বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

এ সরকার দুর্নীতির আখড়া, বাইন মাছের মতো পিচ্ছিল



সিরাজুর রহমান
এ সরকার দুর্নীতির আখড়া, বাইন মাছের মতো পিচ্ছিল
ছোটবেলা গ্রামের বাড়িতে গেলে মাছ ধরতাম। তখনো লক্ষ করেছি বাইন মাছগুলো জালে ধরা পড়লে, এমনকি হাতের মুঠোয় চেপে ধরলেও নানা কসরত করে।  সর্বাঙ্গ আঁকাবাঁকা করে ঠেলেঢুলে পিছলে বেরিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারেরও হয়েছে সে রকমেরই অবস্থা।  তাদের অন্যায়-দুর্নীতি-দুষ্কর্মগুলো ধরা পড়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা বাইন মাছের মতোই পিছলে বেরিয়ে যাওয়ার নানা রকম কসরত করছে।
পদ্মা সেতুর দৃষ্টান্ত না দিয়ে উপায় নেই।  নেই এ কারণে যে এ দুর্নীতি চুনোপুঁটিদের দুর্নীতি নয়, এ দুর্নীতি হচ্ছে রাঘববোয়ালদের।  বিশ্বাস না করে উপায় নেই।  বিশ্বব্যাংকÑ গরজে পড়লে সারা বিশ্ব ঋণের জন্য যাদের কাছে হাত পাতেÑ সে বিশ্বব্যাংক এক বছরেরও বেশি আগে দুর্নীতি ধরে ফেলেছে, নামধাম দিয়ে তাদের শনাক্ত করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবি করেছে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে। সরকার কী কারণে সে দাবি মানতে রাজি হচ্ছে না বুঝতে কারো বাকি নেই।  নিজের গলায় ফাঁসির রজ্জু পরাতে কে রাজি হতে চায় বলুন?
সঙ্গত কারণেই বিশ্বব্যাংক সাফ বলে দিয়েছে, শনাক্ত করা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়া না হলে, অন্ততপক্ষে সরকারের চার চৌহদ্দি থেকে তাদের বিদায় করা না হলে তারা সেতু নির্মাণের অর্থ জোগান দেবে না। বিশ্বব্যাংক যদি অর্থায়ন না করে তাহলে অন্য দু’টি সহ-অর্থায়নকারী জাপান উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (জাইকা) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও টাকা দিতে অস্বীকার করেছে।  চুরি করে রসগোল্লা খেয়ে ধরা পড়ে গেলে নির্বোধ বালিকা প্রথমে কাঁচুমাচু করে পার পেতে চায়, পরে চিৎকার করে তাণ্ডব জুড়ে দেয়।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রধানও ঠিক সেটাই করেছেন। বিশ্বব্যাংককে তিনি দুর্নীতিবাজ বলে গলাবাজি করেছেন, হালে আবার এ ব্যাংকের সংস্কার দাবি করেছেন, মালয়েশিয়াসহ এর-তার সাহায্যে সেতু নির্মাণ করবেন বলে বহু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং চাঁদা তুলে সেতু নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা করে তার দলীয় গুণ্ডাপাণ্ডাদের চাঁদাবাজিকে বৈধ করে দিয়েছেন। সবাই তখন বলেছিল সেসব সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য কৌশলি খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
গত নির্বাচনে বহু অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা তো দশ টাকা কেজি দরে দেশবাসীকে চাল খাওয়ানোর এবং কৃষকদের বিনামূল্যে সার সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতিগুলোর কোনোটাই পূরণ করতে পারেনি এ সরকার গত পৌনে চার বছরে।  খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে তৈরী যমুনা সেতুর কপালে নতুন নাম লিখে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে খুবই দ্রুত। অন্তত ভিত্তি স্থাপন করে মার্বেল ফলকে নাম লিখে দিতে না পারলে সাধারণ মানুষকেও আর বুঝ দেয়া যাবে না। সুতরাং আবারো সরকারকে বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক সত্যি সত্যি বাংলাদেশের মানুষকে এ সেতুটি উপহার দিতে চায়।  তারা একের পর এক সমাধানের পথ বাতলাচ্ছে। সর্বশেষ ব্যাংক বলেছে, সরকার যে বলছে ব্যাংকের শনাক্ত করা দুর্নীতিবাজদের তারা শাস্তি দিয়েছে সেটা সত্যি নাকি তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করা হবে।  প্রকৃতই দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে সে কমিটি রায় দিলে সেতু নির্মাণের কাজ দুর্নীতিমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তদারক করার জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে। শুধু সে শর্তেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে।
সরকার আবারো বিশ্বব্যাংককে হাইকোর্ট দেখানোর চেষ্টা করেছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর লেখা এক চিঠিতে তারা বলেছিল, ব্যাংকের গত বছরের অভিযোগগুলোর প্রতিকার করা হয়েছে, সুতরাং ব্যাংক যেন এবার অর্থায়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।  তার জবাবেই ব্যাংক ২৭ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে উপরিউক্ত দু’টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। তারপর থেকে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর লুইস মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করা হয়েছে (যে কমিটি দুর্নীতিবাজদের সত্যি সত্যি শাস্তি দেয়া হয়েছে কি না খতিয়ে দেখবে)।  এ কমিটি যদি রায় দেয় যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তবেই সেতু নির্মাণ তদারক করার জন্য দ্বিতীয় কমিটি গঠন করা হবে।

হাতিকে প্যাঁচে ফেলতে চায় চামচিকে
কিন্তু ওই যে বলছিলাম!  এ সরকার তাদের সৃষ্ট সমস্যাগুলো থেকে বাইন মাছের মতো পিছলে বেরিয়ে যেতে চায়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংকের কাছে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, দু’টি কমিটিরই একসাথে কাজ করা এবং একই সাথে সেতু নির্মাণের কাজও চালিয়ে যাওয়া উচিত। অর্থাৎ সরকার বিশ্বব্যাংককে ফাঁদে ফেলে সেতুর অর্থায়ন আদায় করতে চেয়েছিল।  জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক মুহিতের এ প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে।
যাদের কাছ থেকে ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে তাদের সাথে কেন এই ধূর্তামি?  কারণ হচ্ছে এই যে, বর্তমান সময়েও ব্যাংকের সাথে মতৈক্য হলে চূড়ান্ত ব্যবস্থাদি পাকাপোক্ত করতে আগামী বছরের এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময় নেবে। তার পরই বর্ষাকাল শুরু হবে, পরের বছরের (২০১৪) জানুয়ারির আগে সেতুর ভিত্তি স্থাপনও সম্ভব হবে না। অথচ সাধারণ নির্বাচন তার আগেই হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেটা হবে দ্বিবিধ হতাশা।  ভিত্তি স্থাপন না হলে মার্বেল ফলকেও মায়ের এবং নিজের নাম খোদাই হবে না। তা ছাড়া এমন বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রচারণার পরও সেতুর নির্মাণকাজ শুরু না হলে ভোটদাতাদের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পদ্মা সেতুর ব্যাপারটা এ সরকারের দুর্নীতিবাজ চরিত্রের ছোটখাটো দৃষ্টান্ত মাত্র।  এরা ক্ষমতায় আসার পরপরই শেয়ারবাজার লুট হয়েছেন। ৩৫ লাখ স্বল্পবিত্তের মানুষ তাতে সর্বস্বান্ত হয়েছে।  ক্ষোভে, হতাশায় আত্মহত্যাও করেছেন কয়েকজন। বাণিজ্যিক সিন্ডিকেটগুলোর দৌরাত্ম্যে পণ্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার মতো উদ্দাম গতিতে বেড়েছে।  কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে বিনা টেন্ডারে ২০ হাজার কোটি টাকার হরিলুট হয়েছে। সবাই জানে সরকারের শীর্ষ স্তরের ঘনিষ্ঠজনেরাই এসব লুটপাট করেছেন।
এর পরই এলো ডেসটিনি নামের প্রতারক প্রতিষ্ঠান।  এদের ব্যবসায় যে অসাধু ও প্রতারণামূলক সাধারণ বুদ্ধির মানুষেরও সেটা ধরে ফেলার কথা।  তা সত্ত্বেও সরকার যে সে ব্যবসায় চালু হতে দিয়েছে এবং হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর সর্বস্ব লুট হয়েছে তার কারণও এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে।  ডেসটিনির একজন কর্তাব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন।  এখানেই শেষ নয়।  এরপর আত্মপ্রকাশ করল হলমার্ক।  সরকারের নাকের ডগার ওপর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে।  এই ফেরেববাজির সাথেও জড়িত আছেন একজন উপদেষ্টা।
জনদাবি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলে সরকার এখন দেখাতে চাইছে যে তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আসলে কি তাই? সংশ্লিষ্টদের ধরা হবে, ধরা হচ্ছে ইত্যাদি বলে আগাম প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে ক’দিন ধরে।  সেটা যে দুর্নীতিবাজদের পালের গোদাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যই করা হয়েছে তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এখন আর সরকারের কথা কিংবা কাজে বিশ্বাস করতে কেউ রাজি নয়।  সাংবাদিক দম্পতি রুনি ও সাগরের খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন দেশের কেউ কি সেটা বিশ্বাস করছেন বলে মনে হয়?

বাঁকা পথ এদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
এটাই হচ্ছে এই সরকারের চরিত্র।  তারা সোজা পথে চলবে না। জনসাধারণের ভোটে নয়, পেছনের দরোজা দিয়ে চুরি করে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায়।  সে জন্যই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তদারকিতে নির্বাচনের ওপর তারা ভরসা করতে পারে না।  সাবেক প্রধান বিচারপতির বিতর্কিত রায়ের অপব্যাখ্যা করে বিরোধী দল বর্জিত সংসদে  (যেটা আসলে আওয়ামী লীগের ঘরোয়া বৈঠক ছাড়া আর কিছু নয়) সংবিধান বিকৃত করে তারা স্থির করেছে, বর্তমান সরকারের অধীনে সম্পূর্ণ দলীয়কৃত বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র ও পুলিশের তত্ত্বাবধানে নীলনকশার নির্বাচন করে তারা স্থায়ীভাবে গদি দখল করে থাকবে।
বিরোধী দলকে তারা সভা-সমাবেশ করতে দিতেও নারাজ। বিরোধীরা সভা ডাকলে আওয়ামী লীগের শাখা-প্রশাখাগুলো সেখানে এবং একই সময়ে সভা ডেকে বসে।  শান্তি রক্ষার অজুহাত দিয়ে আওয়ামী দলীয় পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। বিরোধী দলের মিছিল ডাকা হলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডারা তার ওপর হামলা করে।  বাধা দেয়ার পরিবর্তে পুলিশ তাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাদের মদদ দেয়।  শাসক দলের গুণ্ডারা কিংবা পুলিশের চরেরা সচিবালয়ে ককটেল বোমা ছোড়ে, সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশ বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, তাদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যায়।
রামু ও পটিয়ায় বৌদ্ধসমাজের ওপর হামলা হয়েছে, বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি, মন্দির ইত্যাদি নষ্ট করা হয়েছে।  ভুক্তভোগীরা বলেছেন, অশান্তি সৃষ্টি করেছিল ছাত্রলীগ আর যুবলীগের লোকেরা।  তারা মিছিল করেছিল এবং সে মিছিলের জের ধরেই দাঙ্গা শুরু হয়। তারা আরো বলেছেন, পুলিশ উপস্থিত ছিল, তারা গুণ্ডাদের বাধা দেয়নি, নিষ্ক্রিয় দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। আমরা জানি আওয়ামীকৃত পুলিশ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করে না। অন্য দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডামিতে তারা বাধা দেয় না। সুতরাং ভুক্তভোগীদের বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয় যে আওয়ামী লীগের গুণ্ডারাই এ জঘন্য অপরাধ ঘটিয়েছে। ঘটনার কয়েক দিন পর সে এলাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রায় দিয়ে দিলেন যে সে এলাকার বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরে উসকানিতেই অশান্তি ঘটেছে। আওয়ামী লীগের তোতাপাখিরা সমস্বরে চিৎকার জুড়ে দিলেন।  সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা আগেভাগেই মনগড়া রায় দিয়ে দেন।  প্রকারান্তরে তারা পুলিশকে আর বিচারকদের বলে দেন কাকে গ্রেফতার করতে হবে, কাকে জেলে পাঠাতে হবে।  ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচার যে এ সরকারের আমলে সম্ভব নয় এই হচ্ছে তার কিছু কারণ।
কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের মানুষ আর এক দিনও এ সরকারকে গদিতে দেখতে চায় না।  চাইবে কী করে?  এই সরকার দেশ থেকে আইনশৃঙ্খলাকে নির্বাসিত করেছে; ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচার অসম্ভব করে তুলেছে; দেশের শাসনব্যবস্থা এখন কার্যত আওয়ামী লীগ দলের হাতে; দুর্নীতি এখন সরকারি আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে চলছে; হিংসার অনলে জ্বলছে বাংলাদেশ; জাতীয় ঐক্য কিংবা সংহতির কথা এখন সবাই ভুলে গেছে; ক’দিন আগে দেখেছি দৈনিক গড়পড়তা খুন হচ্ছে ১৪ জন; সরকারের বিরোধী নেতাকর্মীরা গুম হয়ে যাচ্ছেন এবং সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে যে সরকারই পুলিশ আর র‌্যাবকে দিয়ে এই গুম ও খুন করার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।

তোফায়েল বিকল্প নেতা?
এ সরকারের প্রধান অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক ভারত। বাংলাদেশে ভারত সরকারের নীতি ও কর্মসূচি পরিচালনা করে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও তাদের ছয় লাখ তিন হাজার চর। এরা ভারত সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি কেউ ঠেকাতে পারবে না।  ভারত সরকার তাতে কতখানি উদ্বিগ্ন সেটা ভারতীয় মিডিয়া অহরহ বলে দিচ্ছে।
দিল্লির সরকার গত নির্বাচনের মতোই ‘বস্তা বস্তা টাকা আর পরামর্শ’ ঢালবে আগামী নির্বাচনেও তাদেরকে ‘বিজয়’ দিতে। তাতেও দিল্লির পররাষ্ট্র দফতর সাউথ ব্লক আর র নিশ্চিত হতে পারছে না।  ২০১০ সালের দিল্লি সফরে সরকারপ্রধান অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন। বাংলাদেশকে সিকিমের মতো আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করার জন্য একাত্তর সালে তাজউদ্দীনকে দিয়ে যে সাত দফা চুক্তিকে সই করিয়ে নিয়েছিল ভারত সে চুক্তি আবারো চালু করতে চায় তা এ সরকার রাজি হয়ে এসেছে বলেই মনে হয়। তা ছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের মূল গতিপথ পরিবর্তন করে ভারত থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত পর্যন্ত  দু’টি মহাসড়ক নির্মাণ, সড়ক রেল ও নদীপথে ভারতকে করিডোর ও ট্রানজিটদান, বাংলাদেশের উভয় সমুদ্রবন্দর ভারতকে অবাধে ব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদিও দিতে রাজি হয়ে এসেছিলেন বর্তমান সরকারপ্রধান।
ভারত এখন নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রুত এই উপহারগুলো পাকাপাকি হাতিয়ে নিতে চায়। সে ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার তদবিরে ভারতের একজন যুগ্ম সচিব গত ক’দিনে ঢাকায় এসেছেন বলেও শুনেছি।  আর হ্যাঁ, আরো একটা তুরুপের তাস আছে ভারতের হাতে। শত চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারপ্রধানকে যদি গদিতে রাখা সম্ভব না হয় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভারত তোফায়েল আহমেদের ওপর ভরসা করে আছে বলে মনে হয়। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, সে কারণেই তোফায়েল সাম্প্রতিক রদবদলে মন্ত্রিসভায় যোগ দেননি।  শেষ মুহূর্তে নর্দমায় ঝাঁপ দিয়ে তোফায়েল গায়ে দুর্গন্ধ লাগান সেটা ভারত চায়নি।
মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সাল থেকে তোফায়েল আহমেদ ভারতের পছন্দের লোক। ভারত তাকে তাদের মুজিব বাহিনীর নেতা নির্বাচিত করেছিল, সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তাকে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমিতে পাঠিয়েছিল এবং ভারতের প্রভাবেই তোফায়েল আহমেদ রক্ষীবাহিনীর অধিনায়ক হয়েছিলেন।
(লন্ডন, ১০.১০.১২)

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads