মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

ভাষার শালীনতা এবং মন্ত্রিত্বের যোগ্যতা



সি রা জু র র হ মা ন
বেমওকা অশালীন কথা বলার কারণে ব্রিটেনের টোরিদলীয় সরকারের চিফ হুইপ (পদমর্যাদা সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী) অ্যান্ড্রু মিচেল পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে ভাষ্যকাররা মন্তব্য করছেন।
এদেশে বেশ কিছুসংখ্যক সাইকেল-চড়া মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্য আছেন। বিত্তশালী অ্যান্ড্রু মিচেলও তাদের একজন। দু’সপ্তাহ আগে তিনি সাইকেল চড়েই ডাউনিং স্ট্রিটে ক্যাবিনেট মিটিংয়ে এসেছিলেন। নিরাপত্তার জন্য কয়েক বছর আগে ডাউনিং স্ট্রিটের মুখে বিরাট লোহার গেট লাগানো হয়েছে। মন্ত্রী ও ভিআইপি অতিথিদের গাড়ির পথ করে দেয়ার জন্যে কর্মরত পুলিশ গেটের বিশাল মধ্যভাগ খুলে দেয়। পথচারী ও সাইকেল আরোহীরা যাতায়াত করেন দু’পাশের ছোট গেট দিয়ে।
সেদিন চিফ হুইপ মিচেল স্থির করেছিলেন, তিনি মাঝের মূল গেট দিয়েই সাইকেল নিয়ে বেরুবেন। কর্মরত পুলিশকে (এদেশে বলা হয় অফিসার) তিনি প্রধান গেট খুলে দিতে বলেন। কিন্তু ওই অফিসার গেট না খুলে তাকে সাইড গেট দিয়ে বেরোতে অনুরোধ করেন। অ্যান্ড্রু মিচেল ধনীর সন্তান, তাতে আবার পদোন্নতি পেয়ে চিফ হুইপ হয়েছেন মাত্র কিছুদিন আগে। পুলিশ সার্জেন্টের এই ‘ঔদ্ধত্য’ হজম তিনি করতে পারেননি। তাকে তিনি চাষা (প্লেব) এবং আহাম্মক (মোরন) বলে গালি দেন। মিচেল অবশ্য বলেন, ওই কথাদুটো তিনি ব্যবহার করেননি, তবে স্বীকার করেন, তিনি কিছু কটূক্তি করেছিলেন।
সার্জেন্ট চিফ হুইপকে মনে করিয়ে দেন, কর্তব্যরত পুলিশকে গালি দেয়া গ্রেফতারযোগ্য অপরাধ। মিচেল তখন ভুল বুঝতে পারেন এবং সার্জেন্টের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু তা সত্ত্বেও সার্জেন্ট বিধি অনুযায়ী বিষয়টি সম্বন্ধে ওপরওয়ালাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট দেন। বিষয়টি মিডিয়ার নজর এড়ায়নি। মিচিলের ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিরোধী লেবার পার্টি অবিলম্বে অ্যান্ড্রু মিচেলকে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানায়। পুলিশ ফেডারেশনও প্রতিকার দাবি করে। এমনকি শাসক টোরি পার্টিরও কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য প্রকাশ্যে মিচেলকে চিফ হুইপ পদের অযোগ্য ঘোষণা করেন।
মিচেল সাধারণভাবেই পুলিশের এবং বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লেবার পার্টির দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ক্ষমা প্রার্থনার পর আর মিচেলকে বরখাস্ত করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু লেবার পার্টির তো বটেই, ভেতরে ভেতরে টোরি দলের ভেতর থেকেও অসন্তোষ ফুলে-ফুঁসে উঠতে থাকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মিচেল প্রধানমন্ত্রীর পল্লী ভবন চেকার্সে গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। লেবার পার্টি তাদের সমালোচনার সুর চড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, মিচেলকে সমর্থন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বিচারবুদ্ধির ত্রুটির এবং বরখাস্ত করার পরিবর্তে মিচেলকে পদত্যাগ করতে দিয়ে নিজের দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছেন। ভাষ্যকাররাও বলছেন, এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা ও কর্তৃত্বের হানি হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ভাবনা আমি সর্বক্ষণই ভাবছি, সুতরাং বিচিত্র নয় যে, এ প্রসঙ্গেও বাংলাদেশের কিছু দৃষ্টান্ত আমার মনে এসেছে। প্রথমটা হচ্ছে একজন বিচারপতিসংক্রান্ত। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার গাড়ি যেতে দেননি বলে একজন উদ্ধত বিচারপতি তাকে অপমান করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, ওই পুলিশকে তিনি চড় মেরেছিলেন। আমার জানামতে, এই বিচারপতি দীর্ঘকাল বিলাতে ছিলেন, এ দেশ থেকে তিনি ব্যারিস্টারি পাস করেছিলেন। কিন্তু স্পষ্টতই এ দেশ থেকে তিনি ভালো কিছু শিখে যাননি।
আমার দ্বিতীয় ভাবনাটা আরও ওপর সম্বন্ধে। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হুইপ, এমনকি আওয়ামী লীগের দুই কিংবা তিন নম্বর কাতারের নেতারাও তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের যে ভাষায় গালাগাল করেন তাতে সব ভব্য-সভ্য বাংলাদেশীর লজ্জায় মাথা হেঁট হবে। শুনেছি বাংলাদেশের উঠতি প্রজন্মের অবস্থাও তেমনি। তারা গুরু-লঘু বিবেচনা না করেই কথা বলে। ‘বাপে যারে ভরম (সম্ভ্রম) করে, পুতে তারে নরোম করে’—এই প্রাচীন বাংলা প্রবচনটা এখন প্রতিপদে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বাংলাদেশে।
এক প্রাজ্ঞ বন্ধু আমাকে বলছিলেন, ছেলেমেয়েরা এখন আর পড়াশোনা করতে চায় না। তারা বলে ঘুস দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, পাস করবে; ঘুস দিয়েই চাকরি পাবে, ঘুস খেয়ে আর দুর্নীতি করে বড়লোক হবে। দেশের অবস্থা, বিশেষ করে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের বিকৃত চিন্তাধারা কুষ্ঠরোগ কিংবা সিফিলিসের মতোই জাতীয় মানসকে কেমন ব্যাধিগ্রস্ত করে ফেলেছে—এই হচ্ছে তার একটা খণ্ডচিত্র।
হাতছাড়া সুবর্ণ সুযোগ
দুর্ভাগ্যবশত জাতির এই ঘনঘটাপূর্ণ অবস্থার অনেকখানি দায়িত্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর। তিনি আমাকে ছোটবেলায় শোনা এক কবির লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেন। এক কবি অন্য কবিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় বলেছিলেন, ‘বাপ গুণাগুণ, দিন গুণাগুণ, বরাত গুণে কবি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী নারী নন। এমনকি এ দেশের প্রথম এক মিলিয়ন বুদ্ধিমতী নারীর মধ্যেও তিনি একজন কিনা আমার সন্দেহ আছে। তার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা না হলে, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এবং পঁচাত্তরের সামরিক অভ্যুত্থানে বাবার মৃত্যু না হলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন বলে কি কেউ ভাবতে পারেন?
বুদ্ধিমতী হলে তিনি এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেন, সাধনা ও অধ্যবসায় দিয়ে নিজেকে নেতৃত্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতেন। হাসিনা সেটা করেননি, মারাত্মকভাবে সুযোগের অপব্যবহার করেছেন তিনি। যেসব ছেলেমেয়ে ঘুস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, পাস করতে এবং চাকরি পেয়ে দুর্নীতি করতে চায়, তাদের মতোই গায়ে ঘেন্নাধরানো গালাগাল করে এবং গুণ্ডাগার্দির জোরে তিনি এক নম্বর গদিটি দখল করে থাকতে চান।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দিল্লিতে র’য়ের হেফাজতে প্রায় ছয় বছরের অন্তরীণাবস্থা থেকে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ভারত জিয়াউর রহমানকে নতজানু এবং তাদের স্বার্থের অনুকূল বিবেচনা করেনি। স্পষ্টতই জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিষাক্ত মতবাদে তাঁর মানসিকতাকে বিষিয়ে দিয়ে তারা হাসিনাকে ফেরত পাঠিয়েছিল। দেশে এসেই যেভাবে তিনি জিয়াউর রহমানকে গালাগাল শুরু করেছিলেন, ৩১ বছর পরও সে ট্র্যাডিশন হাসিনা এখনও সমানেই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সামরিক স্বৈরশাসক লে. জে. এরশাদকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে হাসিনা স্বৈরতন্ত্রকে নয় বছর বহাল রেখেছিলেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর প্রথম মুক্ত সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। তার দু’দিন আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে টেলিভিশনে ৪৫ মিনিট ভাষণে হাসিনা আগাগোড়া খালেদা জিয়া ও তার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছিলেন। আওয়ামী লীগের বহু পুরনো সমর্থকও তখন ছি-ছি করেছিলেন। বিচিত্র নয় যে, সে নির্বাচনে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল।
কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগ নেত্রীর শিক্ষা হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে দেশের মানুষ বারবার তাকে সুযোগ দিয়েছে, তারা আশা করেছে বয়স ও অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপকৃত হবেন, মুখের ভাষা ও অন্তরের মলিনতাকে ঘষে-মেজে তিনি দেশের ও দশের সেবা করবেন। এবারেও গদি পেয়ে হাসিনা উদ্ধত মানসিকতার খপ্পরে পড়েছেন। চুরি ও দুর্নীতিকে তিনি বৈধতা দিয়েছেন। সে প্রসঙ্গে অজস্র আলোচনা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। বিগত পৌনে চার বছর সে কারণে ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
মহা গহ্বরে লম্ফন প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ক্ষমতার শেষ এক বছরের মাথায় এসে নিজেকে মহা সঙ্কটে ফেলেছেন। খালেদা জিয়া আর বিএনপি নেতাদের গালাগাল করে এখন আর তার খায়েশ মিটছে না। দেশে অন্য যাদের তিনি বেশি সম্মানিত দেখছেন, গালাগালের ব্যাটারি এখন তাদের বিরুদ্ধেও তাক করছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে, সারা বিশ্ব দারিদ্র বিমোচনের এ মডেলটি গ্রহণ করেছে। বহু রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রনায়ক ইউনূসের ব্যক্তিগত বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন। নোবেল পুরস্কার কমিটি তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে। এতসব ঈর্ষাকাতর হাসিনার সহ্য হয়নি। ইউনূসকে হতমান করা শয়নে-স্বপনে তার প্রতি মুহূর্তের ভাবনা। সে লক্ষ্যে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকটি ধ্বংস করার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ করে এনেছেন।
রফিকুল হক শুধু যে বাংলাদেশের একজন শীর্ষ আইনজীবী তা-ই নয়, ব্যক্তিত্ব এবং দেশপ্রেমের কারণে অত্যন্ত সম্মানিতও তিনি। হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু হাসিনা অবলীলায় তাঁকে অপমান করলেন, ‘কার খালু’ বলে বিদ্রূপ করলেন তাকে, তার হৃদয় একবারও প্রকম্পিত হলো না। এ বি এম মূসা দেশের সবচেয়ে প্রবীণ সাংবাদিকদের অন্যতম এবং বহুকাল আওয়ামী লীগের সদস্য এবং এ দলের সংসদ সদস্য ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের নিয়মিত সফরসঙ্গীদের একজন ছিলেন তিনি। হাসিনাপন্থী কলাম লেখক এবং টকশো বক্তা হিসেবেই তিনি খ্যাত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি তাকে নানাভাবে অপমান করেছেন, এমনকি চোরও বলেছেন তাকে।
হাসিনা আগের বারে এবং এবারে ক্ষমতায় এসে ব্যাংক লাইসেন্সের মতো টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্সও দিয়েছেন বেছে বেছে তার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের। বিদেশিদের কাছে হাসিনা সংবাদের অবাধ স্বাধীনতা দানের গৌরব দাবি করলেও বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকরা মহা ভীতি ও আতঙ্কে আছেন। নির্যাতন-নিপীড়নের যত উপায় সরকারের হাতে আছে, তার সবই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয় না।
টেলিভিশন টকশোর ওপর কড়াকড়ি আরও কঠোর। সরকারের ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া কোনো ব্যক্তিত্বকে টকশোতে আমন্ত্রণ করার ওপর গোপন নিষেধাজ্ঞা আছে। সাদা চোখে যতটুকু দেখা যায় আমন্ত্রিতরা অতি সাবধানে, ‘সেলফ-সেন্সরশিপে’ ভুগে এসব টকশোতে কথা বলেন। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী টকশোর বক্তাদের মধ্যরাতের সিঁদেল চোর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বিচিত্র নয় যে, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তার বেশকিছু সমালোচনা হয়েছে মিডিয়ায় এবং মনে রাখতে হবে, মিডিয়ার বিপুল গরিষ্ঠ অংশই আওয়ামী লীগের অনুগ্রহপুষ্ট ব্যক্তিদের মালিকানাধীন। সাধারণভাবেই মিডিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের সর্বশেষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাটি একেবারেই শিশুসুলভ এবং অত্যন্ত হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্বন্ধে সরকারি ব্রিফিংয়ের বেলাতেও এখন সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভি, সংবাদ সংস্থা বিএসএস এবং বেসরকারি সংবাদ সংস্থা ইউএনবি ছাড়া অন্য কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে সরকারি ব্রিফিং দেয়া হবে না।
সাংবাদিকরা এখন কী করবেন?
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এখানে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলা বোধ করি অপ্রাসঙ্গিক হবে না। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর কড়া সেন্সরশিপ চাপিয়ে দিয়েছিল। প্রথমত পঁচিশে মার্চের কালো রাতে বিদেশি সাংবাদিকদের আটকে রেখে পরদিন ভোরে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিদেশে সংবাদ পাঠানো এবং কোনো বিদেশি সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা, এমনকি বিবিসি শোনাও দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদও ১৯৮৮ সালে বিবিসির বিরুদ্ধে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। কিন্তু বিবিসি থেকে আমরা সংবাদ প্রচার বন্ধ করিনি। অন্যান্য সূত্রে খবর সংগ্রহ করে সেসব আমরা প্রচার করেছি। তবে সেসব খবরের আগে আমরা বলে দিতাম, সাধারণত বিভিন্ন সূত্রে আমরা খবরের সত্যতা যাচাই করি, কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে এ খবরটির সত্যতা কিংবা নিরপেক্ষতা যাচাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, আমরা সেজন্য দায়ী নই।
এ ঘোষণাটা পাকিস্তানিদের এবং এরশাদের কাল হয়েছিল। ইয়াহিয়া খানের সরকার ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বলতে গেলে বিবিসির মার্ক টালি ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ডেভিড বাকানকে পূর্ব পাকিস্তানে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। এরশাদের মন্ত্রীরা বহুবার আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, ওই ঘোষণাটুকু কি কোনো মতেই বাদ দিতে পারেন না? শেষে একজন মন্ত্রী তো বিরিয়ানি খাওয়ার নিমন্ত্রণ দিয়ে আমাকে বাংলাদেশে যেতে বলেন। অবশ্য আমি যাইনি, গিয়েছিলেন উইলিয়াম ক্রলি এবং সঙ্গে সঙ্গে এরশাদের নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এই টেকনিকটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
বাংলাদেশের পত্রিকা পাঠক এবং টেলিভিশন দর্শক সরকারের এই সেন্সরশিপে খুশিই হবেন। অবিরাম শেখ হাসিনার অমার্জিত কথাবার্তা আপাতত ছেলেমেয়েদের শুনতে হবে না — সেটা কি কম লাভের কথা? (লন্ডন, ২১.১০.১২)
serajurrahman34@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads