শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

ইভেন লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রসঙ্গে


ইভেন লেভেল প্লেইং ফিল্ডঅর্থাৎ খেলার উপযোগী সমতল ভূমি’Ñ এ কথাটি ইদানীং বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দল যাতে সুষ্ঠুভাবে সাধারণ নির্বাচনে অংশে নিতে পারে সে জন্যই এ কথাটির ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হচ্ছে। আমরা ছোটকালে যখন খেলাধুলা করেছি তখন সমতল মাঠের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছি। অসমতল মাঠে ফুটবল কোনোভাবে খেলা গেলেও ক্রিকেট ও হকি কোনোভাবেই খেলা সম্ভব হতো না। টেলিভিশনের সুবাদে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের মাঠও যে কত সমতল হয় তা দর্শকেরা খুব ভালোভাবেই জানেন। রাজনৈতিক ময়দান শুধু নির্বাচনের সময়ই সমতল হওয়া উচিতÑ এমন ধারণার সাথে অনেকেই একমত নন। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক ময়দান সব সময়ই সবার জন্য সমতল হওয়া উচিত। পাঁচ বছর অসমতল রেখে শুধু নির্বাচনের সময় সমতল করার চেষ্টা গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলগুলো সমতল মাঠ পায়নি। তাদের মিটিং-মিছিল তেমন একটা করতে দেয়া হয়নি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রায় সময়ই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ সংগঠনের কাতারে ফেলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যালয়গুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নির্বাচন যেহেতু আসন্ন, সে কারণে নির্বাচনকালে যাতে রাজনৈতিক ময়দান সমতল থাকে সে জন্য অনেকেই বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব দলই সমতল ভূমি না হলে নির্বাচনী খেলায় নামবে না বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্লামেন্ট বহাল রেখে নির্বাচন করার যে অদ্ভুত বিধান রাখা হয়েছে, তাতে করে রাজনৈতিক ময়দান সমতল রাখা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন সমতল ভূমি সৃষ্টির জন্য নতুন করে আচরণবিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের আচরণবিধি পর্যালোচনা করছেন। ভারতসহ পৃথিবীর কোথাও কোনো গণতান্ত্রিক দেশে পার্লামেন্ট বহাল রেখে পার্লামেন্ট নির্বাচন করা হয় না বিধায় এ ধরনের একটি আচরণবিধি প্রণয়ন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। পার্লামেন্ট সদস্যরা নির্বাচনকালে যে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবেন তার একটি ছোট নমুনা গত ৪ অক্টোবর ঢাকার শুক্রাবাদ মসজিদে পাওয়া গেল। ধানমন্ডি ও তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোর এমপি ও শেখ পরিবারের সদস্য ফজলে নূর তাপস জুমার নামাজ আদায় করার জন্য যখন শুক্রাবাদ মসজিদে এলেন তখন তার নিরাপত্তা বিধানের জন্য এক গাড়ি পুলিশও মসজিদের সামনে অবস্থান নিলো। খুতবা শুরুর আগে জানানো হলো নামাজ শেষে তাপস সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশে কিছু বলবেন। দুই রাকাত ফরজ নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে অর্থাৎ ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর সাথে সাথে তাপস সাহেব মুনাজাতের সুযোগ না দিয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন। বক্তৃতার শুরুতে তিনি তার পূর্বপুরুষদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে জানালেন, হজরত বায়েজিদ বোস্তামির সঙ্গী হিসেবে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তার পূর্বপুরুষেরা এ দেশে এসেছেন এবং সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তিনিও ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। যদিও বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিব বিতাড়নের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শোনা যায়। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, বিভিন্ন মসজিদের সমস্যা সমাধানে তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও টাকা-পয়সা খরচ করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন কথা হলোÑএমপি হওয়ার সুবাদে তিনি মুসল্লিদের মুনাজাত ও বাদ আল জুমার নামাজ ঠেকিয়ে রেখে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পেলেন, কিন্তু অন্য কোনো দলের লোকদের কি এভাবে মসজিদে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে? আমার মনে হয় সে সুযোগ তো তাদের দেয়া হবেই না; উল্টো আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এ কথা বলা হবে যে মসজিদের ভেতর রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এ ছোট ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে নির্বাচন করলে তাপস সাহেবরা মসজিদে ঢুকে অবলীলায় বক্তৃতা করতে পারলেও অন্যদের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না। তাহলে ইভেন লেভেল প্লেইং ফিল্ড হবে কিভাবে?


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads