দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকা লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছিল, তা আরেক দফা নিশ্চিত করলেন তার এপিএসের গাড়িচালক আলী আজম। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ঘুষের ৭৪ লাখ টাকা নিয়ে বর্ডার গার্ডের হেড কোয়ার্টারে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এই চালক। টাকা বহনকারী গাড়িতে ছিলেন রেলওয়ের আরো দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আর তাদের গন্তব্য ছিল মন্ত্রীর বাড়ি। রেলওয়ে গেট নামে পরিচিত এই কেলেঙ্কারির পর তৎকালীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে এই টাকা তার এপিএসের ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, এই টাকার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। পরে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কিন্তু পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে আবার দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে এই ঘুষের টাকা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে মন্ত্রীকে নির্দোষ ঘোষণা করে। কমিশন একই সাথে মন্ত্রীপুত্রের হঠাৎ করে কয়েক কোটি টাকা টেলিফোন বাণিজ্যে বিনিয়োগ করার বিষয়ে তদন্ত করে তাকেও নির্দোষ সনদ দেয়।
ঘুষের টাকা ধরিয়ে দেয়ার পর থেকে আলী আজম আত্মগোপনে চলে যান। নিরাপত্তার কারণে এ ছাড়া সম্ভবত তার আর কোনো উপায় ছিল না। সম্প্রতি আলী আজম একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই টাকা মন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বিবেকের তাড়নায় বিজিবির হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো জানান, এভাবে আরো অনেকবার মন্ত্রীর বাসায় টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী রেল বিভাগে ৬০০ লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা পেতেন। সেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। রেল বিভাগের একটি সিন্ডিকেট এই নিয়োগবাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে।
রেলওয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারির প্রধান সাক্ষী হচ্ছেন আলী আজম। কিন্তু আমরা দেখছি, দুর্নীতি দমন কমিশন গাড়িচালক আলী আজমের কোনো সাক্ষ্য না নিয়েই এই মামলার সমাপ্তি টেনেছে। দায়ী করেছে শুধু রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের। একইভাবে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল টাকার মালিক বনে যাওয়া মন্ত্রীপুত্রের আয়ের উৎস নিয়ে দুদক সততার সার্টিফিকেট দিয়েছে। এখন আলী আজমের এই সাক্ষাৎকারের পর প্রমাণিত হচ্ছে দুদক নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে তদন্তকাজ করেনি। দুদকের তদন্তের লক্ষ্য ছিল মন্ত্রীকে রক্ষা করা। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীর সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলো। দফতরবিহীন মন্ত্রী আলী আজমের সাক্ষাৎকারকে ‘এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি ও ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নিয়োগবাণিজ্যের এই ৭৪ লাখ টাকার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আলী আজমের সাক্ষ্যকে ভিত্তি করে মামলা পরিচালিত হওয়া উচিত। মন্ত্রীর উচিত আর দেরি না করে পদত্যাগ করা। বিশ্বের অন্য কোনো দেশ হলে এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সরকারের পতন ঘটত। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্বল গণতন্ত্র ও যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার মানসিকতার কারণে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত মামলা পুনঃতদন্ত করা। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রীদের দুর্নীতিমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন যে প্রকৃতই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়, আলী আজম সেই সুযোগ এনে দিয়েছেন। এখন জনগণ চায়, বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত শেষে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন