বৌদ্ধবসতিতে হামলার সরকারি তদন্ত
বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সব সময় প্রশ্ন উঠেছে। এর প্রধান কারণ সরকারি কমিটি তদন্তের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ইচ্ছা কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। রামুর বৌদ্ধবসতি ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনার তদন্তে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি এর বাইরে আসতে পারেনি।
এই তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলের দুই শতাধিক স্থানীয় নেতাকর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। এর সাথে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। বৌদ্ধবসতিতে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনার সাথে বিরোধী দল জড়িত বলে দাবি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী রামু সফরে গিয়ে একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তাদের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রামু সফরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পটিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসন সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। রামুর হামলার ঘটনার সাথে নাইক্ষ্যংছড়ির এক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় পরিকল্পনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ বৌদ্ধবসতিতে হামলার আগে রামুর চৌমুহনী মোড়ে যে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে তাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক একজন উপজেলা চেয়ারম্যানও তাতে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৌদ্ধবসতিতে যখন হামলা চালানো হয়, তখন পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলায় অংশ নেয়ার কারণে পুলিশ নীরব ছিল।
তদন্ত রিপোর্টে কুরআন অবমাননার ছবি প্রচারের জন্য যে যুবককে দায়ী করা হয়েছে, তাকে বিরোধী রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ সেই যুবকের মা এবং সহপাঠীরা বলছেন, সে কোনা রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। ছাত্রসংগঠনটির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, এই যুবকের সাথে ছাত্রসংগঠনটির কোনো সম্পর্ক নেই; বরং এই যুবকের মা ও পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। তার মা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী। অথচ তাকে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের সাথে জড়ানো হয়েছে। এসব তথ্য প্রমাণ করে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটিতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক আইনজীবীদের তদন্তের সাথেও এই রিপোর্টের কোনো সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ইতোমধ্যে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারি এই তদন্ত কমিটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের উদ্দেশ্য রয়েছে। রামুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা উচিত।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন