মাদকের নেশা আমাদের তরুণ সমাজকে গিলে ফেলতে শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে প্রাণঘাতী মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে আসক্তরা বাবা-মার পকেট উজাড় করেই ক্ষান্ত হয় না। পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকেও অর্থ নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি চুরি-ডাকাতি করতেও দ্বিধা করছে না। প্রয়োজনে মানুষ খুন করে হলেও মাদকাসক্তরা নেশার টাকা জোগাড় করছে। এমনকি নিজের বাবা-মার ওপর চড়াও হতেও পিছপা হচ্ছে না নষ্ট তরুণরা। সম্প্রতি ঢাকার চামেলিবাগের পুলিশ দম্পতির নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের পেছনেও ছিল মাদকাসক্তির সংশ্লিষ্টতা। পিতৃ-মাতৃহন্তারক ঐশী নামের নষ্ট মেয়েটি মাদকাসক্ত না হলে এমন কাজ করতে পারতো বলে মনে হয় না। শুধু-চামেলিবাগের পুলিশ-দম্পতিই নয়, মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে সাম্প্রতিককালে ডজন দুয়েক বাবা-মা নিহত হয়েছেন বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। অনুসন্ধান চালালে হয়তো এ সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে বলে আমাদের ধারণা। মাদকের কারণে শুধু পারিবারিক শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, হত্যাকা-ের মতো নির্মম ঘটনা ঘটছে এমন নয়। এর ফলে সমাজ তথা দেশে অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে। চুরি-চামারি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই প্রভৃতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এমনকি খুন-খারাবিও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজ অস্থির হয়ে পড়ছে। শুধু তরুণদের দোষ দিয়েই বা লাভ কি? মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি তথা এমপি সাহেবদেরও নাকি কেউ কেউ জড়িত। এমন দুঃখজনক খবরও ছাপা হয়েছে খবরের কাগজে।
মহানগরী ঢাকাসহ দেশের অনেক শহরে প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ নানা প্রকার মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয়। এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটে বাজারেও এসব মাদক পাওয়া যায়। উঠতি বয়সের তরুণ তথা ৭ম, ৮ম শ্রেণী থেকে একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরাও নাকি ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা অনেকেই স্কুল-কলেজে যাবার নাম করে ঘর থেকে বের হয়ে মাদকের আড্ডায় পড়ে থাকে। কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে কিছু নাকি অর্থও উপার্জন করে থাকে। পুলিশ দম্পতি বাবা-মাকে হত্যাকারী ঐশীও নাকি মাদকসেবনের সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েছিল। অবশ্য ঐশীই ওর বাবা-মাকে হত্যা করেছে না এর সঙ্গে ওর বন্ধুরা জড়িত তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। আশা করি তদন্তে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং প্রকৃত খুনি ঐশী না অন্য কেউ তা দেশবাসী জানতে পারবে। ইতোমধ্যে ঐশী তার বাবা-মাকে হত্যার কথা কয়েকবার স্বীকার করলেও পরবর্তীতে অন্যরকম কথা বলে তদন্তকারী টিমকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বলে প্রকাশ। যাই হোক, মাদকের নেশা এবং এর ভয়াবহ বিস্তার তরুণ সমাজকে যে কতটা ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে তার জঘন্যতম উদাহরণ ঐশী এবং তার সঙ্গী-সাথীরা। এর জন্য যে ঐশী এককভাবে দায়ী তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। ঐশীকে এতটা ভয়ানক করে তোলার পেছনে বাবা-মায়ের অবহেলা, অমনোযোগ কিংবা পারিপার্শ্বিকতাকেও খানিকটা দায়ী করা যায় বলে আমরা মনে করতে চাই।
পুলিশ দম্পতির হত্যার ঘটনার পর পুলিশ ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুধু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করলেই চলবে না। অবৈধ মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোমরা-চোমড়া সবাইকে চিহ্নিত করে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যায় এমন পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদক যে পথে আসে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। যেখানে যেখানে বেচাকেনা হয় সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেখানকার আড্ডাগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী, বাহক এবং সেবক সকলকে আইনের হাতে তুলে দিয়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যেমন অনেক বেগ পেতে হবে, তেমনই অসংখ্য ঐশী এবং তাদের বন্ধু তৈরি হবে আমাদের ঘরে ঘরে। আমরা নিশ্চয়ই চাই না ঘরে ঘরে ঐশী এবং তার ভয়ঙ্কর বন্ধুরা তৈরি হোক।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন