মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে স্বয়ং ট্রাইব্যুনাল রায়ের অংশবিশেষ ফাঁস হবার কথা বিলম্ব না করেই স্বীকার করেছেন এবং থানায় জিডি করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। এর মধ্যে তারা কয়েকজনকে গ্রেফতার করে দু’জনকে ৮ দিনের রিমান্ডেও নিয়েছেন। রিমান্ডে দু’জনের একজন ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী, মাস্টার রোলভিত্তিক সুইপার যাকে এখন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলা হয়। একজন সুইপার ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের তৈরি করা একটি রায় (যাও আবার যুদ্ধপরাধ মামলার) কম্পিউটার থেকে পেনড্রাইভে করে আসামীপক্ষকে সরবরাহ করেছেন একথা নিঃসন্দেহে বিস্ময় ও উদ্বেগের মতোই।তবে কলিকালের একটি শ্লোক এখানে স্মরণ করার মতো। এতে বলা হয়েছে, একালে নাকি ‘অমানুষ মানুষ হবে, তেলি হবে পাল
নাপিত বৈদ্য হবে কে কাটিবে বাল”।
শেষ শব্দটি বাংলায় অশ্লীল শব্দ হিসেবে গণ্য করা হয়, উর্দু ও হিন্দিতে এর অর্থ চুল। কাজেই পাঠকরা আমাকে ক্ষমা করবেন।
আসলে আমি যা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের গোটা ব্যবস্থাটাই একটা নির্লজ্জ কেলেঙ্কারি। ‘যুদ্ধাপরাধের ক্ষত মোছার জন্য এই বিচার হচ্ছে না। এ বিচার হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার জন্য। এই আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টার একটি অংশ মাত্র। যে আইনে এই বিচার হচ্ছে সেই আইনটি করা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য। তারা ছিলেন পাকিস্তানের নাগরিক। তাদের ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের নিরপরাধ রাজনৈতিক নেতাদের ৪০ বছর পর বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে সরকারের প্রথম কেলেঙ্কারি। যাদের বিচার করা হচ্ছে তারা বেসামরিক নাগরিক। ৪০ বছর পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না, থানায় জিডিও ছিল না। কেউ কেউ তাদেরকে সহযোগী বলতো। এদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করেছে, আন্দোলন করেছে। ড. কামাল হোসেন যথার্থই বলেছেন, “195 war prisoners were the main culprits and they got the indemnity. As per the international law, abettors cannot be tried in the absence of the Principal- it is the universally accepted legal maxim.” সরকারের দ্বিতীয় কেলেঙ্কারি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সকল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকেই তারা প্রথমে অন্য মামলায় গ্রেফতার করে পরে চার্জশীট ছাড়াই যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছেন। যে মামলায় প্রথম তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল সে মামলার এখন আর খোঁজ নেই। তৃতীয় কেলেঙ্কারি হচ্ছে ঝশুঢ়ব কথোপকথন ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের বাইরের একজন ব্যক্তির তৈরি করা চার্জশীট গ্রহণ ও সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ। এই অপরাধ স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু অপরাধের বিচার হয়নি। চতুর্থ কেলেঙ্কারি হচ্ছে প্রসিকিউটর কর্তৃক আসামীপক্ষকে যথাসময়ে চার্জশীটের কপি না দেয়া। পঞ্চম কেলেঙ্কারি আসামীপক্ষের সাক্ষীদের বাধা দান, তাদের অপহরণ এবং সরকারি সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষ্য দানে বাধ্য করা। অপহৃত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে গোয়েন্দা পুলিশ ভারতে পাচার করে দেয়ার অভিযোগ স্বয়ং তিনি করেছেন। আরো দু’জন সাক্ষী নান্নু এবং আবদুল হকের ভিডিও জবানবন্দী ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা দুনিয়া দেখছে। সরকার এর বিচার করেনি। অধ্যাপক গোলাম আযমের রায় সম্পর্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মহলের তরফ থেকে ন্যায়ভ্রষ্টতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। মাওলানা নিজামী, মাওলানা সাঈদী, কাদের মোল্লার ওপর অন্যায়ের দৃষ্টান্তগুলোও দিনি দিন পরিষ্কার হচ্ছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসের ব্যাপারে বৃটিশ আইনজ্ঞ লর্ড কার্লাইল তাৎপর্যপূর্ণ একটা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তার কাছে পরিষ্কার প্রমাণ আছে যে, ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই তা ফাঁস হয়। এখন কোনটাকে সত্য বলবো। কেলেঙ্কারি আর প্রতিহিংসা মনে হচ্ছে এই বিচারের নিয়তি হয়ে পড়েছে। এখন অন্য প্রসঙ্গে আসি।
আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পর্কে এর আগে এই স্তম্ভে আমি বহুবার আলোচনা করেছি। পাঠক-পাঠিকারাও আমার সাথে একমত হয়েছেন। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে এদেশের মানুষ দেশ স্বাধীন করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের শোষণ করেছে, আমরা অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছি। গণতন্ত্র হত্যা করে তারা আমাদের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছে। এসব থেকে মুক্তি পাবার জন্যই মানুষ মুক্তি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা কি দেখলাম? মানুষের প্রত্যাশার বুদবুদগুলো উড়ে যেতে শুরু করলো। আওয়ামী লীগ ও তার অংগসংগঠনের যে সব নেতা-কর্মী মাতৃভূমির জন্য এক সময় জীবন দেয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল বলে ঘোষণা করে বেড়াতো তারা গোগ্রাসে সারা দেশটাকে গিলে ফেলতে শুরু করলো। তাদের লুটপাট, হত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাস বাড়াবাড়ি এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার তৎপরতা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অসম্ভব করে তুলেছিল। পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ কবরের নিস্তব্ধতা এনে দিয়েছিল। মুজিব বাহিনী, লাল বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার সারা দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। দেশের মানুষ স্বাধীনতার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। আওয়ামী লীগ ধরে নিয়েছিল যে ভারতীয় বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগিতায় পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করে তারা বাংলাদেশকে জয় করেছে, স্বাধীন করেনি। দখলদার মুক্ত স্বাধীন একটি দেশের প্রত্যকটি নাগরিক নিরাপত্তা ও তৃপ্তি ভোগ করে পক্ষান্তরে বিজিত দেশের নাগরিকদের সর্বদা ভয়ভীতি তাড়া করে। বিজয়ী বাহিনী তাদের সহায়-সম্পদ লুটপাটে ব্যাপৃত থাকে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ পাকিস্তানী সেনা মুক্ত হবার পর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ দখলদারের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। তারা মানুষের সাথে স্বাধীন দেশের নাগরিকের মতো ব্যবহার করেনি। সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ধ্বংস করে তারা দেখা দিয়েছিল ত্রাস হিসেবে। তারা অবাঙ্গালী, বিহারী, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের ভাষায় দালালদের বাড়িঘর দখল করে বাড়ি ওয়ালা হয়েছে। দোকানপাট, গুদামঘর, শিল্পকারখানা দখল করে ব্যবসায়ী শিল্পপতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ধরে নিয়েছিল যে, এদেশ তারা জয় করেছে এবং সবকিছুই তাদের গনিমতের মাল। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশকে তাদের উত্তরাধিকারের সম্পত্তিও মনে করতে থাকে। এর পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানের জেলে আটক ছিলেন তখন শোনা গিয়েছিল যে, পাকিস্তানীরা তাকে হত্যা করবে এবং এ জন্য কবরও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানীরা তাকে হত্যার কলঙ্ক থেকে নিজেদের রক্ষা করেছে। শেষ পর্যন্ত এ কলঙ্ক এসে পড়েছে তারই দক্ষিণহস্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর। যে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা ও প্রতিপত্তি শেখ মুজিব ভোগ করেছে দুঃশাসন অত্যাচার তাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে তাকে হত্যার পর দেশবাসী তা আনন্দ উৎসবের ন্যায় উদযাপন করেছে। তার জন্য আফসোস করেনি। জনগণ ২১ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছে। ক্ষমা চেয়ে ২য় বারের মতো ক্ষমতায় এসেও আওয়ামী লীগের চরিত্র বদলায়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। দেশবাসী ক্ষমতা থেকে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থেকেও তাদের ষড়যন্ত্র থামেনি। তারা আবার ভারতীয় টাকার বস্তা ও পরামর্শ এবং ফকরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন-এর সাথে ষড়যন্ত্র করে কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। এখন তারা দেশকে কার্যত প্রতিবেশী দেশটির করদরাজ্যে পরিণত করেছে। দিল্লীর নির্দেশে এখন বাংলাদেশ চলে। দিল্লীর পরামর্শেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করা হচ্ছে। যাতে করে ভারতীয় লুণ্ঠন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে। শর্ত একটা ভারত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তাদের সহায়তা করবে। প্রয়োজনবোধে হাসিনা সরকারকে রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, বাংলাদেশে আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো বিশেষ করে ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে এদেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না। আবার তারা সাম্প্রদায়িকতায়ও বিশ্বাসী নয়। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধরা যুগ যুগ ধরে সৎ প্রতিবেশী হিসেবে একই গাঁয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে এসেছে। তাদের মধ্যে সদ্ভাবের কোন ঘাটতি দেখা দেয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী কোন দল নয়। তারা এদেশটিকে উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং এদেশের মুসলমানদের জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়িত করে ইসলাম বিদ্বেষী বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সহানুভূতি কুড়াতে বদ্ধপরিকর। তারা শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, হেফাজতে ইসলাম প্রমুখের বিরুদ্ধে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যার সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতার কোন সম্পর্ক নাই।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। উদ্দেশ্য, দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং ভারতের বশংবদ হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা। রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো তাদের জন্য সহজতর হবে। দিল্লীর দরবারে ধর্ণা দিয়ে ভারতের সাথে দেশের স্বার্থের পরিপন্থী একাধিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তারা এর প্রমাণ দিয়েছে। বর্তমানে দেশে দুঃশাসন, অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্নীতি, হত্যা-গুম ও চরম দলীয়করণের যে পরাকাষ্ঠা তারা প্রদর্শন করছেন এটা তারই অংশ। তাদের দ্বিতীয় বা বিকল্প কৌশল হচ্ছে এ দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা। এটা করতে পারলে তাদের ধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল মুশরেক ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করবে। আমার দৃষ্টিতে এটা আওয়ামী লীগের দুরাশা মাত্র। ভারত বা ভারতীয় সেনাবাহিনী একটা ডুবন্ত দলকে বিশ্বাস করতে পারে না। আর বিদেশী সেনাবাহিনী এদেশে যে বীরের মর্যাদা পাবে এমন দুরাশা না করাই ভাল। শ্রীলংকার জয়বর্ধন ইন্দিরার সাথে চুক্তি করে ১৯৮৭ সালে এলটিটি তথা লিবারেশন তামিল টাইগারদের দমনের জন্য পিস কিপিং ফোর্সের নামে ভারতীয় বাহিনী শ্রীলংকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর ফল শুভ হয়নি। সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ করেনি। শ্রীলংকার সেনাবাহিনীও তা সহজভাবে নেয়নি। রাজিব গান্ধীর ওপর একজন সৈনিকের হামলা ও তাকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করার ঘটনা বিশ্বব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, যে দলের গর্ভে এদেশে সন্ত্রাসের জন্ম, যারা সন্ত্রাসকে দুধ-কলা দিয়ে পুষে বড় করছে, তারা যদি সন্ত্রাস জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন তা বড় বেমানান ঠেকে। এই সরকারের আমলেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগের অনেক শীর্ষ নেতা-অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন। নিহত হবার পর জানা গেছে যে, তাদের কেউ কেউ ডজন ডজন হত্যা মামলার আসামী। সন্ত্রাস চাঁদাবাজি অস্ত্রবাজি ছিল তাদের ধর্ম। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি, হত্যা-গুমের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। কয়েকটি পত্রিকা তাদের সন্ত্রাসের ওপর ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। মাদকাসক্তি, নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার একাধিক অভিযোগ সাধারণ ছাত্রীরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এনেছে। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেননি। নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তাদের প্যাথলজিকেল টেস্ট করাতে হয়। এর চেয়ে লজ্জার কি কিছু আছে। ভারত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়, অস্ত্র দেয় এবং অর্থ দিয়ে পোষে, এটা কে না জানে। জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই দেশটি সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীলদের পুষছেন। এরা এদের সন্ত্রাসকে লুকানোর কাজে ব্যস্ত। বিরোধীদের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালানোর জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোর অনেকেই এখন সরকারি অনুগ্রহের পেছনে ছুটছেন বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে বিশ্বাসী দু’টি টেলিভিশন চ্যানেলকে তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। বাকী ২৪টি চ্যানেল তাদের খেদমত করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের অত্যাচার নিপীড়নের প্রতিবাদকারীদের এই চ্যানেলগুলো জঙ্গি অভিহিত করে দেশবাসীকে অপমানিত করে। পবিত্র কুরআন, হাদীস, ইসলামী গ্রন্থ সরকারের পুলিশ এবং আওয়ামী গণমাধ্যমের কাছে জিহাদী পুস্তক তথা জঙ্গি উপকরণ। ভাগ্যের কি পরিহাস, নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ও ইসলামী সাহিত্য উপহাসের বস্তু! আর এগুলোর সবকিছুই করা হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, ইসলাম বিরোধী ক্ষমতাধর দেশ ও সংস্থাগুলোর আনুকূল্য কুরানের জন্য।
একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, আওয়ামী লীগ ভারতকে তাদের সুহৃদ মনে করে। ভারতও আওয়ামী লীগের সুহৃদ। তবে এর মধ্যে পার্থক্য আছে। ভারত নিতে বিশ্বাসী দিতে নয়। আবার তাল-লয় এও তারা নিজেদের স্বার্থ বুঝে। বুঝে বলেই তারা কখনো আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকে সন্ত্রাসের দায় থেকে মুক্তি দেয়নি। ’৭৫ সালেই ফিরে যাই। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর গোলক মজুমদার ভারত সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন বিশেষ সচিব কে এফ রুস্তমজীকে একটি পত্র লিখেছিলেন। পত্রটির অংশবিশেষ পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে তুলে ধরছি : এতে তিনি লিখেছেন, ‘Bangladesh seems to be heading for chaos. Sheikh Mujibur Rahman’s One party government is being viewed with deep distrust by Awami Leaguerse and the intelligentsia Things have not improved in anyway and the Sheikh appears to have terroized his colleagues and political opponents into gross submission.. Dr. Kamal Hossain has not liked Sheikh Mujibur Rahman’s assumption of totalitarian power and has taken away his family to Oxford where he is a visiting Professor at present. Kamaruzzaman, Khandker Mustaq, Captain Mansur Ali and many other leaders have been chaping under Mujib’s pressure and are only looking for an opportunity to challenge his authority... Sheikh Kamal, frist son of Mujib is back to Dhaka. He is now heading a band of gangsters engaed in shifting all opposition to his father. এই পত্রে আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে কিভাবে নিজ দলের নেতা এবং বিরোধী পক্ষকে বশীভূত রাখতেন তার যৎসামান্য উল্লেখ করা হয়েছে ‘পিতার’ এ অবস্থা হলে ‘পুত্রেরা’ কি করতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়। মনমোহন সিং দু’বছর আগে এরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যদিও পরে চাপে পড়ে তা প্রত্যাহার করেছেন। কাজেই আওয়ামী লীগ যখন সন্ত্রাস বিরোধী কথাবার্তা বলে তখন অনেকেরই হাসি পায়। আওয়ামী লীগ হচ্ছে বৌদ্ধ দর্শনের সেই বিড়ালের মতো যে নিজের লেজ ধরার জন্য সর্বদা শুধু ঘুরপাকই খায়।
শেখ হাসিনা ও তার দল চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে এবং ক্ষমতাচ্যুত হবার পরেও এই জোটকে ভাঙ্গার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। রক্তের অক্ষরে স্বাক্ষর করে তিনি সরকার উৎখাতের আন্দোলনও সূচনা করেছিলেন, পারেননি। জামায়াত নেতাদের বিএনপি ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন, ঐক্য ভাঙ্গেনি। সবদিক দিয়ে ব্যর্থ হয়ে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে ময়দান খালি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহ যদি না চান তাহলে নিজে নিশ্চিহ্ন হলেও কাউকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। এটা ইতিহাসের শিক্ষা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন