এক-এগারো ও আওয়ামী লীগের বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদে টিভি টকশোতে মাঝে মধ্যেই অংশ নেন মোজাম্মেল হক বাবু। তিনি একজন সাংবাদিক। নতুন টেলিভিশন স্টেশন একাত্তর-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। টকশোতে তিনি একজন হার্ডলাইনার। ‘নির্ভীক’। তথ্য-যুক্তিতে না হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষাবলম্বনের ক্ষেত্রে তিনি যে কাউকে কটাক্ষ করতে পারেন। এ মেয়াদের ক্ষমতার শুরুর দিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বিষোদ্গারের আওয়াজ তুলেছিলেন, সেই সময়ে মোজাম্মেল বাবু আরটিভির একটি টকশোতে বলেছিলেন, ‘আমি বললাম, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দালাল ছিলেন। পারলে প্রমাণ করুন তিনি তা ছিলেন না।’ সেইদিন থেকে তার সাংবাদিকতার দৌড়, যুক্তিবোধ ও নির্ভীকতা সম্পর্কে আমার প্রশ্ন জাগে। এমন একজন সাহসী? সাংবাদিককে জানতে বেশ খোঁজখবর নিয়েছি। পরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন তিনি ‘একাত্তর’ নামে বেসরকারি টেলিভিশনের লাইসেন্স পেলেন, তখন নিশ্চিত হলাম তাঁর খুঁটির জোর। টকশোতে আবেগের জোরালো ব্যবহারের কারণ খুঁজে পেলাম। সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে একটি টকশোতে মোজাম্মেল বাবুর একটি খেতাব প্রাপ্তি ও আত্মহত্যার বাজি ধরার ঘটনা দেখে দু’কলম লিখতে মন চাইল। ‘আজকের বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রচারিত ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ওই টকশোধর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ছিলেন খালেদ মহিউদ্দিন। অতিথি ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিতর্কের একপর্যায়ে মোজাম্মেল বাবুকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার বললেন, ‘যুক্তিবোধ নিয়ে কথা বলুন। আপনি যেটা করছেন, সেটা একটি দলের পক্ষে দালালি।’ এ বিষয়ে কোনো জবাব না দিয়ে মোজাম্মেল বাবু পাল্টা বললেন, ‘ফরহাদ ভাই, আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। নইলে অনির্বাচিত সরকারকে বাংলার জনগণ স্বাগত জানাবে, এমনটা আপনি বলতে পারেন না।’ আমি চ্যালেঞ্জ করছি, অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক কোনো সরকারকে বাংলাদেশের জনগণ প্রতিরোধ করবে, কোনোভাবেই স্বাগত জানাবে না। যদি স্বাগত জানায় তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।’
একজন ‘নির্ভীক’ সাংবাদিককে যাতে ‘আত্মহত্যা’ করতে না হয়, সেজন্যই আমি প্রধানমন্ত্রী সমীপে আবেদন জানাচ্ছি। কেননা মোজাম্মেল বাবুর দেয়া শর্ত অনুযায়ী তাঁর বেঁচে থাকা এখন নির্ভর করছে পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। আল্লাহ তাকে (মোজাম্মেল বাবু) রক্ষা করুক, এ প্রার্থনা করছি। এজন্য অসাংবিধানিক বা অনির্বাচিত কোনো সরকার ক্ষমতায় আসার পথ যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে সচেতন পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি। বিরোধী দলকে ডেকে আলোচনায় বসে সমঝোতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে মোজাম্মেল বাবুর জীবনটা শঙ্কামুক্ত হবে। নইলে রাজনীতির বাতাস যেভাবে বইছে, খোদ সরকারি দলের নেতারা প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতিতে যেভাবে অসাংবিধানিক শক্তির প্রচারণা চালাচ্ছে, তাতে মোজাম্মেল বাবুর আত্মহত্যা করাটা শুধু আশঙ্কার মধ্যে নেই, নিশ্চিত ও অবাধারিত পথে এগুচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি একটু পেছনে ফিরে দেখতে চাই—অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা কখন কেমন ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার মধ্য দিয়ে অনির্বাচিত শক্তি ক্ষমতা নেয়ার পর মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছিল। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক) একইভাবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রথম দেড় মাসে দেশের অধিকাংশ মানুষ সে সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো)। অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এ দুটি দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচিত সরকার কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত হওয়ায় কুইক সলিউশন হিসেবে জনগণ অসাংবিধানিক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। সময়ের আবর্তে অসাংবিধানিক সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম দিকে ক্ষোভ প্রশমনের জন্য রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেই জনমত গড়ে ওঠে। আমার প্রশ্ন হলো, নির্বাচিত সরকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি জনগণের কী আস্থা আছে? স্বস্তিকর জীবন উপভোগের সুযোগ কী জনগণ পাচ্ছেন? জনগণ তাদের ভবিষ্যত্ নিয়ে এখন কী নিশ্চয়তা অনুভব করছেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজলে, মোজাম্মেল বাবু হোক, কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোক, অথবা একজন রিকশাচালক, মুদির দোকানদার বা চাকরিজীবী সবার উত্তর হবে ‘না’। আর এই ‘না’ উত্তর থেকেই অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে এখন আলোচিত হচ্ছে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে যদি মিথ্যা আশ্বাসের ফুলঝুরি নিয়েও অসাংবিধানিক কোনো শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন জনগণ প্রাথমিক নিস্তার হিসেবে ‘স্বস্তি’ যে খুঁজবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর এতে মোজাম্মেল বাবুর আত্মহত্যা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এজন্যই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানাই, অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবসান করুন। ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ বা ‘দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ যেটাই হোক, আলোচনায় বসে একটি পথ বের করুন। যেহেতু আপনার অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপিসহ বিরোধী দল ভরসা পাচ্ছে না, সেহেতু দু’পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ব্যবস্থা বের করুন। অন্য পথে সংঘাত-ক্লেশ। সে ক্লেশযুক্ত অন্ধকার পথে অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। সেটা বাংলাদেশের জনগণকে দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি অস্বস্তিতে ফেলবে। সেটা আপনাদের রাজনীতিকদের জন্যও সুখকর হবে না। বিশেষ করে আপনি, আপনার পরিবার ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের অনেক বেশি মাশুল গুনতে হবে। আপনার বৃহত্ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবেন আপনারই ভক্ত, সমর্থক এবং রাষ্ট্রের একজন ‘নির্ভীক’ নাগরিক সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। তার জীবনাবসানের আশঙ্কা থেকেই যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অভিভাবক হিসেবে মোজাম্মেল বাবুকে আত্মহত্যা থেকে রক্ষা করবেন, এ প্রত্যাশা করি।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
একজন ‘নির্ভীক’ সাংবাদিককে যাতে ‘আত্মহত্যা’ করতে না হয়, সেজন্যই আমি প্রধানমন্ত্রী সমীপে আবেদন জানাচ্ছি। কেননা মোজাম্মেল বাবুর দেয়া শর্ত অনুযায়ী তাঁর বেঁচে থাকা এখন নির্ভর করছে পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। আল্লাহ তাকে (মোজাম্মেল বাবু) রক্ষা করুক, এ প্রার্থনা করছি। এজন্য অসাংবিধানিক বা অনির্বাচিত কোনো সরকার ক্ষমতায় আসার পথ যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে সচেতন পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছি। বিরোধী দলকে ডেকে আলোচনায় বসে সমঝোতার ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে মোজাম্মেল বাবুর জীবনটা শঙ্কামুক্ত হবে। নইলে রাজনীতির বাতাস যেভাবে বইছে, খোদ সরকারি দলের নেতারা প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতিতে যেভাবে অসাংবিধানিক শক্তির প্রচারণা চালাচ্ছে, তাতে মোজাম্মেল বাবুর আত্মহত্যা করাটা শুধু আশঙ্কার মধ্যে নেই, নিশ্চিত ও অবাধারিত পথে এগুচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি একটু পেছনে ফিরে দেখতে চাই—অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা কখন কেমন ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার মধ্য দিয়ে অনির্বাচিত শক্তি ক্ষমতা নেয়ার পর মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল করেছিল। (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক) একইভাবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সরিয়ে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে প্রথম দেড় মাসে দেশের অধিকাংশ মানুষ সে সরকারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো)। অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এ দুটি দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচিত সরকার কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দ্বারা চরমভাবে নির্যাতিত হওয়ায় কুইক সলিউশন হিসেবে জনগণ অসাংবিধানিক সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। সময়ের আবর্তে অসাংবিধানিক সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম দিকে ক্ষোভ প্রশমনের জন্য রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধেই জনমত গড়ে ওঠে। আমার প্রশ্ন হলো, নির্বাচিত সরকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি জনগণের কী আস্থা আছে? স্বস্তিকর জীবন উপভোগের সুযোগ কী জনগণ পাচ্ছেন? জনগণ তাদের ভবিষ্যত্ নিয়ে এখন কী নিশ্চয়তা অনুভব করছেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজলে, মোজাম্মেল বাবু হোক, কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোক, অথবা একজন রিকশাচালক, মুদির দোকানদার বা চাকরিজীবী সবার উত্তর হবে ‘না’। আর এই ‘না’ উত্তর থেকেই অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে এখন আলোচিত হচ্ছে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে যদি মিথ্যা আশ্বাসের ফুলঝুরি নিয়েও অসাংবিধানিক কোনো শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন জনগণ প্রাথমিক নিস্তার হিসেবে ‘স্বস্তি’ যে খুঁজবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর এতে মোজাম্মেল বাবুর আত্মহত্যা নিশ্চিত হয়ে যাবে। এজন্যই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানাই, অস্বস্তিকর পরিস্থিতির অবসান করুন। ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ বা ‘দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ যেটাই হোক, আলোচনায় বসে একটি পথ বের করুন। যেহেতু আপনার অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপিসহ বিরোধী দল ভরসা পাচ্ছে না, সেহেতু দু’পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ব্যবস্থা বের করুন। অন্য পথে সংঘাত-ক্লেশ। সে ক্লেশযুক্ত অন্ধকার পথে অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। সেটা বাংলাদেশের জনগণকে দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি অস্বস্তিতে ফেলবে। সেটা আপনাদের রাজনীতিকদের জন্যও সুখকর হবে না। বিশেষ করে আপনি, আপনার পরিবার ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের অনেক বেশি মাশুল গুনতে হবে। আপনার বৃহত্ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবেন আপনারই ভক্ত, সমর্থক এবং রাষ্ট্রের একজন ‘নির্ভীক’ নাগরিক সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। তার জীবনাবসানের আশঙ্কা থেকেই যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অভিভাবক হিসেবে মোজাম্মেল বাবুকে আত্মহত্যা থেকে রক্ষা করবেন, এ প্রত্যাশা করি।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন