মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

উন্নয়নের ‘ধারাবাহিকতা’ রক্ষা ও ভাঙা নৌকায় পুনরায় উঠার আহ্বান


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকদিন আগে পর পর দু’টি ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেছেন। এর একটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার এবং অন্যটি চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। প্রথমোক্ত ফ্লাইওভারটির নাম রাখা হয়েছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এবং বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নামকরণ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের অন্য এক নেতা আবদুল মান্নানের নামে। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারটির ভুলে যাওয়া তথ্য হচ্ছে এটি বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের একটি প্রকল্প। ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ ৬৬৭ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এর মেয়াদ ছিল তিন বছর। প্রকল্পের জন্য ৮০ কাঠা জমি অধিগ্রহণের নানা জটিলতার সমাধান করে ২০০৬ সালের ৪ জুন বেগম জিয়া এর কাজ উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ দিন কাজ বন্ধ রেখে ২০১০ সালে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে ঐ বছরেরই জুন মাসে পুনরায় কাজ শুরু করেন। প্রকল্পটির এখন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৪০০ কোটি টাকা। এর ৩০% কাজ এখনও অসমাপ্ত। কাজ সমাপ্ত না করে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এর উদ্বোধন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অসমাপ্ত কাজ কখন সমাপ্ত হবে এবং আরও ব্যয় বৃদ্ধি করতে হবে কিনা এ নিয়েও কথাবার্তা চলছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে যে, তাদের মূল টার্গেট প্রকল্প বা উন্নয়ন নয়, অর্থ। প্রশ্ন উঠেছে সারা দুনিয়ার যেখানে কিলোমিটার প্রতি ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় প্রকৃতি (ঝরহমষব, ফড়ঁনষব, সঁষঃরঢ়ষব ফবপশবফ) ও ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী এবং নির্মাণশৈলী ভেদে বাংলাদেশী টাকায় ৪৪ কোটি টাকা থেকে ৯০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিস্তৃত, সেখানে হানিফ ফ্লাইওভারে ব্যয় হয়েছে কি.মি. প্রতি ২১১ কোটি টাকা। সিঙ্গেল ডেক্্ড সাধারণ সামগ্রীর ও সহজ প্রযুক্তির এই প্রকল্পে ব্যয় হবার কথা ছিল কিলোমিটার প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ কোটি টাকা। বেশি কেন হলো, কারা কারা ভাগ পেলো এ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এখানে টোল নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। প্রকল্প ব্যয় বেশি হলে টোলের হার বাড়াটা স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই তা যায়। পরিবহন ভাড়া বাড়ে। গতকাল ফ্লাইওভারের সচিত্র একটি রিপোর্ট দেখলাম, ফ্লাইওভারে গাড়ি নেই, মানুষ হাঁটছে। আর তার নিচে দিয়ে চলছে গাড়ি, সেখানে অবসহনীয় যানজট। টোল নিয়ে হাতাহাতির পর যানবাহনগুলো টোল না দিয়ে ফ্লাইওভার এড়িয়ে পুরাতন রাস্তা ধরেই চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বহদ্দারহাট উড়াল সেতুও গত ১২ অক্টোবর ১৫ শতাংশ কাজ অসমাপ্ত রেখে উদ্বোধন করেছেন। তার এই উদ্বোধনটি আমার কাছে অত্যন্ত মর্মান্তিক মনে হয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসে এই ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসে চট্টগ্রামে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। এতে ১৭ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দুই শতাধিক লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নাস্তিক ব্লগারের মৃত্যুতে তার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছিলেন। এতে তিনি নিন্দিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, গত কয়েক বছরে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে তিনি যতবার গেছেন ততবার তার জন্মস্থান টুঙ্গীপাড়ায়ও যাননি। খুব ভাল কথা। চট্টগ্রামের প্রতি তার এ আকর্ষণ প্রমাণ করে যে, তিনি চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামবাসীকে ভালবাসেন। কিন্তু তিনি কি গার্ডার ধসে নিহত হতভাগ্য ১৭ জন নিরীহ ব্যক্তির পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন? তারা কারোর সন্তান, কারোর স্বামী, কারোর পিতা বা নিকটাত্মীয়। তাদের অভাবে তাদের পরিবার কিভাবে চলছে? আবার আহত হয়ে যারা পঙ্গু হয়েছেন তাদের অবস্থায়ই বা কি? নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার কি কোনো ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন? আমি আশা করেছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ ধরনের কিছু তথ্য হয়তো থাকবে। কিংবা তিনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চাইবেন যে, হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কেমন আছে? এটি তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছিল। গার্ডার ধস সামান্য কোনো ব্যাপার নয়। এটা প্রমাণ করেছে যে, অত্যন্ত নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। যতদূর জানা গেছে এ প্রকল্পের সাথে যারা জড়িত ছিলেন একমাত্র দলীয় লোক হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরবর্তী কাজগুলো সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত অপরাধের শাস্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে না। এখানেও প্রকল্প ব্যয় শুধু অস্বাভাবিক নয়, অবাস্তবও। সরকারকে দেশের মানুষ বিদ্যমান ব্যয়ের ৫-১০ গুণ বেশি খরচ করে ফ্লাইওভার নির্মাণের অধিকার দেননি। সরকার সেটা করছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক। এই মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তরের কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। যেই কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল, সেই কাজ সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ সম্পন্ন হবার বিষয়টি দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। এই প্রকল্পের ঠিকাদার সাইনো-হাইড্রো নামক একটি চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে পালিয়ে গেছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঁদাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশে তার সুখ্যাতি থাকা সত্ত্বেও তারা পালিয়ে গেছেন। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের। সেখানেও যে সময়ের মধ্যে শতভাগ কাজ হওয়ার কথা সেখানে মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজে বিলম্ব করে বছর বছর ব্যয় বৃদ্ধি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা
এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে পুনরায় নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নৌকার এখন তলা ফুটো হয়ে গেছে বলে অনেকের ধারণা। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান মানুষ বিচার বিবেচনা করেই কাজে লাগাবেন বলে অনেকে মনে করেন।
আওয়ামী লীগ ও উন্নয়নের ডিজিটাল সংজ্ঞা
আওয়ামী লীগের কাছে যা উন্নয়ন জনগণের কাছে তার নাম শোষণ-দুর্নীতি। কেউ কেউ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের উন্নয়নের কিছু তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তাদের মতে (১) বিডিআর সদর দফতরে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যা (২) জিয়া বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন (৩) স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি লুটপাটের হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার এবং বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুরাতন মামলা পুনরুজ্জীবন ও নতুন মামলা রুজু। পুলিশী হয়রানী এবং দলীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা (৪) নিজের জন্য প্রধানমন্ত্রীভবনের মালিকানা দখল ও খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ী  থেকে উচ্ছেদ (৫) গোপন চুক্তি বা চুক্তি ছাড়াই ভারতকে ট্রানজিট/করিডোর প্রদান (৬) সিলেটসহ বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভূখ-ের জন্য ক্ষতিকর টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে নির্লজ্জ ওকালতি (৭) পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি ও মানুষের সাথে প্রতারণা (৮) একতরফাভাবে ভারতকে বাংলাদেশের ভূখ- প্রদান। (৯) মরণবাঁধ ফারাক্কার ন্যায় তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতীয় ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ (১০) শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী এবং ৩৫ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথের ভিখারীতে পরিণত করা এবং এই বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার (১১) বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে নগ্ন দলীয়করণ (১২) সংবিধান থেকে আল্লাহ্্র ওপর আস্থা ও বিশ্বাস প্রত্যাহার (১৩) ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা (১৪) কথিত ইসলামী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নামে দেশের বরেণ্য আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, আমানবিক নির্যাতন, হত্যা, গুম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন (১৫) তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলোপ এবং সংবিধান এমনভাবে সংশোধন যাতে করে আওয়ামী লীগের পক্ষে বার বার ক্ষমতায় আসা সহজতর হয়। (১৬) বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ (১৭) নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসসহ সমাজের বরেণ্য ব্যক্তিদের অপমান, অপদস্থকরণ (১৮) রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণতকরণ (১৯) জাতীয় সংসদকে দলীয় ফোরামে পরিণতকরণ (২০) দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি এবং সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। (২১) আইন-শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি এবং আবহমানকালের সামাজিক মূল্যবোধ ও শৃঙ্খলা ধ্বংসকরণ (২২) সামষ্টিক অর্থনীতিতে ধস, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের ওপর তার বিরূপ প্রভাব (২৩) দেউলিয়া পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইসলামী দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্নকরণ। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানি ব্যাপকভাবে হ্রাস। রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যাপক অপচয় করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সীমাহীন অকার্যকর বিদেশ সফর (২৪) হলমার্ক, ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, আইটিসিএলসহ ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক কেলেঙ্কারী ও তার সাথে সরকারের শীর্ষ মহলের সম্পৃক্তি (২৫) রেলওয়ের কালো বিড়াল কেলেঙ্কারী (২৬) পুলিশ কর্তৃক একদিনে গুলী করে ৭০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা (২৭) শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সীমাহীন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভর্তি ও সীট বাণিজ্য (২৮) বহদ্দার হাটে ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডি (২৯) রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি (৩০) তাজরীন ফ্যাশনস্ ট্র্যাজেডি (৩১) সাংবাদিক নির্যাতন, সাগর-রুনি হত্যা, মাহমুদুর রহমানের ওপর অকথ্য অত্যাচার বিনা ঘোষণায় বিনা কারণে আমার দেশের প্রকাশনা এবং দিগন্ত ও ইসলামী টিভি’র সম্প্রচার বন্ধকরণ (৩২) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে ক্ষমাহীন স্ক্যান্ডাল। (৩৩) ব্যভিচারের প্রসার, এর অনুঘটক হিসাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃত্ব দান। ছাত্রলীগ কর্তৃক বিভিন্ন গার্লস কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হোস্টেলের মেয়েদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা অন্যথায় নির্মম মারধর ও হোস্টেল থেকে বিতাড়ন। (৩৪) দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ। এসব শিক্ষকের ৮০ শতাংশই আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত এবং একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের।
গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ উপরোক্ত ৩৪টি খাতে নিঃসন্দেহে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে যা মানুষের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের, মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে এনেছে। দেশের মানুষ এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চান বলে আমি বিশ্বাস করি না।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা ও গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক
শেখ হাসিনা সম্ভবতঃ তার ক্ষমতার মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে তার জীবনের ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করছেন। তিনি দলের জেলা উপজেলা নেতাদের তার সরকারি দফতর/ বাসভবনে ডেকে তাদের সাথে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলীয় অবস্থান ও অবস্থা, দলীয় নেতাদের জনপ্রিয়তা, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, জামায়াত, হেফাজতসহ ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর উৎখাত এবং প্রধান বিরোধীদলের মূলোৎপাটনের কৌশল প্রভৃতি তিনি ব্যাপক শলা পরামর্শ করছেন। এর পাশাপাশি তিনি দেশবিদেশে সফরও করছেন। দেশেবিদেশে তিনি যা বলছেন তার সারমর্ম হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার জোট বহির্ভূত যতগুলো দল আছেÑবিএনপি, জামায়াত, খেলাফত, নেজামে ইসলাম, ওলামায়ে ইসলাম, মুসলিম লীগসহ সব দল স্বাধীনতা বিরোধী, তাদের দেশপ্রেম নেই, তারা সবাই জঙ্গি এবং দুর্নীতিবাজ। দেশের ক্ষমতায় থাকার বা যাবার যদি কারুর অধিকার থাকে তা হলে শুধু আওয়ামী লীগেরই আছে, অন্য কারুর নয়। তিনি দেশের নিরাপত্তা, গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সর্বত্র ভোট ভিক্ষা করছেন। প্রার্থী পছন্দ না হলে দল বা মার্কা দেখে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছেন। প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এখন প্রধানমন্ত্রীর নিত্য কর্মকা-ের অংশে পরিণত হয়েছে। গত দু’মাসে তিনি পাঁচ শতাধিক প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। যতদূর জানা গেছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পগুলোর অস্তিত্ব যেমনি নেই তেমনি এগুলোর অনুকূলে সম্ভাব্যতা জরিপ বা ঈড়হপবঢ়ঃ চধঢ়বৎ এ নেই। প্রধানমন্ত্রী এগুলো এবং আরো অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তার সরকারের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তিনি ও তার দল বেপরোয়া হয়ে উঠছেন বলে মনে হচ্ছে। সারাদেশের আলেম ওলামা, জামায়াত-শিবির, টুপি-দাড়িধারী নামাজীÑ সবাইকে এখন আওয়ামী লীগ জঙ্গির কাতারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। পবিত্র কুরআন, হাদিস গ্রন্থ, ইসলামী সাহিত্য প্রভৃতিকে জিহাদী ও জঙ্গী উপকরণ আখ্যায়িত করে অবমাননা করা হচ্ছে। মাদরাসাগুলোকে জঙ্গী তৈরির প্রজনন কেন্দ্র বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে এবং সরকারের সময় ঘনিয়ে আসছে ততই সরকারের অত্যাচার নিপীড়ন, গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাদেশ এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের প্রতি চরম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন এবং নজিরবিহীনভাবে নির্বাচনপন্থি সংসদ ও মন্ত্রিসভা বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। ২৪ অক্টোবরের পর পেশী শক্তি দিয়ে ময়দান দখলে রাখার জন্য সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহকে প্রস্তুতির নির্দেশও দেয়া হয়েছে। বিরোধীদল যাতে ঘরের বাইরে বেরুতে না পারে সে হুমকি তো আছেই।
বর্তমানে অনেকের কাছেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য ক্ষয়িষ্ণু একটি দলে পরিণত হচ্ছে। বামরা এখন দলের চালিকাশক্তি। পরিবারকেন্দ্রিক হবার কারণে দলটিতে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। ক্ষমতাই এখন তাদের কাছে মুখ্য। জনকল্যাণমুখীতার অভাবে তারা গণবিচ্ছিন্ন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। স্বৈরাচারী চরিত্র তাদেরকে চরম অসহিষ্ণু ও বিরোধীদের প্রতি খড়গ হস্ত করে তুলেছে। দেশপ্রেম বিবর্জিত ভারতপ্রীতি ও চরম ইসলাম বিদ্বেষ তাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। ‘সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধগুলো তারা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে ব্যবহার, পৃষ্ঠপোষকতাধীন ছাত্র ও যুব সমাজের নৈতিক স্খলন, ভোগ স্পৃহা পিতামাতা ও প্রবীণদের অশ্রদ্ধা তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে কলুষিত করে তুলছে। এই অবস্থা দলটির অস্তিত্বের জন্যই শুধু নয় দেশের জন্যও ভয়াবহ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads