শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১২

টকশো বন্ধের ষড়যন্ত্র ?


?
 সরকার কি টিভি চ্যানেলে দর্শকনন্দিত টকশো বন্ধ করে দেয়ার কোন পরিকল্পনা এঁটেছে? ভিন্নমত ও সমালোচনার প্রতি চরম অসহিষ্ণুতা দেখানোর এক ঘটনা বর্তমানে এমন আশঙ্কারই জন্ম দিয়েছে। সুধী মহলের প্রশ্ন, কোন ভদ্রলোকের টকশোতে যাওয়া বন্ধ করতেই যেন চাইছে সরকার- যাতে গণতন্ত্রের প্রাণবন্ত এ রূপটির এমনিতেই মৃত্যু ঘটে যায়।
গত সোমবার রাতে আরটিভি আয়োজিত ‘ঈদ-পূজা ও নিরাপদে বাড়ি ফেরা’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান অপর আলোচক সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার দিকে ‘হারামজাদা তোর চোখ তুলে ফেলবো’ বলে তেড়ে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সরাসরি প্রচাররত টকশো’র সমপ্রচার ব্যাহত করতে বাধ্য হন। ১০ মিনিট বন্ধ থাকার পর অনুষ্ঠান আবার চালু করা হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। টকশোতে সমসাময়িক রাজনীতির চলমান ঘটনা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ কথা বলার উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। ঝগড়াঝাটি না করে বিপক্ষ মতের প্রতি শ্রদ্ধা সহিষ্ণুতা প্রদর্শন না করলে কোন আলাপ-আলোচনা সফল হতে পারে না।
সিনিয়র সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, সেদিনের ঘটনায় এটাই মনে হয়, রাজনীতিকরা কত নিচে নেমেছেন? বলাবলি হচ্ছে, সরকার টকশো বন্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সেদিন আরটিভি কর্তৃপক্ষ টকশো প্রচার বন্ধ করে দিলেন কেন? অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখানো উচিত ছিল। তাহলে মন্ত্রীর মুখোশ উন্মোচিত হতো।
সাবেক সচিব মো. আসাফউদ্দৌলা বলেন, বাকস্বাধীনতা হরণের উদ্দেশ্যে এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র- যেন টকশো বন্ধ হয়ে যায়। প্রকাশ্যে মন্ত্রীর এ ধরনের আচরণ কোটি কোটি দর্শকের সামনে ব্যক্তিগত অসভ্যতার বহিঃপ্রকাশ। আর না হলে এটা পরিকল্পিত নির্দেশনার বাস্তবায়ন- যেন কোন ভদ্রলোক আর টকশোতে অংশ না নেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কত যে নিচে নেমে গেছে, এটা তারই প্রমাণ। আমাদের রাজনীতিকরা পরমত সহিষ্ণুতার ন্যূনতম জায়গাটুকু রক্ষা করতে পারছেন না। মন্ত্রী যে ধরনের আচরণ করলেন তার পিছনে আছে ক্ষমতার অহংবোধ ও অন্যের মতের প্রতি সীমাহীন অশ্রদ্ধা। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে এটা চলতে পারে না।
সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, এটা অসভ্য মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। টকশো বন্ধের ষড়যন্ত্র। নৌপরিবহন মন্ত্রী হয়তো জর্ডানের টেলিভিশন টকশো দেখে উৎসাহিত হয়েছেন। জর্ডানে টকশোতে সরকারদলীয় মন্ত্রী পিস্তল বের করেছিলেন। আর নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বিপক্ষের বক্তাকে চোখ তুলে ফেলার কথা বলে তার অতীত রাজনীতির কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। কোন ভদ্রলোকের তার সঙ্গে টকশোতে অংশ নেয়া উচিত নয়। তবে রফিকুল ইসলাম মিয়া ও তার দলের অপর সংসদ সদস্যেরও টকশোতে ফিরে যাওয়া উচিত হয়নি। আরটিভি’র উচিত ছিল অনুষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ না করে পুরোটা প্রচার করা, যেন দেশের মানুষ বুঝতে পারে আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা কি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মন্ত্রী শাহজাহান খানের বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার প্রতিক্রিয়া জানানো বা রিঅ্যাক্ট করা কিছুটা বিরক্তিকর হলেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু শাহজাহান খানের মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রী এভাবে এবং যে ভাষায় কথা বলেছেন এটা রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য এবং অগ্রহণযোগ্য। কোন মন্ত্রী এভাবে রিঅ্যাক্ট করতে পারেন বাংলাদেশে এর আগে এমনটি কখনও ঘটেনি। সেদিনের ঘটনা দেখে মনে হয়, কারও যুক্তিগ্রাহ্যতা কমে গেলে সাধারণত মানুষ এভাবে রিঅ্যাক্ট করে। প্রশ্ন জাগে, তথ্য ও জ্ঞান দিয়ে ভিন্নমতের জবাব দেয়ার যোগ্যতা কি সরকারের শেষে হয়েছে? না হলে সরকারের মন্ত্রীকে এভাবে মারমুখো হতে হবে কেন?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads