মহাজোট সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা আড়াল করতে নাস্তিক বামপন্থী কিছু আধাশিক্ষিত ও মূর্খ এমপি, অনভিজ্ঞ মন্ত্রী ও ইসলাম বিদ্বেষী পরান্নভোজী উপদেষ্টা আর তথাকথিত কতিপয় বুদ্বিজীবীর পরামর্শে এক একটি নতুন ইস্যু তৈরি করে সরকার দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে ৯০% ভাগ মুসলমানের দেশে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নাস্তিক মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদেরকে তৌহীদি জনতার প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে ইসলামের দুশমন নাস্তিক ও মুরতাদদের পক্ষ নিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতময় করে তুলেছে। সরকারের নির্দেশে পুলিশের গুলীতে এযাবৎ প্রায় দুইশত ধর্মপ্রাণ ও ইসলামপ্রিয় মানুষ নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের একটি মীমাংসিত যুদ্বাপরাধ ইস্যুকে সামনে এনে সংঘাত ও সংঘর্ষকে উসকে দিয়ে জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল ও ঘোলাটে করা হয়েছে।
সর্বশেষ সরকারের সকল অপকর্মের গ্লানি মুছে দিতে কতিপয় নাস্তিক পরিবারের নষ্ট ও ভ্রষ্ট তর”ণ-তর”ণীদের নর্তন কুর্দন ও বেলেল্লাপনা আর সরকারের তাঁবেদার কতিপয় ধর্মদ্রোহী মিডিয়ার সহযোগিতায় ও হলুদ সাংবাদিকদের মিথ্যা প্রচারণায় আল্লাহ, তাঁর রাসূল (স.), ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও আলেম-ওলামার প্রতি কটূক্তি ও ঘৃণা ছড়ানোর মাধ্যমে সরকারই দেশকে এক চরম সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কোরআন-স্ন্নুাহ তথা ইসলাম বিরোধী কোন আইন পাস করবে না বলে ঘোষণা দিলেও সরকার গঠনের সাথে সাথে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটুকু মুছে দিয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র পুনঃস্থাপন করে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার লঙ্ঘনের মাধ্যমে দেশে সর্ব প্রথম সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি নারী অধিকার আইন করেছে। ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। নারীর সম্মানের প্রতীক ও ফরজ পর্দার বিধান বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি করেছে। দ্বিতীয়ত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার প্রয়াসে আরো একটি সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।
মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা থাকলেও সেনা সমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীল নক্সার নির্বাচনের মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত বিজয় লাভের পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহাজোট নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসংগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেছে, মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে সাংবাদিকগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে কিনা এ প্রসংগে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেছিলেন, হ্যাঁ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, তবে এ বিচার হবে প্রতিকী ।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মহাজোট সরকারের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হতে থাকে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, শেয়ার মার্কেট লুট-পাট, ডেসটিনি, যুবক, গ্রামীণ ব্যাংক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যর্থতা ঢাকতে নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে ৪০ বছরের পুরানো ও মীমাংসিত ঘটনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুর” করে। আর এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে জাতি আজ বিভক্ত হয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশ্ন ওঠেছে কথিত যুদ্বাপরাধীদের বিচারের জন্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়েও।
দেশ বরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফি, শাহ আহমদ উল্লাহ আশরাফসহ দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ ও সচেতন মহল মনে করেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের দমনের ল্েক্ষ্য ও সরকারের ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আর প্রতিবেশি একটি দেশের ইঙ্গিতেই গঠন করেছে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’। নাম ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ হলেও আন্তর্জাতিক কোন আইন বা পরামর্শও এখানে গ্রহণ করা হয়নি। এতে দার”ণ ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের নামে গঠিত ট্রাইব্যুনাল।
১৯৭২ সালের ৪ নবেম্বর, বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়, আর ১৬ ডিসেম্বর থেকে তা বহাল হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের এযাবৎ পনেরটি সংশোধনী আনা হয়েছে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম সংশোধনী আনা হয়েছে সংবিধান কার্যকর হওয়ার ছয় মাস পর যখন আওয়ামী লীগ একক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই। উক্ত সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে যারা যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত সে সকল পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী ও তাদের সহযোগিদের বিচারের জন্যে।
১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে বর্তমানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সরকারের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সদস্যকে ছেড়ে দিয়ে ও হানাদারদের এদেশীয় দোসরদের অর্থাৎ রাজাকারদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর বাহবা নিয়েছিলেন। তবে মাত্র সাইত্রিশ হাজার আটশত চুয়াত্তর জন লোকের বির”দ্ধে মামলা হয়েছিলো, যারা হত্যা, ধর্ষণ লুট-পাট ও জ্বালাও পোড়াও এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলো। তাদের মধ্যথেকেও অধিকাংশ লোকই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলো আর সামান্য হাতে গোণা সাতশ চৌত্রিশ জনের শাস্তি হয়েছিলো তাও আবার ৫-৭ বছর সাজা ভোগ করে তারা এখন মুক্ত জীবন যাপন করছে।
মূল আসামীদের ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনতার ৪০ বছর পর বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে যাদের বিচার করা হচ্ছে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের, তারা কেহই মূল আসামী, সহযোগি বা অভিযুক্তও ছিলেন না। আজ যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের বির”দ্ধে বাংলাদেশে কোন থানায় বা আদালতে কোন মামলা বা অভিযোগ ছিলো না বা নেই। তারা হানাদারদের সহযোগি বলেও কোন দালিলীক তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। এমনকি আজকে যারা বিচারের জন্যে কারার”দ্ধ আর যাদের বির”দ্ধে বিচারের রায় ঘোষণা করা হয়েছে স্বাধীনতার পর ৪২ বছর অতিবাহিত হয়েছে, তারা বাংলাদেশে বিগত ৩৩/৩৪ বছর যাবৎ জামায়াতে ইসলামীর নামেই রাজনীতি করে আসছে।
বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুসলিম লীগ সহ আইডিয়েল নামে নির্বাচন করে ২০টি আসন লাভ করেছিলো। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক ভাবে অংশ গ্রহণ করে ১০ টি আসনে জিতেছিলো। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বৈরাচারী এরশাদ হটাও আন্দোলন ও কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছিলো। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ও বিএনপির অধীনে জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ সহ সকল দল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলো। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হটাও আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সাথে থেকে আন্দোলন করে ও তাদের পরামর্শে তিনশ আসনে নির্বাচন করে তিনটি আসন লাভ করেছিলো। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৭টি ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইটি আসনে জিতেছে।
জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশে দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে দেশের কোথাও কোন থানায় বা আদালতে তাদের বির”দ্ধে একটিও হত্যা, ধর্ষণ, লুট-পাট, জ্বালাও পোড়াও বা দুর্নীতির অভিযোগ কেউ দায়ের করেনি। বরং তাদের সততার দৃষ্টান্ত দেশবাসীর নিকট স্পষ্ট। চারদলীয় জোট সরকারে জামায়াতে ইসলামীর দু‘জন মন্ত্রী ছিলেন। সেনা সমর্থিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সকল মন্ত্রী এমপি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন, কিন্তুু জামায়াতে ইসলামীর এই দুই মন্ত্রী চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন, যদি এক টাকারও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো আর যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নেব। কারো পক্ষে তাদের দুর্নীতি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মাওলানা আবুল কালাম আজাদের অনুপস্থিতিতে তার বিচার সম্পন্ন করে তার বির”দ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বির”দ্ধে একই রকম অপরাধের বিচারের রায় হয়েছে যাবজ্জীবন ও পনের বছরের কারাদণ্ড! আবার তথাকথিত অপরাধের ধরন একই রকম হওয়ার পরও বিশ্ব নন্দিত আলেমে দ্বীন, মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের রায়ে শাস্তি হয়েছে মৃত্যুদণ্ড! অবশ্য ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান রায়ের সার সংক্ষেপ পাঠ করার আগে বলেছেন, আমরা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বা সাবেক সংসদ সদস্য, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের রায় দিচ্ছিনা, রায় দিচ্ছি ৪২ বছর পূর্বে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের দেলওয়ার সিকদারের অপকর্মের বিচারের রায়!? এ সকল রায়ে কি প্রমাণ হয়নি যে বিচার বিভাগ বিতর্কের উর্ধ্বে নয়?
বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে ভারতের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান উভয়দেশের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ও সিমলা চুক্তির মাধ্যমে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিলেন। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের ঐক্যের জন্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন আর যারা গুর”তর অপরাধে অপরাধী তাদের বিচার করলেন, শাস্তি দিলেন। ঐ তিন শ্রেণীর বা ক্যাটাগরীর মধ্যে যাদের নাম ছিল না, বাংলাদেশের কোথাও কোন থানা বা আদালতে যাদের বির”দ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ নেই বা ছিল না। ৪২ বছর পর শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিচারের নামে রাজনৈতিক হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাকে বলে ঔঁফরপরধষ শরষষরহম.
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশসহ গোটা বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, আন্তর্জাতিক জুডিস কাউন্সিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও সংস্থার পাশাপাশি তুরস্ক, মিশর, ইরান, সৌদী আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ড, জার্মান, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র সহ আরো অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করে জনগণের মৌলিক অধিকার ও জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আর ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ এর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখারও আহ্বান জানিয়েছে। সরকার অবশ্য এদেরকেও প্রতিপক্ষ ভাবতে শুর” করেছে। সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর বির”দ্ধে অভিযোগ তুলে বলছে এরা একপেশে ও সরকারের বির”দ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। শুধুমাত্র প্রতিবেশী একটি দেশের আশ্রয়ই যেন সরকারের শেষ ভরসা বলে মনে হচ্ছে। আর প্রতিবেশী দেশও যেন বাংলাদেশে সংঘাত আর সংঘর্ষ জিইয়ে রাখতেই চাইছে। তা না হলে বর্তমান সংঘাত ও সংঘর্ষময় পরিস্থিতিতে তাদের উচ্চমহলের আনা-গোনার আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে কেন? ভারতের রাষ্ট্রপতি তার সফরের মাধ্যমে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
ঔঁফরপরধষ শরষষরহম এর মাধ্যমে একটা আদর্শবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের ধ্বংস করা করা হবে আর কর্মীরা চুপচাপ বসে থাকবে তা হয় না। যেমন বিশ্ব নন্দিত আলেমে দ্বীন, মুফাসস্েির কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের রায় ঘোষণার আগে অবশ্য ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের রায়ের সার সংক্ষেপ পাঠ করার আগে বলেছেন, আমরা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বা সাবেক সংসদ সদস্য, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের রায় দিচ্ছিনা, আমরা রায় দিচ্ছি ৪২ বছর পূর্বে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের দেলওয়ার সিকদারের অপকর্মের বিচারের রায়! এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে এই দেলওয়ার সিকদার? রাজাকার দেলওয়ার সিকদার ওরফে দেইল্লা, পিতা রসুল সিকদার, গ্রাম- চিলা সিকদার বাড়ী, থানা, সদর জেলা, পিরোজপুর। যিনি একজন প্রকৃত রাজাকার ও বর্তমান আওয়ামী ওলামা লীগের নেতা মোছলেম মাওলানার একনিষ্ঠ সহযোগি ও অনেক অপকর্মের নায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে হত্যা করেছেন। সেই দেলওয়ার সিকদার ওরফে দেইল্লা রাজাকারের অপকর্মের দায়ভার আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে! এটা মেনে নেয়া যায় না।
মিরপুরের বিহারী আকতার বাহিনীর সদস্য বিহারী কাদের ওরফে কাদের কসাইয়ের ১৯৭১ সালের সকল অপকর্মের দায় ভার চাপানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ঘাড়ে। আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময়ই তার গ্রামের বাড়ীতে মুদি দোকান করে কাটিয়েছেন। তিনি তার এলাকায় সদরপুরে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংও নিয়েছিলেন।
সরকারের এধরনের উদ্ভট ঔঁফরপরধষ শরষষরহম এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আদালতের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রায় আদায়ের লক্ষ্যে আর মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে শাহবাগে নাস্তিকদের রঙ্গ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। যেখান থেকে আল্লাহ, তাঁর রাসূল (স.) ও আলেম ওলামাদের বির”দ্ধে ঘৃণা ছড়ানো ও জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর বির”দ্ধে আলেম ওলামা তৌহীদি জনতা যখন সোচ্চার তখন সরকারের কুটকৌশল বাস্তবায়ন করতে হিটলার আর চেঙ্গিস খানের মতো মানুষ হত্যার নেশায় মেতে ওঠেছে। গোয়েবলসের মতো মিথ্যাচার করছে। মেকিয়াভেলীর মতো ধোকা-প্রতারণা আর যেখানে যেমন খুশি সাজছে।
গত ১১ মার্চ নয়াপল্টনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। সমাবেশ চলাকালিন হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ! পরে রাস্তায় আগুন? এরপর পুলিশের এ্যাকশন! সভা পন্ড। বিএনপির দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের তাণ্ডব। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অফিসের বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙ্গে নেতা-কর্মীদের যেভাবে আটক করা হলো পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে তা কি কল্পনাও করা যায়? এ ঘটনাটি ফ্যাসিবাদী ও নাৎসি শাসনকে ম্লান করে দেয়নি?
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে বিরোধীদল বিএনপি পাবলিক সেফটি কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের বিশিষ্ট জনেরা এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশিষ্ট কলামিষ্ট ফরহাদ মাজহার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নতুন সাংগঠনিক রূপ দিয়েছেন। বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ব্যাপারে সাবেক সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড: আকবর আলী খান বলেছেন, সঙ্কট নিরসনে বড় দুই দলকে অবশ্যই সমঝোতায় আসতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বর্তমান সংঘাত, সংঘর্ষ ও সঙ্কটের কারণে দেশের স্বাধীনতা টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রনেতা বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে জটিল উল্লেখ করে বলেন, উত্তরণের জন্যে সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করতে হবে। বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ড: তৌহীদ সিদ্দিকীর মতে, যারা জ্ঞানী ও জিনকে জানে তারা আল্লাহকে মানে। আর যারা আল্লাহকে মানে তারা মাতৃভূমিকে ভালোবাসে। অতএব এ মূহুর্তে সকল ঈমানদারদের ঐক্য প্রয়োজন। কারণ সরকার দেশে অঘোষিত কারফিউ জারি করে মসজিদ মাদরাসা অবর”দ্ধ করে রেখেছে। রাজপথের তৌহীদি জনতার ওপর গুলী চালিয়ে পাখির মতো গণহত্যা করে দেশকে চরম সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের তৌহীদি জনতা আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ সহ বিরোধীদলের প্রাণের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের পরামর্শে সরকার পারে এ সংঘাত সংঘর্ষ ও সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে।