বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

জনস্বার্থে পুলিশের ব্যবহার


বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার গত সাড়ে চার বছর ধরে আইন ও বিধিসম্মতভাবে ব্যবহার না করার উপর একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সরকার সাড়ে চার বছর ধরে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও নাগরিকদের নিরাপত্তার পরিবর্তে ভিআইপি, ভিভিআইপি প্রমুখের নিরাপত্তা ও প্রটোকল এবং বিশেষ বিশেষ স্থাপনার নিরাপত্তার কাজে পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে নিয়োজিত রেখেছে। এটি তাদের প্রধান কাজ নয় তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণের সুরক্ষা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা। পুলিশ যদি আইন ও বিধিসম্মতভাবে এসব আসল কাজ করতে পারতো তাহলে আমাদের সমাজের স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত হতো এবং এর ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত হতো। সরকারি এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের প্রতি ১২শ’ জন নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন পুলিশ। আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যা অত্যন্ত কম এবং অনুল্লেখযোগ্য। এই কমসংখ্যার পুলিশের সাথে বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো যুক্ত হয়েছে সরকার ও সরকারি মহল ও প্রভাবশালী ভিভিআইপি, ভিআইপি এবং নানা ধরনের স্থাপনা ও বাড়ি-গাড়ির নিরাপত্তার পাহারাদারির কাজ। ফলে ১২শ’ জন মানুষের পরিবর্তে প্রতি ২ হাজার জন মানুষের নিরাপত্তার জন্য এখন নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ১ জন পুলিশ। ১ জন পুলিশ ২ হাজার মানুষের নিরাপত্তা বিধান কীভাবে করবে? আরেক তথ্যে জানা যায় যে, বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোট জনবল ২৬ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার সিভিল সদস্য রয়েছে। আওয়ামী সরকার রাজধানী ঢাকা মহানগর পুলিশের বড় অংশকেই ব্যবহার করছে, তাদের ভিআইপি প্রটোকল এবং বাড়ি-গাড়ি পাহারার কাজে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের ৯ হাজার সদস্য রাত-দিন কাজ করছেন আওয়ামী সরকারের ভিভিআইপি-ভিআইপ প্রটোকল এবং সরকারি দলের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির নিরাপত্তা ও স্থাপনায়, বাড়ি-গাড়ির গার্ড ডিউটিতে। ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জনবলের অভাবের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজই দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা বহর আর সরকারদলীয় এমপিদের প্রটোকলেই বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে পুলিশের। প্রায় প্রতিদিনই গড়ে মন্ত্রী-উপদেষ্টা আর এমপিসহ ভিআইপিদের ১০-১৫টি অনুষ্ঠান থাকে। এক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রী যদি সচিবালয় থেকে মিরপুর এলাকায় যেতে চান তাহলে তার যাত্রাপথের নিরাপত্তার জন্য মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও ও মিরপুর জোনের পুলিশকে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-দারোগা ও পুলিশ সদস্যদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। পুলিশের মতে, বিরোধী কোনো দল বা জোট যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়, তখন আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশকে বাড়তি সময় দিতেই হয়। এ কারণে বিভিন্ন মামলার তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেফতার, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। দাগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তথ্য সংগ্রহের কাজও ঢিমেতালে এগিয়ে চলছে। এসব তথ্য সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও ভয়াবহ। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই সবার চোখে পড়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা, দখলবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, নারী ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, খুন, গুম এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী তৎপরতা। জনস্বার্থে, জননিরাপত্তায় ও জনকল্যাণে এসব অপরাধ দমনই পুলিশের প্রধান কাজ। পুলিশ বাহিনীতে অধিকাংশ পুলিশ অফিসার এবং সিপাহিই সৎ ও যোগ্য পুলিশের মধ্যে এখনো সৎ ও নীতিবান অফিসার এবং কনস্টেবল রয়েছেন। তাদেরকে যথাযোগ্য ক্ষমতা ও মর্যাদা দেয়া উচিত। বলা হয়ে থাকে যে, পুলিশ প্রশাসন চলছে সেই বৃটিশ আমলের প্রণীত আইন দিয়ে। তারপর এসেছে পাকিস্তান। এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু বৃটিশদের সেই আইন দিয়ে আজো স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ চলছে। এ জন্যেই আইনকে সংশোধন করতে হবে এবং যুগোপযোগী করতে হবে। পুলিশকে যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করা না হয়, সে জন্য সারাদেশে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা বড় বেশি দরকার বলে আমরা মনে করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads