গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের ভোটারবিহীন উপনির্বাচনে শাসক আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দুই প্রার্থী এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনকে প্রহসন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, কারচুপি, জালভোট ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও স্থানীয়রা এ নির্বাচনে ২০ থেকে খুব বেশি হলে ৩০ ভাগ ভোট পড়েছে বললেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৪০ ভাগেরও বেশি ভোট পড়ার কথা জানিয়েছে। তবে ভোটার লাইনবিহীন ফাঁকা ভোট কেন্দ্রগুলো ইসির দাবিকেও ফাঁকা বলেই প্রমাণ করেছে।
কাপাসিয়ায় আসনটি নানা করণেই আলোচিত। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সেই ১৯৫৪ এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ ও ’৭৩ সালে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে এখানে তার স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দীনকে পরাজিত করেন বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ। ১৯৯৬ সালে আ’লীগ প্রার্থী হিসেবে তাজউদ্দীনের ছোট ভাই আফসার উদ্দীন জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। এবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলে তাকে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী বলে প্রচারণা চলে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখান থেকে জয়ী হন তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজ। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হলেও সবকিছু ত্যাগ করে আমেরিকা চলে যাওয়ায় এখন তার বোন রিমি হাল ধরলেন। অর্থাত্ এটি ছিল তাদের পারিবারিক আসন। তারপরও ভোটার উপস্থিতির নিম্নহার দেখিয়ে দেয় এ নির্বাচনে জনগণের উত্সাহ ও আগ্রহ কোনোটাই ছিল না। তোফায়েল আহমদের মতো নেতা সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেও জনগণের মুখ ফেরাতে পারেননি। অন্যদিকে বর্তমান ইসির অধীনে এটি প্রথম নির্বাচন। ইসির গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা প্রমাণেরও প্রথম সুযোগ ছিল এই নির্বাচন। কথায় তেমন প্রচেষ্টা দেখা গেলেও বাস্তবে তার প্রমাণ মেলেনি। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া এবং জাল ভোট, অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত দুই প্রার্থীই। তাদের একজনও ইসির ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়ায় তাদের অনুপস্থিতি সবার চোখে পড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির এজেন্ট অভিযোগ করে বলেছেন, দুর্গাপুরের চাপাত কেন্দ্রে দুপুর ২টার পর আওয়ামী লীগের লোকজন অবাধে জাল ভোট দিতে থাকলে প্রতিবাদ করায় তাকে কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তার পক্ষে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। আড়াল জিএল হাইস্কুল কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার এসে দেখেন তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। প্রধান দুই প্রার্থীর বাড়ির দরজায় অবস্থিত দরদরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৫২৭ আর দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানকার ৫ বুথে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫০টি। উত্তরখানের ঈদগা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যায় একজন ভোটারও লাইনে নেই। তখন পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ২১৩৬ ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৮০টি ভোট পড়েছে। সর্বত্র এমন অবস্থা আগে কোথাও দেখেননি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এছাড়াও ভোট গ্রহণের আগের রাতে বিভিন্ন গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের পোশাক পরা যুবকরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলে বিপদের হুমকি দিয়েছে বলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের সত্যতা পাওয়া যায় ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের অনুপস্থিতি থেকে। এটা সরকারের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এরপর প্রশাসন, পুলিশ ও ইসির দেয়া আশ্বাসের মূল্য কতটুকু সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাপাসিয়া উপনির্বাচন ইসির আসল চেহারাটাই একেবারে প্রকাশ করে দিয়েছে সবার কাছে। এ ঘটনার পর সরকারের আজ্ঞাবহ এই ইসির ওপর আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ রইল না। এতকিছুর পরও সরকারি মুখপত্রের সুরে সুর মিলিয়েছেন সিইসি। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বিশ্বাস করা লোকের সংখ্যা আরও কমে যাবে, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করলে যে জনগণ নির্বাচনকে গুরুত্ব দেবে না সেটাও এখন প্রমাণিত। এই বাস্তবতা দেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতা প্রকট করে তুলবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে তার পরিণতি কী হবে সেটা এখন আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের বিকল্প যে নেই সেটা কাপাসিয়ার উপনির্বাচন আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
কাপাসিয়ায় আসনটি নানা করণেই আলোচিত। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সেই ১৯৫৪ এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ ও ’৭৩ সালে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে এখানে তার স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দীনকে পরাজিত করেন বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ। ১৯৯৬ সালে আ’লীগ প্রার্থী হিসেবে তাজউদ্দীনের ছোট ভাই আফসার উদ্দীন জয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। এবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলে তাকে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী বলে প্রচারণা চলে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখান থেকে জয়ী হন তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজ। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হলেও সবকিছু ত্যাগ করে আমেরিকা চলে যাওয়ায় এখন তার বোন রিমি হাল ধরলেন। অর্থাত্ এটি ছিল তাদের পারিবারিক আসন। তারপরও ভোটার উপস্থিতির নিম্নহার দেখিয়ে দেয় এ নির্বাচনে জনগণের উত্সাহ ও আগ্রহ কোনোটাই ছিল না। তোফায়েল আহমদের মতো নেতা সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেও জনগণের মুখ ফেরাতে পারেননি। অন্যদিকে বর্তমান ইসির অধীনে এটি প্রথম নির্বাচন। ইসির গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা প্রমাণেরও প্রথম সুযোগ ছিল এই নির্বাচন। কথায় তেমন প্রচেষ্টা দেখা গেলেও বাস্তবে তার প্রমাণ মেলেনি। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া এবং জাল ভোট, অনিয়ম, কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত দুই প্রার্থীই। তাদের একজনও ইসির ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়ায় তাদের অনুপস্থিতি সবার চোখে পড়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির এজেন্ট অভিযোগ করে বলেছেন, দুর্গাপুরের চাপাত কেন্দ্রে দুপুর ২টার পর আওয়ামী লীগের লোকজন অবাধে জাল ভোট দিতে থাকলে প্রতিবাদ করায় তাকে কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি এমন ছিল যে, তার পক্ষে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। আড়াল জিএল হাইস্কুল কেন্দ্রে কয়েকজন ভোটার এসে দেখেন তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। প্রধান দুই প্রার্থীর বাড়ির দরজায় অবস্থিত দরদরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১৫২৭ আর দুপুর ২টা পর্যন্ত এখানকার ৫ বুথে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫০টি। উত্তরখানের ঈদগা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যায় একজন ভোটারও লাইনে নেই। তখন পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ২১৩৬ ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৮০টি ভোট পড়েছে। সর্বত্র এমন অবস্থা আগে কোথাও দেখেননি বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এছাড়াও ভোট গ্রহণের আগের রাতে বিভিন্ন গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের পোশাক পরা যুবকরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে গেলে বিপদের হুমকি দিয়েছে বলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের সত্যতা পাওয়া যায় ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের অনুপস্থিতি থেকে। এটা সরকারের ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে। এরপর প্রশাসন, পুলিশ ও ইসির দেয়া আশ্বাসের মূল্য কতটুকু সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
কাপাসিয়া উপনির্বাচন ইসির আসল চেহারাটাই একেবারে প্রকাশ করে দিয়েছে সবার কাছে। এ ঘটনার পর সরকারের আজ্ঞাবহ এই ইসির ওপর আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ রইল না। এতকিছুর পরও সরকারি মুখপত্রের সুরে সুর মিলিয়েছেন সিইসি। এ অবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বিশ্বাস করা লোকের সংখ্যা আরও কমে যাবে, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করলে যে জনগণ নির্বাচনকে গুরুত্ব দেবে না সেটাও এখন প্রমাণিত। এই বাস্তবতা দেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতা প্রকট করে তুলবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে তার পরিণতি কী হবে সেটা এখন আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের বিকল্প যে নেই সেটা কাপাসিয়ার উপনির্বাচন আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন