বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে


মহাজোট সরকার রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় বহুল আলোচিত ১১৪টি খুনের মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও সরকারিভাবে ১৬৩টি মামলার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে যেগুলো প্রত্যাহার বা আসামীদের নাম বাদ দেয়া হতে পারে।
মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বরাত দিয়ে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী প্রত্যাহার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বেশির ভাগ মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি সুপারিশ করেনি। অনেক জেলা কমিটি এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানা গেছে। সরকারের মন্ত্রী/এমপিদের চাপে জাতীয় কমিটি মামলা প্রত্যাহার ও আসামীদের নাম বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে যে, প্রত্যাহারের প্রস্তাবাধীন মামলাগুলোর মধ্যে ১১২টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য জেলা কমিটি সুপারিশ করেনি। ৩৬টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য জেলা কমিটির বেঁধে দেয়া সময় অর্থাৎ ২০০৯ সালের ১২ জুলাই-এর মধ্যে আবেদন করা হযনি। আবার এর মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে ৬০টি। বাকিগুলো ধর্ষণ, ঘুষ লেনদেন, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, ডাকাতি, কালো বাজারি, অপহরণ, জালিয়াতি, বোমাবিস্ফোরণ, চুরি, অস্ত্র পাচার, অবৈধভাবে নিজ দখলে অস্ত্র রাখা প্রভৃতি রয়েছে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় খুনী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ এবং দাগী আসামীদের মামলা প্রত্যাহার কিংবা তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেয়ার সরকারি এই উদ্যোগকে আমরা সুশাসনের নীতিমালার প্রতি সরকারের পদাঘাত বলে মনে করি। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন হচ্ছে সুশাসনের প্রধানতম শর্ত। সরকার রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় অপরাধীদের বিচার ও দ- থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশকে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য বানাতে চান বলে আমরা মনে করি। এর ফলে তারা উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হবে এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যে কোন অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধা করবে না।
বলাবাহুল্য, মহাজোট সরকারের গত পৌনে পাঁচ বছরে জাতীয় কমিটির ৩০টি বৈঠকে ১১ হাজার ১১৩টি মামলা প্রত্যাহারের বিষয় বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে তারা ৭,১০১টি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রুজু করা মামলা। এই সিদ্ধান্তের ফলে খুনি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ধর্ষকসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া পেয়ে যায়। তাদের এই অব্যাহতি সমাজ জীবনে নতুন নতুন অপরাধের জন্ম দেয় এবং সরকারি ছত্রছায়ায় দেশে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে। বিচারাধীন মামলা প্রত্যাহার কিংবা আসামীদের নাম বাদ দেয়া ছাড়াও সরকার খুনের দায়ে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামীদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছেন। দেখা গেছে খুনের আসামী ও দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছাড়া পেয়ে নতুন করে রাজীনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এমনকি নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের খুন করছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি নির্লিপ্ততা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। এই অবস্থায় নতুন করে সরকারি দলের খুনি, সন্ত্রাসী ও দাগী আসামীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার নতুন উদ্যোগকে আমরা তাৎপর্যময় বলে মনে করি। সরকার নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় এ সব অপরাধীকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকার যদি তাই করেন, (অতীতের প্রবণতা এটাই প্রমাণ করে) তা হলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং এ ক্ষেত্রে সংঘাত-সংঘর্ষ দেশকে অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যেতে পারে বলে আমাদের ধারণা। এ প্রেক্ষিতে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিহার করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads