মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

বাংলাদেশের বিদ্যমান অবস্থা জাতিসংঘের মধ্যস্থতা ও ক্ষমতাসীনদের ভয়


খোলা ম্যানহোলের রাজনৈতিক অর্থনীতি প্রবন্ধে সাবেক আমলা ও উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান একটা সুন্দর কৌতুক করেছেন। তিনি বলেছেন, যখনি আমি কোনও বিদেশী শহরে যাই তখনই আমি রাস্তায় ম্যানহোলের কত ঢাকনা আছে তা হিসাব করার চেষ্টা করি। যদি কোন শহরে শতকরা ১০ ভাগের কম ঢাকনা থাকে তবে সে দেশটিকে বাংলাদেশ থেকে অনুন্নত গণ্য করি। যদি শতকরা ১০ ভাগের বেশি ম্যানহোলের ঢাকনা থাকে তবে দেশটিকে বাংলাদেশের চেয়ে উন্নত বলে মনে করি। ড. আকবর আলি খান খুবই রসিক মানুষ। তিনি যখন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন তখন তার সহকর্মী হিসেবে ঐ মন্ত্রণালয়ে আমারও কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তার একটি কথা আমি এখনো ভুলিনি। তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের একটি মানুষও দোযখবাসী হবেন না। তার কথাটা আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তাকে কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ একটি মহাদোযখ। আল্লাহতায়ালা একজন ন্যায় বিচারক। তিনি একজন মানুষকে দু’বার দোযখে পাঠাতে পারেন না।’ তার কথায় যুক্তি ছিল। বাংলাদেশকে আমাদের শাসকরা আসলেই একটি নরকে পরিণত করেছেন। এখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই। ঘরেও নেই, বাইরেও নেই। তাদের জীবন, সম্পত্তি, মান-মর্যাদা কোন কিছুরই আর সুরক্ষার নিশ্চয়তা নেই। এখানে রাস্তা-ঘাটে লাশ পড়ে থাকে। আবর্জনার স্তূপে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়। পিতা-মাতাকে সন্তান নৃশংসভাবে হত্যা করে। সমাজের সবচেয়ে উত্তম ধর্মপরায়ণ দেশপ্রেমিক মানুষগুলো সরকারের রুদ্ররোষে পড়ে এখন চরমভাবে নির্যাতিত, ষ-া-গু-া, খুনি সন্ত্রাসী, চোর-ডাকাতরা সরকারি নিরাপত্তা নিয়ে এখন রাস্তা-ঘাট চষে বেড়াচ্ছে। সত্য কথা বলা এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও মিথ্যাচার দেশকে এখন গিলে ফেলেছে। সরকার এখন সর্বক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা ঢাকতে জনমতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বিরোধী দল ও বিরোধী মত নির্মূলে তারা বদ্ধপরিকর, অত্যাচারের স্টীম রোলার এখন সক্রিয়। আমাদের দেশের বাস্তব পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে তা দেখে যে কোন বিবেকবান মানুষ বিদ্রোহী কবির মতো বলে উঠবেন :
‘বন্ধুগো আর বলিতে পারি না বড় বিষ জ্বালা এই বুকে
 দেখিয়া, শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যা আসে, কই মুখে।’
আমি যার সঙ্গেই কথা বলি সবাই বলেন, আমি আর পারছি না। জীবন যাত্রার যে ব্যয় তা বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সরকারও শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকারের আগে যে চাল ১৬/১৭ টাকায় খেতাম তা এখন আমাকে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় খেতে হচ্ছে। যে ডালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০ টাকা এখন তা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকার নীচে পাওয়া যায় না। গরুর গোস্ত ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা এখন ৩০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ছিল ৭০/৮০ টাকা এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। যেই দূরত্বে রিকশাভাড়া দিতাম ৫-৭ টাকা এখন ২৫-৩০ টাকা দিতে হয়। সিএনজি ভাড়া যেখানে ছিল ৩৫ টাকা সেখানে এখন ১৫০ টাকা গুণতে হয়। নাপিতের চুল কাটার চার্জ ছিল ১৫ টাকা, এখন তা ৬০ টাকায় উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি পণ্যের দাম এভাবে চার-পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর আমাদের আয় আগের মতোই আছে। যারা সরকারি কর্মচারী তাদের গড়ে ৭০ ভাগ বেতন বৃদ্ধি পেলেও ব্যয় বৃদ্ধি তার সবকিছু খেয়ে ফেলেছে। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কথা না বলাই ভাল। তিন বেড রুমের যে বাসা ৭ বছর আগে ৭/৮ হাজার টাকায় পাওয়া যেতো তা এখন ত্রিশ হাজার টাকার উপরে। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের যখন জীবনে এই ত্রাহি ত্রাহি ভাব তখন কিন্তু ক্ষমতাসীনদের অবস্থা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার মতো। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও হরেক রকম যত লীগ আছে তাদের নেতা-কর্মীদের অবস্থার খোঁজ নিয়ে দেখুন তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, ভুয়া নামে ব্যাংক লোন, চাকরি বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য প্রভৃতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। যত অনৈতিক কাজ আছে তার সবটাই তারা করছে।
এখন দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার একটি চিত্র দেখুন। আমার বাসায় দৈনিক গড়ে প্রায় পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যায়। লোডশেডিং-এর হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য দৈনিক দু’বার লোডশেডিং-এর নির্দেশ দিয়েছেন। এটা একজন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হতে পারে না। তবুও তাকে মানুষ সহ্য করছে। তাই বলে কতদিন করবে। গ্রামগঞ্জের অবস্থা আরো খারাপ। ভোলাবাসীরা প্রায় এক সপ্তাহ বিদ্যুৎ বঞ্চিত ছিল। সরকার এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেন, প্রধানমন্ত্রী তার সাফল্য গাঁথা এত প্রচার করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে হাজার হাজার কোটি টাকা রেন্টালের পিছনে ঢেলে দিলেন, দুর্নীতির যাতে বিচার না হয় সে জন্যে দায়মুক্তি আইন পাস করলেন। কিন্তু দেশের মানুষের তাতে লাভটা হলো কি? অবৈধ পন্থায় দলীয় লোকদের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বানানোই কি তাদের উদ্দেশ্য ছিল?
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা এখন অত্যন্ত করুণ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাত্রলীগ জিম্মি করে ফেলেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ছাত্রদের সাথে শ্রেণীকক্ষে যত কম সময় কাটান তেমনটি পৃথিবীর আর কোন দেশে ঘটে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে চীনে বছরে বারোশ’ পঁয়ত্রিশ ঘণ্টা ক্লাস হয়, ইন্দোনেশিয়ায় এগারশ’ ঘণ্টা এবং বাংলাদেশে মাত্র চারশ’ চুয়াল্লিশ ঘণ্টা ক্লাস হয়। বাংলাদেশে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে শতকরা ৪৭ ভাগ ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় না। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৮-২০ শতাংশ ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় না। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই হার এক-তৃতীয়াংশ। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে বিদ্যা অর্জন করতে তিন বছর যথেষ্ট হওয়া উচিত তা অর্জন করতে বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ বছর লাগে। নকলবাজিতে বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকরা অনায়াসে বিশ্বে চ্যাম্পিয়নশীপ দাবি করতে পারে। এরপরও আমাদের শিক্ষামন্ত্রী তার শতভাগ সফলতা দাবি করেন। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহে ডাক্তারদের পাওয়া মুশকিল। অফিস সময়ে এসব কেন্দ্রে ১৪ থেকে ৫৭ শতাংশ ডাক্তার হাজির থাকেন। অফিস সময়ের পর এসব কেন্দ্রে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডাক্তার পাওয়া যায়। মোজাফফর আহমদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ডাক্তাররা পয়সা কামাই করার জন্যে রোগীদের ভয় দেখিয়ে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করেন। আরেকটা মূর্ছা যাবার মত খবর হচ্ছে বিশেষজ্ঞ সরকারি ডাক্তাররা গড়ে ২.৫৭ মিনিটে একজন রোগী দেখেন।
পরিবহনের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার মাত্র পাঁচ শতাংশ ভালো অবস্থায় রয়েছে, ৭৮ শতাংশ কোনমতে ব্যবহার করা যায়। বাকী ১৭ শতাংশ হলো ব্যবহারের অনুপযোগী। বিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার এগুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। এদের দায় এবং লোকসান ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে।
ব্যাংকসমূহ রাষ্ট্রীয়করণের পক্ষে প্রধান যুক্তি ছিলো যে, এসব প্রতিষ্ঠানের লাভ থেকে উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে। অথচ এই ব্যাংকসমূহই করদাতাদের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ব্যাংকসমূহে শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণ প্রায় ৩৫ শতাংশের উপরে। কৃষি ও শিল্পের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের খেলাপী ঋণের পরিমাণ আরো বেশি, প্রায় ৬৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। সরকার বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দলটিকে নির্বাচনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপি এবং ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরুদ্ধেও সাঁড়াশি অভিযান চলছে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার তার মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছেন। জঙ্গীবাদের নাটক সাজিয়ে দেশ তথাকথিত জঙ্গীদের হাতে চলে যাবার মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালিয়ে ইসলামবিদ্বেষী বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিরোধীদল কেয়ারটেকার তথা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দেশ এখন সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলছে। এই অবস্থায় জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং সঙ্কট নিরসনে ফলপ্রসূ সংলাপের উপর জোর দিয়েছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন। সরকার তার একগুঁয়েমিতে অবিচল রয়েছেন এবং নিজের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে একচুলও না নড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ লজ্জাজনক হলেও আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে তা অনাকাক্সিক্ষত নয়। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ এই সঙ্কট নিরসনে কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে চাচ্ছেন। তিনি যদি সফল হন ভাল, যদি না হন তাহলে কি হবে? আমরা কি হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্ট ডিঙিয়ে প্রিভি কাউন্সিলে গিয়েও ব্যর্থ হবÑএই প্রশ্ন সকলের।
আওয়ামী লীগ সহজে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজী হবে বলে মনে হয় না। কারণ তার ক্ষমতা হারানোর ভয় আছে। দেশব্যাপী তার জনপ্রিয়তায় যে ধস নেমেছে তা দলটির অজানা নয়। তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার পরও সাড়ে চার বছরের মাথায় এখন এই দলের এমপিরা ভোটারদের কাছে যেতে ভয় পান, গেলে অপদস্থ হন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়া তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এমপি হওয়া তো দূরের কথা যদি মেয়র নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন তাহলে কাদের সিদ্দিকী রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। আরো অনেকগুলো কারণ আছে। যেজন্যে আওয়ামী লীগ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিশোধের ভয়। বেগম জিয়াকে তারা অপমানকরভাবে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর তাদের ছত্রছায়ায় বিডিআর হত্যাযজ্ঞ হয়েছে এবং প্রায় পাঁচ ডজন চৌকস সেনাকর্মকর্তা নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। তাদের পরিবার-পরিজনকে অপদস্থ করা হয়েছে। তারা আইন করে সরকারি সম্পত্তি গ্রাস করেছেন। বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন পাস করে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। জামায়াত-হেফাজত ও বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন করেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের হ্যান্ডকাফ ও ডা-াবেড়ি পরিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি সম্পদ দখল ও দুর্নীতির নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। পদ্মাসেতু, শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, আইটিসিএলসহ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-এর নামে দেশকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছেন। সরকারি ব্যাংকগুলোকে ফতুর করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বস্তরে ব্যাপক দলীয়করণ করেছেন। মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এখন আওয়ামী লীগের ভয় হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় এবং তারা ক্ষমতায় যদি আসতে না পারেন তাহলে তাদের উপরোক্ত অপকর্মগুলোর সবগুলোর জন্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তাই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চান না। শেখ হাসিনা স্বয়ং বলেছেন, তিনি যদি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে তাহলেই তিনি নির্বাচন দেবেন। এক্ষেত্রে মহাজোটভুক্ত বামদলগুলোর অবস্থাও একটি বিচার্য বিষয়। অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে যে, বামদলগুলো সম্মিলিতভাবে দেশের মোট ভোটারদের আধা শতাংশেরও সমর্থন পাননি। এই করুণ অবস্থায় তারা আওয়ামী লীগের লেজ ধরে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে কেউ কেউ এমপি হয়েছেন, আবার কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়েছেন। এটি স্বপ্নেও তারা কল্পনা করতে পারেননি। কাজেই এই অবস্থাকে ধরে রাখার জন্য তারা কখনো নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দিতে পারেন না। এই বাস্তব অবস্থাকেই সামনে রেখে বিরোধী জোটকে তাদের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে এবং তা যত শিগগির তারা করতে পারবেন ততই মঙ্গল। কারণ জাতির সামনে এখন সময় খুবই কম। তারা ক্ষমতাসীনদের দুঃশাসন, নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads