সৈয়দ আবদাল আহমদ
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মেরি শেলি ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। এর অন্তর্নিহিত প্রতীকী ব্যঞ্জনার কারণে উপন্যাসটি কালজয়ী সাহিত্যের মর্যাদা পায়। এই উপন্যাসের নায়ক ডা. ফ্রাংকেনস্টাইন ল্যাবরেটরিতে একটি মানুষ সৃষ্টি করতে গিয়ে সৃষ্টি করেন মানুষরূপী এক দানব, যে দানবের হাতে প্রথমে নিহত হয় স্রষ্টার সহযোগী। একে একে এই দানব ডা. ফ্রাংকেনস্টাইনের প্রিয়জনদের সবাইকে হত্যা করে। শেষে এই দানবকে হত্যা করতে গিয়ে ডা. ফ্রাংকেনস্টাইন নিজেই মারা যান। উপন্যাসের এক জায়গায় দুঃখ করে ডা. ফ্রাংকেনস্টাইন লেখেন, আমি ওকে সবকিছু দিয়েছি, শুধু দিতে পারিনি মানুষের বিবেক ও মেধা। এই উপন্যাস প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির হাতে স্রষ্টার পরাজয় ও ধ্বংসের এক উপাখ্যান।
বর্তমানে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এমন এক ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব আবির্ভূত হয়েছে, এর নাম ছাত্রলীগ। এই দানবকে রোখার যেন কেউ নেই। ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’র স্লোগান দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল যে ছাত্রলীগ, সেই ছাত্রলীগের হাতে এখন রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল, স্টেনগান, রামদা। ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’ উধাও করে দিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রহত্যার হোলি খেলছে। ছাত্রলীগ মানেই এখন খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, ধর্ষণ এবং আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্ম। শুধু প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেই নয়, নিজেরা-নিজেরা অর্থাত্ ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষও চলছে সব জায়গায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া এবং বন্দুকযুদ্ধ এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। ক্যাম্পাসে এই অস্ত্রবাজিতে কখন যে কার প্রাণ যায়, সেই দুশ্চিন্তায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অভিভাবককে। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই অস্ত্রের মহড়া দেয়। তারা পুলিশের সামনে অস্ত্রে গুলি ভরে, অস্ত্র তাক করে এবং গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের নীরব দর্শক হওয়া ছাড়া করার কিছুই থাকে না। কারণ অ্যাকশনে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে চাকরি হারাতে হতে পারে। আবার কোনো কোনো পুলিশ সদস্য অবশ্য অতি উত্সাহ দেখাতে গিয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহযোগী ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়। এর বিনিময়ে চাকরির ভালো পোস্টিং কিংবা পদোন্নতিও পাওয়া যায়।
গত মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের মিছিলে ফিল্মি কায়দায় ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা গুলিবর্ষণ করেছে। এতে শিবির সেক্রেটারিসহ অন্তত পাঁচ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের অবস্থা গুরুতর। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ।
পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাদের পিস্তল ও রিভলভার থেকে অর্ধশত গুলি ছুঁড়েছেন। পুলিশের সামনেই তারা অস্ত্রে গুলি ভরেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। কেন গ্রেফতার করা হয়নি—প্রশ্ন করলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অভিযান ও চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমার বিশ্বাস তারা আইনের আওতায় আসবে।’ অস্ত্রহাতে যারা সম্মুখভাগে ছিলেন, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারই নন, এর আগেও অসংখ্য সশস্ত্র সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। এমন কি নিজদলের কর্মী হত্যা থেকে শুরু করে ডাকাতি মামলা পর্যন্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের তিনজন চিহ্নিত পিস্তলধারী ক্যাডারের মধ্যে দু’জনই গত জুলাইয়ে সংঘটিত ছাত্রলীগের কর্মী হত্যাকাণ্ডের আসামি। এরা জামিনে থেকে মঙ্গলবার আবার পিস্তল চালিয়েছে। এখন আবার তাদেরই একজন বাদী হয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই যখন অবস্থা, তখন পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে আটক করেছে, যারা শিবিরের কর্মী।
শুধু এই মঙ্গলবারই নয়, শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই নয়, গত চার বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে এ ধরনের সংঘর্ষ। কখনও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে, কখনও হলের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে, আবার কখনও টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য কিংবা অন্য কোনো অপকর্ম নিয়ে সংঘটিত হয়েছে সশস্ত্র সংঘর্ষ। ক্যাম্পাসে এ সময় খৈ ফোটার মতো গুলিবিনিময় হয়, কিংবা রামদা নিয়ে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিনিময়ে প্রাণ যায় নিরীহ কোনো মেধাবী ছাত্রের। ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীদের রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ, নানা পরিচয়। আবার বড় বড় ছাতাও আছে তাদের। সেই ছাতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বড় কোনো নেতা, মন্ত্রী কিংবা এমপি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় ২৩ মেধাবী ছাত্র নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। এই মৃত্যু যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটেছে, তেমনি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। এ সময় ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষ সংগঠন কিংবা ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত চারশ’ বার। আমার দেশ রিপোর্টারদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব সংঘর্ষের কারণে ৭০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্ধারিত সময়ের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এ সময় মেধাবী ছাত্র আবু বকর নির্মম মৃত্যুর শিকার হন। ছাত্রদলের তত্কালীন নবনির্বাচিত সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালানো হয়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।
আওয়ামী লীগের শুধু বর্তমান আমলেই নয়, শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদেও (১৯৯৬-২০০১) ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল বেপরোয়া। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখনও পরিচালিত হয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী আর তাদের গডফাদারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা মোতাবেক। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ছাড়াও হলে ফাও খাওয়া, সিট দখল, হল দখল, ধর্ষণ, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে চলেছে বন্দুকযুদ্ধসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ওই সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সন্ত্রাসী ক্যাডার ধর্ষণের সেঞ্চুরি উত্সব পালন করে। এ ঘটনার পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বড় ধরনের সামাজিক সমস্যাও মোকাবিলা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। তার এ বক্তব্য তখনই সমালোচিত হয়েছিল। এ বক্তব্যে মানুষ বিস্মিত হয়নি, কারণ তিনি তাদের হয়ে সাফাই তো গাইবেনই। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে ছাত্রলীগ আরও দুর্ধর্ষ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। দেশজুড়ে তাদের অত্যাচারের নৃশংসতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন দিন নেই যে, দেশের কোথাও না কোথাও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়নি কেউ। এ নিয়ে লেখালেখি, বলাবলিও কম হয়নি। পরিস্থিতির চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আদুরে ধমক দিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের কাউন্সিলে আবার তাদের কোলে তুলে নেন। ফলে এ প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগের টিকিটিও আর কেউ ছুঁতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, কলেজ অধ্যক্ষ, পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারি প্রশাসন এখন ছাত্রলীগের সামনে নিরুপায়। দেশজুড়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস যে বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেন কারোর নেই।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস : কয়েকটি উদাহরণ
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি। তাদের তালিকা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ না করায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ২৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দেড়শ’র মতো পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সচল গাড়ি ভাঙচুর করেছে। হামলার শিকার হয়েছে চিকিত্সাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন দফতর। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের আগে ছাত্রলীগ ঢাকঢোল পিটিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা নেয়ার নামে চাঁদা তুলতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আবদুস সোবহান নিজে ৫শ’ টাকা চাঁদা দিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদা তোলা অভিযান উদ্বোধন করেন। এরপর চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আবদুল্লাহ আল হাসান (সোহেল রানা) খুন হন।
গত ২৭ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও রক্তপাত ঘটায় ছাত্রলীগ। উপাচার্যপন্থী ছাত্রলীগের গ্রুপটি লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে সংস্কৃতিকর্মী এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পিটিয়ে হত্যা করে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়েরকে। তেমনি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রতিপক্ষ ছাত্রদের পিটিয়ে হলের তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়, ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া ও বোমাবাজি চালায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে ছাত্রলীগ। ২ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তারা প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুরও করে। গত ৮ জুলাই সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ঢুকে বিক্ষোভ করে এবং এক পর্যায়ে হোস্টেলের পাঁচটি কক্ষের তিনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত ১১ মার্চ চাঁদাবাজির ঘটনায় পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ঘটে। ১৬ মার্চ রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ। এতে সংগঠনের কর্মী আবদুল আজিজ মারা যান। ১৩ মার্চ ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে পুরো নীলক্ষেত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এভাবে সরকারের প্রায় চার বছরে সারাদেশে ছাত্রলীগ এবং প্রতিপক্ষ সংগঠনের মধ্যে অন্তত চার শতাধিক ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের অধিকাংশই হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ দিতে হয়েছে ২৩ জনকে।
বড় আকারের সংঘর্ষ হয়েছে—এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রকৌশল, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল (বুয়েট), শেরে-ই-বাংলা কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজশাহী প্রকৌশল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, মেহেরপুর কলেজ, সিলেট এমএম কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক কলেজ, সিলেট মেডিকেল কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ ও সিলেট পলিটেকনিক কলেজ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৩ হত্যাকাণ্ড
বর্তমান সরকারের প্রায় চার বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই শিবিরকর্মী প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ এবং ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্র মাসুদ নিহত হন। এছাড়া ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন, ২০১০ সালের ২৮ মার্চ মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামানকে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সবচেয়ে বেশি ছাত্র নিহত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বর্তমান সরকারের মেয়াদে নিহত হয়েছেন ৩ ছাত্র। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের পৈশাচিকতায় নিহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন। ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ৮ জানুয়ারি নিহত হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশ, ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল নেতা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ নিহত হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাইসুল ইসলাম রাহিদ। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল আজিজ খান সজীব মারা যান।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্ললাদী ধমক আর শিক্ষামন্ত্রীর গুণ্ডা-বদমাশ
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। আর ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে এখন আছে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা। তবে গত চার বছর এবং আগের পুরো মেয়াদে ছাত্রলীগের কাছ থেকে শুধু সন্ত্রাসই উপহার পেয়েছে দেশ। সহিংসতার বাইরে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়িত। আওয়ামী মহল থেকেই ছাত্রলীগকে সামলানোর দাবি উঠেছে। ছাত্রলীগের চরম নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে বলেও জোর গলায়ই তারা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার তাদের ধমক দিয়েছিলেন। পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় পিস্তল ও রিভলবার উঁচিয়ে চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ছবি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওই নির্দেশের প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পুঁথির কথা আওড়েই তার দায়িত্ব শেষ করছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী থাকা অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে এত অস্থিরতা, এত সন্ত্রাস! অথচ শিক্ষামন্ত্রী নির্বিকার। ছাত্রলীগের এত দৌরাত্ম্য তিনি দেখেও দেখছেন না। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের হোস্টেলে আগুন দেয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবারের ঘটনার পর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িতদের ‘গুণ্ডা-বদমাশ’ বলে গালি দিয়েছেন, এতটুকুই। এত পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে কি তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল না?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
বর্তমানে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এমন এক ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব আবির্ভূত হয়েছে, এর নাম ছাত্রলীগ। এই দানবকে রোখার যেন কেউ নেই। ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’র স্লোগান দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল যে ছাত্রলীগ, সেই ছাত্রলীগের হাতে এখন রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল, স্টেনগান, রামদা। ‘শিক্ষা শান্তি প্রগতি’ উধাও করে দিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রহত্যার হোলি খেলছে। ছাত্রলীগ মানেই এখন খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, ধর্ষণ এবং আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্ম। শুধু প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেই নয়, নিজেরা-নিজেরা অর্থাত্ ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষও চলছে সব জায়গায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের অস্ত্রের মহড়া এবং বন্দুকযুদ্ধ এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। ক্যাম্পাসে এই অস্ত্রবাজিতে কখন যে কার প্রাণ যায়, সেই দুশ্চিন্তায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অভিভাবককে। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই অস্ত্রের মহড়া দেয়। তারা পুলিশের সামনে অস্ত্রে গুলি ভরে, অস্ত্র তাক করে এবং গুলি চালায়। এ সময় পুলিশের নীরব দর্শক হওয়া ছাড়া করার কিছুই থাকে না। কারণ অ্যাকশনে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে চাকরি হারাতে হতে পারে। আবার কোনো কোনো পুলিশ সদস্য অবশ্য অতি উত্সাহ দেখাতে গিয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহযোগী ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়। এর বিনিময়ে চাকরির ভালো পোস্টিং কিংবা পদোন্নতিও পাওয়া যায়।
গত মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের মিছিলে ফিল্মি কায়দায় ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা গুলিবর্ষণ করেছে। এতে শিবির সেক্রেটারিসহ অন্তত পাঁচ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের অবস্থা গুরুতর। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষ।
পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাদের পিস্তল ও রিভলভার থেকে অর্ধশত গুলি ছুঁড়েছেন। পুলিশের সামনেই তারা অস্ত্রে গুলি ভরেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। কেন গ্রেফতার করা হয়নি—প্রশ্ন করলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অভিযান ও চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমার বিশ্বাস তারা আইনের আওতায় আসবে।’ অস্ত্রহাতে যারা সম্মুখভাগে ছিলেন, তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারই নন, এর আগেও অসংখ্য সশস্ত্র সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। এমন কি নিজদলের কর্মী হত্যা থেকে শুরু করে ডাকাতি মামলা পর্যন্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের তিনজন চিহ্নিত পিস্তলধারী ক্যাডারের মধ্যে দু’জনই গত জুলাইয়ে সংঘটিত ছাত্রলীগের কর্মী হত্যাকাণ্ডের আসামি। এরা জামিনে থেকে মঙ্গলবার আবার পিস্তল চালিয়েছে। এখন আবার তাদেরই একজন বাদী হয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এই যখন অবস্থা, তখন পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে আটক করেছে, যারা শিবিরের কর্মী।
শুধু এই মঙ্গলবারই নয়, শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই নয়, গত চার বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে এ ধরনের সংঘর্ষ। কখনও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে, কখনও হলের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজির টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে, আবার কখনও টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য কিংবা অন্য কোনো অপকর্ম নিয়ে সংঘটিত হয়েছে সশস্ত্র সংঘর্ষ। ক্যাম্পাসে এ সময় খৈ ফোটার মতো গুলিবিনিময় হয়, কিংবা রামদা নিয়ে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিনিময়ে প্রাণ যায় নিরীহ কোনো মেধাবী ছাত্রের। ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীদের রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ, নানা পরিচয়। আবার বড় বড় ছাতাও আছে তাদের। সেই ছাতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বড় কোনো নেতা, মন্ত্রী কিংবা এমপি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলায় ২৩ মেধাবী ছাত্র নির্মম মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। এই মৃত্যু যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটেছে, তেমনি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। এ সময় ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষ সংগঠন কিংবা ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত চারশ’ বার। আমার দেশ রিপোর্টারদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব সংঘর্ষের কারণে ৭০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্ধারিত সময়ের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এ সময় মেধাবী ছাত্র আবু বকর নির্মম মৃত্যুর শিকার হন। ছাত্রদলের তত্কালীন নবনির্বাচিত সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালানো হয়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়।
আওয়ামী লীগের শুধু বর্তমান আমলেই নয়, শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদেও (১৯৯৬-২০০১) ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল বেপরোয়া। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখনও পরিচালিত হয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী আর তাদের গডফাদারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা মোতাবেক। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ছাড়াও হলে ফাও খাওয়া, সিট দখল, হল দখল, ধর্ষণ, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা নিয়ে চলেছে বন্দুকযুদ্ধসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ওই সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক সন্ত্রাসী ক্যাডার ধর্ষণের সেঞ্চুরি উত্সব পালন করে। এ ঘটনার পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা বড় ধরনের সামাজিক সমস্যাও মোকাবিলা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। তার এ বক্তব্য তখনই সমালোচিত হয়েছিল। এ বক্তব্যে মানুষ বিস্মিত হয়নি, কারণ তিনি তাদের হয়ে সাফাই তো গাইবেনই। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে ছাত্রলীগ আরও দুর্ধর্ষ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। দেশজুড়ে তাদের অত্যাচারের নৃশংসতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন দিন নেই যে, দেশের কোথাও না কোথাও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়নি কেউ। এ নিয়ে লেখালেখি, বলাবলিও কম হয়নি। পরিস্থিতির চাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার আদুরে ধমক দিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের কাউন্সিলে আবার তাদের কোলে তুলে নেন। ফলে এ প্রশ্রয়ে ছাত্রলীগের টিকিটিও আর কেউ ছুঁতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, কলেজ অধ্যক্ষ, পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারি প্রশাসন এখন ছাত্রলীগের সামনে নিরুপায়। দেশজুড়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস যে বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেন কারোর নেই।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস : কয়েকটি উদাহরণ
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি। তাদের তালিকা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ না করায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ২৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দেড়শ’র মতো পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সচল গাড়ি ভাঙচুর করেছে। হামলার শিকার হয়েছে চিকিত্সাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন দফতর। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন চরম আতঙ্কে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের আগে ছাত্রলীগ ঢাকঢোল পিটিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা নেয়ার নামে চাঁদা তুলতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আবদুস সোবহান নিজে ৫শ’ টাকা চাঁদা দিয়ে ছাত্রলীগের চাঁদা তোলা অভিযান উদ্বোধন করেন। এরপর চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আবদুল্লাহ আল হাসান (সোহেল রানা) খুন হন।
গত ২৭ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও রক্তপাত ঘটায় ছাত্রলীগ। উপাচার্যপন্থী ছাত্রলীগের গ্রুপটি লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে সংস্কৃতিকর্মী এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পিটিয়ে হত্যা করে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়েরকে। তেমনি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রতিপক্ষ ছাত্রদের পিটিয়ে হলের তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়, ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া ও বোমাবাজি চালায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে ছাত্রলীগ। ২ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তারা প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুরও করে। গত ৮ জুলাই সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ঢুকে বিক্ষোভ করে এবং এক পর্যায়ে হোস্টেলের পাঁচটি কক্ষের তিনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত ১১ মার্চ চাঁদাবাজির ঘটনায় পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ ঘটে। ১৬ মার্চ রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ। এতে সংগঠনের কর্মী আবদুল আজিজ মারা যান। ১৩ মার্চ ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে পুরো নীলক্ষেত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এভাবে সরকারের প্রায় চার বছরে সারাদেশে ছাত্রলীগ এবং প্রতিপক্ষ সংগঠনের মধ্যে অন্তত চার শতাধিক ছোট-বড় সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের অধিকাংশই হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ দিতে হয়েছে ২৩ জনকে।
বড় আকারের সংঘর্ষ হয়েছে—এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রকৌশল, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল (বুয়েট), শেরে-ই-বাংলা কৃষি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজশাহী প্রকৌশল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কলেজের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজ, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, খুলনা বিএল কলেজ, মেহেরপুর কলেজ, সিলেট এমএম কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল পলিটেকনিক কলেজ, সিলেট মেডিকেল কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ ও সিলেট পলিটেকনিক কলেজ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৩ হত্যাকাণ্ড
বর্তমান সরকারের প্রায় চার বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৩ মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ এবং ছাত্রলীগ-প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই শিবিরকর্মী প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ এবং ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্র মাসুদ নিহত হন। এছাড়া ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন, ২০১০ সালের ২৮ মার্চ মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামানকে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর সবচেয়ে বেশি ছাত্র নিহত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা এবং ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে বর্তমান সরকারের মেয়াদে নিহত হয়েছেন ৩ ছাত্র। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের পৈশাচিকতায় নিহত হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী (ছাত্রলীগের দাবি) ফারুক হোসেন। ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ৮ জানুয়ারি নিহত হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, ২০১০ সালের ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশ, ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রদল নেতা চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ নিহত হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাইসুল ইসলাম রাহিদ। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল আজিজ খান সজীব মারা যান।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্ললাদী ধমক আর শিক্ষামন্ত্রীর গুণ্ডা-বদমাশ
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। আর ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রে এখন আছে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথা। তবে গত চার বছর এবং আগের পুরো মেয়াদে ছাত্রলীগের কাছ থেকে শুধু সন্ত্রাসই উপহার পেয়েছে দেশ। সহিংসতার বাইরে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়িত। আওয়ামী মহল থেকেই ছাত্রলীগকে সামলানোর দাবি উঠেছে। ছাত্রলীগের চরম নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে বলেও জোর গলায়ই তারা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার তাদের ধমক দিয়েছিলেন। পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় পিস্তল ও রিভলবার উঁচিয়ে চিহ্নিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ছবি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ওই নির্দেশের প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পুঁথির কথা আওড়েই তার দায়িত্ব শেষ করছেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী থাকা অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে এত অস্থিরতা, এত সন্ত্রাস! অথচ শিক্ষামন্ত্রী নির্বিকার। ছাত্রলীগের এত দৌরাত্ম্য তিনি দেখেও দেখছেন না। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের হোস্টেলে আগুন দেয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবারের ঘটনার পর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িতদের ‘গুণ্ডা-বদমাশ’ বলে গালি দিয়েছেন, এতটুকুই। এত পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে কি তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল না?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন