আকাশছোঁয়া দাম এবং ছিনতাইকবলিত হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশের নারীদের কাছে স্বর্ণের বিকল্প এখন সিটি গোল্ড। কিন্তু সিটি নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক নারীসমাগম দেখে নানা কারণের কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সিটি গোল্ড ব্যবহার করেন মূলত সিটিতে বসবাসকারী পরিবারের নারীরা। সেসব সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন যে, পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে খাঁটি সোনার গয়না পরে যাতায়াত করা মোটেও নিরাপদ নয়। মামুলি ছিনতাই হলে কথা ছিল না। সোনার গয়নার জন্য দেশের সিটিগুলোতে বহু নারীর জীবন বিপন্ন হয়েছে। এখন ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ নিয়ে পানি ঘোলা নয়, পানি টক করার খেলায় মেতেছেন কেউ কেউ। অভিজ্ঞজনের মতে, পাল্টা ‘নিম তত্ত্ব’ যখন মাঠে আসবে তখন ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ হালে পানি পাবে না। কারণ তেঁতুলের রাসায়নিক ক্রিয়া নষ্ট করার শক্তি রাখে নিম। আর আল্লামা আহমদ শফীর ভক্ত অনুসারী ও দেশের কোটি সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মেসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করেন সেই নিমের ডাল। সেই অবস্থায় ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ হালে পানি না পাওয়ারই কথা। নদীতে পানি থাকে না বলে গাজীপুরে ডাঙায় নৌকা ভেড়ানোর শেষ চেষ্টাও কাজে এলো না। গাঙের নৌকা যখন ডাঙায় ওঠে তখন নৌকার দুর্দশা দেখে মানুষ আফসোস করে। চুক্তি করে নিজেদের নৌকা চলাচলের উপযোগী পানি যারা আনতে পারে না, তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নৌকার মাহাত্ম্য তুলে ধরবে কিভাবে? তারা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়ে জানতে পারে পদ্মার কথা। জীবনবাদী এই লেখকের বর্ণনায় পাওয়া যায় এক উচ্ছল প্রাণবন্ত পদ্মা। এই লেখক বলেছেন, ‘নৌকা চলে পদ্মায়। পদ্মা তো কখনো শুকায় না। কবে এ নদী সৃষ্টি হইয়াছে কে জানে। সমুদ্রগামী জলপ্রবাহের আজো মুহূর্তের বিরাম নাই। গতিশীল জলতলে পদ্মার মাটির বুক কেহ কোন দিন দেখে নাই, চিরকাল গোপন হইয়া আছে। ... ‘আশ্বিন মাস, সেখানে পদ্মার এ তীরের ও তীরের ব্যবধান তিন মাইলের কম নয়।’ অথচ আজ সেই পদ্মা মানুষ হেঁটে পার হয় শুকনো মওসুমে। ১৯৭৪ সালে ভারত সরকারের সাথে ফারাক্কা চুক্তির পর সেই পদ্মা শুকনো মওসুমে। সেই পদ্মা এখন মৃত। পদ্মার পানিশূন্য মাটির বুক এখন সবাই দেখে। চিরকাল গোপন থাকা পদ্মার বুক দেখে ১৯৭৬ সালে গর্জে ওঠেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের অবিসংবাদী নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের পর পদ্মাপাড়ের কুবের মাঝিদের জেলেপল্লী রুপালি ইলিশের স্বপ্নে চঞ্চল হয়ে ওঠে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ছিল পদ্মার শুষ্ক ধূলিঝড়ে আবার হারিয়ে যায় ১৯৯৬ সালে। তখনকার শেখ হাসিনা সরকারের পানিচুক্তির পর প্রত্যাশিত পানি না এলেও পদ্মার রুপালি ইলিশ যেতে থাকে কলকাতা ও মুম্বাইয়ের বাজারে। পদ্মাপাড়ের এই জমানার কুবের মাঝিরা তাই বলে, বাবার আমলে পদ্মার পানি গেল আর মেয়ের আমলে হারাতে হলো পানি ও মাছ দুটোই। এর সাথে পানির অভাবে নৌকাকে ফেলল তারা অস্তিত্বের সঙ্কটে। তাই বুঝি নৌকা এখন সড়ক-মহাসড়কে বাঁশের আগায় সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। গাজীপুরের মানুষ ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়ে বিহিত করার মওকা হাতছাড়া করেনি। গাজীপুরে শেষ মুহূর্তে নল ও বলের ভয়ে এরশাদের সমর্থন যে কাজে আসবে না, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হয়েছেও তাই। ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার অহঙ্কার চূর্ণ করার অপোয় ছিল গাজীপুরের সাধারণ মানুষ। শুধু তাদের কথা কেন? এই সরকারের শুরুর ছয় মাস না যেতেই সোহেল তাজ কেন লৌহদণ্ডের মতো শক্ত হয়ে ছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে? তা আজো খোলাসা হয়নি। তার স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার অপ্রকাশিত কথা জানতে আজো অপোয় আছে দেশের মানুষ। এ দিকে দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়ায় গাজীপুরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার মতে, গাজীপুরে প্রার্থী নির্বাচনের েেত্র স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ােভ সৃষ্টি হয়। তাদের ঐক্যবদ্ধ না করে মাঠে নামালে সফল হওয়া যায় না।’ এই বোধোদয় হলো নির্বাচনী ফলাফলের পর। তবে নির্বাচনের আগে তার কথামতো কাজ হলে দলের ঘরে কি সত্যিই বিজয়ের ঢাক বাজত? তৃণমূলের জন্য এখন নেতাদের কুম্ভীরাশ্র“ দেখে মানুষের জানতে ইচ্ছা করে, তারা কি জাহাঙ্গীর আলমের কান্না দেখেননি? তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার পর তার ব্যথার অশ্র“ আষাঢ়ের বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দেখেছে দেশের কোটি মানুষ। টিভি ফুটেজের সে দৃশ্য দেখে আফসোস করা ছাড়া কী-বা করার ছিল? তবে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের খবরে কাউকে আফসোস করতে দেখা যায়নি। নির্বাচন-পরবর্তী নানা বিশ্লেষণে পরাজয়ের বহু কারণ আলোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, গাজীপুরে ‘ডাইনেস্টির’ পরাজয় হয়েছে, এখন সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়ার মতো করে তারা বলছেনÑ স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, জাতীয় নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারো মতায় বসাবে। সে আশা তারা করতেই পারেন। জনগণ তো বুঝে গেছে তাদের প্রতিপ কে বা কারা। সেই ভয়ে জনগণের ভোটের তীর ল্যভ্রষ্ট করতেই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তাতেও নিঃসংশয় হতে না পেরে তারা আইন করে রাজনীতিতে ধর্মের কথিত ব্যবহার বন্ধ করার দাবি উঠিয়েছে। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম এ দাবিতে কথা বলার পর জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশে নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নগ্ন কটূক্তি, অশ্লীলতা ও অবজ্ঞা করতে পারা প্রগতিশীল হওয়ার মাপকাঠি। শুধু ইসলাম ধর্মানুগত হলেই তার গায়ে ছাপ দেয়া হবে ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা’র। মানুষ দেখছে, মহাজোট ও তাদের সাংস্কৃতিক সাগরেদদের কথা ও কর্মসূচি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যতটা না, তার চেয়ে বেশি ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমবিদ্বেষপূর্ণ। জনগণ দাবি করতে পারে, ইসলাম ধর্মের বিরোধিতাকারীদের দলে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না এবং নির্বাচনে দলের মনোনয়নের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ধর্মবিরোধী সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র ও কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। দাড়ি-টুপি নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রƒপ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। কম দুঃখে নাসিমেরা পূর্বোক্ত দাবিটি করেননি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের দলের ধরাশায়ী হওয়ার পেছনে নানা কারণের মধ্যে তারা বিশেষভাবে হেফাজত ইস্যুকে চিহ্নিত করেছেন। শাপলা চত্বর হেফাজতমুক্ত করা হলেও সেখান থেকে লাখ লাখ স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই স্ফুলিঙ্গ লীগের প্রার্থীদের চোখে সরষে ফুল হয়ে নৃত্য করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলে এখন তাকে মোটেও হালকা করে দেখছেন না। এসব নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের হিসেবে দেখছেন তারা। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক খালাস করেও তারা স্বস্তিতে নেই, শান্তিতে নেই। এই পরিস্থিতিতে ভারতের লেখক মহাশ্বেতা দেবীর ভাষায় বলতে হয় ‘...প্রশাসনী মস্তানরা দেশকে এক রক্তাক্ত বধ্যভূমি করে আইনশৃঙ্খলা পুনর্বাসিত করল...’। পিলখানা, শাপলা চত্বর, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ তথা দেশজুড়ে তাদের রক্তাক্ত হাতধোয়া পানি লুকাতে পারেনি। সে পানি পৌঁছে গেছে সেচের নালা হয়ে বাংলাদেশের সমস্ত ফসলের মাঠে। শাপলা চত্বর থেকে ফিরে না আসা এতিম কিশোর, মাদরাসাছাত্র, গ্রামের মুরব্বি মুসল্লিদের রক্ত চিনতে ভুল হয়নি কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কামলার। শিডিউল বাতিল করে লন্ডন থেকে এক দিন আগে ফিরে আসেন নেত্রী। নানা কানাঘুষা। গুঞ্জন ওঠেÑ ‘ঘরের শত্র“ বিভীষণ!’ কে সেই বিভীষণ?
বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৩
এত কিছু করেও তারা দিশেহারা
Posted on ২:০০ PM by Abul Bashar Manik
আকাশছোঁয়া দাম এবং ছিনতাইকবলিত হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশের নারীদের কাছে স্বর্ণের বিকল্প এখন সিটি গোল্ড। কিন্তু সিটি নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক নারীসমাগম দেখে নানা কারণের কথা বলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সিটি গোল্ড ব্যবহার করেন মূলত সিটিতে বসবাসকারী পরিবারের নারীরা। সেসব সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন যে, পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে খাঁটি সোনার গয়না পরে যাতায়াত করা মোটেও নিরাপদ নয়। মামুলি ছিনতাই হলে কথা ছিল না। সোনার গয়নার জন্য দেশের সিটিগুলোতে বহু নারীর জীবন বিপন্ন হয়েছে। এখন ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ নিয়ে পানি ঘোলা নয়, পানি টক করার খেলায় মেতেছেন কেউ কেউ। অভিজ্ঞজনের মতে, পাল্টা ‘নিম তত্ত্ব’ যখন মাঠে আসবে তখন ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ হালে পানি পাবে না। কারণ তেঁতুলের রাসায়নিক ক্রিয়া নষ্ট করার শক্তি রাখে নিম। আর আল্লামা আহমদ শফীর ভক্ত অনুসারী ও দেশের কোটি সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মেসওয়াক হিসেবে ব্যবহার করেন সেই নিমের ডাল। সেই অবস্থায় ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ হালে পানি না পাওয়ারই কথা। নদীতে পানি থাকে না বলে গাজীপুরে ডাঙায় নৌকা ভেড়ানোর শেষ চেষ্টাও কাজে এলো না। গাঙের নৌকা যখন ডাঙায় ওঠে তখন নৌকার দুর্দশা দেখে মানুষ আফসোস করে। চুক্তি করে নিজেদের নৌকা চলাচলের উপযোগী পানি যারা আনতে পারে না, তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নৌকার মাহাত্ম্য তুলে ধরবে কিভাবে? তারা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ পড়ে জানতে পারে পদ্মার কথা। জীবনবাদী এই লেখকের বর্ণনায় পাওয়া যায় এক উচ্ছল প্রাণবন্ত পদ্মা। এই লেখক বলেছেন, ‘নৌকা চলে পদ্মায়। পদ্মা তো কখনো শুকায় না। কবে এ নদী সৃষ্টি হইয়াছে কে জানে। সমুদ্রগামী জলপ্রবাহের আজো মুহূর্তের বিরাম নাই। গতিশীল জলতলে পদ্মার মাটির বুক কেহ কোন দিন দেখে নাই, চিরকাল গোপন হইয়া আছে। ... ‘আশ্বিন মাস, সেখানে পদ্মার এ তীরের ও তীরের ব্যবধান তিন মাইলের কম নয়।’ অথচ আজ সেই পদ্মা মানুষ হেঁটে পার হয় শুকনো মওসুমে। ১৯৭৪ সালে ভারত সরকারের সাথে ফারাক্কা চুক্তির পর সেই পদ্মা শুকনো মওসুমে। সেই পদ্মা এখন মৃত। পদ্মার পানিশূন্য মাটির বুক এখন সবাই দেখে। চিরকাল গোপন থাকা পদ্মার বুক দেখে ১৯৭৬ সালে গর্জে ওঠেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের অবিসংবাদী নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তার ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের পর পদ্মাপাড়ের কুবের মাঝিদের জেলেপল্লী রুপালি ইলিশের স্বপ্নে চঞ্চল হয়ে ওঠে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ছিল পদ্মার শুষ্ক ধূলিঝড়ে আবার হারিয়ে যায় ১৯৯৬ সালে। তখনকার শেখ হাসিনা সরকারের পানিচুক্তির পর প্রত্যাশিত পানি না এলেও পদ্মার রুপালি ইলিশ যেতে থাকে কলকাতা ও মুম্বাইয়ের বাজারে। পদ্মাপাড়ের এই জমানার কুবের মাঝিরা তাই বলে, বাবার আমলে পদ্মার পানি গেল আর মেয়ের আমলে হারাতে হলো পানি ও মাছ দুটোই। এর সাথে পানির অভাবে নৌকাকে ফেলল তারা অস্তিত্বের সঙ্কটে। তাই বুঝি নৌকা এখন সড়ক-মহাসড়কে বাঁশের আগায় সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। গাজীপুরের মানুষ ‘উচিত শিক্ষা’ দিয়ে বিহিত করার মওকা হাতছাড়া করেনি। গাজীপুরে শেষ মুহূর্তে নল ও বলের ভয়ে এরশাদের সমর্থন যে কাজে আসবে না, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হয়েছেও তাই। ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকার অহঙ্কার চূর্ণ করার অপোয় ছিল গাজীপুরের সাধারণ মানুষ। শুধু তাদের কথা কেন? এই সরকারের শুরুর ছয় মাস না যেতেই সোহেল তাজ কেন লৌহদণ্ডের মতো শক্ত হয়ে ছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে? তা আজো খোলাসা হয়নি। তার স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার অপ্রকাশিত কথা জানতে আজো অপোয় আছে দেশের মানুষ। এ দিকে দলের মুখপাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়ায় গাজীপুরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার মতে, গাজীপুরে প্রার্থী নির্বাচনের েেত্র স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ না করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ােভ সৃষ্টি হয়। তাদের ঐক্যবদ্ধ না করে মাঠে নামালে সফল হওয়া যায় না।’ এই বোধোদয় হলো নির্বাচনী ফলাফলের পর। তবে নির্বাচনের আগে তার কথামতো কাজ হলে দলের ঘরে কি সত্যিই বিজয়ের ঢাক বাজত? তৃণমূলের জন্য এখন নেতাদের কুম্ভীরাশ্র“ দেখে মানুষের জানতে ইচ্ছা করে, তারা কি জাহাঙ্গীর আলমের কান্না দেখেননি? তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার পর তার ব্যথার অশ্র“ আষাঢ়ের বৃষ্টি হয়ে ঝরতে দেখেছে দেশের কোটি মানুষ। টিভি ফুটেজের সে দৃশ্য দেখে আফসোস করা ছাড়া কী-বা করার ছিল? তবে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের খবরে কাউকে আফসোস করতে দেখা যায়নি। নির্বাচন-পরবর্তী নানা বিশ্লেষণে পরাজয়ের বহু কারণ আলোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, গাজীপুরে ‘ডাইনেস্টির’ পরাজয় হয়েছে, এখন সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়ার মতো করে তারা বলছেনÑ স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, জাতীয় নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আবারো মতায় বসাবে। সে আশা তারা করতেই পারেন। জনগণ তো বুঝে গেছে তাদের প্রতিপ কে বা কারা। সেই ভয়ে জনগণের ভোটের তীর ল্যভ্রষ্ট করতেই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তাতেও নিঃসংশয় হতে না পেরে তারা আইন করে রাজনীতিতে ধর্মের কথিত ব্যবহার বন্ধ করার দাবি উঠিয়েছে। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ নাসিম এ দাবিতে কথা বলার পর জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বাংলাদেশে নানা ধর্মের মানুষ বসবাস করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নগ্ন কটূক্তি, অশ্লীলতা ও অবজ্ঞা করতে পারা প্রগতিশীল হওয়ার মাপকাঠি। শুধু ইসলাম ধর্মানুগত হলেই তার গায়ে ছাপ দেয়া হবে ‘প্রতিক্রিয়াশীলতা’র। মানুষ দেখছে, মহাজোট ও তাদের সাংস্কৃতিক সাগরেদদের কথা ও কর্মসূচি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যতটা না, তার চেয়ে বেশি ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিমবিদ্বেষপূর্ণ। জনগণ দাবি করতে পারে, ইসলাম ধর্মের বিরোধিতাকারীদের দলে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না এবং নির্বাচনে দলের মনোনয়নের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ধর্মবিরোধী সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র ও কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। দাড়ি-টুপি নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রƒপ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। কম দুঃখে নাসিমেরা পূর্বোক্ত দাবিটি করেননি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের দলের ধরাশায়ী হওয়ার পেছনে নানা কারণের মধ্যে তারা বিশেষভাবে হেফাজত ইস্যুকে চিহ্নিত করেছেন। শাপলা চত্বর হেফাজতমুক্ত করা হলেও সেখান থেকে লাখ লাখ স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই স্ফুলিঙ্গ লীগের প্রার্থীদের চোখে সরষে ফুল হয়ে নৃত্য করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলে এখন তাকে মোটেও হালকা করে দেখছেন না। এসব নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের হিসেবে দেখছেন তারা। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক খালাস করেও তারা স্বস্তিতে নেই, শান্তিতে নেই। এই পরিস্থিতিতে ভারতের লেখক মহাশ্বেতা দেবীর ভাষায় বলতে হয় ‘...প্রশাসনী মস্তানরা দেশকে এক রক্তাক্ত বধ্যভূমি করে আইনশৃঙ্খলা পুনর্বাসিত করল...’। পিলখানা, শাপলা চত্বর, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ তথা দেশজুড়ে তাদের রক্তাক্ত হাতধোয়া পানি লুকাতে পারেনি। সে পানি পৌঁছে গেছে সেচের নালা হয়ে বাংলাদেশের সমস্ত ফসলের মাঠে। শাপলা চত্বর থেকে ফিরে না আসা এতিম কিশোর, মাদরাসাছাত্র, গ্রামের মুরব্বি মুসল্লিদের রক্ত চিনতে ভুল হয়নি কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা কামলার। শিডিউল বাতিল করে লন্ডন থেকে এক দিন আগে ফিরে আসেন নেত্রী। নানা কানাঘুষা। গুঞ্জন ওঠেÑ ‘ঘরের শত্র“ বিভীষণ!’ কে সেই বিভীষণ?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন