এ প্রবণতা গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে বড় বাধা
আমাদের এই দেশটার একটা বড় দুর্ভাগ্যÑ দেশে রাজনৈতিক সম্প্রীতির পরিবেশ এখন পর্যন্ত আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রবলভাবে আস্থার সঙ্কট বরাবর বিদ্যমান। আর এই আস্থার সঙ্কটের কারণে আমরা গণতন্ত্রের মহাসড়ক থেকে বারবার ছিটকে পড়ছি। দেশ উত্তরণ ঘটাতে পারছে না রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে। সে পথ বেয়েই জাতীয় ঐক্যের বদলে সময়ের সাথে অনৈক্য জোরদার হচ্ছে। জাতীয় বিভেদ ছড়িয়ে পড়ছে জনজীবনের সব স্তরে। সরকারের ভেতর ও বাইরে। ফলে জাতীয় ঐক্যভিত্তিক কোনো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছি না।
বর্তমান সরকার এবার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে বিরোধী দলের ওপর মামলা-হামলার প্রবণতাকে আরো জোরদার করে তুলেছে। এই প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত। অতি সম্প্রতি এই প্রবণতার বশবর্তী সরকার এখন এই সময়ে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী ‘সহিংস’ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এসব মামলায় রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা চলছে বলে নয়া দিগন্ত এক খবরে জানিয়েছে।
নয়া দিগন্ত জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে গতকালও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রথম দিকে নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা এসব সাজানো মামলার বাদি হতে রাজি না হওয়ায় এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মামলায় বাদি করানোর চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে এরা বলবেন, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনে এরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অভিযোগে মামলা দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টজনেরা।
এ দিকে শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ নেতারাও দাবি করেছেন, যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলা সাজানো হয়েছে, সেসব ঘটনা আদৌ ঘটেনি। বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে যশোরে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা হয়নি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেখানে এ ধরনের মামলার চক্রান্ত চলছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাটোর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বাবুল কুমার চন্দ্র বলেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো নির্যাতন না করায় সব নির্বাচনেই সংখ্যালঘুরা ব্যাপক হারে তার দলকে ভোট দিয়েছেন। দুলুর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়েই বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলা করতে চাইছে।
উল্লেখ্য, সরকার বিরোধী দল দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২৫ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ ২৬ হাজার ৩৫২ জনকে অপরাধী চিহ্নিত করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর এদের বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে মামলার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েও গেছে বলে জানা গেছে। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত এই রাজনৈতিক রঙে রাঙানো মামলা দায়ের করে, তবে তা নতুন করে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে। এই মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। এর মাধ্যমে সরকারের গোপন অভিলাষ হচ্ছেÑ এসব নেতাকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য করে দেয়া। সে জন্য এসব মামলা দ্রুত বিচার আদালতে দায়েরের পরিকল্পনা করছে সরকার। সবচেয়ে বড় কথা, এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘুদের কার্যত বলির পাঁঠা বানানো হবে। সর্বোপরি বিনষ্ট হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। অতএব এ ব্যাপারে সরকারের অতি উৎসাহীদের সাবধান হতে হবে বৈকি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন