মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারি কেনাকাটার যেমন ধুম পড়ে গেছে, তেমনি অবৈধ নিয়োগেরও হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ সামগ্রী, ড্রেজার, গম, সার ছাড়াও নানা ধরনের পণ্য কেনার প্রস্তাব তড়িঘড়ি পাস হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন চলছে চটজলদি করে। প্রকল্পের ভেরিয়েশন ব্যয়, অতিরিক্ত ব্যয়, ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগসহ নানাখাতে অর্থ খরচ করা হচ্ছে দেদার। সংবিধানমতে চলতি মাসের ২৪ তারিখের পর কেনাকাটার অনুমোদন দিতে পারবে না সরকার। যদিও নির্বাচনের আগ অবধি শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করে থাকবেন বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই শেষ সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগ কিংবা উপকরণ কেনার প্রস্তাব পাস করিয়ে নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হতে এখনও ৬ মাস বাকি, সেগুলোরও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও অবৈধভাবে নিয়োগের হিড়িক পড়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা ও সরকারি নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে মাত্র ১৩ দিনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গভীর রাতও হয় তাতে আপত্তি উঠছে না। প্রয়োজনে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে প্রকল্প উদ্বোধনসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করে নেয়া হচ্ছে। আসলে, প্রয়োজন বড় বালাই। এছাড়া এক ঢিলে দুই পাখি মারার পদ্ধতিটাও কাজে লাগানো হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জনগণকে বলতে সুবিধে হবে যে, এসব প্রকল্প সম্পন্ন করতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নির্বাচিত করা জরুরি। অন্যদিকে নানা উপায়ে নিজেদের পকেট গরমের কাজটিও সমাধা হয়ে যাবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রের বরাদ দিয়ে একটি দৈনিক মঙ্গলবার জানিয়েছে, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নয়টি প্রস্তাব এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও বিবিধের মধ্যে আরও প্রায় আধা ডজন ক্রয় প্রস্তাব রয়েছে। কমিটি এর আগে গত ২৮ আগস্ট ২৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন এক সঙ্গে দেয়, যাকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া বিমানবাহিনীর জন্য ২৪টি হেলিকপ্টার কেনার প্রস্তাবও রয়েছে। ক্রয়কমিটির বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং অব রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এমনিভাবে আরও অনেকগুলো প্রকল্প অনুমোদনের পথে রয়েছে, যেগুলো ২৪ অক্টোবরের আগেই গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন যদি হয় তাহলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা এগুলোকে তাদের প্লাসপয়েন্ট হিসেবে জনগণের সামনে যেমন উপস্থাপন করবেন, তেমনি এ প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে এদেরই নির্বাচিত করা ছাড়া উপায় নেই। এসব কথা বলে জনগণকে সম্মোহিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু জনগণ এতটা বোকা নয় বলে বিরোধী দল মনে করে। গত ৫ বছরে উন্নয়নের নামে ক্ষমতাসীনরা জনগণকে যা দিয়েছেন তা সকলের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এবার জনগণ কারোর ধোঁকায় পড়বে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ক্ষমতাসীনরা বিরোধী জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিদায়বেলায় জনগণের অর্থ লুটে নেবার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্যই চলছে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রকল্প উদ্বোধন প্রভৃতির হিড়িক।
আইন এবং সাংবিধানিক নিয়মনীতি অনুসারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প, সরকারি অফিস-আদালত প্রভৃতিতে যেমন প্রয়োজনীয় নিয়োগ দিতে হয়, তেমনি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নানা প্রকল্পও হাতে নিতে হয়। আর এসব সম্পন্ন হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের দ্বারাই। কিন্তু যখন বিদায়ী সরকার নির্বাচনী ফায়দা হাসিলের জন্য তড়িঘড়ি করে নিজের লোকজনকে নিয়োগ দিতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ সম্পন্ন করে কিংবা দেশময় নানা প্রকল্প আর প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন বা সে সবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে জনগণকে ধোঁকা দেবার উদ্যোগ নেয়, তখন তা উদ্বেগের কারণ না হয়ে পারে না। আমরা তাই বর্তমান বিদায়ী সরকারের নিয়োগবাণিজ্য ও প্রকল্প উদ্বোধনের হিড়িক দেখে বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন