বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও অধিকারের প্রতিবেদন :


 বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় আওয়ামী লীগের প্ররোচনা, প্রশাসনের ব্যর্থতা দায়ী


রামুসহ অন্যান্য স্থানে বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, ঘরবাড়িতে হামলা এবং লুটপাটের ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্ররোচনা জুগিয়েছে। প্রশাসন এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এই বর্বরোচিত হামলা প্রতিরোধে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত যেভাবে চলছে তাতে সঠিক তদন্ত হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গতকাল এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের রামুর ঘটনার ওপর পরিচালিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে অবিলম্বে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে। সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে রামুর ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন গত ২ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী তিন দিন ধরে রামুসহ কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে বৌদ্ধদের ধর্মীয় উপাসনালয় ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা এবং লুটপাটের যে ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা সরাসরি প্ররোচনা দিয়েছেন। হামলার আগে যে মিছিল বের হয়, সেখানে আওয়ামী লীগের রামু উপজেলা শাখার সভাপতিসহ ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। অন্যান্য সংগঠনের কিছু কিছু নেতাকর্মীও ওই মিছিলে যোগ দেন। হামলার ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও অপরিচিত কিছু ব্যক্তি যুক্ত ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
হামলার শিকার ব্যক্তিরা আবার নতুন করে হামলা ও হয়রানির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এই কারণে ভয়ে তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করে বলা হয়, যেসব এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে তার খুব কাছেই থানা, র্যাবের ক্যাম্প, এমনকি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পও রয়েছে, কিন্তু এ হামলা প্রতিরোধে তারা কোনো পদক্ষেপই সেদিন নেয়নি। তারা এক ধরনের নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই বলছেন, ঘটনাটি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। এখন প্রশ্ন হলো, এই পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য দিতে কেন ব্যর্থ হলো।
প্রতিবেদনে গণগ্রেফতারের সমালোচনা করে বলা হয়, পুলিশ এখন গণহারে গ্রেফতার করছে। এরই মধ্যে ১৭টি মামলাও তারা করেছে। অথচ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কারা মূলত দায়ী তা এখনও চিহৃিত করা সম্ভব হয়নি।
প্রশাসন ও কিছু কিছু মিডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার পেছনে রোহিঙ্গারা জড়িত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত থাকার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকা এবং প্রশাসনের ন্যক্কারজনক ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই রোহিঙ্গাদের অন্যায়ভাবে দায়ী করার চেষ্ট চলছে। এই অন্যায় অভিযোগে মিয়ানমারে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের জন্য এক ভয়ানক বিপজ্জনক বিষয় হতে পারে। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
ঘটনা সম্পর্কে সরকার এবং বিরোধী দলের ভূমিকার সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সরকার ক্রমাগত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষী প্রমাণ করতে ব্যস্ত। একইভাবে সরকার বিরোধীরাও এই সময় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য কোনো ধরনের কার্যকর ভূমিকা না নিয়ে শুধু পাল্টা সরকারের নিন্দা জানিয়ে চলেছে।
রামুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও অধিকারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনার তদন্তের জন্য যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকার পরও এই ঘটনা ঘটেছে। এখন তাদের দিয়েই আবার তদন্ত হচ্ছে। এই তদন্ত কতটা সুষ্ঠু ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই কারণে ঘটনার মূল উদঘাটন করতে ও দোষীদের চিহৃিত করে বিচারের আওতায় আনতে একটি সুষ্ঠু, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন জরুরি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads