মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১২

বার কাউন্সিলের ক্ষমতা খর্ব হলো


আইনজীবীদের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন


দেশের আইন পেশায় আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের নির্বাচিতদের ক্ষমতা খর্ব করে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এ জন্য পাঁচ সদস্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এনরোলমেন্ট কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০১২-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়। সংশোধিত আইন মোতাবেক, জেলা জজ বা অতিরিক্ত জজ পদমর্যাদায় কর্মকর্তাকে বার কাউন্সিলের সচিব হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। বিদ্যমান আইনে বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। আর প্রস্তাবিত এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হবেন হাইকোর্টের দুইজন বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার কাউন্সিলের একজন সদস্য।
বার কাউন্সিলের নির্বাচিত দায়িত্বশীলেরা সাথে সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিমত, নতুন আইনটি সংসদে অনুমোদন পেলে বার কাউন্সিল পঙ্গু হয়ে যাবে। তখন আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির ক্ষমতা আর থাকবে না নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। অথচ এটাই কাউন্সিলের প্রধান কাজ। এখন যে তিন সদস্যের এনরোলমেন্ট কমিটি আছে, এর সব সদস্যই নির্বাচিত। এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, এবার বার কাউন্সিল নির্বাচনে সরকার সমর্থকদের ভরাডুবি এবং জাতীয়তাবাদীদের বিজয় হয়েছে। তাই নির্বাচিতদের ক্ষমতাহীন করতে নতুন আইন করা হচ্ছে। বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করার প্রয়াস চলছে। দেশের ৪৬ হাজার আইনজীবী এটা রুখে দাঁড়াবেন। সরকারের নয়া সিদ্ধান্ত সারা দেশের আইনজীবীদের রায়ের প্রতি বিদ্রƒপ বলেও আইনজীবী নেতারা মনে করেন।
আইনজীবীদের পেশায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো আইন সংশোধন বা প্রণয়নের বিষয়টি এমনিতে সবার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের কথা নয়। তবে এবার বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে নতুন আইনটিকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। সচেতন নাগরিকদের কাছে এটি গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে, আইনজীবীরা এখনো রাজনীতির স্থানীয় ও জাতীয় উভয় অঙ্গনে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় সংগঠক হিসেবে গণ্য। দেশে সরকারবিরোধী, তথা গণতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনায় আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্বশীল ফোরামগুলোর ভূমিকা বিরাট। তাই আইন পেশায় অন্তর্ভুক্তির নতুন নিয়ম-পদ্ধতি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলাই স্বাভাবিক।
মিডিয়ায় যতটুকু জানা গেছে, এতে দেখা যায়Ñ সরকার বার কাউন্সিল নিয়ন্ত্রণের কাজটি করার প্রয়াস পেয়েছে অত্যন্ত কৌশলে। তাই এনরোলমেন্ট কমিটি ‘শক্তিশালী’ করার কথা বলা হচ্ছে। আর অ্যাটর্নি জেনারেল বার কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ধরে নেয়া যায়। এ দিকে বারকাউন্সিলকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হলেও শর্ত হলো, এ জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অতএব এটা বলা বাহুল্য, বিরোধীদলীয় আইনজীবীদের প্রাধান্য থাকলেও বার কাউন্সিল এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সরকারের মর্জির মুখাপেক্ষী থাকতে হবে। কাউন্সিলকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই যে শর্তটি জুড়ে দেয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট।
আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের এ যাবৎকালের ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বার কাউন্সিল নিয়ে নতুন আইন করার উদ্যোগ। বাস্তবতার নিরিখে সঙ্গতভাবেই জনমনে এই সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, সরকারের দাবি মোতাবেক, ‘আইন পেশার গুণগত মান নিশ্চিত করা’ নয়, বার কাউন্সিলকে নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আইন বদলানোর মাধ্যমে। আমরা আহ্বান জানাব, যাতে সরকার সারা দেশের আইনজীবীদের সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রদত্ত রায়ের অমর্যাদা না করে এবং সত্যিকার গণতান্ত্রিক আচরণ করে। বার কাউন্সিলের মতো ফোরামের স্বকীয়তা বজায় রাখা গণতন্ত্রের জন্য খুবই প্রয়োজন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads