রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১২

গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ


সরকারকে হতে হবে মিডিয়াবান্ধব

অতি সম্প্রতি একটি বিষয় ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে, যদিও এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। বিষয়টি হচ্ছে, গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ। পত্রপত্রিকায় বিভিন্নভাবে পরিবেশিত খবর মতে, মধ্যরাতে প্রকাশিত বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশো এবং সংবাদপত্রে খবর পরিবেশন নিয়ে কয়েকজন নেতার ক্ষোভ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না কিংবা বলা যায়, তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান কভার করতে দেয়া হচ্ছে না। আরোপ করা হয়েছে অঘোষিত বিধিনিষেধ। সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, তারা যেন প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের খবর সংগ্রহ করেন চারটি উৎস থেকে : বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বিডিনিউজ ২৪ ডটকম এবং ইউএনবি থেকে। গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের এ বৈরী আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও ক্ষমতাসীন মহলের কেউ বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নিজেও গণমাধ্যমে অর্থাৎ টকশো ও দৈনিক পত্রিকায় খবর পরিবেশন নিয়ে বিরক্ত। গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের এই ক্ষোভ উসকে দিচ্ছেন দলের মধ্যম সারির নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। এ দিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টকশো ও গণমাধ্যমের ব্যাপারে সরকারের এই মনোভাব গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।
প্রধানমন্ত্রী নিজে টকশোতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে তাদের মধ্যরাতের চোর-ডাকাতের সাথে পর্যন্ত তুলনা করেন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য টকশোতে যারা বক্তব্য রাখছেন তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি খুবই আপত্তিকর ভাষায় টকশোতে অংশগ্রহণকারীদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ওরা চাপাবাজ। এর আগে একজন মন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বেসরকারি টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলোকে কভার করতে দেয়া হবে নাÑ ওরা বুঝুক সরকারপ্রধানের খবর কত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর খবর যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। তার খবর টেলিভিশনগুলোতে প্রচার করা হয়েছে সাত-আটটি খবর প্রকাশের পর। তা ছাড়া গণমাধ্যমে সরকারের সাফল্য ও অর্জন যথাযথভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ও সংবাদপত্রে যখন সরকারের নানা ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে, তখন সরকারি মহলে গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে। অতি সম্প্রতি গণমাধ্যমে সরকারিপর্যায়ে দুর্নীতির বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, রেলওয়ের ঘুষ-বাণিজ্য কেলেঙ্কারি ইত্যাদি খবর ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে আসার ফলে সরকারি মহল গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং গণমাধ্যমের প্রতি বৈরী আচরণ করতে শুরু করে। তারই সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের কভার করতে না দেয়া।
আমরা মনে করি, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ও সংবাদপত্রসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে যখন খবর কিংবা আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশিত হয়, তখন গণমাধ্যম কার্যত সরকারকে ভুলত্রুটি শোধরানোর সুযোগ করে দেয়। এই উপলব্ধিতেই সরকারের উচিত গণমাধ্যমকে সরকারের বন্ধু ভাবা। এর বিপরীত সরকার যদি গণমাধ্যমের প্রতি বৈরী আচরণ প্রদর্শন করতে শুরু করে, তবে শোধরানোর কাজটি হয় না, বরং ভুলের মাত্রা বাড়ে, একসময় ভুলের পাহাড় জমে। আর সে ভুল সরকারের জন্য শুধু ক্ষতিই বয়ে নিয়ে আসে। অতএব আমরা মনে করি, সরকারকে সবসময় গণমাধ্যমকে বন্ধুই ভাবতে হবে, ভিন্ন কিছু নয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads