শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

গণতন্ত্রহীন গণতন্ত্র,গন্তব্য কোথায়?


প্রায়ই আওয়ামী লীগের নেতারা ১/১১-এর কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন। জুজুর মতোই ভয় দেখান অসাংবিধানিক উপায়ে এ দেশে পুনরায় কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে। একটি বিষয় তারা ভুলে যানÑ ১/১১ দল ও নেতাদের ওপর প্রচণ্ড বিরক্ত দেশের সাধারণ মানুষের কাছে প্রথমে ভাষ্য ছিল। সাধারণ মানুষের স্পষ্ট মনে আছে, ১/১১-এর আগে দেশে কী ঘটছিল। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে মারার ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনো জনমন থেকে মুছে যায়নি। তারা ভুলে যাননি ১/১১-এর আগে দেশে গৃহযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং সেদিন পট পরিবর্তন না হলে এ দেশটা একটা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হতো। সেদিন রাজনৈতিক সমঝোতার সব পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুই দল মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। দেশের স্বার্থে কিংবা গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনেও এক ইঞ্চি ছাড় দিতে কেউ রাজি ছিলেন না। গণতন্ত্রই শুধু নয়, পুরো দেশের অস্তিত্বটাই সেদিন হুমকির মুখোমুখি হয়েছিল, যা নিয়ে চিন্তিত হননি নেতা-নেত্রীরা। কেউ একবারও বলেননি, এভাবে চলতে থাকলে দেশের কী হবে? তাদের জেদই শেষ কথা ছিল। সে সময় জনগণ আকুল প্রার্থনা করেছিলেন স্রষ্টার দরবারে, যাতে দূষিত রাজনৈতিক শক্তির বাইরে যেন একটি বিশুদ্ধ শক্তির জন্ম হয়। জনগণের আশা পূরণ হতে হতেও হয়নি। কিছু লোকের অতিরিক্ত ক্ষমতার লোভ ১/১১ কে ব্যর্থ করে দিয়েছে জনগণ টের পেয়ে গেছেন যে, রাষ্ট্রের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে মাঝে মাঝে অগণতান্ত্রিক উপায়ে পরিবর্তনের প্রয়োজন কতটুকু। যেখানে রাজনীতি ব্যর্থ নেতা-নেত্রীরা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন, জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই, যেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, সেখানে পরিবর্তনটাই সবচেয়ে জরুরি, পদ্ধতিটা মুখ্য নয়। আর তাই আজকাল জনগণ ‘গণতন্ত্র’ শব্দটিকে ভয় পান। আমরা ’৭২-এর পর থেকেই দেখেছি, এ দেশে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়েই গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে, জনগণের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। যেন গণতন্ত্র শব্দটিকে রাজনৈতিক দল পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে অর্জন করেছে যেন। সুতরাং আর কারো এ শব্দটি সম্পর্কে কিছু ভাবার কিংবা বলার অথবা করার অধিকার নেই? মনে হয়, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের ধারণাÑ চুরি করে হোক, সন্ত্রাস করে হোক, জনগণের অংশগ্রহণহীন, তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেই গণতন্ত্র রক্ষা পায়। সেকি গণতন্ত্রে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। সাধারণ মানুষ বলতেন, এ দু’টি দলের বাইরে আর কাকে ভোট দেবো, আছেই তো দুটো দল। আজকাল কিন্তু সচেতন জনগণ সচেতন। বলেন, দলই সমান। বড় সব জনগণ পরিবর্তন চান। এর মধ্যেই রয়ে গেছে মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। আর তাই পরিবর্তন আসতেই হবে। রাজনৈতিক আকাশে ঘন কালো মেঘ। যেকোনো সময় একটি বিশাল রাজনৈতিক ঝড় বাংলাদেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। অস্তিত্বের সঙ্কটে ডুবে যাওয়া জাতি তখন আর বিশেষ কোনো নেতা-নেত্রীর প্রতি সীমাহীন আনুগত্য নিয়ে চুপ করে থাকবে না। তাদের প্রার্থনার ভাষাও বদলে যাবে। প্রতি ফোঁটা রক্তের ভেতর তৈরি হবে ঘৃণা, যা মুছে ফেলার শক্তি কোনো দলেরই হবে না। হয়তো এখনো কিছুটা সময় হাতে আছে বিভাজন রেখাটিকে মুছে ফেলার। জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার। ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, দেশ এবং জাতির স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও ইতিহাস বলে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা সময়ের দাবিকে বুঝতে পারেন না। জনগণের নাড়ি বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। যে কারণে বারবার এ দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে অন্যভাবে। সেটা কতটা শুভ বা অশুভ ছিল সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, জনগণই অনন্যোপায় হয়ে পরিবর্তন চেয়েছিলেন। অতীত থেকে আজো আমরা শিক্ষা নিতে পারনি। পারিনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। তাই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ভাবতে যতটা ভালো লাগে, বাস্তবে হয়তো তা হবে না। হয়তো আসন্ন বিশাল ঝড়টাই নির্ধারণ করবে জাতির ভবিষ্যৎ। তবুও আশাবাদী হতে ক্ষতি নেই। কারণ আমরা তো জানি, আশাই শুধু আশা দিতে পারে আরেকবার স্বপ্ন দেখার। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নের শেষে আমরা এবার স্বপ্ন দেখব রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা ফিরে পাওয়ার।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads