চাঁদাবাজি, মাস্তানি তথা সন্ত্রাসী কর্মকা- নাগরিকদের খুবই অপছন্দের বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরই আবার সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত হতে দেখা যায়। এ বিষয়ে ব্লেম গেমও কম হয়নি। সন্ত্রাসের মাধ্যমে শুধু প্রতিপক্ষকে দমন কিংবা দলীয় অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাই চলে না, সন্ত্রাসের মাধ্যমে অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার তৎপরতাও এখন চলছে। এমনি ঘটনার একটি শিরোনাম হয়েছে, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য’। গত ৩১ জুলাই দৈনিক সংগ্রামে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানই আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। শুধু ঐতিহ্যই নয়, এখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনেক স্মৃতি জড়িত রয়েছে। স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি বর্তমানে অপকর্ম ও অশ্লীলতার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মদ, জুয়া, ছিনতাই, অবৈধ ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি থেকে শুরু করে নানা অপরাধে ছেয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এই উদ্যানটি। এসব থেকে ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করছে। ঈদকে সামনে রেখে তাদের অপতৎপরতা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আশেপাশে পুলিশ ও আনসার বাহিনী অবস্থান করলেও তারা স্থাপনা ও সরকারি মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছাড়া এসব অপরাধের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে নারাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল। তিনি ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলিমের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। আর তার সাথে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। গত ৩০ এপ্রিল রাতে ছাত্রলীগের কর্মীরা চাঁদাবাজি করতে গিয়ে এনএসআই কর্মকর্তা ওয়াসিমউদ্দিন জুয়েলের বাধার সম্মুখীন হয়। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরা এনএসআই কর্মকর্তাকে মারধর করলে সাধারণ জনগণ এনএসআই কর্মকর্তার পক্ষ নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের গণধোলাই দেয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৭ জন কর্মী আহত হয়। এরা সবাই স্যার এ এফ রহমান হলের রুহুল আমিন গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসা ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের আরেক বাণিজ্য হলো পতিতাবৃত্তি। এসব বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সকল প্রকার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এইজন্য দিনে এবং রাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশও নিযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালরে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এম, আমজাদ আলি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেখাশোনার দায়-দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে উদ্যানের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ ও অসামাজিক কার্যকলাপ যে অব্যাহত রয়েছে তা আমরা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বক্তব্য থেকেও উপলব্ধি করতে পারি। আর এসব অপকর্ম পরিচালিত হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা ও সন্ত্রাসী ক্যাডারদের মাধ্যমে। ছাত্রদের কাজ তো বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তোলা। কিন্তু এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অবৈধ ও অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের লালসা। ছাত্রদের এ অপকর্ম থেকে দূরে রাখার দায়িত্ব পালন করতে পারতো পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সবকিছু জানার পরেও বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন তারা। আরো দুঃখের বিষয় হলো, ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের দায়িত্ব যেখানে ছাত্রদের সুপথে পরিচালিত করা, সেখানে আজ তাদের অনেকেই সন্ত্রাস ও অবৈধ অর্থ উপার্জনে ঠেলে দিচ্ছেন কর্মীদের এমন অবস্থা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, জাতির জন্যও এক অশনি সংকেত। আমরা আশা করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ এবং ছাত্রলীগের ঐতিহ্য রক্ষায় ছাত্রলীগের নেতারা দলীয় সশস্ত্র ক্যাডারদের সুপথে পরিচালিত করার উদ্যোগ নেবেন। এ ব্যাপারে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপও আমাদের কাম্য।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন