শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

এ ধরনের প্রচারে জনমনে কোনো প্রভাব পড়ে না


সম্প্রতি মহাজোট সরকার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তাদের উন্নয়নের ধরাবাহিকতা প্রচারে বড় বড় দামি ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়েছে। তাতে এরা কী কী উন্নয়ন করেছে তা সচিত্র ফলাও করে প্রচার করছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে যে ব্যানার ফেস্টুন দেখা গেল, তা কী ধরনের সমৃদ্ধি তা বুঝে আসে না। পোশাক শিল্প হলো দেশের মূল অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি, তা বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। কোনো কোনো দেশ আমাদের পোশাক শিল্প ধ্বংসের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু তা প্রতিহতের পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। বেশির ভাগ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। চরম মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো ভারসাম্য নেই। স্বল্প ও নিম্নআয়ের মানুষেরা বেশির ভাগ সময় নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করছে। উন্নয়ন বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? প্রকৃত উন্নয়ন হলোÑ মানুষের যা আয়, তা দিয়ে তাদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরণে সামর্থ্য লাভ করা। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য প্রতিদিন যে হারে বেড়েছে, এখনো বাড়ছে তা নিয়ে জনমনে যে অসন্তোষ বিরাজ করছে তা কী আর বলব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ঈদুল ফিতরের বিটিভিতে সংবাদ প্রচারের সময় যে বিবৃতি দিয়েছেন তা হলোÑ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রমজান মাসে মানুষ নাকি স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার সুযোগ পেয়েছে এবং রমজানের পর আরো নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটি চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। পবিত্র মাহে রমজানে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের খেজুর যা গত বছর সত্তর টাকা ছিল এবার ১৮০ টাকায় ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করেছে। এটা হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটা দৃষ্টান্ত। এখন চালের বাজারে আগুন লেগেছে। এক দিকে দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অন্য দিকে রাজনৈতিক মহাসঙ্কটের কারণে চরম হতাশা আর দুর্ভাবনার আবর্তে নিপতিত। এসব সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। কেয়ারটেকার সরকার আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তারা যে খেলা শুরু করেছে, তার শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। এ নিয়ে হরতাল, অবরোধ, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলা সামনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে এবং দেশকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সহনশীল না হয়ে হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক পথে তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে কোনো সমস্যার সমাধানে যেতে হলে বা ছাড় দিতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসা উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সরকারও এ ব্যাপারে আন্তরিক নয়। তবে এ ব্যাপারে আন্তরিক না হলেও উন্নয়নের ধারা প্রচারে বর্তমানে খুবই আন্তরিক মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলকে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য, তবে সে উন্নয়ন কতটুকু হলো সেটা জনগণ অনুধাবন এবং মূল্যায়ন করবে তা প্রচারের কোনো বিষয় নয়। কিন্তু মানুষ এ ধরনের প্রচার দেখতে আগ্রহী নয়। তারা চায় দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শান্তিশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি। তাই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা দূরীকরণ ও শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আন্তরিক হওয়ার জন্য মহাজোট সরকারের প্রতি মানুষের পরম প্রত্যাশা।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads