শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

বিলবোর্ডে উন্নয়ন মহড়া ও নগদ লাভ


বর্তমান সরকার গণতন্ত্ররূপী ফ্যাসিবাদের অশুভযাত্রা দীর্ঘায়িত করে পরবর্তী বংশধরদের হাতে একটি নগ্ন স্বৈরতন্ত্র তুলে দেয়ার নানাবিধ ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত। অতিমাত্রায় বামঘেঁষা মহাজোট সরকার তার মেয়াদব্যাপী যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ারমার্কেট লুট, গণমাধ্যম নিষিদ্ধ, আলেম ওলামাদের ওপর নির্যাতন এবং হেফাজতের ওপর লোমহর্ষক ক্র্যাকডাউনের মতো অদ্ভুত সফলতার ভারে ন্যুব্জ! মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদেরবিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আশ্বাস শেষ পর্যন্ত মানবতাবিরোধীঅপরাধের বিচারে রূপ নেয়। ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়টি নিয়ে দেখা গেল কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায় ছাত্রলীগ ও বাম ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে ব্লগার অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্কের ব্যানারে গুটিকয়েক তরুণের ডাকে শাহবাগে ভিড় করে উৎসুক মানুষ। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা বলেই ফেললেন, গণজাগরণ মঞ্চই ঠিক করবে আগামী সরকার কে হবে? কিভাবে হবে? সময়ের ব্যবধানে মঞ্চের গুরুত্ব এত বেড়ে যায়, ফলে সে মঞ্চের মুখপাত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ অযাচিত দুঃসাহসিক কাজ পরিচালনা করতে থাকেন; যাতে খোদ আওয়ামীপাড়ায় টানাপড়েন শুরু হয়। কেউ কেউ বলে ফেললেন, শুধু বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলিই দিয়েছিল এহেন নির্দেশনা, যা কি না মঞ্চস্থ করা হচ্ছে এ ছোকরার মাধ্যমে। সেই মঞ্চে সদর্পে চলতে থাকে হত্যা কর... জবাই করস্লোগান। বশংবদ মিডিয়ার মাধ্যমে রাতারাতি মঞ্চ হয়ে যায় জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। মঞ্চ নিয়ে নেয় রাষ্ট্রপরিচালনায় স্পর্শকাতর নির্বাহী সিদ্ধান্তের জায়গা। কে নিষিদ্ধ কে শুদ্ধ চলতে থাকে তালিকা তৈরির কাজ। গোটা মহাজোটপাড়া তখন আনন্দের বন্যায় ভাসছে। মঞ্চ চলে ওপার বাংলার সাংস্কৃতিক মহড়া, মোমবাতি প্রজ্বলন, নৃত্য প্রদর্শন ও ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা; যাতে জোরপূর্বক সমবেত করতে থাকে কোমলমতি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ অপসংস্কৃতির অন্তরালের খবর দিতে গিয়ে রোষে পড়েন। বড় বিপত্তিটি ঘটে ব্লগার অ্যাক্টটিভিস্টস নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য ও জাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ব্লগার রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাদুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হওয়ায়। পরে উঠে আসে তার নাস্তিক্যবাদী লেখনীর উপাখ্যান। স্তম্ভিত হয়ে যায় জনতা। হেফাজতের ব্যানারে এর বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ ঘটে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে। সরকারের নানা বাধানিষেধ উপো করে ঢাকাবাসী তাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানায়। সরকার তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে হেফাজতের সাথে সমঝোতার জন্য। জাগরণ মঞ্চের ভাটার টান তখন তুঙ্গে। হেফাজত ফিরে গিয়ে সংঘটিত হতে থাকে পাড়ায়-মহল্লায় আর গ্রামগঞ্জে। আলটিমেটাম আর অবরোধের পর সমঝোতায় আনতে না পেরে মতিঝিলে হেফাজতের ওপর লোমহর্ষক ক্র্যাকডাউন চালায়। যেটি সরকারের দীর্ঘ দিনের ভোটব্যাংকে আঘাত হানে, এর ফলে সরকার নিরপে নির্বাচন দেয়া থেকে দূর-বহু দূরে চলার পথের নীলনকশা আঁকে। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী জোট নিদেনপে দুটিতে বিজয়ের আশা করেছিল। কিন্তু সরকারের পর্বতসম ব্যর্থতায় ব্যাপক ভোটে হেরে যায়। ভোটের ব্যবধান লজ্জায় ফেলে দেয় মহাজোটের দুর্গকে। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নাসিম সাহেবের দ্বিতীয় গোপালগঞ্জেও লাধিক ভোটের ব্যবধানে শোচনীয় হার প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর সংপ্তি করে দেশে ফিরে উন্নয়নের ফিরিস্তি মানুষের সামনে তুলে ধরে স্বপ্নভাঙা ঘুম থেকে জেগে তুলে আওয়ামী নেতৃবৃন্দকে। প্রধানমন্ত্রী মানুষের চেতনায় আঘাত হেনে আপে করে উন্নয়নের জোয়ার বোধগম্য করে তোলার জন্য ঈদের পর বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি গণমাধ্যমের কল্যাণে মানুষের কর্ণকুহরে পৌঁছে যায়। প্রধানমন্ত্রী তনয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ডিজিটাল প্রচারণার অংশ হিসেবে বিলবোর্ডে গোটা ঢাকা শহর ছেঁয়ে যায় উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে। বিলবোর্ড মালিক সমিতি ঈদ উপলে বেনামী বিলবোর্ডগুলো নিয়ে বিপত্তিতে পড়ে। তাতে আবার সরকারপ্রধান ও জাতির জনকের ছবি সাঁটানো। ডিজিটাল ব্যানারগুলো কার? স্বীকার করতে সাহস পায়নি খোদ আওয়ামী প্রচার বিভাগও। সবশেষে ঈদ-পরবর্তী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে কথাপ্রসঙ্গে উঠে আসে বিলবোর্ড প্রসঙ্গ এবং তা একসপ্তাহের জন্য ভাড়া নেয়ার কথা জানায়। তার পর হিড়িক পড়েছে সেগুলো সরিয়ে ফেলার। গণজাগরণ মঞ্চ গুটানো, বিলবোর্ড গুটানো... পরবর্তী ইভেন্ট কী? নানান জন নানান কথা বলে, বোদ্ধামহলের ধারণা জনপ্রিয়তা অর্জনের শেষ মাধ্যম হিসেবে জঙ্গি দমনের নামে দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে বলি দেয়া হবে। নিবন্ধন বাতিল কি তার প্রথম পর্যায়? কিন্তু সেটি কতটুকু সফল হবে? তা মূল্যায়িত হবে সময়ের বিচারে। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে বিরোধীদলীয় নেতার সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। শতাধিক মানুষের প্রাণহানিতে তিনি সঠিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। গণজাগরণমঞ্চের নাস্তিক্যবাদী আচরণকে নাস্তিক মঞ্চ আখ্যা, হেফাজতের ক্র্যাকডাউনে দল এবং ঢাকাবাসীকে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা : ভোটের রাজনীতিতে পর্যুদস্ত করে ফেলে আওয়ামী জোটকে। গণজাগরণ মহড়া, বিলবোর্ডে উন্নয়ন আর ভিন্নমতাদর্শের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করার পরিবর্তে ধৈর্য ও প্রজ্ঞা এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতা সঠিক ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখবে যুগ যুগ ধরে। সুতরাং শিয়ালের লেজকাটারমতো লেজকাটা বামদের খপ্পরে আওয়ামী লীগের মতো প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক রাজনৈতিক শক্তিকে পা না দিয়ে, উচিত দলীয় সঙ্কীর্ণতা উপো করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নচেৎ দেশ ও মানুষ টিকে থাকলে এক দিন নির্বাচন দিতেই হবে। সেই নিরপে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঐতিহাসিক ২১ বছরের বিরতি যেন শতক বছরের হিসেবে গুনতে না হয়, সেটিই সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে হবে। পরবর্তী ইভেন্ট যেটিই মঞ্চস্থ করা হোক না কেন, আদিলুরদের গ্রেফতার ও নির্যাতন, ভিন্নমতাদর্শীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রচেষ্টা বুমেরাং হতে বাধ্য। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads