সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও কিছু কথা


গত রোববার দুপুরে টেলিভিশন চ্যানেলসমূহে একটি সরকারি ঘোষণা শুনে মনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।
তার এই হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডাকায় একটু স্তম্ভিত হয়ে গেলেও দু’টি ভাবনা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। এর একটি হচ্ছে, তিনি হয়তো জাতির এই যুগসন্ধিক্ষণে দেশবাসীকে এমন কিছু শোনাতে চান যাতে তারা আশার আলো দেখতে পাবেন। রাজনীতির অঙ্গনে সংঘাত-প্রতিহিংসার অবসান হবে এবং সম্প্রীতি ফিরে আসবে। আরেকটা  ছিল, তিনি হয়তো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। তবে শেষোক্ত ধারণার অনুকূলে এমন কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কেননা দেশে বিগত পৌনে পাঁচ বছর ধরে তার সরকার অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করে বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। আওয়ামী লীগ ও তার জোটের লোক ছাড়া এখন কার্যতঃ কারুরই মৌলিক অধিকার নেই। একটি দুঃসহ দুঃশাসন জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
কিন্তু সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন তা জাতিকে আশাবাদী করে তুলতে পারছে বলে মনে হয় না। মনে হচ্ছিল যেন তিনি সাংবাদিকদের প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র গণ্য করে দেশের অবস্থা সম্পর্কে একতরফা বক্তৃতা করছেন। তিনি একটা সুখবর দিয়েছেন। এটি হচ্ছে দেশের বিজ্ঞানীরা দেশী জাতের পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উদঘাটনে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন এবং এর ফলে বাংলাদেশের পাট বিশ্ব বাজারে তার হৃতগৌরব ফিরে পাবে। এর আগে তিনি তার ভাষায় বিদেশী তথা তোষা জাতের পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উদঘাটনে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের সাফল্যের কথা শুনিয়েছিলেন এবং তাও প্রায় দু’বছরাধিককালের আগের কথা। বাংলাদেশের পাটকে বিশেষজ্ঞরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন এবং এগুলো হচ্ছে হোয়াইট, তোষা ও মেস্তা। এখন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোষাকে বিদেশী জাতের পাট হিসেবে গণ্য করলেন কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। আবার দেশী জাত বলতে তিনি কোনটিকে বুঝিয়েছেন তাও পরিষ্কার নয়। এই তিন জাতের পাটই বাজারে ওঠার পর ক্লাসিফিকেশন হয়ে এবটম, বিবটম, সিবটম ও ক্রসবটম পাটে রূপান্তরিত হয়। এই শ্রেণীবিন্যাস হয়ে পচানো পাটের গোড়ার দিকের স্পটের ওপর নির্ভর করে। তোষা পাটে এই স্পটের পরিমাণ নেই বললেই চলে। হোয়াইটে কিছু আছে এবং মেস্তায় এই স্পট সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। তোষা পাটের আঁশ দেখতে সোনালি রঙের এবং কার্পেট তৈরিতে এই পাট ব্যবহৃত হয়। স্মরণাতীতকাল থেকে এই পাট বাংলাদেশী পাট হিসেবেই গণ্য হয়ে আসছে, কখনো বিদেশী পাট হিসেবে নয়। আবার বিদেশী পাট বলতে প্রকৃতপক্ষে কখনো কোন পাট ছিল না। অবিভক্ত ভারতে বিশ্বের মোট পাট উৎপাদনের শতকরা প্রায় ৮৭ ভাগ পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশেই উৎপন্ন হতো। পাকিস্তান আমলেও এই ধারা দীর্ঘকাল অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ আমলে এসে আওয়ামী লীগের ভ্রান্ত নীতির ফলে  পাট ও পাট শিল্পে ধস নামে এবং এই দুটি ক্ষেত্রেই প্রতিযোগী গড়ে ওঠে। ভারত-থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ পাট চাষ শুরু করে এবং বাংলাদেশ তার একচেটিয়াত্ত হারায়। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের তোষা পাটের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উদঘাটন তা পুনরুদ্ধারে এবং পাট শিল্পের প্রসারে এই সরকারের আমলে কি ধরনের সাফল্য এনেছে আমরা তার লক্ষণ এখনো দেখতে পাইনি বরং উল্টোটাই দেখেছি। পাট চাষাদের জমির পরিমাণ যেমন কমেছে পাটের উৎপাদন এবং রফতানির পরিমাণও তেমনি হ্রাস পেয়েছে। চাষীরা হয়েছে বঞ্চিত। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। গত ৪০ বছর ধরেই এই পাটকলগুলো লোকসান দিয়ে আসছে। তাদের পুঞ্জীভূত দায়ের পরিমাণ ৪৬০৫ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই পাটকলগুলো লোকসান দিয়েছে ৩৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দল আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে তার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে আদমজী জুট মিল চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই জুট মিলটি রাষ্ট্রীয় খাতে ও জাতীয় অর্থনীতিতে যে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করেছিল তা বন্ধ করার জন্য চারদলীয় জোট সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগ এই অর্থনৈতিক বিষয়টিকে রাজনীতিকীকরণ করেন এবং ভোটারদের বিশেষ করে শ্রমিকদের প্রলোভন দেখানোর জন্য মিলটি পুনরায় চালু করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তার ক্ষমতার মেয়াদের প্রায় পৌনে পাঁচ বছর পার হতে চললেও আদমজী জুট মিল চালু করার তার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। যতদূর জানা গেছে, এই জুট মিলটি চালু করার জন্য ৩০৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এই প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য তার সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় খাতের জুট মিলগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন এবং কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিজেএমসি ২০১১ সালে ৮৪ কোটি টাকার একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছিল। কিন্তু এই প্রকল্পটি এখনো পাস হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুমোদনের জন্য তা পড়ে আছে। গত পরশু খবরের কাগজে একটি রিপোর্ট পড়লাম। এজাক্স জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারদলীয় লোকদের কাছে লিজ দিয়ে রাস্তায় যেসমস্ত জুট মিলগুলো চালু রাখা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ এবং যে কোন সময় সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী পাটের পূর্ণাঙ্গ জন্ম জীবন রহস্য উদঘাটনের যে ‘সুখবরটি’ দিয়েছেন তার সরকার সেটা কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন দেশবাসীর কাছে তা স্পষ্ট নয়।
দ্বিতীয় যে কথাটি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেটা অনেকটা ছক বাঁধা এবং তার একগুঁয়েমির অভিব্যক্তি মাত্র। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে এবং সংবিধানে বিধৃত পদ্ধতিতেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার ভাষায়, পার্লামেন্টে আলোচনার মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এই সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়ব না। এই কথার দ্বারা তিনি ১৮ দলীয় জোট ও বিরোধী শিবিরকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছেন বলে মনে হয়। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে আসুন বা না আসুন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে বার বার নিজেরা ক্ষমতায় আসার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে নিজেদেরই অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা বহাল থাকবে এবং বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানা হবে না। বিরোধী দল বলছে যে, তারা শেখ হাসিনার সরকার অথবা তার অধীনে কোন নির্বাচনে অশংগ্রহণ করবে না। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা তার অবস্থানের যে তথ্য দিয়েছেন তাতে দেশকে তিনি সংঘাতের মুখেই ঠেলে দিচ্ছেন বলে মনে হয়। তিনি যদি তার অবস্থান থেকে একচুলও না নড়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশ ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে এবং এর দায়দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য বেপরোয়া প্রধানমন্ত্রী ও তার দল বাংলাদেশকে তাদের উত্তরাধিকারের সম্পত্তি বলে মনে করেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এখানে শাসন এবং শোষণ করার ক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগের। অন্য কোন দল দেশ শাসন করার অধিকার রাখেন না। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ছাড়া অন্য সব দল, ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গ জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী। সারা দুনিয়ায় তারা এটাই প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। জামায়াত ও ইসলামপন্থীদের তারা পথের কাঁটা মনে করেন। জামায়াতকে ইতোমধ্যে ঘোষণা ছাড়াই তারা নিষিদ্ধ করে রেখেছেন। তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতনের শিকার বানানো হয়েছে। তাদের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলার দপ্তরসমূহ খুলতে দেয়া হচ্ছে না; পুলিশী নজরে রাখা হয়েছে। তারা ঘরে-বাইরে এবং পারিবারিক পরিবেশেও কোন সভা-সমাবেশ বা আলাপ-আলোচনায় অংশ নিতে পারেন না। সরকার সেখানে নাশকতার গন্ধ পান। এ যাবত জামায়াত ও শিবিরের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এই তথাকথিত নাশকতার আশঙ্কায় গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কি নাশকতার পরিকল্পনা করেছেন এবং তা কার্যকরের ব্যবস্থা নিয়েছেন সে সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য সরকার দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পারেননি। জামায়াত-শিবির তাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ, র‌্যাব ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে তাদের উপর হামলা করা হয়। তারা এই হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে তার নাম দেয়া হয় জামায়া-শিবিরের তা-ব, সন্ত্রাস ও পুলিশের উপর হামলা। জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য সরকার তার নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা করেছেন এবং তাকে নিষিদ্ধ করার জন্য ইতোমধ্যে আদালত মামলাও করা হয়েছে। আদালতের রায় ও জনতার রায় কি হয় তার জন্য দেশবাসী অপেক্ষা করছে। বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য সরকার তাকে দু’ভাগে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। সরকারের এই তামাশার পরিণতি দেখার জন্য আমরাও অপেক্ষা করছি।
আগেই বলেছি, সরকার অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এতই বেপরোয়া যে, তার কোন সমালোচনা অথবা ত্রুটি-বিচ্যুতির কোন তথ্য তারা সহ্য করতে পারছেন না। সমালোচকদের শত্রু হিসেবে গণ্য করে তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অধিকারের সত্য ভাষণকে তারা অভিহিত করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে। অধিকারসহ মানবাধিকার সংগঠনসমূহকে বলছেন, জামায়াত-শিবিরের লবিষ্ট। অধিকারের সম্পাদককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখন দুদককে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে। বাংলাদেশে মানবাধিকার এখন পদদলিত। কারো কারোর ভাষায় এই উপমহাদেশের শতবর্ষের ইতিহাসে এই সরকারের ন্যায় মিথ্যাচারী ও জালেম সরকার আর কখনো আসেনি। তারা যে আচরণ করছেন তাতে মনে হচ্ছে যেন তারা দেশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছেন। তাদের পর আর কোন সরকার আসবে না। মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করে তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে প্রতিরোধ সংগ্রামে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের চিত্রিত করা হচ্ছে জঙ্গী, সন্ত্রাসী হিসেবে। ভারত ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে বুঝানো হচ্ছে যে, তারা সন্ত্রাসী ও জঙ্গী দমনে সিদ্ধহস্ত এবং এভাবে মুসলিম বিদ্বেষী শক্তিকে সরকার নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছে। দেশের মাদরাসায় মাদরাসায় হামলা ও গ্রেফতার নির্যাতন সরকারের এই পরিকল্পনারই অংশ।
দেশব্যাপী সরকারের জনপ্রিয়তায় ধসের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে হঠাৎ করে দেখা গেলো রাজধানীর বিলবোর্ডগুলো দখল করে সরকার তার উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছে। দেশব্যাপী এর জন্য সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। দেশের খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রায় আড়াই হাজার বিলবোর্ড দখল করে অন্যূন ১০০ কোটি টাকা খরচ করে কারা সরকারের তথাকথিত সাফল্যগাথার কাহিনী প্রচার করেছে এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে পরস্পরবিরোধী নানা বক্তব্য আসতে শুরু করলো। কেউ বললো দল করেছে, কেউ বললো প্রধানমন্ত্রীর দফতর করেছে। দল বললো তারা করেনি। তথ্যমন্ত্রী দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলেন। সরকারের বিরোধীরা বললো যে, সরকার পতনের এটি একটি ইঙ্গিত। কেননা স্বৈরাচারী আইয়ুব খানও তার পতনের বছর উন্নয়ন দশক পালন করতে গিয়ে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি। জনরোষে তাকে সরে যেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠলো যে, সরকার অন্যের বিলবোর্ড  দখল করে নিজের গুণগান গাইতে পারে তারা যে জনগণের ভোট দখল করবেন না তার নিশ্চয়তা কি? আসলে সরকার কাউকেই এখন বিশ্বাস করতে পারছে না। বিরোধী দলের সমর্থক বলে কথিত টিভি চ্যানেলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ ছাপতে দেয়া হচ্ছে না। হাতেগোনা যে কয়টি বিরোধীদলীয় সমর্থক বলে কথিত পত্রিকা আছে সেগুলোরও কণ্ঠরোধ করে রাখা হচ্ছে। তারা সরকারী বিজ্ঞাপন পান না। বাকী সবগুলো পত্রিকা এবং বিশটিরও বেশি প্রাইভেট টিভি চ্যানেল সরকারের গুণগানে ব্যস্ত। এর পরও বিলবোর্ড দখল করেই সরকার নিজের সাফল্য প্রচারে ন্যক্কারজনক যে ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ ছিঃ ছিঃ করেছে। এরপর দেখা গেলো একদিন রাতের অন্ধকারে বিলবোর্ডগুলো নেমে গেছে। এই এক ভৌতিক কা-। সরকারের এই পশ্চাদপসরণ তার ভাঙা ইমেজকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এর মধ্যে লন্ডনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন এবং ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতির কারণে ক্ষমতাসীন আওয়মী লীগের জনসমর্থন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। তাই স্বচ্ছ নির্বাচনে ভয় পাচ্ছে দলটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যেই দুর্নীতি হতবুদ্ধি করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিদেশী সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি থেকে কোটি কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের কারণে গত বছর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। ডেইলী স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন ‘পরাজয় গ্রহণ করতে না পারার প্রবণতায় আমাদের গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে।’
শেখ হাসিনা ঈদের আগে তার পুত্র জয়কে রাজনীতিতে হাতেখড়ি দিয়ে একটি চমক সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তার মাকে সাহায্য করার জন্য তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেছেন এবং প্রথম সুযোগেই নিজের পৈতৃক এলাকা পীরগঞ্জ সফর করেছেন। পীরগঞ্জের এক গণসমাবেশে তাকে বক্তৃতাও করতে দেখা গেছে এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে আগামী সাধারণ নির্বাচনে পীরগঞ্জ থেকে প্রার্থী হবার ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অন্য জায়গায়। সমালোচকরা বলছেন ড. ওয়াজেদের একমাত্র ছেলে ও একমাত্র মেয়ে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে আসেননি। মৃত্যুর পর তার দাফন অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি। এই ছেলে-মেয়েরা তার এলাকায় পিতৃপরিচয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হবার অধিকার রাখেন কি? আরেকটি প্রশ্ন আছে। সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন নাগরিক। তার স্ত্রী ক্রিস্টিনাও মার্কিন একজন খ্রীস্টান। বাংলাদেশী মেয়ে তিনি বিয়ে করেননি। হয়তো এদেশের কালচার তার পছন্দ নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদেশের রাজনীতিতে তিনি সত্যিই কি আগ্রহী? এখানে আরেকটি প্রশ্ন আছে। আমাদের সংবিধানে ৬৬ অনুচ্ছেদে ২ ধারার গ উপ-ধারায় বলা হয়েছে,A person shall be disqualified for election as or for being a member of parliament who acquires the citizenship or affirms of acknowledges allgiance to a foreign state. সংবিধানে বিদেশী নাগরিকদের নির্বাচন প্রার্থী অথবা এমপি হবার পথে এই বিধি-নিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে জয় কি তার মার্কিন নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন শহরে তার মালিকানাধীন ৭/৮টি বাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে আসবেন? আর যদি না আসেন তার জন্য কি সংবিধান সংশোধন হবে?
আমার সামনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টো রয়েছে। সেখানে দলটি এবং তার প্রধান শেখ হাসিনা অনেক উন্নয়ন ও সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু গত পৌনে পাঁচ বছরে তার ধারে কাছেও তিনি যেতে পারেননি। উন্নয়ন ও সংস্কার তাকে গিলে ফেলেছে। তার যে অবস্থা তার সাথে ইংরেজী একটি ছড়ার যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়।
ছড়াটি হচ্ছেঃ
' There was a young lady of Niger
Who smiles as she rode on a tiger
They returned from the ride
With the lady inside
And the smile on the face of the tiger.
অর্থাৎ নাইজারের একজন যুবতী মহিলা একটি বাঘের পিঠে চড়ে হাসছিলেন। যখন ভ্রমণ শেষে তারা ফিরল, তখন মহিলাটি বাঘের পেটের ভেতরে আর হাসি বাঘের মুখে।’ পাঠকরা কি বলেন?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads