বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

নাস্তিক্যবাদী ধ্বংসাত্মক চিন্তা থেকে বিপথগামী মানুষ ও মিডিয়াকে রক্ষা করতে হবে


তৌহিদুর রহমান : বর্তমান বিশ্বের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষা করাকে। দারিদ্র্যবিমোচন, জনসংখ্যার আধিক্য রোধ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জাতীয় অগ্রগতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, অস্ত্র তথা পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ, সম্পদের সুসম বণ্টন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক রাজনীতির উল্লেখযোগ্য এজেন্ডা। মূলত ঠা-া যুদ্ধের অবসান হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যদিয়ে। ঠা-া যুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বে আমেরিকা অনেকটা একক মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এখন মুসলিম বিশ্বকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি। এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা ও মানবতার জন্য বড় হুমকি। এমন কথা মনে করার কোন কারণ নেই যে, ঠা-া যুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বে যুদ্ধ সংঘাতের সম্ভাবনা একেবারে কমে গেছে। বরং মহাপরাক্রমশালী আমেরিকা ও তার সা¤্রাজ্যবাদী দোসররা একযোগে মুসলমানদের কল্পিত প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করেছে। ৯/১১-এর পর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নাম করে দুনিয়া থেকে ইসলামকে চিরতরে উৎখাত করার একটা মহাসমরে সা¤্রাজ্যবাদীরা লিপ্ত হয়েছে। ইসলামী জঙ্গিবাদের ধুয়ো তুলে তারা প্রতিটি মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে আত্মঘাতী গোলযোগ সৃষ্টি করছে। মুসলিম নামধারী কিছু অমুসলিম শুধুমাত্র সামান্য কিছু মাসোহারার বিনিময়ে ইহুদিদের পা-চাটা গোলামে পরিণত হয়েছে। অজ্ঞ এই শয়তানরা কখনো ধর্মের নামে দেশে দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাচ্ছে আবার কখনো বুদ্ধিজীবী বা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সেজে মিডিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বোমা ফাটাচ্ছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি। আর এরই সুযোগ নিয়ে আমেরিকা ও সা¤্রাজ্যবাদের দোসররা মোড়লের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। ফলে মুসলিম দেশসমূহের ওপর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে।
ইসলাম দুনিয়ায় আসার পর থেকেই বিরুদ্ধবাদীরা ছিল খড়গহস্ত। ঐতিহাসিকভাবে সত্য যুগে যুগে যত নবী-রাসূল এসছেন প্রায় তাদের সবার ওপরই হয়েছে অত্যাচার, নিপীড়ন। আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন সবাই। কম বেশি সব নবীর উম্মতই ছিলেন নির্যাতিত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরও সহ্য করতে হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। অতএব, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হবে এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্মের নাম নয়। নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, ঈদ, কুরবানী ইত্যাদি আচার-অনুষ্ঠানের নাম ইসলাম নয়। ইসলামের সামগ্রিক ব্যবস্থা শুধু বিভিন্ন উৎসব আর আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মানুসের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানান বিষয় সম্পর্কেই ইসলামের যুগোপযোগী পরিপূর্ণ দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আর সেজন্যই ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। অর্থাৎ মানুষের জীবন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে যে বিশেষ নিয়ম-পদ্ধতি বলে দিয়েছেন এবং মহানবী মুহম্মদ (সাঃ) যা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন, তাই হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম কোনো বিশেষ দেশের জন্য বা বিশেষ কোনো অঞ্চলের জন্য আসেনি। এমনকি ইসলাম কোনো বিশেষ জাতি-গোষ্ঠী, কোনো বিশেষ বর্ণ-গোত্রের জন্য আসেনি। ইসলাম শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যও নয়। এটা কারো একক সম্পত্তি নয়। তবে যারা ইসলাম মেনে চলে তাদের মুসলমান বলা হয়। ইসলাম নীতিগতভাবে আরব বা অনারব কারো পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। এটা পূর্ব-পশ্চিমের কোন বিষয় নয়। ইসলাম প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কারো বিরোধী নয়। শিরক ও ধর্মহীনতা ইসলাম বরদাস্ত করে না। ইসলাম অসত্য, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার, অনাচার, শোষণ, বঞ্চনা, নীতিহীনতা, আদর্শহীনতা, অশ্লীলতা, ব্যক্তিবাদ, বস্তুবাদ, ব্যক্তিপূজা, বস্তুপূজা, অমানবিকতা, বৈষম্য ইত্যাদির বিরোধী। আর এগুলো প্রাচ্যে হোক বা পাশ্চাত্যে হোক ইসলাম সবসময় তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। অতএব, নীতিগতভাবে ইসলাম কখনোই কোনো বিশেষ অঞ্চল বা জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ নয়। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ইসলাম সবসময় সোচ্চার। অন্যায়, অবিচার যেখানে যে দেশেই হোক ইসলাম তার বিরুদ্ধে। ইসলাম কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রকে কখনো ঘৃণা করে না। যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ, ইসলামকে একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং মুহম্মদ (সাঃ)কে একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে মেনে নেয়, কেবলমাত্র তখনই সে মুসলমান হয়। হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ঈমানের স্বাদ পেয়েছে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে ইলাহ, ইসলামকে দ্বীন ও মুহম্মদ (সাঃ)কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে। (সহী মুসলিম)
জীবন বিধান সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের একটি ঘোষণা, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত পশু, রক্ত, শূকরের গোশত, ঐসব পাশু যা আল্লাহর নাম ছাড়া আর কারো নামে যবেহ করা হয়েছে, যা গলা টিপে মারা হয়েছে, যা আঘাতের কারণে মরেছে, যা উপর থেকে পড়ে মরেছে, যা শিংয়ের আঘাতে মরেছে এবং যা হিং¯্র জানোয়ার ধরে মেরেছে, তবে জীবিত অবস্থায় যদি তা যবেহ করা হয়ে থাকে তা হারাম নয়। যে পশু পূঁজারবেদীতে যবেহ করা হয়েছে এবং যা জুয়ার তীর দিয়ে হত্যা করে ভাগ করা হয়। এসবই গোনাহের কাজ। আজ কাফিররা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে গেছে। তাই তোমরা তাদের ভয় করো না, আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করে দিলাম। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (তাই হালাল ও হারামের বিধি-নিষেধ মেনে চলো)। তবে কেউ যদি গোনাহের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা আল মায়িদা : ৩)
সম্প্রতি অমুসলিম দেশের মতো আমাদের দেশেও আল্লাহ সুবহানুতায়ালা, নবী মুহম্মদ (সাঃ), মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও শরীয়তের বিধি-বিধান সর্বোপরি ইসলামকে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, অবজ্ঞা ও কটাক্ষ করার মাত্রা বেড়ে গেছে। প্রায়ই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-অধ্যাপকরা ক্লাসে ইসলামের ফরজ বিধান হিজাব নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করছেন। অনেক অমুসলিম শিক্ষক এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। এসব করে তারা শুধু নিজেদের অজ্ঞতারই প্রমাণ পেশ করছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব কাজ নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় যেসব কথা ও কাজের মাধ্যমে, ইসলামের বিধি-বিধানকে বিদ্রƒপ ও কটাক্ষ করা তার মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ-রাসূল, কুরআন-হাদিস নিয়ে মশকরা করা, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করা বা ঠাট্টা-কটাক্ষ করা সরাসরি কুফরি করার নামান্তর। মুনাফিকদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো ইসলামকে কটাক্ষ করা। মহান আল্লাহ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আর আপনি যদি তাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কি এসব কথা বলছিলে, তখন অবশ্যই চট করে তারা বলে দেবে যে, আমরা তো হাসি-তামাশ ও খেলাচ্ছলে কথাগুলো বলছিলাম। তাদের জিজ্ঞেস করুন, তোমাদের হাসি-তামাশা, বিদ্রƒপ কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে করছিলে?’ (সূরা তাওবা-৬৫)
আল্লাহ আরও বলেন, ‘নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে তারা মুমিনদের নিয়ে হাসত। আর যখন তারা মুমিনদের পাশ দিয়ে যেত তখন তারা তাদের নিয়ে চোখ টিপে বিদ্রƒপ করত। আর যখন তারা পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে  আসত তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে ফিরে আসত। আর যখন তারা মুমিনদের দেখত তখন বলত, ‘নিশ্চয় এরা পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত : ২৯-৩২)
বর্তমানে আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে যে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নামের কিছু নর-নারী আছে যারা যেখানেই ইসলাম সেখানেই মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে পান। তারা ইসলামের বিধি-বিধান ও রীতি-নীতির কোনো ধার ধারেন না। কথায় কথায় মুসলমানদের প্রতিক্রিয়াশীল, জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী বলে গালি দেন। বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী বলে তৃপ্তি পান। ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এই জ্ঞানপাপীরা আসলে ইহুদি-নাসারাদের এজেন্ট। এদের সমস্ত কর্মকা-ই ইসলামবিরোধী। এরা খাঁটি মুনাফিক। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, ‘মুনাফিক পুরুষ ও নারী সবাই এক জাতেরই। এরা মন্দ কাজের হুকুম দেয়, ভালো কাজে মানা করে ও তাদের হাতকে (ভালো কাজ করা থেকে) বিরত রাখে। এরা আল্লাহকে ভুলে গেছে ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন। নিশ্চয় এই মুনাফিকরাই ফাসিক। মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য আল্লাহ দোযখের আগুনের ওয়াদা করেছেন, যার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। ওটাই তাদের জন্য উপযুক্ত জায়গা। মুনাফিকদের ওপর আল্লাহর লানত। তাদের জন্য স্থায়ী আযাবের ব্যবস্থা রয়েছে। (তাওবা- ৬৭ ও ৬৮)
মুসলমান নাম নিয়ে যারাএসব অপকর্ম করে, তারা নামে মুসলমান হলেও আসলে তারা মুরতাদ। এরা মুসলিম জাতির কলঙ্ক। এরা আবার নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে। তাদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম বিরোধিতাকে পেশায় পরিণত করে নিয়েছে। এরা পরজীবী। ভিন দেশের মাসোহারাভোগী। কার্যত তারা শুধু ইসলামবিরোধীই নয়, তারা মানবতারও চরম বিরোধী।
 এরা সংখ্যায় কম হলেও এদের খুঁটির জোর ও গলার জোর এত বেশি যে, বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও এক শ্রেণীর ইসলামবিরোধী মিডিয়ার ছত্রছায়ায় তারা ইসলামের বিরুদ্ধে বলার সাহস পায়।
তাবুক যুদ্ধের সময় কয়েকজন লোক রাসূল (সাঃ)-এর সাথে ছিল। তারা ছিল অপেক্ষাকৃত ধনী। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, ‘আমাদের এই লোকরা (কুরআনের পাঠকরা) বড়ই পেটুক, এদের চেয়ে অধিক মিথ্যাবাদী আমি আর কাউকে দেখিনি এবং যুদ্ধের ময়দানে এদের চেয়ে ভীরু কাপুরুষও আর কাউকে দেখিনি।’ সে এই কথার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) ও কুরআনের পাঠক সাহাবীদের দিকে ইঙ্গিত করেছিল। এর পরই সূরা আত তাওবার ৭৪ নং আয়াতটি নাযিল হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর কসম খেয়ে বলে যে, তারা (মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীদের নিয়ে ব্যক্ত করে) ঐ কথা বলেনি। অথচ তারা অবশ্যই কুফরী কথা বলেছে। তারা ইসলাম কবুল করার পর কুফরী করেছে। তারা এমন কিছু করতে চেয়েছিল, যা করতে তারা পারেনি। তাদের এতো রাগ করার কারণ এটাই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মেহেরবানি করে তাদেরকে ধনী বানিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা যদি তাদের এই আচরণ থেকে ফিরে আসে তাহলে তা তাদের জন্যই ভালো। কিন্তু যদি ফিরে না আসে তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেবেন। আর দুনিয়াতে এমন কেউ নেই যে, তাদের বন্ধু ও সাহায্যকারী হতে পারে। (তাওবা-৭৪)।
রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘মানুষ অনেক সময় এমন কথা বলে যার অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে সে ভেবে দেখে না। অথচ তা তাকে জাহান্নামের এত নিচে নিক্ষেপ করে যার দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝের দূরত্বের চেয়েও বেশি।’ (বুখারি : ৬৪৭৭, মুসলিম : ৭৬৭৩)।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, যদি কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সময়, মদ পান করার সময়, মদের পাত্র আদান-প্রদানের সময় আল্লাহকে তাচ্ছিল্য করে বিসমিল্লাহ বলে, তবে সে কাফের হয়ে যাবে। (রাওদাতুত তালিবীন : ৬৭/১০)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা কিংবা ড্রেস কোডের অতিরিক্ত পোশাক পরার কারণে পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়া, ছাত্রীদের জামার লম্বা হাতা কেটে দেয়া, বোরকা পরার অপরাধে ক্লাসে ঢুকতে না দেয়া, ক্লাস থেকে বের করে রদেয়া ইত্যাদি ঘটনা বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে হর-হামেশাই ঘটছে। অতি সম্প্রতি (১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩) বোরকা পরা ও ড্রেসকোড ভঙ্গের অভিযোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যায়টি। অথচ হিজাব ইসলামের একটা ফরজ বিধান।
ইসলামকে কটাক্ষ করে সাম্প্রতিককালে ‘কিছু ব্লগার যেসব কথাবার্তা লিখেছে, তা খুবই জঘন্য ও আপত্তিজনক। সে সব কথা মুখে উচ্চারণ করা দুনিয়ার কোন সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তা এতটাই অশ্লীল যে, উদাহরণ হিসেবে পেশ করারও সুযোগ নেই। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কটূক্তি ও কার্টুন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব করা হলেও এর পেছনে থাকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। আল্লাহ, রাসূল সর্বোপরি মুসলমানদের হেয়প্রতিপন্ন করা।
যেমন একাধিক বিয়ে করাকে ব্যঙ্গ করে একজন একটি কার্টুন এঁকেছে। তাতে দেখিয়েছে একটি মোরগ আর তাকে অনুসরণ করছে চারটি মুরগি। অনেকেই এমন সব প্রবন্ধ লিখেছে, যাতে বোরকা ও পর্দা বিধানের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, পর্দা হলো প্রতিক্রিয়াশীলতা, ধর্মান্ধতা, পশ্চাতপদতা ইত্যাদি।
এসব কাজের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করতে হবে। অন্যথায় তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ এই কিতাবের মধ্যে তোমাদেরকে হুকুম করেছেন যে, যেখানে তোমরা আল্লাহর আয়াতের বিরুদ্ধে কুফরী কথা ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ শুনতে পাবে সেখানে তোমরা বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য বিষয়ে আলোচনা করে। যদি তোমরা তা করো তাহলে ‘তোমরা তাদের মতোই হয়ে গেলে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সবাইকে জাহান্নামে একত্র করবেন।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১৪০)।
আসলে আমাদের দেশের আলেম-ওলামাদের অনৈক্যের কারণেই ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা মুসলমানদের মধ্যে সহজে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারছে। যার ফলে নব্বই ভাগ মুসলমানের এই দেশটি ভয়াবহ সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের অনুসারী কিছু ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ইসলামের কথা বললেই সাম্প্রদায়িকতা বলে চিৎকার শুরু করেন। উচ্ছিষ্টভোগী, নাস্তিক বুদ্ধিজীবীরা সব সময় মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িক হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। অসাম্প্রদায়িক হতে গেলে নাকি কোনো ধর্মই পালন করা যাবে না, অথবা সব ধর্মই একসাথে পালন করতে হবে! কেউ কেউ বলছে সনাতন ধর্মে ফিরে গেলেই আমরা অসাম্প্রদায়িক হয়ে যাবো। এসব উদ্ভট কথা-বার্তা তারা শুধুমাত্র মুসলমানদের বিপথগামী করার জন্যই বলেন। যারা এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ায় তারাই আসল সাম্প্রদায়িক শক্তি। তাই ভ্রান্ত বুদ্ধিজীবী, মুরতাদদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এ দেশের পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা, ইসলামী দলের নেতা ও মসজিদের ইমামদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নব্বই ভাগ মুসলমানের এই দেশকে পাশ্চাত্যের অনুসারী ব্ুিদ্ধজীবী ও নাস্তিকদের কবল থেকে বের করে আনতে হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠুক এটা আমরা সবাই চাই। ইসলামী শরীয়ত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, জানমাল ও ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করবে। গড়ে উঠবে সহনশীল একটি সমাজ। নিশ্চিত হবে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। বিচারব্যবস্থা হবে স্বাধীন, প্রতিটি মানুষ পাবে সুবিচার। গড়ে উঠবে সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশ। অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাওয়া যুবসমাজ পাবে আলোর দিশা। চালু হবে ন্যায়ভিত্তিক একটি অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা অভাবগ্রস্ত প্রতিটি মানুষের জন্য অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হবে নিশ্চিত।
তাই প্রত্যেক মুসলিমকে এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যারা এমন কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বোঝাতে। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের সরকারেরও দায়িত্ব দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। যাতে করে এসবের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের আশেপাশে যেসব কাফির রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে বলিষ্ঠতা ও কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথেই আছেন।’ (সূরা তওবা : ১২৩)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads