শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ আগস্ট


১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ : সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনীর ঢাকা প্রবেশ। রেসকোর্স ময়দানে বিকেল ৫টায় ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সৈন্যদের শর্তহীন আত্মসমর্পণ। মেজর জেনারেল জ্যাকবের প্রস্তুতকৃত আত্মসমর্পণের দলিলে লে. জে. নিয়াজী ও লে. জে. অরোরার স্বাক্ষর। ২০ ডিসেম্বর : ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ভুট্টো বলেন, ‘শেখ মুজিবকে প্রাণদণ্ড দিলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা (বাংলাদেশ থেকে) আর দেশে ফিরতে পারবে না।২১ ডিসেম্বর : ভুট্টো ঘোষণা করেন, শেখ মুজিবকে শিগগিরই জেল থেকে মুক্তি দিয়ে অন্য কোথাও গৃহবন্দী করা হবে। ২৪ ডিসেম্বর : ভুট্টো-মুজিব সাক্ষাৎ। ৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ : করাচির এক জনসভায় ভুট্টো উপস্থিত শ্রোতাদের জিজ্ঞাসা করেনÑ তিনি যদি শেখ মুজিবকে শর্তহীনভাবে মুক্তি দেন, তবে তারা তা অনুমোদন করবেন কি না। জনগণ সমস্বরে তা সমর্থন করেন। ৬ জানুয়ারি : পাকিস্তানের কারাগার থেকে শেখ মুজিবের মুক্তি লাভ। ৮ জানুয়ারি : পিন্ডি থেকে মুজিবের লন্ডন গমন। ১০ জানুয়ারি : শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। পূর্বাহ্ণে দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তার বৈঠক। বিকেলে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় ভাষণ দান। ১২ জানুয়ারি : শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ। ২৪ জানুয়ারি : শেখ মুজিবের কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ। এ সময় আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বাঘা সিদ্দিকী) বলেন : যে নেতার আদেশে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম, সে নেতার হাতেই অস্ত্র ফিরিয়ে দিলাম।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শেখ মুজিব : আমি তোমাদের তিন বছর কিছু দিতে পারব না। আরো তিন বছর যুদ্ধ চললে তোমরা কি যুদ্ধ করতে না?’ ৬ ফেব্রুয়ারি, : শেখ মুজিবের পশ্চিমবঙ্গ সফর। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দান। ১৬ ফেব্রুয়ারি : ঢাকায় পিলখানায় ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ও গণবাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময়। মেজর নুরুজ্জামানসহ কয়েকজন আহত। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত। ১৭ মার্চ : ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঢাকায় আগমন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণ। ১৯ মার্চ : বাংলাদেশ-ভারত ২৫ বছর মেয়াদি মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর। ২২ মার্চ : পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুষ্কৃতকারী দমনে মিত্রবাহিনী তলব। ১ এপ্রিল : দিনাজপুরে মারমুখী জনতার প্রতি বাংলাদেশ বাহিনীর গুলিবর্ষণ। আট জন নিত, ১০ জন আহত। ৬ এপ্রিল : দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে ১৬ জন এমসিএ বহিষ্কৃত। ৯ এপ্রিল : দুর্নীতির অভিযোগে আরো সাতজন এমসিএ বহিষ্কৃৃত। ৪ মে : আটক বাঙালিদের পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল। ২০ মে : ঢাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জয় লাভ। ৬ জুন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষকক হুমায়ুন কবির আততায়ীর হাতে খুন হন। ১৫ জুন : নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার মাসিমপুর হত্যাকাণ্ডে দুদিনে ১৫ জন নিহত। ২১ জুন : ঢাকায় জাতীয় রক্ষীবাহিনী প্রথম দলের কুচকাওয়াজে শেখ মুজিবকে অভিবাদন। ২৫ জুন : শহরে সান্ধ্য আইন জারি করে ঘরে ঘরে তল্লাশি। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ : ১ম সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল। শেখ মুজিব দুটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ৬ ফেব্রুয়ারি : বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ৯টি আসন লাভ। ৭ মার্চ : বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত। ৮ মার্চ : নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলের নিরঙ্কুশ বিজয়। ৩০০-এর মধ্যে ২৯২টি আসন লাভ। ১০ মার্চ : ২০ মার্চের মধ্যে বেআইনি অস্ত্র জমাদানের জন্য শেখ মুজিবের নির্দেশ। ১২ মার্চ : মন্ত্রিসভার পদত্যাগ। চার দিনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ১৭ এপ্রিল : ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণা। পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের সাথে আটক বাঙালিদের বিনিময়ের প্রস্তাব। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার সিদ্ধান্ত। ১২ মে : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রথম জাতীয় সম্মেলন। ১৬ মে : দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত, কয়েক শ্রেণী লোকের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন। ২০ মে : ৪টি আসনের উপনির্বাচনে ২টিতে আওয়ামী লীগ, ১টিতে জাসদ ও অপরটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয়। ২১ মে : ভাসানী ন্যাপের আহ্বানে হরতাল পালিত। ২৭ মে : নরসিংদীতে মিছিলের ওপর গুলিবর্ষণে চারজন নিহত। ২৯ মে : ফরিদপুরের নড়িয়ায় নিজ বাসভবনে আততায়ীর গুলিতে আওয়ামী লীগ এমপি নুরুল হক নিহত। ৫ এপ্রিল ১৯৭৪ : সূর্য সেন হলে সাতজন ছাত্র নিহত। ৯ এপ্রিল : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মিলিত হন। পাকিস্তান দিল্লিতে এই মর্মে বাংলাদেশসহ ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যে, ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করা হবে এবং তাদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে। ১১ মে ১৯৭৪ : জাতীয় সংসদ সদস্য মিসেস মুমতাজ বেগমকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অপসারণ। ৭ জুলাই ১৯৭৪ : মুজিব মন্ত্রিসভার ছয়জন সদস্য ও তিনজন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পদত্যাগপত্র গৃহীত। ৯ জুলাই : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে সীমান্ত বন্ধ ও চোরাচালান দমনের নির্দেশ দান করেন। ২০ নভেম্বর : প্রিন্টিং প্রেস পাবলিকেশন্স বিল পাসের প্রতিবাদে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের ওয়াক আউট। ২৪ নভেম্বর : সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ সরকারের জাসদে যোগদান। ২৮ ডিসেম্বর : সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি। ধর্মঘট, লক আউট নিষিদ্ধ ঘোষণা, মৌলিক অধিকার স্থগিত। প্রেসনোটে বলা হয়, সমাজবিরোধীদের কার্যকলাপের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ : পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি প্রধান সিরাজ শিকদার নিহত। ৩ জানুয়ারি : সরকার চোরাকারবারি ও কালোবাজারিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার লক্ষ্যে জরুরি ক্ষমতা আইন ঘোষণা করে। ৬ জানুয়ারি : সরকারি জরুরি ক্ষমতা আইন বলে জনসভা, জনসমাগম ও সব ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা। ২১ জানুয়ারি : আওয়ামী লীগ সংসদীয় কমিটির সভায় জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান। ২৫ জানুয়ারি : জাতীয় সংসদে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি ও একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত। শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট পদে আসীন। ২৭ জানুয়ারি : জাসদপন্থী দৈনিক গণকণ্ঠের কার্যালয় পুলিশের সিজ। ৩০ জানুয়ারি : দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে কিছু লোকের বিক্ষোভ বাংলাদেশ প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। ৪ ফেব্রুয়ারি : যশোর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন মিঞাজি যশোরে আততায়ীর গুলিতে নিহত। ১১ ফেব্রুয়ারি : জেনারেল ওসমানী ও মইনুল হোসেনের সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যারগর পর এ দুটি আসন শূন্য ঘোষণা। ২৩ ফেব্রুয়ারি : নেত্রকোনা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল খালেক গুলিতে নিহত। ২৪ ফেব্রুয়ারি : প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে নতুন জাতীয়দলের ঘোষণা দেন। সাথে সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়। শেখ মুজিব নতুন দলের চেয়ারম্যান হন। ২ মার্চ : পুলিশের গুলিতে রাঙ্গামাটিতে তিনজন নিহত। ১১ মার্চ : ঝিনাইদহে একজন বাকশাল নেতাসহ পাঁচজন গুলিতে নিহত। ১৬ মার্চ : ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত ও সাতজন আহত। ১৮ এপ্রিল : যশোরের মাগুরায় গুলিতে দুইজন পুলিশ নিহত। ২৮ এপ্রিল : সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ সরকার এবং ময়নুদ্দিন আহমেদ মানিক বাকশালে যোগদান না করায় তাদের আসন শূন্য ঘোষণা। ১১ মে : কুষ্টিয়ায় রক্ষীবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আট জন নিহত। ২৮ মে : টাঙ্গাইলে বাকশাল নেতা নিহত। ৩১ মে : টুঙ্গিপাড়ায় বাকশাল নেতা গুলিতে নিহত। ১৬ জুন : সংবাদপত্র অর্ডিন্যান্স ৭৫ ঘোষিত। মাত্র চারটি দৈনিকÑ বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলার প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। জাতীয় শ্রমিক লীগের একজন কেন্দ্রীয় সদস্য মানিকগঞ্জে গুলিতে নিহত। ২১ জুলাই : দুর্নীতির অভিযোগে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মঞ্জুরকে অব্যাহতি প্রদান। ২৭ জুলাই : ১ লাখ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর বাকশাল সদস্যপদের জন্য আবেদন। ৮ আগস্ট : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ প্রিন্সিপালের বাসভবনের সামনে গ্রেনেড বিস্ফোরণে দুইজন নিহত। ১১ আগস্ট : প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বাকশাল জেলা সম্পাদকের ট্রেনিং কোর্সের উদ্বোধন। ১৪ আগস্ট : পরদিন অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি। ১৫ আগস্ট : খুব ভোরে সামরিক বাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যরা নিহত। খন্দকার মোশতাক আহমেদের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ। দেশে সামরিক আইন জারি। বিগত মন্ত্রিপরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ১০ জন মন্ত্রী ও ছয়জন প্রতিমন্ত্রী পুনর্বহাল। মোশতাকের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads