ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে দেখতে আর স্লোগান শুনতে শুনতে দেশের মানুষের হা-হুতাশ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। লুটেরাদের খোশ-আহলাদ, ফুর্তি-ফার্তি, রঙ্গ-রস, হাসি-তামাশার ধরন দেখলে সহজেই বোঝা যায়, যেন একই দেশে দুই শ্রেণীর নাগরিকের বসবাস। এর মধ্যে একটি শ্রেণী শোষক আর আরেকটি শোষিত। ক্ষমতার মসনদে যারাই বসে তাদের মধ্য থেকে বিশাল একটি বাহিনী শোষকের কাজ করে। আর তাদের তেল-পানি দিয়ে শোষকের কাজ আজীবন চালিয়ে যায় সরকারি আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চেলা-চামুণ্ডারা। যে দল যে সময় ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে, সেই দলের তল্পিবাহক হয়েই ওরা তাদের শোষণ ও ঘুষ-দুর্নীতির রমরমা কারবার চালিয়ে যায় আরামসে। এসব দেখে দেশের একজন প্রবীণ ও বরেণ্য সাংবাদিক আর সহ্য করতে না পেরে ঘোষণা দিলেন, ওদের ফুলচন্দন মার্কা খুবছুরত চেহারাখানি যেখানেই দেখার দুর্ভাগ্য হবে সেখানেই তাদের ‘চোর চোর’ বলে সম্বোধনের জন্য। কতটা অসহায় হলে এ ধরনের সম্বোধন মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তা বুঝতে আর কারও বাকি থাকার কথা নয়।
একটু পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর জন্য সিলেটবাসী আজও কাঁদেন। তারা সিলেটের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন আপন কর্মের মাধ্যমে। তাদের কীর্তি সিলেটের ইতিহাসে চিরদিন জ্বলজ্বল করতে থাকবে। কারণ তারা সিলেটের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন। ছিলেন সিলেটদরদী তথা দেশদরদী। সিলেটের প্রতিটি অলিতে-গলিতে তাদের অবদান রয়েছে। হয়তো তাদের অগোচরে কতিপয় চাটুকার সেসময় তাদের নাম ভাঙিয়ে যদি লুটপাটের সুযোগ না পেত, তাহলে সিলেটবাসী তখন তাদের কাছ থেকে আরও বহুগুণ বেশি সুফল লাভ করতেন।
তাদেরই সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে সিলেটবাসী ভাবতে শুরু করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেবকে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি নয়, এক্কেবারে গুড়ে যেন আবর্জনা ঢেলে দিয়ে চরমভাবে আশাহত করলেন ওই মহা মান্যবর নেতা। সিলেটবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই পাওয়ার বদলে কোন জায়গায় যে ঠাঁই নিয়ে আছেন, তা একমাত্র ওই অঞ্চলের জনসাধারণকে একটু তকলিফ করে জিজ্ঞেস করলে সহজেই জানা যায়।
গত ৫ অক্টোবর সিলেট শহরের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে ঘটনাস্থলেই ১৩টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। এর মধ্যে একই পরিবারের নয়জন রয়েছেন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ এসেছে, ঘটনাস্থলের পাশে মহাসড়কের একটি সাইড দাবানো ও ভাঙাচোরা। ভয়াবহ দুর্ঘটনার এও একটি কারণ। এর কিছুদিন আগে একই মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দিলেন আমারই এলাকার কৃতী সন্তান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হুসেন শামিম। প্রায় প্রতিদিনই ব্যস্ততম ওই মহাসড়কে এভাবে দুর্ঘটনায় প্রাণ দিচ্ছেন নিরীহ জনসাধারণ। কিন্তু সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও ওই মন্ত্রী সাহেব মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার সিলেটবাসীর প্রাণের দাবিটি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নিয়েই দিব্যি মেয়াদ পার করার প্রহর গুনছেন। শুধু তাই নয়, সিলেটের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এমনকি অলি-গলির রাস্তা পর্যন্ত ভেঙেচুরে ছোট-বড় খানা-খন্দ হয়ে খাল বিল ড্রেন নর্দমায় একাকার হয়ে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন হচ্ছে বিকল। গাড়ির জীবনীশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। যাত্রীসাধারণের কোমরে ব্যথা হচ্ছে। হাড় ভেঙে যাচ্ছে। রিকশা থেকে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ছেন যাত্রীরা। যাদের ব্যথা ছিল তাদের ব্যথা আরও বাড়ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। অন্তর থেকে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস আর্তনাদ অভিশাপ আর বদদোয়া।
এছাড়া বিকল্প যেন তাদের কাছে আর কিছুই নেই। কিছু চাইতে গেলেও পুলিশ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। সব মহলের শ্রদ্ধার পাত্র শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকায় জড়ো হলে তাদের আচ্ছামতো রামধোলাই দিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে ওদের বিবেকে একটুও নাড়া দেয় না। এটা কোন নমুনার গণতন্ত্র তা বোঝা মুশকিল। সিলেটবাসীর অনেক দাবি-দাওয়া কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবে এর ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। ভাটি অঞ্চলের আরেক তুখোড় ও অভিজ্ঞ নেতা জীবনে সিলেটবাসীর জন্য কিছু না করলেও নিজের ও ছেলের জন্য বস্তা ভরে অনেক কামাই করে জামাই আদরে থেকে মিডিয়ায় হৈচৈ তুলে দফতর ছাড়া এয়ারকুলার লাগানো অফিসে বসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা নিয়ে আরামসে পতাকা লাগানো দামি গাড়ি চড়ে হাওয়া খাচ্ছেন পাইক-পেয়াদা সঙ্গে নিয়ে।
শুধু সিলেটে নয়, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সারা দেশেই রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা চরমে। কোথাও কোথাও কাগজে-কলমে বরাদ্দ হলেও বস্তা বস্তা করে ভাগ-বাটোয়ারা ও লুটপাটের ফলে নিম্নমানের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবারও ভেঙে যায়।
তাই ওদের কাছে আর রাস্তা সংস্কারের দাবি করে উলুবনে মুক্তা ছড়িয়ে লাভ নেই। এ মুহূর্তে দেশের নিরীহ জনসাধারণের একটিই দাবি হওয়া উচিত, প্রত্যেক মন্ত্রী-এমপি-আমলার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিলাসবহুল জিপে চড়া নিষিদ্ধ করে রিকশাযোগে কিংবা পায়ে হেঁটে চলার নতুন নির্দেশনা জারি করা হোক।
লেখক : সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম
nazmulsylhet@gmail.com
একটু পেছনে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান এবং সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর জন্য সিলেটবাসী আজও কাঁদেন। তারা সিলেটের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন আপন কর্মের মাধ্যমে। তাদের কীর্তি সিলেটের ইতিহাসে চিরদিন জ্বলজ্বল করতে থাকবে। কারণ তারা সিলেটের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন। ছিলেন সিলেটদরদী তথা দেশদরদী। সিলেটের প্রতিটি অলিতে-গলিতে তাদের অবদান রয়েছে। হয়তো তাদের অগোচরে কতিপয় চাটুকার সেসময় তাদের নাম ভাঙিয়ে যদি লুটপাটের সুযোগ না পেত, তাহলে সিলেটবাসী তখন তাদের কাছ থেকে আরও বহুগুণ বেশি সুফল লাভ করতেন।
তাদেরই সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে সিলেটবাসী ভাবতে শুরু করেছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেবকে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি নয়, এক্কেবারে গুড়ে যেন আবর্জনা ঢেলে দিয়ে চরমভাবে আশাহত করলেন ওই মহা মান্যবর নেতা। সিলেটবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই পাওয়ার বদলে কোন জায়গায় যে ঠাঁই নিয়ে আছেন, তা একমাত্র ওই অঞ্চলের জনসাধারণকে একটু তকলিফ করে জিজ্ঞেস করলে সহজেই জানা যায়।
গত ৫ অক্টোবর সিলেট শহরের অদূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়ে ঘটনাস্থলেই ১৩টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। এর মধ্যে একই পরিবারের নয়জন রয়েছেন। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ এসেছে, ঘটনাস্থলের পাশে মহাসড়কের একটি সাইড দাবানো ও ভাঙাচোরা। ভয়াবহ দুর্ঘটনার এও একটি কারণ। এর কিছুদিন আগে একই মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দিলেন আমারই এলাকার কৃতী সন্তান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হুসেন শামিম। প্রায় প্রতিদিনই ব্যস্ততম ওই মহাসড়কে এভাবে দুর্ঘটনায় প্রাণ দিচ্ছেন নিরীহ জনসাধারণ। কিন্তু সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও ওই মন্ত্রী সাহেব মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার সিলেটবাসীর প্রাণের দাবিটি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নিয়েই দিব্যি মেয়াদ পার করার প্রহর গুনছেন। শুধু তাই নয়, সিলেটের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এমনকি অলি-গলির রাস্তা পর্যন্ত ভেঙেচুরে ছোট-বড় খানা-খন্দ হয়ে খাল বিল ড্রেন নর্দমায় একাকার হয়ে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। গাড়িগুলোর ইঞ্জিন হচ্ছে বিকল। গাড়ির জীবনীশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। যাত্রীসাধারণের কোমরে ব্যথা হচ্ছে। হাড় ভেঙে যাচ্ছে। রিকশা থেকে হুমড়ি খেয়ে নিচে পড়ছেন যাত্রীরা। যাদের ব্যথা ছিল তাদের ব্যথা আরও বাড়ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। অন্তর থেকে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস আর্তনাদ অভিশাপ আর বদদোয়া।
এছাড়া বিকল্প যেন তাদের কাছে আর কিছুই নেই। কিছু চাইতে গেলেও পুলিশ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। সব মহলের শ্রদ্ধার পাত্র শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে ঢাকায় জড়ো হলে তাদের আচ্ছামতো রামধোলাই দিয়ে হাসপাতালে পাঠাতে ওদের বিবেকে একটুও নাড়া দেয় না। এটা কোন নমুনার গণতন্ত্র তা বোঝা মুশকিল। সিলেটবাসীর অনেক দাবি-দাওয়া কাগজে কলমে বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবে এর ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। ভাটি অঞ্চলের আরেক তুখোড় ও অভিজ্ঞ নেতা জীবনে সিলেটবাসীর জন্য কিছু না করলেও নিজের ও ছেলের জন্য বস্তা ভরে অনেক কামাই করে জামাই আদরে থেকে মিডিয়ায় হৈচৈ তুলে দফতর ছাড়া এয়ারকুলার লাগানো অফিসে বসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন-ভাতা নিয়ে আরামসে পতাকা লাগানো দামি গাড়ি চড়ে হাওয়া খাচ্ছেন পাইক-পেয়াদা সঙ্গে নিয়ে।
শুধু সিলেটে নয়, খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সারা দেশেই রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা চরমে। কোথাও কোথাও কাগজে-কলমে বরাদ্দ হলেও বস্তা বস্তা করে ভাগ-বাটোয়ারা ও লুটপাটের ফলে নিম্নমানের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আবারও ভেঙে যায়।
তাই ওদের কাছে আর রাস্তা সংস্কারের দাবি করে উলুবনে মুক্তা ছড়িয়ে লাভ নেই। এ মুহূর্তে দেশের নিরীহ জনসাধারণের একটিই দাবি হওয়া উচিত, প্রত্যেক মন্ত্রী-এমপি-আমলার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিলাসবহুল জিপে চড়া নিষিদ্ধ করে রিকশাযোগে কিংবা পায়ে হেঁটে চলার নতুন নির্দেশনা জারি করা হোক।
লেখক : সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম
nazmulsylhet@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন