বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১২

জিয়াউর রহমানঃ সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি



বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের জেড ফোর্সের অধিনায়ক, বিশিষ্ট সমরবিদ, সার্ক গঠনের উদ্যোক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, দেশপ্রেমিক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় কতিপয় রাষ্ট্রদ্রোহী বিপথগামী সৈনিকের গুলিতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। ৭২-৭৫ পর্যন্ত সময়ের দুঃশাসনে পিষ্ট দেশের জনগণ তাঁর শাসনকালে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মারি ও মড়ক এবং দুর্ভিক্ষ কবলিত বাংলাদেশ আবার ধনে-ধান্যে মুখরিত হয়ে ওঠে। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়িতে এক উচ্চশিক্ষিত সংস্কৃতিবান পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা মনসুর রহমান ছিলেন একজন কেমিষ্ট এবং মা জাহানারা খাতুন ছিলেন করাচী রেডিওর একজন নিয়মিত নজরুল সংগীত শিল্পী। নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর ১৯৫২ সালে করাচী একাডেমী স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর করাচী জিডি কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করেন। পাঞ্জাব রেজিমেন্টে ২ বছর কাটানোর পর ১৯৫৭-তে তিনি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হন। ১৯৫৯-৬৪ পর্যন্ত তিনি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-হিন্দুস্থান যুদ্ধের সময় তিনি খেমকারান সেক্টরে সাহসিকতার সাথে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানীর নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৬-তে তিনি কাকুলস্থ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীর প্রশিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৯-তে জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন। ১৯৭০-এ চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হন। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামস্থ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তিন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত হন। তিনি সেনা সদস্যদের সংগঠিত করে পরবর্তীতে তিনটি সেক্টরের সমন্বয়ে জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধপরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর প্রথমে তিনি কুমিল্লা ব্রিগেড কমান্ডার এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ-অফ-স্টাফ নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে কর্নেল, ১৯৭৩-এর মাঝামাঝি ব্রিগেডিয়ার এবং শেষ দিকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক বিদ্রোহে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। ২৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাক সরকার তাঁকে সেনাবাহিনীর চীফ অফ স্টাফ নিয়োগ করেন। নভেম্বরে পুনরায় সেনা বিদ্রোহ, খন্দকার মোশতাক ক্ষমতাচ্যুত, আবূ সাদাত মোহাম্মদ সায়েম প্রেসিডেন্ট হন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবে জিয়াউর রহমানকে পুনরায় সেনাবাহিনীর চীফ-অফ-স্টাফ পদের দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ৮ মার্চ মহিলা পুলিশ গঠন, ১৯৭৬-এ কলম্বোতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ৭ জাতি গ্রুপের চেয়াম্যান পদ লাভ করে। ১৯৭৬ সালেই তিনি উলশি যদুনাথপুর থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন উদ্বোধন করেন। ১৯৭৬-এর ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৬-এ গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন, ১৯৭৭-এর ২০ ফেব্রুয়ারি একুশের পদক প্রবর্তন, এপ্রিলের ২১ তারিখ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহণ। মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০ মে গণভোট অনুষ্ঠান ও হঁ্যা-সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন।
১৯৭৭-এর ৮ জুন লন্ডনে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদান করেন। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাতিল করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংবিধানে সংযোজন করেন। সমাজতন্ত্রের বদলে বসান সামাজিক ন্যায়বিচার। ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে দেশভিত্তিক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সংযোজন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদান করেন। ‘জাগদল’ নামে একটি দল গঠনের ক্রমপর্যায়ে একটি ফ্রন্ট গঠন করে ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে ১৯৭৮-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ (বিএনপি) গঠন করে এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হন। তাঁর সময়ে দেশে ক্রমান্বয়ে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য (১৯৭৮-৮০) লাভ করে। তিনি যুবকমপ্লেক্স গঠন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিরক্ষাবাহীনীর সর্বাধিনায়কের পদে অধিষ্ঠিত হন। সংসদে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী পাস হলে তিনি ৭ এপ্রিল, ১৯৭৯ সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন। ১৯৮০ সালে মক্কার তায়েফে ইসলামী শীর্ষসম্মেলনে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ভাষণদান করেন। ১৯৮০ সালে যৌতুকবিরোধী আইন, স্বনির্ভর গ্রাম সরকার চালু করেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধ ব েমধ্যস্থতা করেন। ১৯৮০ সালের ২১ এপ্রিল দক্ষিণ এশীয় ফোরাম (ঝধধৎপ) গঠনের প্রস্তাব ও পরিকল্পনা উত্থাপন। ১৯৮১-এর ২২ এপ্রিল মরক্কোয় জেরুজালেম সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলন, যুদ্ধ-ব মিশনে ১২ মে বাগদাদ ও তেহরান গমন করে যুদ্ধ বরে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালান।
একজন পরিশ্রমী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবসময় জনগণের কল্যাণ চিন্তা, জাতিকে সাহস, উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে নেয়া, ফসলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃংখলার অভূতপূর্ব উন্নতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে এক গৌরবজনক অধ্যায় রচনা করেন। তাঁর আমলেই দেশ বাকশালী একনায়কতন্ত্রের নিগড় থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার সূত্রপাত করে। জাতীয় গণ্ডি উৎরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তিনি ইতোমধ্যেই সফল নেতৃত্বের পরিচয় দেন। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী জানাযায় যে বিপুলসংখ্যক লোক অংশ নেয় তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। জাতি তাঁর জনপ্রিয় কর্মপন্থা এবং নৈতিক গুণাবলীকে যুগ যুগ ধরে কিংবদন্তীর আকারে লালন করবে।

1 টি মন্তব্য:

  1. প্রিয় কবি, লেখক, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, কলামিষ্ট, সাংবাদিক, সফল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, খতিব, সফল উদ্যোগতা, কম্পিউটার, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক লেখক,
    আপনাদের সদয় অবগতির জন্য আহ্বান করা হচ্ছে যে “দৈনিক নিউজ সমাহার” পত্রিকায় লেখা পাঠানোর জন্য। ই-মেইল : newssamahar@gmail.com . প্রয়োজনে কল করতে পারেন : 01910112983 ( মামুনূর রশিদ, অফিস স্টাফ )

    উত্তরমুছুন

Ads