কে অতিকথনপ্রিয় সেটা সবারই জানা। তবে ইদানীং কারো কারো বেফাঁস কথা বলার মাত্রা বেড়েছে, যা ভদ্রতা, শালীনতা, রুচি, কাণ্ডজ্ঞান এমনকি, পদ-পদবিরও মান রক্ষা করা দায় হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশকে যিনি আসমান উচ্চতার মর্যাদায় বিশ্ব দরবারে পরিচিতি দিয়েছেন, সেই ক্ষুদ্রঋণের জনক নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক ড. ইউনূসকে অজানা কারণে যখন-তখন কটাক্ষ করা হয়। এমনকি ড. ইউনূসকে বহুবার ‘সুদখোর’ বলে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এক দলীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশকে ঋণ না দেয়ার জন্য তিনি বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছেন। আমি ওই ব্যক্তির নাম বলব না। কারণ সবাই তার নাম জানেন।’ নবম সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনকে প্রধানমন্ত্রী ‘বসন্তের কোকিল’ বলে তামাশা করেছেন। দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় বর্ষীয়ান আইনজ্ঞ (ওয়ান-ইলেভেনে দুই নেত্রীর সাহসী আইনজীবী), সৎ-সজ্জন-দেশপ্রেমিক ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে নিউ ইয়র্কে বসে ব্যঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘মুই (আমি) কার খালুরে।’ গুণী ও সজ্জন ব্যক্তি সর্বজনশ্রদ্ধেয় বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবিএম মূসা টিভি টকশোর এক অনুষ্ঠানে সরকারের সীমাহীন দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রয়াত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার ড. হুমায়ূন আহমদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এই সরকারের যাকে যেখানে দেখবেন, তাকেই বলতে হবে তুই চোর, তুই ব্যাটা চোর।’ পরদিন প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে জনাব মূসা বিবৃতি দিয়ে তার টকশোর বক্তব্য থেকে অনেকটা সরে এসে বলেছিলেন, ‘এই সরকারের সবাই চোর না। যারা চুরির সাথে জড়িত, তারাই কেবল চোর। আমার বক্তব্যে কেউ যদি ব্যথা পেয়ে থাকেন, সে জন্য আমি দুঃখিত।’ তারপর বলা হলো তিনি চ্যানেল খোলার লাইসেন্সের জন্য এসেছিলেন। তিনি লাইসেন্স পাননি আর সে কারণে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন সরকারের সবাই চোর। তাকে যদি লাইসেন্স দিতাম, তিনি টাকাটা কোথায় পেতেন? চুরি করতেন?! সম্প্রতি বলা হলো ‘আগে মধ্য রাতে যারা জাগত, তারা সিঁদ কাটার জন্য জাগত। এখন যারা মধ্য রাতে জাগেন তারা আমাদের গলা কাটতে চান।’ দেশের সুনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ সাবেক সচিব ও উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানকে ইঙ্গিত করে বলা হলো, ‘কেউ কেউ এমনও আছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। তারাই আজ সরকারের সমালোচনা করেন…।’ রামুর ঘৃণিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ১২ অক্টোবর বলা হলো, ‘এই নেতার ২০টি নামে ২০টি অ্যাকাউন্ট। ২০টি স্বাক্ষর তারই। এত বড় ফ্রড! অন্যের বাড়ি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দিলো, আর আইনজীবী হিসেবে মরা মহিলাকে জীবিত করে ভাইয়ের নামে বাড়ি লিখিয়ে নিলো। যে লোক দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রাপ্ত তার রিপোর্ট বাংলাদেশের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যÑ এটাই বড় প্রশ্ন।’ আরো বলা হলো ‘রামুর ঘটনা বিএনপির কাজ। রামুতে বিএনপির এমপি লুৎফর রহমান কাজলের উসকানিমূলক বক্তৃতা করার কারণেই এ ঘটনা ঘটে। আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই বিএনপি এ ঘটনা ঘটায়।’
মূলত ইনিয়ে-বিনিয়ে মিথ্যাচার করা, অতিকথন ও অশালীন ভাষা প্রয়োগ, আত্ম-অহমিকা, পরশ্রীকাতরতা, একগুঁয়েমি, অসহিষ্ণুতা, অকৃতজ্ঞতা, মানী লোকের মান হরণ, যেনতেনভাবে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ীকরণের চেষ্টাই দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
এখন প্রশ্ন ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন? তাকে কি বিশ্বদরবারে খাটো করা সম্ভব হয়েছে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিজ হাতে ড. ইউনূসের গলায় সে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পরিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আপনার মতো বিশ্বের অসহায় গরিব মহিলাদের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ একজন মহান ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ ক্ষুদ্রঋণের সফলতার জন্য নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি দেশ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। ব্রিটেনসহ চারটি দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে চ্যান্সেলর মনোনীত করে সম্মানের আসনে বসিয়েছে। আমেরিকা, আফ্রিকা, রাশিয়া, ভারতসহ মধ্য ইউরোপের বেশ ক’টি দেশ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ৯৫ লাখ গরিব নারী সদস্যের ৯৭ শতাংশ মালিকানার এ গ্রামীণ ব্যাংক আজ গোটা বিশ্বের দারিদ্র্যবিমোচনের আদর্শ মডেল। আর ‘পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলে ইউনূসের হাত রয়েছে’Ñ এমন বক্তব্যও কাণ্ডজ্ঞানহীন। পানি ঘোলা করে বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মেনে নেয়ার পর বিশ্বব্যাংক ফিরতে শুরু করেছে। তাদের তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত প্যানেল বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করে গত ১৪ অক্টোবর থেকে দুদকের তদন্ত রিপোর্ট প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ড. ইউনূস বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করলে কস্মিনকালেও তারা ফিরে আসত না। আসলে ড. ইউনূস কেন শান্তিতে নোবেল জয় করলেনÑ এটাই তার পাপ!
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব পাকিস্তানের জেলে বন্দী ছিলেন। সেই সময় ড. কামাল হোসেনও পাকিস্তানে ছিলেন। (কেউ বলেন, ড. কামাল পাকিস্তানে শ্বশুরালয়ে ছিলেন, কেউ বলেন, তিনিও সেখানে আটক অবস্থায় ছিলেন) বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মি. বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, আপনাকে আর কিভাবে খুশি করতে পারি?’ জবাবে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আমার সাথে ড. কামালকে বাংলাদেশে যেতে দিতে হবে।’ তার পর দু’জন একসাথে প্রথমে লন্ডন, সেখান থেকে ভারত এবং ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে সকাল ১০টায় ঢাকায় বিমান থেকে নেমে সরাসরি অপেক্ষমাণ বিশাল জনতার মধ্যে ফিরে এসে বিজয়মালা গলায় পরেন। সরকার গঠন করার পর তিনি ড. কামাল হোসেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। এমনকি ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার পুরোধা ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি কিনা ‘বসন্তের কোকিল’Ñ দেশের প্রবীণ আইনজীবী, সদালাপী সজ্জন ব্যক্তি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘দেশের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত। দায়িত্ব পেলে অবশ্যই নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করব।’ আর যায় কোথায়? ‘মুই কার খালুরে! তিনি কখনোই নিরপেক্ষ না। খালেদা জিয়াকে বহু অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমাদের নেত্রী, আমার নেত্রী।’ অথচ তিনি চেয়েছিলেন সঙ্ঘাতময় রাজনীতিকে সমঝোতায় এনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সুষ্ঠু সমাধান। বিএনপি তাকে স্বাগত জানালেও প্রধানমন্ত্রী করেছেন তির্যক মন্তব্যে কুঠারাঘাত। ফলে তাকে আগে প্রতিদিন কোনো না কোনো চ্যানেলে দেশ, জাতি, রাজনীতি, আইনের শাসন, সঙ্কট সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে দেখা গেলেও ইদানীং তিনি লজ্জায়, ঘৃণায়, অপমানে একদম নীরব হয়ে গেছেন।
বরেণ্য বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবিএম মূসা ৬০ বছর ধরে সাংবাদিকতায় আছেন। পেশাগত দক্ষতা ছাড়াও রাজনীতির বাঁকে বাঁকে তার বিচরণ কয়েক দশকের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭০-এর নির্বাচনে মূসাকে ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানিয়েছিলেন। আবার স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘মূসা, আমাকে সাহায্য করো। তোমার টেলিভিশনের দায়িত্ব নিতে হবে।’ মূসা বললেন, ‘আমি তো প্রিন্ট মিডিয়ার লোক। টেলিভিশন বুঝি না।’ শেখ মুজিব বললেন, ‘আমাকে বুঝলেই চলবে।’ অথচ সেই মূসাই মুজিবকন্যার কাছে দেখা করে বারবার অনুরোধ জানানোর পরও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পাননি। ‘লাইসেন্স দিলে তিনি এত টাকা কোথায় পেতেন? চুরি করতেন’Ñ সাংবাদিক মূসাকে ইঙ্গিত করে এমন নিষ্ঠুর মন্তব্য মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পেলে তার পরদিন মূসা সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে জানালেন, ‘আমি কোথায় টাকা পাবো, তা প্রধানমন্ত্রী জানতেন। কেননা, আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বলেছিলাম, ল্যাব এইড গ্রুপ একটি টিভি চ্যানেল চালাতে আগ্রহী। যদি ’৭১-টিভি’ নাম এর লাইসেন্স পাই তবে ল্যাবএইড গ্রুপ আমাকে ১০ শতাংশ শেয়ার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আমার সাথে একটি চুক্তিও হয়েছে তাদের। লাইসেন্স পাওয়ার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ শুরু হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী তার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদকে বললেন, ‘উনার মাথা গরম হয়ে গেছে। আমাদের সাথে বিদেশে নিয়ে চলো। সমুদ্রের আবহাওয়ায় মনটা ভালো হবে।’ আমার দিকে চেয়ে বললেন, ‘চলেন আমার সফরসঙ্গী হিসেবে। ফিরে এসে আপনার ব্যাপারটা দেখব।’ বিমানে প্রধানমন্ত্রীর পাশের চেয়ারে বসে অনেক গল্প করলেও আমি তাকে এ ব্যাপারে আর কিছু বলিনি। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর অনেক চেষ্টা করলেও ’৭১ টেলিভিশন’ নামে চ্যানেলটির লাইসেন্স আমাকে দেয়া হয়নি। আমার দেয়ার নামের এই চ্যানেলটি কিছু দিন পর অন্য একজনকে দেয়া হয়…।’
সংবাদপত্রে এবিএম মূসার লেখা প্রকাশ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বা তার পক্ষে অন্য কেউ এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। তাহলে? প্রধানমন্ত্রী মূসাকে কেন বললেন, ‘এত টাকা তিনি কোথায় পেতেন? চুরি করতেন?’
মধ্য রাতের টকশোতে যাওয়ার জন্য গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটির লোকজন যেমন জেগে থাকেন তেমনি থাকেন সরকারের মন্ত্রী এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সেই সাথে জাগেন অন্য দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। কারণ ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া টকশোগুলো প্রতিটি চ্যানেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এসব টকশোতে সাধারণ মানুষের মনের কথাই উঠে আসে। রাজনীতির গতিপ্রকৃতি, সরকারের ভুলত্রুটি ও বিরোধী দলের করণীয় কর্তব্য, ব্যর্থতা ও সমাজ সংস্কারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। তা ছাড়া মধ্য রাতের টকশোতে যারা আসেন, তারা বিভিন্ন পেশার স্বনামখ্যাত মানুষ। তাদের সিঁদ কাটা চোরের সাথে তুলনা করা কোনোভাবেই মানায় না। দেশের মানুষের মানসম্মান তথা গুণী লোকের হেফাজত করা সরকার ও রাষ্ট্রের নৈতিক কর্তব্য। আর সেখানে যদি গুণী ও সম্মানী লোকদের নিষ্ঠুর ও নির্যাতনমূলক ভাষায় আক্রমণ করা হয়, তাহলে নীতি-নৈতিকতায় ধস নামবে, এ কথা সহজেই অনুমেয়। তখন সরকার আর জনগণের সরকার থাকে না, সরকার হয় স্বৈরাচার। ভাববার বিষয়, আমরা তবে আছি কোথায়?
সাবেক জাঁদরেল কেবিনেট সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খানকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও সঠিক নয়। তখন ড. আকবর আলি খান একা পদত্যাগ করেননি। একসাথে তারা চারজন পদত্যাগ করেছিলেন। পদত্যাগের আগে উপদেষ্টা সি এম শফি সামি ও সুলতানা কামাল আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে পরামর্শ নিয়েছিলেন। আলোচ্য তিনজন ছাড়াও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. হাসান মশহুদ চৌধুরীও একই সাথে পদত্যাগ করেন। কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পদত্যাগ করেননি আরেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলম। ড. আকবর আলিসহ যারাই টকশোতে যান তারা তো কেবল দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশন সংবাদের বিশ্লেষণ করেন। নিজে থেকে গল্প বানিয়ে তো তারা কিছু বলেন না। তাহলে এতটা টচলেন কেন? গণতন্ত্র বিকাশে পরমতসহিষ্ণুতা ও গঠনমূলক সমালোচনা যে কত জরুরি তা কি কারো অজানা?
শতাব্দীর ভয়াবহতম ন্যক্কারজনক রামুর ঘটনায় বিএনপি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে প্রধান করে যে তদন্ত মিশন রামুতে পাঠায়, তার রিপোর্ট দলীয় প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করার পর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু না বলে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয় ব্যারিস্টার মওদুদকে। এমতাবস্থায় ব্যারিস্টার মওদুদ গত ১৬ অক্টোবর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আমি কার কাছে ক্ষমা চেয়েছি, কার বাড়ি দখল করেছি, কোন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়েছি তা স্পষ্ট করে বলতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার নামেও ১৪টি দুর্নীতির মামলা হয়েছিলা; যা ক্ষমতায় এসে কারা তুলে নিয়েছেন… কেন এ অনাকাক্সিক্ষত কুৎসিত বিতর্ক?
প্রধানমন্ত্রী তো বটেই; একজন মন্ত্রী এমপি ও রাজনৈতিক নেতানেত্রীকে অবশ্যই সততা, নীতি আদর্শ, শালীনতাবোধ, পরমতসহিষ্ণুতা সর্বোপরি কথা বলা ও চলাফেরায় নিজ পদবির ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি জন-আকাক্সক্ষার দিকটিও মাথায় রাখতে হয় প্রতি মুহূর্ত। আক্রান্ত মানসিকতা, অতিকথন, মিথ্যে অহমিকা, পরনিন্দা, পরচর্চা, অপ্রাসঙ্গিক বেশি কথা বলে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া, নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর প্রবণতা, সর্বোপরি রাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে দেশের বরেণ্য গুণী লোকদের কটাক্ষ করার যে নৈতিক স্খলনজনিত গ্লানি, তা কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
delwaribneyounus@gmail.com
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন