জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ যখন আইসিটি বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন তোলে অথবা ট্রাইব্যুনালের কার্যাবলী ও রায় প্রদানের পটভূমি নিয়ে কথা বলে তখন তাদের এসব প্রশ্ন বা কথাকে নানান বিশ্লেষণ এবং গালাগালি দিয়ে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদ- পঠিত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের সমালোচনা জামায়াতের আঙ্গিনা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন বিএনপিও সমালোচনার এই ব্যান্ডওয়াগনে যোগ দিয়েছে। তবে আইসিটি’র সমালোচনায় বড় উপকরণ জুগিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি’র অতি উৎসাহী কতিপয় ব্যক্তি। উপাদান আরও জুগিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
হাসানুল হক ইনু সারা জিন্দেগী জনগণ এবং তরুণ সমাজকে ব্লাফ দিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ‘চাষাবাদ’ করেছেন। কিন্তু কোন ফসল ফলেনি। কিশোর এবং তরুণদেরকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামের একটি বৈপ্লবিক মূলমন্ত্রে উস্কে দিয়েছেন। যদিও সেটিকে কমিউনিজম বা সোস্যালিজমের চেহারা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু আসলে সেটি ছিলো একটি ফ্যাসিস্ট মতবাদ। প্রিয় পাঠক, চমকে উঠবেন না। পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত ডিক্টেটর হিটলারের দলের নাম প্রথমে ছিল জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। বাংলাদেশেও অনেক ঘাটের পানি খাওয়া রাশেদ খান মেনন তার দলের নাম দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি। হিটলারের দলের নাম এবং রাশেদ খান মেননের দলের নাম একই। শুধু দেশের নামটি আলাদা। হিটলারের দলের নামের প্রথম শব্দ ছিলো ‘জার্মান’, আর মেননের দলের নামের প্রথম শব্দ হলো ‘বাংলাদেশ’। হিটলারের দলের নাম ছিল “ঘধঃরড়হধষ ঝড়পরধষরংঃ চধৎঃু” এর বাংলা দাঁড়ায় ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’। “জাতীয়” এর ইংরেজী আদ্যাক্ষর হলো ঔ, “সমাজতান্ত্রিকের” ইংরেজী আদ্যাক্ষর হলো ঝ এবং “দলের” আদ্যাক্ষর হলো উ. এজন্যই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সংক্ষিপ্ত বাংলা নাম হলো জাসদ বা ঔঝউ. এখন পাঠক, হিটলারের নাৎসী সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে তথ্যমন্ত্রী ইনুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ বা ঔঝউ কে মিলিয়ে নিন। দেখবেন, খাপে খাপে মিলে যায়।
হিটলারের নাৎসী পার্টির সাথে জাসদের আরেকটি অদ্ভুত মিল আছে। সেটি হলো, হিটলার করতেন মিথ্যার বেসাতি, জাসদও করে মিথ্যার বেসাতি। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিলেন জোসেফ গোয়েবলস। তিনি সারা জার্মানীতে এই তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন যে, একটি মিথ্যা দশ বার প্রচার করলে সেটি সত্য হয়ে যায়। এখন ইনু সাহেবও সেই কৌশল ধরেছেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়টি যখন ফাঁস হয়ে যায় এবং ফেসবুক ও অনলাইন মিডিয়ায় সেই ফাঁস হওয়ার কথা প্রচারিত হয় তখন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে জনাব ইনু বলেছিলেন যে, রায় দেয়ার আগেই রায় ফাঁস হওয়ার খবরটি ‘ডাহা মিথ্যা’। এখন জনাব ইনু কি বলবেন ? ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বলেছেন যে, রায়ের একটি অংশ ফাঁস হয়েছে খবরটি সত্য। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি বলেছেন যে, রায় ফাঁস করার পেছনে দেশী ও বিদেশী মহল থেকে বিপুল অংকের অর্থবিনিয়োগ করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ট্রাইব্যুনালকে জনগণের চোখে হেয় করা এবং বিতর্কিত করা। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, রায়টি ফাঁস করার জন্য বিএনপি সম্পূর্ণভাবে দায়ী। আরেকজন মন্ত্রী বলেছেন যে, জামায়াতের কতিপয় লোক ট্রাইব্যুনালে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এটি তাদেরই কাজ। এসব উক্তি থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, রায়টি ফাঁস হয়েছে। অথচ তথ্যমন্ত্রী ইনু বললেন যে, রায়টি ফাঁস হওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। ইনু সাহেবের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে অন্যান্য মন্ত্রী, সেই বিচারপতি প্রমুখের বক্তব্য অসত্য এবং মিথ্যা প্রচারণা। এখন মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে? এখন প্রমাণ হলো যে, ইনু সাহেব হয় না জেনে কথা বলেছেন অথবা তার কথা সত্য নয়। বাংলাদেশে এই প্রথম দেখলাম, আইসিটি’র রায়কে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হচ্ছে এবং রায়টি অগ্রিম ফাঁস হওয়ার ফলে তীব্র ভাবে বিতর্কিত হয়েছে। ইনু সাহেবও যদি একটি লিঙ্কে যান তাহলে তিনিও রায়টি ডাউনলোড করতে পারবেন। লিঙ্কটি হলো, িি.িলঁংঃরপবপড়হপবৎহ.ড়ৎম . এখন ট্রাইব্যুনাল এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে চতুর্দিক থেকে ঢালাও অভিযোগ আসছে।
॥দুই॥
আমরা চাই আর না চাই, পছন্দ করি আর না করি, এই রায়টি চরম বিতর্কিত হয়ে গেছে। বিএনপি এতোদিন আইসিটি এবং তার রায়গুলো উড়ফমব করে যাচ্ছিল। কারণটি সম্ভবত ছিল এই যে, এতদিন সবগুলো রায় আসছিল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার মারটা তাদের ঘাড়ের ওপর পড়েছে। সম্ভবত সে কারণেই বিএনপি এবার রি-এ্যাকশন দিয়েছে। দিয়েছে তো দিয়েছে, একেবারে কড়া রি-এ্যাকশন দিয়েছে। তারা বলেছে যে, সালাউদ্দিন কাদেরের রায় নিয়ে যা ঘটে গেলো, তার ফলে শুধু তার রায়ই নয়, আগের সব গুলো রায়ও বিতর্কিত হয়ে গেছে। আরও অবাক ব্যাপার হলো এই যে, এই রায়ের বিরুদ্ধে এবার বিদেশ আরো সোচ্চার। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। সেটি হলো ইংল্যান্ডের দৈনিক ‘ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস’। ব্রিটেনের পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশন সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে তারা জানেন যে, ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস একটি উদারপন্থি দৈনিক। তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন দল বা পক্ষে ‘বায়াস্ড্’ নয়। সেই পত্রিকা এই রায় সম্পর্কে যা বলেছে তার অংশবিশেষ পাঠকদের সুবিধার জন্য নিচে তুলে ধরছি।
“শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলাতে বদ্ধপরিকর। অবশ্য এই ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (নামে আন্তর্জাতিক হলেও আসলে এটি দেশীয় আদালত) বিএনপি’র সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন এবং গণহত্যার জন্য মৃত্যুদ- দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এ নিয়ে সাতজনকে দ-িত করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, বিএনপি’র শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তাৎক্ষণিকভাবেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই তাড়াহুড়ো করে সরকার বিচারকাজ শেষ করতে চায়। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্রিটেনের উদারপন্থি গণতান্ত্রিক হিসেবে খ্যাত লর্ড কার্লাইল বলেন, এই ট্রাইব্যুনালগুলো বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং এর ব্যবস্থাপনা এতোটাই খারাপ ছিল যে, তা একটি প্রজন্মের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে এবং আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিতর্ককে বিষাক্ত করেছে। লর্ড কার্লাইল বলেন, আমার কাছে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় হয় সরকারের লেখা অথবা বিচারকরা রায়ের খসড়া অনুমোদনের জন্য আগেভাগেই আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল।”
পত্রিকাটিতে আরও বলা হয়, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিএনপি চাচ্ছে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি নিন্দা কুড়িয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার কারণে। তবে সরকার ট্রাইব্যুনালকে যেভাবে ভয়ঙ্করভাবে রাজনীতিকরণ করেছে তা আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ এবং উদারপন্থি বাংলাদেশীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
॥তিন॥
দৈনিক সংগ্রামে গতকাল অর্থাৎ শনিবার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের খবর। ঐ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন যে, বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কম্পিউটারে টাইপ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে রিজভী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, তিনি দুর্নীতির টাকা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
মনে হচ্ছে, উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের কাকরাইলস্থ অফিস কক্ষে পুলিশ রেইড করেছে। এ সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবরটি নি¤œরূপ, “বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের অফিস তল্লাশি করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কাকরাইলে পাইওনিয়ার রোডে তার অফিসে অভিযান চালানো হয় বলে ব্যারিস্টার ফখরুল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, তল্লাশির সময় দুটি সিপিইউ ও কিছু সিডি জব্দ করা হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, যদি তারা (ডিবি) কোনো কাজের জন্য এসে থাকে, তবে তাদের সহযোগিতা করতে আমি রাজি। কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে অফিসের দরজা ভেঙে কম্পিউটার জব্দ সন্দেহজনক। তারা নতুন কিছু যে সেখানে যোগ করবে না সেটির তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি আছি।”
॥চার॥
গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃৃষ্ঠায় একটি সংবাদ ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। ভাষ্যটির অংশবিশেষ তুলে দিলাম। ভাষ্যটি ঝবষভ বীঢ়ষধহধঃড়ৎু. ভাষ্যটি নি¤œরূপ, “যে ৪ টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে সেই ৪ টি অভিযোগে বর্ণিত ঘটনাবলী ঘটেছে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার জন্য পাকিস্তান চলে যান। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা হয় বর্তমানে হাইকোর্টের সিটিং জাস্টিস শামীম হাসনাইনের সাথে। জনাব শামীম হাসনাইন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহপাঠী ছিলেন। বাংলাদেশের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ‘প্রথম আলোয়’ গত বুধবার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হলো, “বিচারপতি হাসনাইনের জবানবন্দি শুনতে চাই”। ঐ রিপোর্টে বলা হয়, গত ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতিকে লেখা বিচারপতি শামীম হাসনাইনের একটি চিঠি জনসমক্ষে এসেছে। গতকালের রায়ের পরে তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠিতে বিচারপতি হাসনাইন সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি সম্ভবত একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এই রিপোর্ট এবং এর দুই দিন আগে ৭১ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি টক শো থেকে জানা যায় যে, গত ২২ শে জুলাই বিচারপতি হাসনাইন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের কাছে সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল প্যাডে একটি চিঠি দেন। ঐ চিঠিতে তিনি প্রধান বিচারপতির নিকট থেকে একটি নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত চান। ঐ চিঠিতে তিনি বলেন যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে সাফাই সাক্ষী মেনেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি সালাউদ্দিন কাদেরের সাথে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাথে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সাফাই সাক্ষী দিতে চান। কিন্তু তিনি সাক্ষী দিতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে আইনগত দিকটি পরিষ্কার নয়। তাই তিনি প্রধান বিচারপতির নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত চাচ্ছেন। চিঠির একটি অনুলিপি আইসিটি’র ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালেও প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু তার এই চিঠির ওপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন রকম অ্যাকশন নেয়া হয়নি। ফলে তিনি আর সাক্ষ্য দিতে পারেননি। প্রথম আলোতে দাবি করা হয়েছে যে, যদি শামীম হাসনাইনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হতো তাহলে এই মামলায় হয়তো নতুন মাত্রা যোগ হতো। কারণ এটি যদি প্রমাণিত হতো যে, ঐ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশেই ছিলেন না তাহলে সমস্ত মামলা ঘুরে যেত। এ কারণে পত্রিকাটিতে দাবি করা হয়েছে যে, আইসিটি এই বিচারপতির পত্র আমলে নেননি এবং তাকে সাক্ষ্যদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে যখন এই মামলাটি উঠবে তখন বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে সাক্ষ্য দানে অনুমতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে প্রথম আলো। পত্রিকাটির মতে ২২শে জুলাইয়ের চিঠিতে বিচারপতি হাসনাইন সম্ভবত সব কথা বলেননি। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করলে সম্ভবত তিনি আরও এমন সব কথা বলবেন যা এই মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ যখন আইসিটি বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন তোলে অথবা ট্রাইব্যুনালের কার্যাবলী ও রায় প্রদানের পটভূমি নিয়ে কথা বলে তখন তাদের এসব প্রশ্ন বা কথাকে নানান বিশ্লেষণ এবং গালাগালি দিয়ে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদ- পঠিত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের সমালোচনা জামায়াতের আঙ্গিনা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন বিএনপিও সমালোচনার এই ব্যান্ডওয়াগনে যোগ দিয়েছে। তবে আইসিটি’র সমালোচনায় বড় উপকরণ জুগিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি’র অতি উৎসাহী কতিপয় ব্যক্তি। উপাদান আরও জুগিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
হাসানুল হক ইনু সারা জিন্দেগী জনগণ এবং তরুণ সমাজকে ব্লাফ দিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ‘চাষাবাদ’ করেছেন। কিন্তু কোন ফসল ফলেনি। কিশোর এবং তরুণদেরকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামের একটি বৈপ্লবিক মূলমন্ত্রে উস্কে দিয়েছেন। যদিও সেটিকে কমিউনিজম বা সোস্যালিজমের চেহারা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু আসলে সেটি ছিলো একটি ফ্যাসিস্ট মতবাদ। প্রিয় পাঠক, চমকে উঠবেন না। পৃথিবীর সবচেয়ে কুখ্যাত ডিক্টেটর হিটলারের দলের নাম প্রথমে ছিল জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। বাংলাদেশেও অনেক ঘাটের পানি খাওয়া রাশেদ খান মেনন তার দলের নাম দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি। হিটলারের দলের নাম এবং রাশেদ খান মেননের দলের নাম একই। শুধু দেশের নামটি আলাদা। হিটলারের দলের নামের প্রথম শব্দ ছিলো ‘জার্মান’, আর মেননের দলের নামের প্রথম শব্দ হলো ‘বাংলাদেশ’। হিটলারের দলের নাম ছিল “ঘধঃরড়হধষ ঝড়পরধষরংঃ চধৎঃু” এর বাংলা দাঁড়ায় ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’। “জাতীয়” এর ইংরেজী আদ্যাক্ষর হলো ঔ, “সমাজতান্ত্রিকের” ইংরেজী আদ্যাক্ষর হলো ঝ এবং “দলের” আদ্যাক্ষর হলো উ. এজন্যই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সংক্ষিপ্ত বাংলা নাম হলো জাসদ বা ঔঝউ. এখন পাঠক, হিটলারের নাৎসী সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে তথ্যমন্ত্রী ইনুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ বা ঔঝউ কে মিলিয়ে নিন। দেখবেন, খাপে খাপে মিলে যায়।
হিটলারের নাৎসী পার্টির সাথে জাসদের আরেকটি অদ্ভুত মিল আছে। সেটি হলো, হিটলার করতেন মিথ্যার বেসাতি, জাসদও করে মিথ্যার বেসাতি। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিলেন জোসেফ গোয়েবলস। তিনি সারা জার্মানীতে এই তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন যে, একটি মিথ্যা দশ বার প্রচার করলে সেটি সত্য হয়ে যায়। এখন ইনু সাহেবও সেই কৌশল ধরেছেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়টি যখন ফাঁস হয়ে যায় এবং ফেসবুক ও অনলাইন মিডিয়ায় সেই ফাঁস হওয়ার কথা প্রচারিত হয় তখন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে জনাব ইনু বলেছিলেন যে, রায় দেয়ার আগেই রায় ফাঁস হওয়ার খবরটি ‘ডাহা মিথ্যা’। এখন জনাব ইনু কি বলবেন ? ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বলেছেন যে, রায়ের একটি অংশ ফাঁস হয়েছে খবরটি সত্য। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতি বলেছেন যে, রায় ফাঁস করার পেছনে দেশী ও বিদেশী মহল থেকে বিপুল অংকের অর্থবিনিয়োগ করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হলো, ট্রাইব্যুনালকে জনগণের চোখে হেয় করা এবং বিতর্কিত করা। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, রায়টি ফাঁস করার জন্য বিএনপি সম্পূর্ণভাবে দায়ী। আরেকজন মন্ত্রী বলেছেন যে, জামায়াতের কতিপয় লোক ট্রাইব্যুনালে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এটি তাদেরই কাজ। এসব উক্তি থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, রায়টি ফাঁস হয়েছে। অথচ তথ্যমন্ত্রী ইনু বললেন যে, রায়টি ফাঁস হওয়ার খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা। ইনু সাহেবের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে অন্যান্য মন্ত্রী, সেই বিচারপতি প্রমুখের বক্তব্য অসত্য এবং মিথ্যা প্রচারণা। এখন মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে? এখন প্রমাণ হলো যে, ইনু সাহেব হয় না জেনে কথা বলেছেন অথবা তার কথা সত্য নয়। বাংলাদেশে এই প্রথম দেখলাম, আইসিটি’র রায়কে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হচ্ছে এবং রায়টি অগ্রিম ফাঁস হওয়ার ফলে তীব্র ভাবে বিতর্কিত হয়েছে। ইনু সাহেবও যদি একটি লিঙ্কে যান তাহলে তিনিও রায়টি ডাউনলোড করতে পারবেন। লিঙ্কটি হলো, িি.িলঁংঃরপবপড়হপবৎহ.ড়ৎম . এখন ট্রাইব্যুনাল এবং বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে চতুর্দিক থেকে ঢালাও অভিযোগ আসছে।
॥দুই॥
আমরা চাই আর না চাই, পছন্দ করি আর না করি, এই রায়টি চরম বিতর্কিত হয়ে গেছে। বিএনপি এতোদিন আইসিটি এবং তার রায়গুলো উড়ফমব করে যাচ্ছিল। কারণটি সম্ভবত ছিল এই যে, এতদিন সবগুলো রায় আসছিল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার মারটা তাদের ঘাড়ের ওপর পড়েছে। সম্ভবত সে কারণেই বিএনপি এবার রি-এ্যাকশন দিয়েছে। দিয়েছে তো দিয়েছে, একেবারে কড়া রি-এ্যাকশন দিয়েছে। তারা বলেছে যে, সালাউদ্দিন কাদেরের রায় নিয়ে যা ঘটে গেলো, তার ফলে শুধু তার রায়ই নয়, আগের সব গুলো রায়ও বিতর্কিত হয়ে গেছে। আরও অবাক ব্যাপার হলো এই যে, এই রায়ের বিরুদ্ধে এবার বিদেশ আরো সোচ্চার। একটি উদাহরণ দিচ্ছি। সেটি হলো ইংল্যান্ডের দৈনিক ‘ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস’। ব্রিটেনের পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশন সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে তারা জানেন যে, ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেস একটি উদারপন্থি দৈনিক। তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন দল বা পক্ষে ‘বায়াস্ড্’ নয়। সেই পত্রিকা এই রায় সম্পর্কে যা বলেছে তার অংশবিশেষ পাঠকদের সুবিধার জন্য নিচে তুলে ধরছি।
“শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলাতে বদ্ধপরিকর। অবশ্য এই ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (নামে আন্তর্জাতিক হলেও আসলে এটি দেশীয় আদালত) বিএনপি’র সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন এবং গণহত্যার জন্য মৃত্যুদ- দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এ নিয়ে সাতজনকে দ-িত করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, বিএনপি’র শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা। তাৎক্ষণিকভাবেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই তাড়াহুড়ো করে সরকার বিচারকাজ শেষ করতে চায়। যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্রিটেনের উদারপন্থি গণতান্ত্রিক হিসেবে খ্যাত লর্ড কার্লাইল বলেন, এই ট্রাইব্যুনালগুলো বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং এর ব্যবস্থাপনা এতোটাই খারাপ ছিল যে, তা একটি প্রজন্মের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে এবং আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বিতর্ককে বিষাক্ত করেছে। লর্ড কার্লাইল বলেন, আমার কাছে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় হয় সরকারের লেখা অথবা বিচারকরা রায়ের খসড়া অনুমোদনের জন্য আগেভাগেই আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল।”
পত্রিকাটিতে আরও বলা হয়, “সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিএনপি চাচ্ছে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশি নিন্দা কুড়িয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার কারণে। তবে সরকার ট্রাইব্যুনালকে যেভাবে ভয়ঙ্করভাবে রাজনীতিকরণ করেছে তা আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ এবং উদারপন্থি বাংলাদেশীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।”
॥তিন॥
দৈনিক সংগ্রামে গতকাল অর্থাৎ শনিবার প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের খবর। ঐ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন যে, বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কম্পিউটারে টাইপ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে রিজভী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, তিনি দুর্নীতির টাকা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
মনে হচ্ছে, উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের কাকরাইলস্থ অফিস কক্ষে পুলিশ রেইড করেছে। এ সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবরটি নি¤œরূপ, “বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের অফিস তল্লাশি করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কাকরাইলে পাইওনিয়ার রোডে তার অফিসে অভিযান চালানো হয় বলে ব্যারিস্টার ফখরুল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি জানান, তল্লাশির সময় দুটি সিপিইউ ও কিছু সিডি জব্দ করা হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, যদি তারা (ডিবি) কোনো কাজের জন্য এসে থাকে, তবে তাদের সহযোগিতা করতে আমি রাজি। কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে অফিসের দরজা ভেঙে কম্পিউটার জব্দ সন্দেহজনক। তারা নতুন কিছু যে সেখানে যোগ করবে না সেটির তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে রাজি আছি।”
॥চার॥
গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃৃষ্ঠায় একটি সংবাদ ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে। ভাষ্যটির অংশবিশেষ তুলে দিলাম। ভাষ্যটি ঝবষভ বীঢ়ষধহধঃড়ৎু. ভাষ্যটি নি¤œরূপ, “যে ৪ টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে সেই ৪ টি অভিযোগে বর্ণিত ঘটনাবলী ঘটেছে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার জন্য পাকিস্তান চলে যান। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা হয় বর্তমানে হাইকোর্টের সিটিং জাস্টিস শামীম হাসনাইনের সাথে। জনাব শামীম হাসনাইন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহপাঠী ছিলেন। বাংলাদেশের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ‘প্রথম আলোয়’ গত বুধবার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হলো, “বিচারপতি হাসনাইনের জবানবন্দি শুনতে চাই”। ঐ রিপোর্টে বলা হয়, গত ২২ জুলাই প্রধান বিচারপতিকে লেখা বিচারপতি শামীম হাসনাইনের একটি চিঠি জনসমক্ষে এসেছে। গতকালের রায়ের পরে তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠিতে বিচারপতি হাসনাইন সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি সম্ভবত একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এই রিপোর্ট এবং এর দুই দিন আগে ৭১ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি টক শো থেকে জানা যায় যে, গত ২২ শে জুলাই বিচারপতি হাসনাইন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের কাছে সুপ্রীম কোর্টের অফিসিয়াল প্যাডে একটি চিঠি দেন। ঐ চিঠিতে তিনি প্রধান বিচারপতির নিকট থেকে একটি নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত চান। ঐ চিঠিতে তিনি বলেন যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে সাফাই সাক্ষী মেনেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি সালাউদ্দিন কাদেরের সাথে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাথে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সাফাই সাক্ষী দিতে চান। কিন্তু তিনি সাক্ষী দিতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে আইনগত দিকটি পরিষ্কার নয়। তাই তিনি প্রধান বিচারপতির নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত চাচ্ছেন। চিঠির একটি অনুলিপি আইসিটি’র ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালেও প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু তার এই চিঠির ওপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন রকম অ্যাকশন নেয়া হয়নি। ফলে তিনি আর সাক্ষ্য দিতে পারেননি। প্রথম আলোতে দাবি করা হয়েছে যে, যদি শামীম হাসনাইনকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হতো তাহলে এই মামলায় হয়তো নতুন মাত্রা যোগ হতো। কারণ এটি যদি প্রমাণিত হতো যে, ঐ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশেই ছিলেন না তাহলে সমস্ত মামলা ঘুরে যেত। এ কারণে পত্রিকাটিতে দাবি করা হয়েছে যে, আইসিটি এই বিচারপতির পত্র আমলে নেননি এবং তাকে সাক্ষ্যদান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে যখন এই মামলাটি উঠবে তখন বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে সাক্ষ্য দানে অনুমতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে প্রথম আলো। পত্রিকাটির মতে ২২শে জুলাইয়ের চিঠিতে বিচারপতি হাসনাইন সম্ভবত সব কথা বলেননি। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করলে সম্ভবত তিনি আরও এমন সব কথা বলবেন যা এই মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর হতে পারে।”
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন