মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১২

দেশে খুন-গুমের সংখ্যা বাড়ছে : নির্বিকার সরকার



শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নামে খুন-গুমের ঘটনা কমছে না। এক্ষেত্রে অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে চলতি বছরে। গতকালের আমার দেশসহ একাধিক পত্রিকা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এক কথায় তা উদ্বেগজনক। সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড ট্রেনিং প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে ৪২২টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন খুন হয়েছেন ১৪ জনেরও বেশি। মানবাধিকার সংস্থা ও পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত আট মাসে অপহরণ ও উধাও হওয়ার সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ ও ২৮। এর মধ্যে লাশ হয়ে ফিরেছেন ৪ জন। খবরে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন আইন রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে ২০১০ সালে ৪৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৯। অপর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রিপোর্টে দেখা যায় এ বছরের ৯ মাসে একইভাবে ২৪ জন গুম হয়েছেন। ৬০ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়েছে আর নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এছাড়া গণপিটুনিতে ৯৬ জন, রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩০ জন নিহত এবং ১২ হাজার ২০৬ জন আহত হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৪ সাংবাদিক নিহত ও ১৪১ জন আহত হয়েছেন। ৫১ জনকে হুমকি দেয়া হয়েছে এবং ৪৫ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। জননিরাপত্তা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির এমন অবনতি উদ্বেগজনকই বটে।
তবে এসব নিয়ে সরকার ও শাসক দলের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগের লেশমাত্র দেখা যায় না। সেখানে প্রতিনিয়ত সফলতার বুদ্বুদ ফুটতে থাকে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো নতুন মন্ত্রী অবশ্য এখনও নিজের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেননি। আগামী ১০ অক্টোবর সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি জানানোর ভেতর দিয়ে তিনি হয়তো একথা বলার সুযোগ পাবেন। তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া কঠিন। এর মধ্যেই দুর্নীতির পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বত্র যেভাবে আত্মীয়করণ, আঞ্চলিকীকরণ ও দলীয়করণ করা হয়েছে, তাতে স্বাভাবিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার আলামত ঢেকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রমাণ কুষ্টিয়ার ঘটনা। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খোকসা থানায় মা ও কলেজছাত্রী মেয়ে এবং আরেকজন কলেজছাত্রীকে আটক করে নির্যাতনের ঘটনা। পুলিশ কর্মকর্তারা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তিনজন নারীকে প্রথমে থানায় এবং পরে পুলিশ লাইনসের ডিবি কার্যালয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করার দুঃসাহস দেখাতে পারে ভাবলে চোখ উঠতে বাধ্য। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, পুলিশের এ অপকর্মের খবর আমার দেশসহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সুবিধা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠাতে হয়েছে। সেখান থেকে জামিন পাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত আদালত মামলা থেকে অব্যাহতিও দেয় তাদের। কিন্তু কথায় বলে বাঘের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া গেলেও পুলিশে ছাড়ে না। এ কথার সত্যতা প্রমাণ করে খোকসা থানা পুলিশ দুজনকে হত্যা মামলায় শ্যেন অ্যারেস্ট দেখালে আদালতের নির্দেশে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনা প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের পেছনে পুলিশ লেগেছে বলে তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানা গেছে। তবে মহিলা আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রিট করা হলে খোকসা থানার ওসিকে তলব করেছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে রুল জারি করে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতেও বলা হয়েছে। এর আগে র্যাবের গুলিতে পা হারানো রাজাপুরের কলেজছাত্র লিমনের দুর্ভোগ এখনও শেষ হয়নি। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করা হলেও সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। দেখা যাক এবারের ফল কী হয়।
সরকারের প্রশ্রয়ের ফলেই যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বেআইনি কাজ ও দুর্নীতি-বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ রকম ছড়িয়ে পড়েছে, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে যেভাবে এ সরকারের সময় কোনো খাতেই দুর্নীতি হয়নি বলে গর্ব করেছেন, তারপর আর কি-ই বা বলার থাকে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads