রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৩

যে কারণে এ অস্থিরতা


দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া তুলনামূলক একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল, যার জন্য এ অঞ্চলের উন্নয়ন-অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে গণচীন ও ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ। তা ছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অগ্রগতিও আশাপ্রদ। বিশ্বের খ্যাতনামা পত্রিকা ও সাময়িকীর ভাষ্য মতে এবং বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণে, আগামী এক দশকে বিশ্ব অর্থনীতির মূল কেন্দ্রস্থল হবে দণি-পূর্ব এশিয়া। এর সাথে রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিরও পরিবর্তন ঘটবে। বিশ্ব নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে দণি-পূর্ব এশিয়ায়। এর একটা আলামত অবশ্য এরই মধ্যে পরিলতি হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি দিন দিন নিচের দিকে নামছে, তারা তাদের আধিপত্য ও আভিজাত্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে। তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ চালাতে গিয়ে আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্ব ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। ফলে তাদের ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জেনারেল মোটরসের মতো কোম্পানি ও খ্যাতনামা বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দিয়ে এবং হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেও এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমেরিকার বড় শহরগুলোয় জমি ও ফ্যাটের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই অবস্থায় কিছু দিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এক বক্তৃতায় বলেন, নীতি-কৌশলে পরিবর্তন না আনলে; অর্থনৈতিক েেত্র আমেরিকাকে তৃতীয় বিশ্বের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে, চুরমার হয়ে যেতে পারে আমেরিকানদের অহঙ্কার ও আভিজাত্য। প্রেসিডেন্ট ওবামার এ বক্তৃতা বিশ্লেষণ করলে এই দাঁড়ায় যে, পশ্চিমারা বিশ্বে অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে টিকে থাকার সামর্থ্য হারাচ্ছে। তাছাড়া চীনকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখছে নেতিবাচক দৃষ্টিতে। এর ফলে দুনিয়ায় আমেরিকার প্রভাব কমে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব জটিল রাজনৈতিক বিষয় মাথায় রেখে দণি-পূর্ব এশিয়াকে অশান্ত করার একটা প্রক্রিয়া চলমান আছে দীর্ঘ দিন ধরে। এর অংশ হিসেবে মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চলছে জোরেশোরে; এর জন্য সেখানে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু, এই ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারে এখন অশান্ত ও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি চলছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, ঘটছে অসংখ্য প্রাণহানি। অন্য দিকে পরিকল্পনা চলছে বাংলাদেশে একটা গৃহযুদ্ধ বাধানোরও। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলÑ এই পরিকল্পনারই একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। চীনের সাথে মিয়ানমারের রয়েছে বিশাল সীমান্ত। আর বাংলাদেশের তিন দিকজুড়ে রয়েছে ভারতের সীমান্ত। এই দুটি দেশই এখন রয়েছে পশ্চিমাদের বিশেষ নজরে এবং এ দুটি দেশই বর্তমানে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ বাধলে, চীনের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই। চীনের উত্থানকে রুখতে এর চেয়ে সহজ আর কোনো পথ নেই। পান্তরে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ বাধলে ভারত ভীষণভাবে আক্রান্ত হবে। ভারতের অর্থনীতিতে অবধারিত ধস নামবে; বাংলাদেশে তাদের কয়েক শকোটি ডলারের পণ্য বিক্রি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখা দিবে অস্থিরতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগের অনেক বিতর্কের অবসান হয়েছিল। মোটামুটি সব মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দুটি বড় ধরনের বিভেদ রেখা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দুটি বিভেদই অত্যন্ত ভয়াবহ। একটি যুদ্ধাপরাধের বিচার, অন্যটি নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার বাতিল। এই দুটি বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন টালমাটাল। রক্ত ঝরছে প্রতিনিয়ত, মরছে সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ। সমাজে বিভেদ-বিভক্তি প্রকট আকার ধারণ করছে। ঘরে ঘরে, ভাইয়ে ভইয়ের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে হিংসা-প্রতিহিংসা, যা একটা গৃহযুদ্ধ বাধার পূর্বাভাস। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। যুদ্ধাপরাধের বিচারও টেনে নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে, যা পরিকল্পিতই বলা যায়। এ দুটি বিষয় মুখোমুখি অবস্থানের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে নির্বাচন না হলে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, অন্য দিকে যুদ্ধাপরাধের রায় কার্যকর শুরু হলে আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি সংুব্ধ হয়ে রাজপথে নামবে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থির সৃষ্টি হবে বাংলাদেশে, যা চূড়ান্তপর্যায়ে গৃহযুদ্ধের রূপ নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তাতে যে আগুন বাংলাদেশে লাগবে, সে আগুনে শুধু বাংলাদেশই পুড়বে না; পাশের দেশকেও পোড়াবে, সর্বোপরি এ আগুন সমগ্র দণি-পূর্ব এশিয়াকে অস্থিতিশীল করবেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads