মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

নাগরিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে

মামলা বাণিজ্য ও হয়রানি

মামলার নামে দেশজুড়ে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এ ধরনের চাঁদাবাজি ও হয়রানি থেকে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, চিকিৎসক, আইনজীবী এমনকি নিরীহ সাধারণ মানুষ কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। অনেকটা মানুষকে পণবন্দী করে চাঁদাবাজির মতো ন্যক্কারজনক কাজ শুরু করেছেন পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এ কাজে পিছিয়ে নেই মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগদান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান, গার্মেন্টসহ উৎপাদনশীল সেক্টরের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে সাধারণ মানুষকে ঢালাওভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সেই সাথে চলছে গ্রেফতার, মামলা, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনসহ ব্যাপক নিপীড়ন।

রাজনৈতিক সঙ্ঘাত ও অসহিষ্ণুতার সুযোগে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে সীমাহীন হয়রানির মাধ্যমে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছেÑ এমন তথ্য সরকারের অজানা নয়। সরকার এটাও জানে, এ জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বরত থানা পুলিশ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুদকের সদস্যরাও ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে চাঁদা আদায়ে নেমেছে। পরিস্থিতি এমন যে, কেউ কেউ পুলিশের অব্যাহত হুমকি ও ফোনকলের ভয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। বাড়িঘর ও পরিবার-পরিজন ফেলে নির্বাসিত সময় অতিবাহিত করছেন অনেকেই। বিশেষ করে যেসব পরিবারের কোনো সদস্যের সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সামান্য সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বা দলের প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন লোকদের পাইকারি হারে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভয়ে অনেক অফিসের এক্সিকিউটিভ লম্বা ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। অনেক অভিভাবক ভয়ে তাদের কলেজপড়–য়া ছেলেদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন।
এই হয়রানির মোকাবেলায় যারা মোটা অঙ্কের টাকায় রফা করতে পেরেছেন তারাই থানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন। বাকিদের ভাগ্যে জুটছে কারাবরণ ও রিমান্ডে নির্যাতনের মতো ভয়াবহ পরিণতি। প্রকাশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব জেনেও নির্লিপ্ত থাকছেন। ফলে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্যের হয়রানির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ধরনের কয়েকটি হয়রানিমূলক ঘটনা হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। তার পরও সাজানো মামলার তালিকায় পড়া ভুক্তভোগীদের অনেকেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অর্থাভাবে অনেকেই জামিনে বের হতে পারছেন না। ৫৪ ধারার এমন যথেচ্ছ ব্যবহার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
গণতন্ত্রের নামে যেসব অগণতান্ত্রিক আচরণ প্রদর্শিত হচ্ছে এর পরিণতি কোনো দিন শুভ হওয়ার নয়। এভাবে আইনের শাসন ভেঙে পড়লে শুধু গণতান্ত্রিক ধারাই নস্যাৎ হবে না, একধরনের নৈরাজ্য নাগরিক জীবনকে বিপন্ন করবে।
আমরা আশা করি, সরকার আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সংবিধানসম্মত আচরণ করবে। গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারকে কোনোভাবেই আর নষ্ট হতে দেবে না। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে নৈরাজ্য পরিস্থিতির সব দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads