হা সা ন আ হ মে দ চৌ ধু রী কি র ণ
ইদানীংকালে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে একটা কথা বারবার উচ্চকিত স্বরে উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো ‘দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না’। কথাটা শুনতে ভালো লাগলেও বর্তমানে দেশের যে সার্বিক পরিস্থিতি তাতে কথা ও কাজের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার যতটা রক্ষা করা হয়েছিল, আদালতের রায়ের ছুঁতো ধরে তাও আজ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রহিত করা হয়েছে। যদিও ব্যবস্থাটির অপপ্রয়োগের সূচনা হয়েছিল তত্কালীন বিএনপিসহ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। আর বর্তমানে মহাজোট সরকারের হাতে এর কবর রচিত হয়েছে। অথচ দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে অধিকাংশ মানুষ এই ব্যবস্থার পক্ষে। বস্তুত গণতন্ত্রকে সুরক্ষা ও জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই মূলত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন।
আমার মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে শুধু গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং বলা যায় এর প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। গণতন্ত্র ও সুশাসন যথাক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সর্বোপরি আইনের শাসন—এই পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমার মতে, আজ যথার্থভাবে এই পাঁচটি উপাদান বা নিয়ামকের ওপর আঘাত আনা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে। ফলে রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, শেয়ারবাজার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর বিনষ্টীকরণ, হত্যা-গুমসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং বিদ্যুত্সহ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের ওপর হামলা-মামলাসহ নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সরকার। সরকার ক্রমেই খেই হারিয়ে স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবলীগের লাগামহীন অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ দুর্বৃত্তায়নের এক মহা উত্সব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা রামদা, অস্ত্র দিয়ে পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষকে যেভাবে ঘায়েল করছে, তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। মামলা হয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মধ্যযুগীয় মানসিকতায় সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে নিজের সব অপকর্ম আড়াল করার জন্য, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য। এত সুন্দর এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে কী কায়দায় ও কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় অতি সুকৌশলে উখিয়া, টেকনাফ ও রামুতে নিরীহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ যতদূর জানা যায়, রামুতে রাত ৮টা থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দীর্ঘ সময় ধরে মিছিল-সমাবেশ হচ্ছিল। বর্তমানে পৃথিবীতে এক মিনিটের মধ্যে যে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়। সবার হাতে মোবাইল ফোন। যোগাযোগ কত সহজ। অথচ পুলিশ বা জেলা প্রশাসন নির্বিকার। কেউ নাকি ঘটনা বুঝতে ও জানতে পারেনি। সারারাত ধরে দেখে দেখে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হলো, তাণ্ডব চালানো হলো, অথচ কেউ জানল না বা বুঝল না। অদ্ভুত সব ব্যাপার দেখে বলতে ইচ্ছে হয়—‘রোম যখন পুড়ছিল নীরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।’ শুধু তাই নয়, নিজেদের অগাধ অপকীর্তি ও দুর্বলতাকে আড়াল করার জন্য বাংলাদেশের মতো একটা মডারেট ইসলামিক দেশকে সর্বত্র জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কী অপপ্রয়াসই না চলছে!
তার মধ্যে এই ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একেক সময় একেক কথা বলছেন। বলেছেন মৌলবাদীরা এটা ঘটিয়েছে, বিএনপির এক সংসদ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত। আবার বলছেন রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। আর এটার সূত্র ধরে দু’দিন পরই ২০০১ সালে সংঘটিত সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে তত্কালীন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে নতুন করে মামলা করা হবে বলে বীরদর্পে ঘোষণা দিয়েছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে রামুর ঘটনা যে রাজনৈতিক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়, সে কথা সহজেই অনুমেয়। বিনয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুধু এটুকু বলতে চাই, নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন। সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে শিখুন। সত্য চির জাগরুক। সত্য সব সময় স্বমহিমায় প্রকাশ হয়ে যায়। তদুপরি বর্তমান যুগে জনগণও অত বোকা নয়। তাই মিথ্যার বেসাতিতে পরিপূর্ণ আগুন নিয়ে খেলবেন না। বরং সেই আগুন বুমেরাং হয়ে নিজেদের দিকে ফিরে আসবে। একই কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যও প্রযোজ্য। জনগণকে কী কথা বলে আপনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। অথচ আজ কী করছেন! দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আপনার এত ভয় কেন? আপনি তো এই ব্যবস্থার বদৌলতে আজ ক্ষমতাসীন। নাকি আপনি যেটা বুঝবেন, বলবেন, চাইবেন সেটা যৌক্তিক। পক্ষান্তরে বিরোধী দল সেটা চাইলে, বললে তা হবে অযৌক্তিক। যৌক্তিক বিবেকি রাজনৈতিক দর্শন থেকে বিচ্যুত না হয়ে গণতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসুন। ক্ষমতার জোরে আপনার সরকারের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি গরিব অসহায় লিমন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সম্মানীয় ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস পর্যন্ত। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না একথা যেমন ঠিক, তেমনি সবার উচিত ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো। বস্তুত একথা অনস্বীকার্য যে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যে দলই হোক না কেন; তাদের কারও অধীনে এদেশে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। সে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এদেশে এখনও বিকশিত হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন এখন অনেক শক্তিশালী বলে যে কথার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে পরিপ্রেক্ষিতে দৃঢ়ভাবে বলা যায়, ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন কমিশনের মতো আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন মোটেই স্বাধীন ও শক্তিশালী নয়। এখানে নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থা সরকারের ইচ্ছা ও আজ্ঞা অনুযায়ী চলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাত্র ৩০৯টি পৌরসভার নির্বাচন একদিনে না করে অত্যন্ত সুকৌশলে বিভাগওয়ারী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে করতে গিয়ে প্রথম যখন রাজশাহী বিভাগ দিয়ে শুরু করা হলো এবং রাজশাহী বিভাগের নির্বাচনী ফলাফলের ৭০-৭৫ ভাগ যখন বিরোধী দল পেতে শুরু করল তখন বাকি বিভাগগুলোর নির্বাচনী ফলাফল যেভাবে জোর-জবরদস্তি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারি প্রার্থীর অনুকূলে নেয়ার অদম্য প্রতিযোগিতা শুরু হলো তা সে সময়কার পত্র-পত্রিকা খুললেই বোঝা যায়। বরিশাল বিভাগে তো তেমন একটা আসন বিরোধী দলকে দেয়া হলো না। তাছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েও নির্বাচন কমিশন তা পায়নি। একথা সত্যি যে, স্থানীয় নির্বাচন যতটা ফেয়ার ও নিরপেক্ষ হয়েছে, এটা নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্রেডিট নয়। ক্রেডিট ও ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকারী একমাত্র মিডিয়া তথা গণমাধ্যম। স্থানীয় নির্বাচন যতটুকু ফেয়ার হয়েছে তা শুধু গণমাধ্যমের ভয়ে হয়েছে।
তাই যতভাবে বলা হোক না কেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে সন্নিবেশিত থাকলে আগামীতে কোনো সরকারের পক্ষে যেমন স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হওয়া সম্ভব হবে না, তেমনি এই নির্বাচিত সরকারগুলো যথার্থভাবে জনকল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে বাধ্য হবে। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা জনগণের ভোটের ভয়ে প্রত্যেক সরকার তার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে উত্সাহী হবে। ফলে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। সংঘাত-সংঘর্ষের স্থলে রাজনীতিতে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের কৃষ্টি চালু হবে। এমনকি ভবিষ্যতে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন আদৌ অসম্ভব নয় বলেও অভিমত দেয়া যেতে পারে।
লেখক : চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি
আমার মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে শুধু গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং বলা যায় এর প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। গণতন্ত্র ও সুশাসন যথাক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও সর্বোপরি আইনের শাসন—এই পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমার মতে, আজ যথার্থভাবে এই পাঁচটি উপাদান বা নিয়ামকের ওপর আঘাত আনা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে। ফলে রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, শেয়ারবাজার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর বিনষ্টীকরণ, হত্যা-গুমসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং বিদ্যুত্সহ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের ওপর হামলা-মামলাসহ নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে সরকার। সরকার ক্রমেই খেই হারিয়ে স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-যুবলীগের লাগামহীন অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ দুর্বৃত্তায়নের এক মহা উত্সব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছেলেরা রামদা, অস্ত্র দিয়ে পুলিশের সামনে প্রতিপক্ষকে যেভাবে ঘায়েল করছে, তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। মামলা হয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মধ্যযুগীয় মানসিকতায় সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে নিজের সব অপকর্ম আড়াল করার জন্য, জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য। এত সুন্দর এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে কী কায়দায় ও কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় অতি সুকৌশলে উখিয়া, টেকনাফ ও রামুতে নিরীহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ যতদূর জানা যায়, রামুতে রাত ৮টা থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দীর্ঘ সময় ধরে মিছিল-সমাবেশ হচ্ছিল। বর্তমানে পৃথিবীতে এক মিনিটের মধ্যে যে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়। সবার হাতে মোবাইল ফোন। যোগাযোগ কত সহজ। অথচ পুলিশ বা জেলা প্রশাসন নির্বিকার। কেউ নাকি ঘটনা বুঝতে ও জানতে পারেনি। সারারাত ধরে দেখে দেখে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হলো, তাণ্ডব চালানো হলো, অথচ কেউ জানল না বা বুঝল না। অদ্ভুত সব ব্যাপার দেখে বলতে ইচ্ছে হয়—‘রোম যখন পুড়ছিল নীরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল।’ শুধু তাই নয়, নিজেদের অগাধ অপকীর্তি ও দুর্বলতাকে আড়াল করার জন্য বাংলাদেশের মতো একটা মডারেট ইসলামিক দেশকে সর্বত্র জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কী অপপ্রয়াসই না চলছে!
তার মধ্যে এই ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একেক সময় একেক কথা বলছেন। বলেছেন মৌলবাদীরা এটা ঘটিয়েছে, বিএনপির এক সংসদ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত। আবার বলছেন রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। আর এটার সূত্র ধরে দু’দিন পরই ২০০১ সালে সংঘটিত সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে তত্কালীন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে নতুন করে মামলা করা হবে বলে বীরদর্পে ঘোষণা দিয়েছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে রামুর ঘটনা যে রাজনৈতিক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়, সে কথা সহজেই অনুমেয়। বিনয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুধু এটুকু বলতে চাই, নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন। সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে শিখুন। সত্য চির জাগরুক। সত্য সব সময় স্বমহিমায় প্রকাশ হয়ে যায়। তদুপরি বর্তমান যুগে জনগণও অত বোকা নয়। তাই মিথ্যার বেসাতিতে পরিপূর্ণ আগুন নিয়ে খেলবেন না। বরং সেই আগুন বুমেরাং হয়ে নিজেদের দিকে ফিরে আসবে। একই কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্যও প্রযোজ্য। জনগণকে কী কথা বলে আপনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। অথচ আজ কী করছেন! দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আপনার এত ভয় কেন? আপনি তো এই ব্যবস্থার বদৌলতে আজ ক্ষমতাসীন। নাকি আপনি যেটা বুঝবেন, বলবেন, চাইবেন সেটা যৌক্তিক। পক্ষান্তরে বিরোধী দল সেটা চাইলে, বললে তা হবে অযৌক্তিক। যৌক্তিক বিবেকি রাজনৈতিক দর্শন থেকে বিচ্যুত না হয়ে গণতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসুন। ক্ষমতার জোরে আপনার সরকারের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি গরিব অসহায় লিমন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সম্মানীয় ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস পর্যন্ত। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না একথা যেমন ঠিক, তেমনি সবার উচিত ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো। বস্তুত একথা অনস্বীকার্য যে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যে দলই হোক না কেন; তাদের কারও অধীনে এদেশে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। সে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এদেশে এখনও বিকশিত হয়নি। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন এখন অনেক শক্তিশালী বলে যে কথার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে পরিপ্রেক্ষিতে দৃঢ়ভাবে বলা যায়, ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন কমিশনের মতো আমাদের দেশের নির্বাচন কমিশন মোটেই স্বাধীন ও শক্তিশালী নয়। এখানে নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থা সরকারের ইচ্ছা ও আজ্ঞা অনুযায়ী চলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাত্র ৩০৯টি পৌরসভার নির্বাচন একদিনে না করে অত্যন্ত সুকৌশলে বিভাগওয়ারী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে করতে গিয়ে প্রথম যখন রাজশাহী বিভাগ দিয়ে শুরু করা হলো এবং রাজশাহী বিভাগের নির্বাচনী ফলাফলের ৭০-৭৫ ভাগ যখন বিরোধী দল পেতে শুরু করল তখন বাকি বিভাগগুলোর নির্বাচনী ফলাফল যেভাবে জোর-জবরদস্তি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারি প্রার্থীর অনুকূলে নেয়ার অদম্য প্রতিযোগিতা শুরু হলো তা সে সময়কার পত্র-পত্রিকা খুললেই বোঝা যায়। বরিশাল বিভাগে তো তেমন একটা আসন বিরোধী দলকে দেয়া হলো না। তাছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েও নির্বাচন কমিশন তা পায়নি। একথা সত্যি যে, স্থানীয় নির্বাচন যতটা ফেয়ার ও নিরপেক্ষ হয়েছে, এটা নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্রেডিট নয়। ক্রেডিট ও ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকারী একমাত্র মিডিয়া তথা গণমাধ্যম। স্থানীয় নির্বাচন যতটুকু ফেয়ার হয়েছে তা শুধু গণমাধ্যমের ভয়ে হয়েছে।
তাই যতভাবে বলা হোক না কেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে সন্নিবেশিত থাকলে আগামীতে কোনো সরকারের পক্ষে যেমন স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হওয়া সম্ভব হবে না, তেমনি এই নির্বাচিত সরকারগুলো যথার্থভাবে জনকল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে বাধ্য হবে। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা জনগণের ভোটের ভয়ে প্রত্যেক সরকার তার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে উত্সাহী হবে। ফলে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। সংঘাত-সংঘর্ষের স্থলে রাজনীতিতে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের কৃষ্টি চালু হবে। এমনকি ভবিষ্যতে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন আদৌ অসম্ভব নয় বলেও অভিমত দেয়া যেতে পারে।
লেখক : চেয়ারম্যান, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন