয়ার আগেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের উচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করা। দেশের জনগণও তেমনটিই কামনা করে। কারণ, এবারের আন্দোলন যে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ ডেকে আনবে তা অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে। দেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিরও ব্যাপক অবনতি ঘটবে। অতএব সরকার এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads