বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

প্রধানমন্ত্রীর উচিত শালীনতা বজায় রেখে কথা বলা



সিরাজুর রহমান

এরশাদের ৯ বছরের সামরিক স্বৈরশাসনের পতনের পর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। বিবিসির জন্য সে নির্বাচনের খবর দিতে লন্ডন থেকে গিয়েছিলাম আমি আর (স্যার) মার্ক টালি। তার ওপর ঢাকায় আমাদের সংবাদদাতা আতাউস সামাদ তো ছিলেনই। নির্বাচনের দু’দিন আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দুটো নিমন্ত্রণ ছিল আমার। প্রথমটি আন্তর্জাতিক পাট সংস্থার পরিচালক শামসুল হক চিশতির বাড়িতে ডিনারের। দ্বিতীয়টি পররাষ্ট্রসচিব ফখরুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় বিয়ের প্রথম বার্ষিকীর পার্টি।
চিশতি সাহেবের বাড়ির ডিনার তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হলো। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা টেলিভিশনে নির্বাচনী বক্তৃতা দেবেন, তার আগেই খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়ে গেল। আরো চার-পাঁচজন আমন্ত্রিত ছিলেন। আমরা সবাই একসাথে বসে গেলাম হাসিনার ভাষণ শুনতে। আমরা স্তম্ভিত হয়ে শুনলাম প্রায় সূচনা থেকেই নেত্রী অন্য প্রধান দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার-পরিজনের বিরুদ্ধে অশ্লীল-অশ্রাব্য বক্তব্য শুরু করে দিলেন। আমন্ত্রিতদের একজন উঠে চলে গেলেন। বললেন, এ ভাষা আর শোনা যায় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে একে আরো দু’জন। আমাকে শুনতেই হবে, আর চিশতি সাহেব গৃহস্বামী। আমাদের সঙ্গ দিতে আরো একজন থেকে গেলেন।
শ্যামলীতে ফখরুদ্দীন আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখি ঢাকার বিদগ্ধ সমাজের আলোকবর্তিকাবাহীদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত। ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার ও ইত্তেফাক সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার এবং শেখ মুজিবের প্রথম সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ব্যবসায়ী জিয়াউল হক টুলুÑ তারা ছিলেন কয়েকজন। আলোচনার একমাত্র বিষয় ছিল আওয়ামী লীগ নেত্রীর টেলিভাষণ। যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান তার মুখে অমন অশ্লীল কথাবার্তা যেন তাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না।
সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ কলেজজীবন থেকেই আমার বন্ধু ছিলেন। তাকেই জিজ্ঞেস করলাম এরপর তিনি কোন দলকে ভোট দেবেন বলে মনে করছেন। তিনি বললেন, ‘আজীবন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছি, অন্য কোনো দলকে ভোট দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। ভাবছি এ নির্বাচনে ভোটই দেবো না।’ অন্যরাও সবাই হাসিনার ভাষণে দুঃখ ও বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
মার্ক টালি, আতাউস সামাদ আর আমি দুই নেত্রীর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গেছি, তাদের ভাষণ শুনেছি এবং সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করেছি। সেসবের ভিত্তিতে প্রচারিত আমাদের প্রতিবেদনগুলো তখন সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনতেন। নির্বাচনের আগের দিন (হাসিনার ভাষণের পরদিন) বিবিসিতে পাঠানো প্রতিবেদনে আমি বলেছিলাম, গতকাল পর্যন্ত ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে, কিন্তু আজ আর সে কথা বলা যাবে না। সে দিন মার্ক আর সামাদ উভয়েই তাদের প্রতিবেদনে বলেছিলেন উল্টো কথা। তারা তখনো বলছিলেন, আওয়ামী লীগই জয়ী হবে।
সে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। লর্ড পিটার শোরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদল আর আমি একই ফ্লাইটে গিয়েছিলাম লন্ডন থেকে। ভারত থেকে দিল্লির পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ভবানী সেনগুপ্তসহ বেশ কয়েকজন চিন্তানায়ক ও সাংবাদিকের বিশাল একটি দল এসেছিল। ইউরোপ-আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়া থেকেও এসেছিলেন বহু সাংবাদিক।

একটি আদর্শ নির্বাচন
ভোটের দিন আমি ঢাকা, সাভার ও মির্জাপুরের সাত-আটটি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সাথে আমার দেখা হয়েছে। সব কেন্দ্রেই ভোটার সমাগম দেখে তারা বিস্মিত হয়েছিলেন। দীর্ঘ সারি দিয়ে নারী ও পুরুষ ভোটদাতারা পৃথক পৃথক সারিতে ভোট দিচ্ছিলেন। সব কেন্দ্রেই আমি কোনো না কোনো ভোটদাতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা কাকে এবং কেন ভোট দেবেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা বলেছেন, তারা খালেদা জিয়াকে ভোট দেবেন। অনেকেই বললেন, খালেদা জিয়া এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আন্দোলন করেছিলেন বলে। সাভার ট্রান্সমিটার ভোটকেন্দ্রে এক মহিলা বললেন, প্রায় দুই মাইল দূর থেকে গ্রামের মহিলারা হেঁটে খালেদা জিয়াকে ভোট দিতে এসেছেন, পুরুষদের রেখে এসেছেন বাড়িতে। খালেদা জিয়াকে কেন? কারণ তিনি গরিবের দুঃখ বোঝেন, তাদের কথা সুন্দর করে বলেন।
সে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির বিরাট জয় হয়েছিল। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা এক বাক্যে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিখুঁত নির্বাচনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার কিছু কর্মীর আচরণ সবাইকে বিস্মিত করেছিল। মিরপুরের একটি কেন্দ্রে (তখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট) ড. কামাল হোসেন পরাজিত হন। কিন্তু তিনি গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী বিজয়ী বিএনপি প্রার্থীকে অভিনন্দন জানান। ক্রুদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয় তার ওপর। তারা তাকে আক্রমণ করতে গিয়ে তার গাড়ির প্রচুর ক্ষতি করে।
ফলাফল ঘোষণার পরদিন সকালে শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেন, ভোট চুরি করে তাকে বিজয় থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শেরাটন হোটেলের ফয়ারে লর্ড শোর আমাকে জিজ্ঞেস করেন : মহিলা (শেখ হাসিনা) এসব কী মাথামুণ্ডু বলছেন কিছু বুঝতে পারছ তুমি? সেখান থেকে হোটেলের বলরুমে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লর্ড শোর বলেন, অমন আদর্শ নির্বাচন তিনি আগে আর দেখেননি।
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে তারপর থেকে। লোকে বলে সময়ে সবারই বুদ্ধির পক্বতা আসে। আশা ছিল বয়স আর অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনাও উপকৃত হবেন, হয়তো তিনি বুঝতে পারবেন ১৯৯১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির ৪৫ মিনিটের সে টেলিভাষণ খুব সম্ভবত তার পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছিল। এ শিক্ষাও তার হওয়া উচিত ছিল যে, ভোটদাতারা যতই শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত হোন শালীনতা ও সৌকর্য বাংলাদেশের মানুষের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। যারা অন্যকে মর্যাদা দিতে জানে না তারা যে মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়Ñ সে কথা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও বোঝে।
সে জন্য বর্তমান সংসদে, বিশেষ করে গোড়ার দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে হাসিনা যেসব গালমন্দ করেছিলেন দেশজোড়া (এবং বিদেশেও) তার নিন্দা-সমালোচনা হয়েছে, সাধারণ মানুষও ছি ছি করেছে। আমি প্রায়ই ভাবি এ মহিলা কি পত্রিকা পড়েন না? টেলিভিশন দেখেন না? দেশের মানুষ যে তার সম্বন্ধে কী ভাবছে সে সম্বন্ধে কি তার কোনো ধারণা আছে? নাকি তিনি তার পিতার মতোই চোখ-কান বন্ধ করে আইভরি টাওয়ারে বসে ‘চাটার দলের’ স্তব-স্তূতি শুনে মশগুল হয়ে আছেন?

এক-এগারো : কার খেলা কে খেলে?
ইদানীং তিনি অস্বাভাবিক ঘন ঘন মুখ খুলছেন এবং তার মুখ দিয়ে যে ভাষা বেরোচ্ছে সেটাকে প্রধানমন্ত্রী কেন, ভদ্রসমাজের কোনো মানুষের উপযোগী বলা যাবে না। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে আগের মতো ঘন ঘন তিনি আর চোর বলছেন না। বলবেন কী করে? এক বছর ধরে তার সরকারের দুর্নীতির কেলেঙ্কারি বিশ্বজোড়া মিডিয়ায় আর লোকের মুখে মুখে ঘুরছে, দুর্নীতির প্রতিকারের দাবিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছে, কানাডার সরকার তার কন্যা-জামাতার কানাডীয় পাসপোর্ট জব্দ করার খবর বেরিয়েছে, পুত্রের ব্যবসায় আর সম্পত্তির উৎস সম্বন্ধে আমেরিকায় তদন্ত করছে কানাডার পুলিশ, আর দুর্নীতির তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাবেক প্রধান প্রসিকিউটরের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দল এসেছে ঢাকায়। দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুললে সে কাদা তার নিজের গায়েই লাগবে। প্রধানমন্ত্রী তাই অন্য কৌশল নিয়েছেন। গালাগালের ভিন্ন ধারা বেছে নিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কিছু গালাগাল বিশ্লেষণ করা বোধ করি প্রাসঙ্গিক হবে। বারবার করে তিনি বলতে চাইছেন এক-এগারোর খেলা আবার শুরু হয়েছে। এ ইঙ্গিতও তিনি দিয়ে যাচ্ছেন যে সে খেলা শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সেটাই কি প্রকৃত পরিস্থিতি? প্রকৃত পরিস্থিতি এই যে, ২০০৬ সালের শেষে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সে নির্বাচনে আওয়ামী নৌকার ভরাডুবি অনিবার্য ছিল। সে সময় ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের সাথে শেখ হাসিনার সকাল-সন্ধ্যা গোপন আলাপের কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
একটি এনজিওর টাকায় লগি-লাঠিধারী বহু হাজার গুণ্ডাকে শত শত বাসে করে ঢাকায় নিয়ে আসা, প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীর সড়কে লাঠিপেটা করে প্রায় ২০ জন মানুষ হত্যা, সড়ক অবরোধ, রেল উপড়ানো এবং বন্দর অচল করে দিয়ে দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করার কাহিনীও বাংলাদেশের মানুষ ভুলতে পারবে না। তারা আরো ভুলতে পারবে না যে রাষ্ট্রপতিকে গৃহবন্দী করে এবং তার টেলিফোন, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা। তারই পরিণতিতে সেনাপ্রধান মইন উ’র সাথে (ভারত যাকে রাষ্ট্রীয় সফরে আপ্যায়িত করেছিল এবং ছয় ঘোড়া উপহার দিয়েছিল) চক্রান্ত করে মার্কিন নাগরিক ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সংবিধানবিরোধী সরকার গঠন করা হয়েছিল।
গোপন চক্রান্তে কথা ছিল প্রকাশ্যে ‘মাইনাস টু‘ ফর্মুলার কথা বলা হলেও আসলে ‘মাইনাস ওয়ান‘ ফর্মুলা অনুযায়ী খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হবে এবং শেখ হাসিনাকে দীর্ঘমেয়াদে গদিতে রাখা হবে। সে ফর্মুলা অনুযায়ী বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল এ টি এম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন, এমনকি ডিজিএফআইকে দিয়ে বিএনপি ভেঙে ফেলারও চেষ্টা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বিশ্বমিডিয়া ফাঁস করে দিয়েছে, ‘ভারতের বস্তা বস্তা টাকা আর পরামর্শেই’ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পেছনে মার্কিন সরকারের ভূমিকার কথা হাসিনাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এক-এগারো সম্পূর্ণরূপেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সহযোগিতায় হাসিনারই খেলা। এখন কি তিনি সন্দেহ করছেন যে তার খেলা ছিনিয়ে নিয়ে খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধেই খেলতে পারেন?

টেলিভিশনের টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের প্রধানমন্ত্রী সিঁধেল চোর বলে বর্ণনা করেছেন। আমি যতটুকু জানি আওয়ামী লীগের এবং এ সরকারের সমর্থক চ্যানেলগুলোকেই মূলত টকশো প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। টকশোগুলোতে অংশগ্রহণকারীরাও মোটামুটি আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে আমি জানি। প্রধানমন্ত্রী তাদের মতামতও আর সহ্য করতে পারছেন না। মনে হচ্ছে তিনি সম্পূর্ণ বন্ধুহীন এবং অসহায় হয়ে পড়েছেন।

নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে গেছে হাসিনার
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ওপর ভয়ানক ক্ষেপে গেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এরশাদ যারে ঘেন্না করে তার রিপোর্ট কতখানি গ্রহণযোগ্য?’ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী এখন মাপকাঠি হিসেবে এরশাদের চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য আর কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গটা না তুললেই তিনি ভালো করতেন। বাংলাদেশের বহু মানুষের এখনো মনে আছে দেশের সব মানুষ যখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিল, সর্বজন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান যখন এরশাদকে বিশ্ববেহায়া খেতাব দিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা তখন প্রকাশ্যে এবং পেছনের দরোজা দিয়ে সমর্থন দিয়ে সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে ৯ বছর টিকিয়ে রেখেছিলেন।
এখনো হাসিনা ও এরশাদ পরস্পরকে তাদের স্বৈরতন্ত্রী উচ্চাভিলাষের পরিপূরক মনে করেন। জবরদস্তি গদি আঁকড়ে থাকতে হাসিনা যে নীলনকশা তৈরি করেছেন তাতে এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা করার পরিকল্পনা আছে। এরশাদ যাদের ঘৃণা করেন দেশের মানুষ বরং তাদের সম্মানিতই বিবেচনা করবেন।
মওদুদ আহমদের সমালোচনায় হাসিনা এখন পঞ্চমুখ। তাকে তিনি ‘প্রতারক’, ‘ফ্রড’ ইত্যাদি নানা নামে গালাগাল করেছেন। কারণটা কী? কারণ হয়তো এই যে আসন্ন পরাজয়ের বিভীষিকা দেখে আওয়ামী লীগ এখন ছত্রছান হওয়ার দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ আর যুবলীগের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনেক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী হারিয়ে ফেলেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বজনমতকে ভিন্নমুখী করা এবং বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর দ্বৈত উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধসমাজের বিরুদ্ধে যে সীমিত নির্যাতনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। তাতেই ভয়াবহ কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং সারা বিশ্ব সেটা জেনে গেছে।
এ রকম অবস্থায় হাসিনা সাধারণত যা করেন এখানেও তাই করছেন। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে তিনি এলোপাতাড়ি গালাগাল শুরু করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেও এখন নেত্রীর চাপাবাজির সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, শেখ হাসিনা কেন কথাবার্তায় শালীনতা বজায় রাখতে পারেন না? কেন তিনি বিরোধীদের সমালোচনা শুরু করলে নিজের রসনাকে আর সংযত রাখতে পারেন না?
কী জবাব আছে এসব প্রশ্নের? হাসিনা হয়তো আশা করেন তিনি যাদের গালাগাল করেন অন্যরাও তাদের সম্বন্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করবে। আসলে যে উল্টোটাই হচ্ছে সেটা ভেবে দেখার মতো দূরদৃষ্টি যেন তার নেই। আগেও বলেছি, যে ব্যক্তি নিজেকে সম্মানিত বিবেচনা করে না সে অন্যকেও সম্মান দিতে জানে না। অযোগ্য ব্যক্তিকে যদি তার সামর্থ্যরে বাইরের কোনো গুরুদায়িত্ব দেয়া হয় সে নিজের ব্যর্থতাগুলোর দায়িত্ব অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। সে ব্যক্তি সর্বক্ষণ আরো মনে করে যে, অন্যরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান ক্ষেত্রে আরো গুরুতর কিছু ব্যাপারের সংযোগ ঘটেছে। শেখ হাসিনা রাজনীতি করছেন বিদেশীদের সাথে ষড়যন্ত্র করে, বিদেশের স্বার্থকে তিনি নিজ দেশের স্বার্থের অনেক ওপরে স্থান দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে বিবেকের হঠাৎ দংশন অন্য কার্যকারণগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে তাকে ক্রোধে দিশাহারা করে তোলে।
লন্ডন, ১৫.১০.১২
serajurrahman৩৪@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads