শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩

তালগাছের মোহ ছাড়তে হবে


বহুলালোচিত ২৫ অক্টোবরে বেগম খালেদা জিয়া গণদাবি মেনে নিতে সরকারকে সংক্ষিপ্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন, অন্যথায় রোববার থেকে একটানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের ডাক দিলেন সারা দেশে। বৈরী আবহাওয়া ও ততোধিক বৈরী সরকারি আচরণের মাঝে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘বেগম জিয়া সংলাপ ছেড়ে সঙ্ঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন। সংলাপের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের এতই যদি আগ্রহ থাকে, আজ পর্যন্ত বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কেন? দেশবাসী লক্ষ করেছে, বিরোধীদলীয় নেত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেয়ার পর সপ্তাহ খানেক পার হলেও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি, বরং প্রতীয়মান হয়েছে, সময়ক্ষেপণ করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলা হচ্ছে। এ পর্যায়ে বিরোধী দল আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি হিসেবে হরতালের পুনরাবৃত্তি ছাড়া কী-ই-বা করতে পারে? আইনশৃঙ্খলা বা আন্দোলন, কোনো নামেই মারামারি-হানাহানি তো কাম্য নয়। হরতাল ডাকা যদি সঙ্ঘাতহয়, তা হলে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের মোট ১৭৩ দিনের হরতাল কি মহাসঙ্ঘাতছিল না? মোহাম্মদ নাসিম যখন বেগম জিয়ার ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন দলের ও জোটের পক্ষ থেকে, পাশে বসা পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে তার কানে ফিসফিসিয়ে কী যেন বলতে দেখা গেল। যা হোক, নাসিম বলছেন, বিরোধী দল সংলাপ চায় না। কিন্তু এখনো প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে তারাই তো সংলাপ কঠিন করে তুলছেন। টিভির খবরে নাসিমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথামতোআলোচনায় আসুন”Ñ এটি বলেছেন বেগম জিয়ার উদ্দেশে। বলার ভঙ্গিটা ঠিক হলো কি না, তা বিবেচনার বিষয় বৈ কি। এখন প্রশ্ন, আলটিমেটাম আর হরতালে কাজ হবে কি না। এর জবাব বেগম জিয়া নয়, আছে শেখ হাসিনার কাছে। তিনিই পারেন জাতিকে বর্তমান মহাসঙ্কট থেকে বাঁচাতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অপরিসীমবলা যায়। তা ছাড়া, সঙ্কট যে ইস্যুকে কেন্দ্র করে, সেই নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ-অনিশ্চয়তা জন্ম দিয়েছে তার দল ও সরকার। অতএব সুষ্ঠু, গ্রহণীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করার দায়িত্ব সরকারেরই। তাই বিরোধী দল বা এর নেত্রীর ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ও প্রতিপক্ষ, উভয়েরই মঙ্গল।জরিপের ফলাফল জলাঞ্জলি? বাংলাদেশ একটি সুড়ঙ্গে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যার অন্য প্রান্তে এখনো নেই কোনো আলোর আভাস। এমনটিই দেশপ্রেমিক বোদ্ধা সুধীজন আশঙ্কা করছেন উদ্বিগ্নচিত্তে। জাতির এই সঙ্কট রাজনৈতিক এবং এর কেন্দ্রবিন্দুতে নির্বাচনী নিরপেক্ষতার ইস্যু। সর্বশেষ একটি জরিপ বলছে, দেশের অন্তত ৮২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকার ছাড়া আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সমর্থকদের সবাই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে পার্লামেন্ট নির্বাচন চেয়েছেন। এর চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কমপক্ষে অর্ধেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির এই দাবির সাথে একমত; অর্থাৎ তারাও চান নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক। অথচ দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীবর্গ ও দলীয় নেতারা তারস্বরে বারবার বলেছেন, দলীয় সরকার তথা আওয়ামী লীগের অধীনেই নির্বাচন হবে। দেখা যাচ্ছে, সরকার সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের বিধান তুলে দেয়ার দুই বছর পরও নিজ দলের ৫০ শতাংশ সমর্থকই এখনো তা মেনে নিতে পারেননি। তাদের দৃঢ় অভিমত, হাসিনা যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য দিকে শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, অন্যান্য দেশে যেভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হয়, সেভাবে নির্বাচন হবে। এতক্ষণ যে আলোচনা করা হলো, এটি একটি জরিপের ভিত্তিতে। কয়েক দিন আগে প্রথম আলোতে এই জরিপের ফলাফল বিস্তারিত ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির উদ্যোগে এবং ওআরজি কোয়েস্টের পরিচালনায় এ জরিপ করা হয়েছে গত মাসে। এর আগে মে মাসে একই পত্রিকার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আরেক জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছিল। উভয়ের ফলাফলে পার্থক্য বেশি নেই। এবার দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০ জেলায় পরিচালিত জরিপে অংশ নেয়া নারী ও পুরুষ সংখ্যায় প্রায় সমান। তবে উত্তরদাতাদের ৭৫ শতাংশই গ্রামবাসী। আমাদের দেশে অতীতে বেসরকারিভাবে এ ধরনের জরিপ চালানোর নজির খুব একটা নেই। তবে গত কয়েক বছরে মিডিয়া, এনজিও কিংবা কোনো কোনো দলকে জরিপের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। অন্য দিকে সরকারি বা ক্ষমতাসীনদের উদ্যোগে জরিপ চালানো হলেও তার ফলাফল সাধারণত গোপন থেকে যায়। এই জনমত জরিপের বিষয়গুলো এ মুহূর্তে জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরিপের মধ্য দিয়ে জনমতের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা মোটামুটিভাবে বাস্তবভিত্তিক। জরিপের ফলাফলের নিরিখে বলা যায়, সরকার চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে যথার্থ উদ্যোগ তো নিচ্ছেই না, বরং মারাত্মক ভুল করছে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে। গণতান্ত্রিকবলে দাবিদার কোনো নির্বাচিত সরকারের এ ধরনের আচরণ শুধু হতাশাজনক নয়, নজিরবিহীনও। সাম্প্রতিক জরিপের মাধ্যমে জাতির যে আকাক্সা ও অভিমত সুস্পষ্ট, তা যতই গুরুত্ব বহন করুক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার কোনো গুরুত্ব দেবে কি? নাকি বকো আর ঝকো, কানে দিয়েছি তুলোবলে অপরিণামদর্শী একগুঁয়েমি অব্যাহত রাখবে? রাজনীতিতে যারা সব কিছু দেখেও চোখ বুজে থাকেন, তারা চোখকানা নন, দলকানা। সব অস্ত্রই বিপজ্জনক সাদেক হোসেন খোকা শুধু বিএনপির একজন নেতাই নন, একজন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধাও। আওয়ামী লীগ ও এর জোটে আছেন, এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামে তিনি রাজধানী গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর নামকরণ করেছেন মেয়র থাকাকালে। প্রতি বছর বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করেছেন, যাতে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিতেন আওয়ামী মহলের অনেকেই। সেখানে অবাধে জয়বাংলাস্লোগানও দেয়া হতো। কিন্তু তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারতাকে রেহাই দিচ্ছে না। দা-কুড়াল হাতে নেয়ার কথা বলেছেনÑ এ অভিযোগে তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। গণতন্ত্রে কোনো অস্ত্রবাজির স্থান নেই। একই সাথে এটাও দেখতে হবে, খোকা আসলে কী বলেছেন, কোন অর্থে বা উদ্দেশ্যে বলেছেন। লোহার তৈরি দা-কুড়াল যেমন মারাত্মক, তেমনি কাঠ-বাঁশ-বেতের লাঠি-লগি-বৈঠাও কম বিপজ্জনক নয়। আগামী কালই ২৮ অক্টোবর। সাত বছর আগে এ দিনে কাদের উসকানিতে কারা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করেছিল, তা দেশবাসী নিশ্চয় ভোলেনি। রাজধানীর পল্টন মোড়ে হাজার হাজার মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া সে নৃশংসতার বিচার আল্লাহর দরবারে হবে নিঃসন্দেহে।সঙ্গীতশিল্পী ন্যান্সির সঙ্কট রাজনৈতিক মেরুকরণ বিশেষত দলান্ধতা ও নেতা-নেত্রীর প্রতি অন্ধভক্তি এখন সর্বপরিব্যাপ্ত। রাজনীতির অঙ্গন ছাড়িয়ে দলাদলি শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে সংক্রমিত হয়েছে। এ দিক দিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন মহলের লোকজন সবচেয়ে এগিয়ে। সঙ্কীর্ণ দলবাজির দরুন গণতন্ত্রের নামে অন্য তন্ত্রকায়েম হচ্ছে। পরম অসহিষ্ণুতা আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হচ্ছে বিলুপ্ত। সঙ্গীতশিল্পী ন্যান্সির নজির এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। এই তরুণ শিল্পী দেশে সুপরিচিত। গত সপ্তাহে বেগম জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা বিষয়ে যে প্রস্তাব পেশ করেছেন, ন্যান্সি তাকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে প্রসঙ্গক্রমে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের রাজনীতির সমালোচনা করেছেন। নাম এসেছে সরকারপ্রধানেরও। ন্যান্সির বক্তব্য কতটা সঠিক কিংবা তার ভাষাভঙ্গি শত ভাগ গ্রহণযোগ্য কি না, তা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাজে বহু দল ও মত থাকবেই। তাই নিজস্ব মতপ্রকাশ মৌলিক অধিকার প্রতিটি নাগরিকের। নেত্রকোনার ন্যান্সির পুরো পরিবার যে দলে জড়িত এবং তার মা যে দলের একজন নেত্রী ছিলেন, এর প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি অপরাধ করেননি নিশ্চয়। কিন্তু তাকে সাথে সাথে একটি মহলের অবাঞ্ছিত সমালোচনার ঝড়ের কবলে পড়তে হলো। জবাবে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে ন্যান্সি বলেছেন, রাজনীতি নিয়ে ভুল কিছু বলিনি। তিনি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জানান, “আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছেÑ আমি আর শিল্পী থাকতে পারব না, মার্কেট থেকে নাইহয়ে যাবো। আমাকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে। যারা এসব হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, দখলবাজি তাদের স্বভাব। মতান্ধ রাজনীতির অংশ হিসেবেই অর্থনীতি ও শিক্ষাঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো সংস্কৃতির ময়দানেও জবরদখলের তৎপরতা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। বিলবোর্ডের বয়ান ও কৃতিত্বের ফাঁকি দখলবাজির ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীনেরা নগরজুড়ে অসংখ্য বিলবোর্ড দখল করে এ সরকারের কথিত সাফল্যের বয়ান দেয়া শুরু করেছিলেন। এটি করতে গিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ধরা খেয়ে এখন অন্য কৌশল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের নামে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা ঢেলে বিরাট সব বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এগুলোতে বর্তমান সরকারের কৃতিত্বের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে, যার ফাঁক ও ফোকর সচেতন মানুষের চোখ এড়ায়নি। রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের কিছু উত্তরে প্রধান সড়কের পাশেই বিরাট বিলবোর্ড। এতে পেট্রোরেল প্রকল্পকে এখনকার সরকারের মহাসাফল্যরূপে দেখানো হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, এর কাজ শুরু হয়ে গেছে। রুট হলো এয়ারপোর্ট-পল্লবী-ফার্মগেট-শাহবাগ-বাংলাদেশ ব্যাংক। বিলবোর্ডে জানানো হয়েছে, প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পরপরই এই ট্রেন ছাড়বে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করা হবে দুই দিকে। এসব জেনে আপনি যখন মেট্রোপলিটন সিটিতে মেট্রোরেলে আরামে যাতায়াতের সুখ কল্পনায় অনুভবের চেষ্টা করছেন, তখনই পত্রিকায় দুঃস্বপ্নের মতো একটি সংবাদ। এখনো এ প্রকল্পের জন্য ভূমিই অধিগ্রহণ করা হয়নি! অর্থাৎ সন্তানের জন্মের আগেই তার বিয়ের তোড়জোড়। গত বুধবার অফিসে যাওয়ার পথে মানিক মিয়া এভিনিউর পূর্ব প্রান্তে পৌঁছে দেখি, ভীষণ কঠোর নিরাপত্তার নজিরবিহীন তোড়জোড়। পুরো খামারবাড়ি এলাকায় পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশের কড়াকড়ি। রাস্তার একাংশ ও দোকানপাটসহ ফুটপাথ বন্ধ চু হাসপাতাল থেকে ফার্মগেট প্রধান সড়ক পর্যন্ত। রাস্তার আইল্যান্ডেও পুলিশ মোতায়েন। বিভিন্ন সরকারি অফিসের বন্ধ গেটের ভেতরে নিরস্ত্র লোকজনের কৌতূহলী চোখ; বাইরে সশস্ত্র পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি। ব্যাপার হলো, প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নতুন ভবন উদ্বোধনে আসছেন।কাছেই কৃষি সংশ্লিষ্ট একটি অফিসের সামনে বিরাট বিলবোর্ডে খাদ্য উৎপাদনে আওয়ামী লীগ সরকারের মহা সাফল্যের খতিয়ান। এতে বড় বড় হরফে লেখাÑ ‘দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই চাল আমদানির প্রয়োজন হয় না। এটি বাস্তবতা, অতিরঞ্জন, না অসত্য? আমরা জবাব না দিয়ে শুধু পত্রিকার রিপোর্ট তুলে ধরছি। ডেইলি নিউ এইজ ১৫ অক্টোবর সংখ্যায় একটি খবরের হেডিং Rice imports mark abrupt jump (চাল আমদানির আকম্মিক উল্লম্ফন)। এ রিপোর্টের শুরু থেকে তুলে ধরছি, “চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চাল আমদানির পরিমাণ দ্রুত খুব বেড়ে গেছে। কারণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে খাদ্য উৎপাদন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, কৃষকদের জন্য বৈরী পরিস্থিতির দরুন এটি ঘটেছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত ডাটায় জানানো হয়, এবার জুলাই-আগস্ট মাসে এক বছর আগের সময়ের চেয়ে ৩২৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি চাল আমদানি করা হয়েছে। ২০১২-১৩ সালের জুলাই ও আগস্টে চাল আমদানি বাবদ ৬ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। এর বিপরীতে চলতি ২০১৩-১৪ সালের জুলাই-আগস্ট, এই দুই মাসে চাল আমদানিব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন ডলারে।১৯৮৮, ১৯৯৬ ও ২০১৩ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত একতরফা নির্বাচনই হতে যাচ্ছে। কারণ সরকার যেনতেন নির্বাচন করতে মরিয়া, এর বিপরীতে, বিরোধী দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যেতে দৃঢ়সঙ্কল্প। হয়তো নির্বাচন’-এর নামে কিছু একটা হবে। কিন্তু বিএনপির মতো দল অংশ না নিলে তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে নাÑ না দেশে, না বিদেশে। জাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প হওয়ার মুরোদ রাখে না কিছুতেই। আর ডাণ্ডা মেরে আপাতত ঠাণ্ডা করে নিয়মরক্ষার নির্বাচন করা গেলেও তা আসলে একটা চরম অনিয়মের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি সরকার এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারকে এমন নির্বাচন করতে হয়েছিল। বাকি ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। নিয়তি সম্ভবত তাদের সেই দিকে হাতছানি দিচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৮৮ সালে নির্বাচন করতে স্বৈরাচারীএরশাদকে যতটা বাধা পেতে হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ছিল বেগম জিয়ার জন্য ১৯৯৬-এর সেই নির্বাচন। এর বড় কারণ, আওয়ামী লীগের বিরোধিতার মাত্রা ও ধরন। যা হোক, শুধু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়। তেমনি যে নির্বাচন গণতন্ত্রকে পোক্ত না করে নির্বাসনে পাঠাতে চায়, তা ক্ষমতাসীনদের প্রহসন আর জাতির জন্য ট্র্যাজেডি। সঙ্কট সুরাহা করতে ছাড় দিতে হয়। এ জন্য মনের উদারতা থাকতে হবে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে যদি ব্যক্তি বা দলের চেয়ে দেশের স্বার্থ বড় মনে করা যায়, তা হলে নেতৃত্বের এই ঔদার্য প্রকাশ পায় স্বাভাবিকভাবেই। সালিসদার যত প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞই হোন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো না মানলে সালিসে কাজ হয় না। সে জন্য আগে তালগাছের মোহ ছাড়তে হবে। যারা এত দিন তালের শাঁস ও রস, সেই সাথে তালের পিঠা খেয়ে এসেছেন; তাদেরই এই দায়িত্বটা বেশি। যারা ক্ষমতার মোহে ন্যায়-অন্যায়ের তালহারিয়ে ফেলে, জনগণ তাদের পিঠেও ফেলতে পারে গাছের পাকা তাল। পুনশ্চ : গত ২২ ডিসেম্বর ছিল নিরাপত্তা সড়ক দিবস। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের উদ্যোগে দুই দশক আগে এর সূচনা। তবে কয়েক বছর আগ থেকেই দিনটি জাতীয়পর্যায়ে পালিত হয়ে আসছে। অহরহ মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে সচেতনতা তৈরি করতে এ দিবস ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এবার কিন্তু খোদ রাজধানীতেই দিনটির কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি সরকার। কারণ বিরোধী দল দমনের জন্য আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। নাশকতার আশঙ্কায় নাকি সমাবেশ-মিছিল (এমনকি ঘরোয়া সভা) এর ওপর বিধিনিষেধের খড়গ। নিরাপদ সড়ক দিবসরাজনৈতিক কিছু নয়। এর আয়োজকেরা কোনো দলের নন, দেশের স্বার্থেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দিবসটির কর্মসূচির সাথে নাশকতা বা আইনশৃঙ্খলার অবনতির সম্পর্ক নেই। তবুও দিনটিতে মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সজাগ করার অনুষ্ঠান করা যায়নি। যারা সুষ্ঠু নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে পৌঁছার নিরাপদ সড়ক অবরুদ্ধ করতে চান, তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে উত্তম আচরণ কি আশা করা যায়?


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads