রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

সরকার যখন জনভয়ে ভীত


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এর আগের দিন থেকেই তার এই ভাষণ দেয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তার এই ভাষণ শোনার জন্য। কারণ এরা জানেন কোন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দেশ। সরকারি দল সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তাড়িয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে মরিয়া। অপর দিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, অন্যথায় নির্বাচন প্রতিহত করার অনড় অবস্থান বিরোধী দল ও জোটের। এই পরস্পর বিপরীত মেরুমুখী অনড় অবস্থানে দেশে বিরাজ করছে চরম এক রাজনৈতিক সঙ্কট। এ সঙ্কট সমাধান না হলে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় শঙ্কিত দেশের ও দেশের বাইরের মানুষ। নিয়মতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক উপায়ে এ সঙ্কট সমাধানের শেষ সুযোগ আগামী ২৪ অক্টোবর। কারণ ওই দিন বর্তমান সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছিলেন, ২৪ অক্টোবরের পর বর্তমান সংসদ আর থাকবে না। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা। এর পরও সংসদ সচল কার্যকর থাকবে। এমনকি সংসদ সদস্যরাও তাদের নিজ নিজ পদে বহাল থেকেই নির্বাচনও করবেন। সে যা-ই হোক, বিরোধী দল বলছে ২৪ অক্টোবরের আগে সরকার নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত না করলে ২৫ অক্টোবর থেকে বিরোধী দল কঠোর ও লাগাতার আন্দোলনে যাবে। আর কার্যত তখন সর্বাত্মক আন্দোলনে নামা ছাড়া বিরোধী দলের পক্ষে কোনো গত্যন্তরও থাকবে না। কারণ ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯০ দিন হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংবিধান নির্ধারিত সময়। এমনই প্রেক্ষাপটে ২৫ অক্টোবরের ডেডলাইনকে সামনে রেখে গত ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের একটি সুস্পষ্ট সূত্র জাতির সামনে উপস্থাপিত হবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। সবাই চেয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে থাকবে এমন এক সমাধানসূত্র, যা পাল্টে দেবে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক দৃশ্যপট। জনমনে দূর হবে যাবতীয় আশঙ্কা। মানুষ আশাবাদী হবে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে, যেখানে সব দল অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে সাগ্রহে। কিন্তু তার এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকে নিরাশ করলেন। অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণে নতুন কিছু নেই। তিনি যেন নতুন বোতলে পুরনো মদই পরিবেশন করলেন। সবাইকে হতাশ করে প্রধানত তার সরকারের আমলের গৎবাঁধা উন্নয়ন-ফিরিস্তি তুলে ধরে এবং তার বরাবরের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সব শেষে দায়সারাভাবে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চাইলেন তিনি। তিনি যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা বললেন, তার কাঠামো কী হবে, কে হবেন সরকারপ্রধান, সেই সরকারে কোন দলের অংশ কতটুকু থাকবে, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোর অংশগ্রহণ এ সরকারে থাকবে কি থাকবে না, সরকারপ্রধানের ক্ষমতার পরিধি কতটুকু হবে, নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ পদে বহাল থাকবেন কি না, ব্যাপক দলীয়করণ করা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে নির্বাচন আয়োজন (গত শনিবার মানবজমিনের এক খবর মতে, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চার হাজার কারাবন্দী নেতাকর্মী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ), ভিন্নমতের পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল ও অন্যান্য গণমাধ্যম বন্ধ রেখে কিভাবে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে আগামী নির্বাচন হবেÑ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বায়বীয় সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবে তার কোনো উল্লেখ নেই। লক্ষণীয়, তিনি তার ভাষণে কে দোজখে যাবে আর কে যাবে না, সেই অনাকাক্সিত ফতোয়া জারি করতেও ভোলেননি। সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু লোক ও গণমাধ্যম এরই মধ্যে বলতে শুরু করে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সমঝোতার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণে সমঝোতার কোনো নতুন উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও মনে করেন, তার এ ভাষণ দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বিন্দুমাত্র ফলোদয় ঘটাতে পারবে না। তাই এ ভাষণ শেষ হতে না হতেই প্রধান বিরোধী দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই সরকার বিরোধী দলের ওপর যে ধরনের দমনপীড়নের আচরণ শুরু করে দিয়েছে তাতে এটুকু স্পষ্ট, বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যার জট খোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মোটেও আন্তরিক নন। আমরা কী দেখলামÑ প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিলেন গত শুক্রবার সন্ধ্যায়। এ ভাষণের পর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হলো শনিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। এর পরের দিন বসবে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠক। এরপরই এরা তাদের দলীয় ও জোটগত চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানাবেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ব্যাপারে। শনিবার পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে দলীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও জোটের বৈঠক শেষে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান। কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করেই ভাষণের আগের দিন থেকে পুলিশ বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে দলের নেতাকর্মীদের ঢুকতে দিচ্ছে না। পুলিশ অবশ্য তা অস্বীকার করেছে। বিএনপির অভিযোগ, ২৫ অক্টোবরের বিএনপির সমাবেশ বানচাল ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই সরকার এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। খবরে প্রকাশ, শুধু তা-ই নয়, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে পুলিশের নানা তল্লাশি। এ দিকে শনিবারে পুলিশ রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুলিশ বলেছে, ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে তাই পুলিশ এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদি তা-ই হয়, তবে শুধু ২৫ অক্টোবরের দিনেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা। কিন্তু কেন ২০ অক্টোবর থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা। আর কেনই বা তা অনির্দিষ্টকালের জন্য। বিরোধী দলের অভিযোগ, আসলে ২৫ অক্টোবরের খালেদা জিয়ার ডাকা সভা পণ্ড করতেই সরকারের এ অপতৎপরতা। জনসভার জন্য অনুমতি চাইলেও সরকার সে অনুমতি দিচ্ছে না। এ দিকে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০ অক্টোবর। সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার যোগ দেয়ার কথা ছিল। ঘরোয়া, সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশ নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও একটা অনিশ্চয়তা চলছে। খবরে প্রকাশ, বিএনপি পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সে সমাবেশ করবে এবং বেগম জিয়া এ কনভেনশনে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়া অনড় অবস্থান নিলে শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে পেশাজীবীদের এই কনভেনশনে বেগম জিয়াকে যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। সকালে সম্মেলন কেন্দ্রের বুকিং বাতিলের নাটক করে দুপুরে আবার এই সম্মেলনের অনুমতি দেয়া হয়। অপর দিকে বিএনপি বলছে, রাজধানীতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সভা-সমবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী। এবং এটি সরকারের একতরফা নির্বাচন নিষ্পন্ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তাই বিএনপি এর প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে জেলাপর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। এবং এর পর আরো প্রতিবাদ কর্মসূচি আসছে বলে জানানো হয়। সেখানে রাজনৈতিক মহল ও সুশীলসমাজের প্রায় সবাই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তা অস্পষ্ট ও বায়বীয়। তার পরও কেউ কেউ বলছেন, এর বায়বীয় চরিত্র ও অস্পষ্টতা দূর করে সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে দুই প্রধান দল ও জোটের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বিরোধী দলের ও জোটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই বিরোধী দলের কার্যালয় অবরোধ করে রাখা, নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে না দেয়া, রাজধানীজুড়ে পুলিশি তল্লাশি, নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশি অভিযান, ঈদের আগে থেকেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দলবেঁধে আটক এবং সবশেষ ২০ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য পুলিশি নোটিশ জারি সমঝোতার সেই ক্ষীণ সম্ভাবনাকেও নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হয়তো ঠিকই বলেছেন, সরকার একে একে সমঝোতার সব পথই বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকারের এ ধরনের আচরণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে আরো নতুন নতুন সন্দেহ দানা বাঁধছে। তাদের প্রশ্নÑ সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রেখে, ভিন্নমতের পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল ও গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ ও মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দলবাজ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি করে একতরফাভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে। সরকার কি আবারো একদলীয় বাকশালী শাসনেই ফিরে যেতে চাইছে? এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্নÑ যখনই বিরোধী দল কোনো বড় ধরনের জনসভা আয়োজন করতে চেয়েছে, তখনই সরকার তাতে নানা ধরনের কূটকৌশলী বাধা আরোপ করেছে, নেতাকর্মীদের সভাস্থলে আসতে বাধা দিয়েছে। এসব অস্বীকার করার কোনো উপায় কি সরকারের হাতে আছে? বিরোধী দলের জনসভাকে নিয়ে কেন সরকারের মধ্যে এত ভয়? তাহলে সরকার কি এক ধরনের জনভীতিতে ভুগছে? আর জনভয়ে ভীত হয়েই কি এ সরকার বিরোধী দলের কোনো জনসভা আয়োজন সহ্য করতে পারছে না? নইলে কেন সরকার নির্বাচনের প্রাক্কালে অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে? আসলে সরকারপক্ষ যে এখন এক ধরনের জনভীতিতে ভুগছে, তারই একটি চিত্র ফুটে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পরদিনের দৈনিক ইনকিলাবের শীর্ষ সংবাদে। ডেডলাইন ২৫ অক্টোবর : সরকার আতঙ্কিতশিরোনামের এই শীর্ষ সংবাদে উল্লেখ করা হয়Ñ “সরকারের জন্য ২৫ অক্টোবর হয়ে গেছে আতঙ্কের ডেডলাইন। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ক্ষমতার শেষ বিকেলে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভীতি। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে জনগণ কেমন সাড়া দেয় এবং সরকারের ন্যায়-অন্যায়, আদেশ-নির্দেশ পালনে প্রশাসন (পুলিশসহ) কর্মকর্তাদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েই মূলত সরকারের মধ্যে এই আতঙ্ক। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সরকার দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানাভাবে ভীতি ছড়াচ্ছে। বিএনপি নেতা রিজভীর পদাতিক বাহিনী পথে বাধা পেলেই গোলন্দাজ বাহিনীহয়ে যাবে এবং খোকার দা, কুড়াল, বঁটি, টেঁটা, খন্তেনিয়ে প্রস্তুত থাকার ঘোষণা সরকারের শীর্ষ নেতাদের লগি-বৈঠারঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। গতকাল (১৮ অক্টোবর) ফেনীতে ১ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ স্পটে শিবিরের গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টির ঘটনা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।এই শীর্ষ সংবাদে আরো উল্লেখ করা হয়Ñ “এ অবস্থায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সরকারের মন্ত্রীরা একেকজন একেক কথা বলছেন। তাদের স্ববিরোধী কথাবার্তায় আওয়ামী লীগ জেলা-উপজেলাপর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও ভয় ঢুকে গেছে। তারা নিরাপদে থাকতে পালানোরচেষ্টা করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ২৫ অক্টোবর নিয়ে সরকার নিজেই ভীত হয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর কৌশল নিয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা ধরেই নিয়েছে পরাজয় তাদের অবধারিত। তার পরও সাগরে খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টার মতোদমনপীড়ন করে শেষ রক্ষার চেষ্টা করছে।এ প্রতিবেদন মতেÑ “২৫ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে বিএনপি আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পারলে মহাজোট সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। বিরোধী দলকে বাইরে রেখে সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেনতেনভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘটানোর যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে তা সফল হবে না। জনগণ যাতে বিরোধী দলের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারে, সেজন্যই সরকার থেকে সুকৌশলে জনমনে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। এই ভীতি ছড়ানোতে সরকারের অনুগত মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে, ২৫ অক্টোবর পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিলেও এখনো সে সমাবেশ নিয়ে সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে। কোনো মন্ত্রী বলছেন সমাবেশ হবে না’, আবার কোনো মন্ত্রী বলছেন অবশ্যই তাদের সমাবেশ হবেএই রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রেক্ষাপটে আরো পরিবর্তন এসেছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এ সরকারের পুলিশ রাজধানীতে ঘরোয়াসহ সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপি এখনো আশা করছে, সরকার শেষ পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেবে। অন্যথায় বিএনপি তাদের বিকল্প কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জনভয়ে ভীত হয়ে জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার আবারো ভুল পথে পা বাড়াল। নতুন করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারি, আটক ও দমনপীড়নের যে প্রবণতা শুরু করেছেÑ তাও সঙ্কট সমাধানে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বিরোধী দলের সাথে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে বিরোধী দলকে আস্থায় এনে সমাধানের পথ খোঁজার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সামাজিক কল্যাণ। সরকার এ সত্যকেই যেন উপেক্ষা করে চলছে বরাবর। ফলে বাড়ছে রাজনৈতিক জট। বাড়ছে জনমনে নানা আশঙ্কা। যার জের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। অতএব সবাইকে হতে হবে হিসেবি। এর বাইরে নেই কোনো কল্যাণ। আছে সবার জন্য শুধু দুর্ভোগ। আর জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads